AYAN DEY

Abstract

2  

AYAN DEY

Abstract

ঘ​ড়ির বাক্স

ঘ​ড়ির বাক্স

3 mins
688


সুতনু দাস এক অদ্ভুত মানুষ। বৈচিত্র্যময়তায় ভরা এই মানুষটা জীবনের মধ্যবয়সেও সঙ্গী পায়নি জীবনটা ভাগ করে নেওয়ার। তবু মানুষটাকে ঘাঁটালে যেন মনে হ​য় একটা বই পড়ে শোনানো হচ্ছে। তাতে প্রেম, হাসি আর দুঃখের হরেক রকম গল্প মেশানো। ইদানিং সে ব​ড় ডিপ্রেসড। গোটা দিনে ডিপ্রেশন কাটাতে দশ পনেরোটা সিগারেট পান রোজকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেমন যেন নিরাশাবাদী হয়ে পড়েছে মানুষটা! গায়ে বিগব্র্যান্ডের কাপ​ড় আর ঘ​ড়ি থাকলেও লোকটা আর জীবনটাকে নিতে আর পারে না মানে উপভোগ করতে পারে না।

সেদিন আলোচনা হচ্ছে কাজের ফাঁকে মানুষটার বিয়ে নিয়ে। 

আমি বললাম, "কবে সারছো শুভ কাজটাজ? "

"আর আমার হবে না। বেশীদিন আর নেই জীবনটা।"

আরেক দিদিকে টুক করে বলে দিলো, "জীবনটা নিছে লিপি। আলাদাই লাইফ লিড করছে।"

লিপি দি বলে উঠলো, "উফফ তুমি না। নিজে ওয়েল ফ্যাশনড, স্লিম ফিগার মেনটেন করছে তার বেলায় কিছু ন​য়।"

"আর কি বলবো, কারোর সাথেই পোষালো না। তোমায় দেখাই দাঁড়াও এই ছবিটা... হুমম এই যো। মেয়েটা পোলিশ। ও রীতিমতো আমায় কি বলবো ... কিন্তু কখন বিয়ে হয়ে গেলো। "

আরেক দিদি রিশিতা দি বলে উঠলো, "ওরকম করলে আর হবে না। "

রেগুলার যে কত দেশের কতরকম অভিজ্ঞতার কথা শুনি তার ইয়ত্তা নেই। আফ্রিকা, নাইজেরিয়ায় যারা অনসাইট যায় তাদের প্রাণ হাতে করে চলতে হয় । মেক্সিকোতে ড্রাগ অ্যাডিক্টের ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি ; এরকম কতশত গল্প শুনতে শুনতে কখনও আগন্তুকের কথা কখনও সিধু জ্যাঠার কথা মনে পড়ে যায় ।

এত ডিপ্রেসড মানুষ আমি আর দেখেছি বলে মনে হ​য় না । গোটা বছরে মাত্র দুটো লিভ নেওয়া লোক সুতনু দাস। কখনও পপকর্ণ খেয়ে লাঞ্চ করা মানুষ এই লোকটা। কখনও ফ্রাস্ট্রেশনে তামিল লোকজনদের প্রতি গজগজ করে সে, কখনও ইংলিশ তাব​ড় তাবড় সিনেমার তারিফ করা শুনে মন হ​য় লোকটা জ্যান্ত এনসাইক্লোপিডিয়া।

সে যাই হোক আমাদের জীবন মোটামুটি চললেও ডিপ্রেশন নৈব নৈব চ। তাই সুতনু দার কথায় জীবনটাকে আমরাই নিচ্ছি। আর দাদা জীবনটাকে সিগারেট মদ আর ইররেগুলার ফুড হ্যাবিটে নরক করে তুলছে । একদিন একটা ব্যাপার হলো।

সুতনু দা একটা ঘ​ড়ির ফাঁকা বাক্স ব্র্যান্ড চেনাতে দেখাচ্ছিলো। লন্ডনের ঘ​ড়ির বাক্সটাই যে কি দারুণ হতে পারে দেখলাম। দেখলাম এর ঠিক পরদিন থেকেই কীরকম একটা পরিবর্তন সুতনু দার মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফ্রাস্ট্রু কম খাচ্ছে। ক্রমশ বাঁচার কথা বলছে। সিগারেট এক দুটোয় নামিয়েছে। ফটোও দেখালো নতুন বান্ধবীর। নাম রিমিতা সেন। বিয়ে ঠিক হওয়ার খবর শুনে তো আমরা ভরকেই গেলাম।

যে ডিপ্রেশনকে পায়ে ঠেলে সরিয়ে রেখেছিলাম সেই ডিপ্রেশন এক্কেবারে প্লাবনের মত ভাসিয়ে দিলো আমাদের। রীতিমতো খিটখিট করতে লাগলাম লোকজনদের ওপর। বিরক্তি লাগতে শুরু করলো কাজের ওপর। কল-টলে ঝগ​ড়াই শুরু করে ফেলছি আমরা একচোট করে। ঘোর ডিপ্রেশনের ছায়া নেমে এলো আমাদের উপর। ওদিকে সুতনু দা দিব্য হাসিখুশি চনমনে মেজাজে ঘুরছে। দুবছর ধরে ইন্টারন্যাশনাল ট্যুর করবে করবে ভাবা লোকটা হুঠ করে শুনি রাশিয়া গেছে। এদিকে অ্যাপ্রাইসালের সময় আসছে আর মাথায় রাগ চাপছে কাজের ওপর।

এরই মধ্যে একদিন ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে চোখ গেলো ছানাব​ড়া হয়ে। মস্কোয় বিয়ে সেরেছে সুতনু দা। কোনো উচ্চবাচ্যই নেই। শেষে চূড়ান্ত ডিপ্রেশনের সাগরে ডোবা লোকটা ডেস্টিনেশন ওয়েডিং সেরে ফিরবে। চোখ কপালে উঠলো ক্যাপশন দেখে, "শেষমেশ জীবনটা নিলাম।" ছবিগুলোয় দেখি হাতে সেই লন্ডনের ঘ​ড়িটা যার বাক্স দেখার পরদিন থেকে কি জানি কী হলো! 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract