Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Thriller

3  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Thriller

একটি মেয়ে (পর্ব দুই)

একটি মেয়ে (পর্ব দুই)

5 mins
442



আগের দিনের মতো বেশ দেরীতে ঘুম ভাঙলো চঞ্চলের, ঘড়িতে পৌণে ১০টা বেজে গিয়েছে, আজ আর অফিসে যাবেনা বলে ঠিক করলো,কারণ অফিসে পৌঁছাতে অনেক দেরী হয়ে যাবে। কাল রাতের ঘটনা মনে পড়তে সেই একই উন্মাদনা অনুভব করলো সে।তারপর চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো, না কোথাও তো কোনো চিহ্ন নেই যে কাল কেউ এসেছিল,তারই সাথে মনে প্রশ্ন জাগলো,

" আমি কি স্বপ্ন দেখেছি?"

আবার পরক্ষণেই ওর মনে হলো " না স্বপ্ন হতে পারে না,কারণ আমি তো স্পষ্ট অনুভব করেছি।"

কিছু মাথা কাজ করছে না চঞ্চলের, একটা প্রশ্ন মাথায় আসতেই বাড়ির ভেতরে যাওয়া যায় সেই দরজার কাছে গেল, ভালো করে পরীক্ষা করে দেখলো, " না দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ।" কিছুতেই বুঝতে পারলো না কোথা থেকে কিভাবে আসে সে। কোথাও বেড়াতে যেতেও ইচ্ছে হলো না, ঘরটা তন্নতন্ন করে খুঁজলো কোথায় কোনো গুপ্ত দরজা আছে কি না। তারপর মনে হলো হয়তো সত্যিই সে স্বপ্ন দেখেছে। নইলে কোনো গোপন দরজা নেই।একবার ভাবলো বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে। কিন্তু বাড়ির মালিক ওর বাবার বয়সী, কি বলবে? আর কি করেই বা বলবে? মনে মনে ভাবলো, না আজকের রাতটা ও দেখবে। কারণ আজ পর্যন্ত সে দেখেনি সেই মানবিকে, খালি অনুভব করেছে, চাইলেও তাই সনাক্ত করতে পারবে না সে। আর কোথা থেকে সে ঘরে আসে সেটাও জানেনা সে। স্নান ও খাওয়া সেরে নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেল হাঁটতে হাঁটতে। ইচ্ছে করলো না ঘরে বসে থাকতে।কিছুই মাথায় ঢুকছেনা ওর, কি যে হচ্ছে এসব। অনতিদূরেই জঙ্গলের ভেতর ঘুরতে ঘুরতে, প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে কাটাতে মন থেকে মুছে গেল কালকের ঘটনা। সে জঙ্গলের অনেকটা ভেতর চলে গিয়েছে, কতক্ষণ সময় কেটে গিয়েছে জানেনা। পথও খুঁজে পাচ্ছে না।কি করবে এই ভেবে ভয় পেয়ে গেলো সে। তারপরও পথ খোঁজার চেষ্টা করে আর খুঁজে না পেয়ে একটা পাথরের উপর ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লো।

হঠাৎ একজনের ডাকে সম্বিত ফিরলো, নেপালি ভাষায় কিছু একটা বললো,চঞ্চল বুঝতে না পারাতে এবারে বাংলায় বললো " আপনি কে? এদিকে এসেছেন কেন?" চঞ্চল বুঝলো বাঙ্গালী অধ্যুষিত অঞ্চল তাই বাংলাটাও ভালো জানে আর এখানকার বাঙ্গালীরা নেপালীটা অল্পবিস্তর জানে। এখানে এসে লক্ষ্য করেছে।

" আমি চঞ্চল, ওই যে একটা বাংলো বাড়ি রয়েছে, সেখানেই থাকি।"

" কোন বাড়ি? এখানে কি একটা বাংলো বাড়ি? "

চঞ্চল বাড়ির মালিকের নাম বলতেও চিনতে পারলো না, শেষে মনে পড়লো এখানে এসে বাড়িটা পছন্দ হওয়াতে এর ছবি তুলে দিদিকে পাঠিয়েছিল,

সেটা মনে পড়তেই সেই ছবিখানা দেখালো সেই নেপালী মেষপালকে, তার সেই বাড়ি দেখে কেমন হয়ে গেল মুখখানা। তারপর কেমন একটা অবিশ্বাসের মুখ করে বললো " এই বাড়িতে, ঠিক বলছেন?কয়দিন এসেছেন? "

চঞ্চল হেসে বললো " তোমাকে মিথ্যা বলতে যাবো কেন দাদা? বেশীদিন না, একমাসও হয়নি।"

সে আর কিছু বলল না, নিঃশব্দে পথখানা দেখিয়ে দিয়ে ফেরার সময় বললো " সাবধানে থাকবেন দাদা।"

চঞ্চলের কি মনে হওয়াতে সেই মেষপালককে ডাকলো চঞ্চল, মেষপালক না থেমে বললো " এখন আসি, কাল কথা হবে।" চঞ্চলের মনে হলো ভয় পেয়েই চলে গেলো।

চঞ্চল তবুও চিৎকার বললো "আমি এই জঙ্গল ঘুরে দেখতে চাই, কাল আমার অফিস নেই, তোমায় কোথায় পাবো?"

সেই মেষপালক থমকে দাঁড়ালো, সে হয়তো ভেবেছিল চঞ্চল অন্য প্রশ্ন করবে, চঞ্চল সেই পথ দিয়ে না যাওয়াতে সে অবাকই হলো, বললো

" কাল কখন ঘুরতে চান?"

চঞ্চল বললো সকাল এগারোটা। মেষপালক মাথা নাড়িয়ে বললো, "ঠিক আছে এখানে অপেক্ষা করবো।"

চঞ্চল বললো বাংলোতে গিয়ে আমাকে ডেকে নিতে পারো, সে বললো " তাহলে আমি ঘুরাতে পারবো না।"

চঞ্চল ভাবলো এই সুযোগটা মাঠে মারা যাবে, সে সঙ্গে সঙ্গে বললো " ঠিক আছে, আমিই আসবো।"

চঞ্চল দেখলো ছোট্ট দেহী নেপালীটা দ্রুত পায়ে চলে গেলো, চঞ্চলের দ্রুতিটা একটু বেশীই মনে হলো।

চঞ্চল যখন বাংলোর অনেকটা কাছে, তখন একজন যুবতীকে ওই বাংলোতে ঢুকে যেতে দেখলো সে, মুখখানা দেখতে পেলোনা সে, সাদা সালোয়ার পরনে সেটা কেবলমাত্র বুঝতে পারলো। মেয়েটি যেদিন দিয়ে বাংলোতে প্রবেশ করেছে সেটা মালিকের বাড়িতে প্রবেশের পথ আর ওর ঘরে ঢোকার পথ অন্য মুখে। চঞ্চল না চাইতেও মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে বাড়িতে প্রবেশ করলো।

ঘরে এসে হাত মুখ ধুয়ে, পোশাক বদলে, Water kettle এ জল গরম করে একটা black coffee বানিয়ে ভ্রমণের বইটা নিয়ে বসলো। কিন্তু মন দিতে পারছিলো না, খালি মেষপালকটার অবাক হওয়া দৃষ্টি, আর শেষ কথা " সাবধানে থাকবেন। " এই কথাটা কানে বাজছিলো। কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছিলো না।

এমন সময় ফোন এলো, দেখলো মা বোনের ফোন থেকে ভিডিও কল করেছে, চঞ্চল জানে বোনই করে দিয়েছে। মা আর বাবা smart phone ব্যবহার করতে চায়না।

মায়ের কত অনুযোগ "রোগা হয়ে গিয়েছিস,খাস না কিছু তাইনা। একটা চাকরি করছিস, বিয়ের বয়স হয়ে গিয়েছে " ইত্যাদি ইত্যাদি একই বিষয় নিয়ে বলতে শুরু করলো। যে ভয়ে সে পালিয়ে এসেছে। তারপর বাবাকে যখন দিলো,তিনি মুখের এমন সামনে ফোনটা ধরলো শুধু নাকখানি দেখতে পেলো চঞ্চল। সেটা বলাতে বাবার কি রাগ, কথাই বললেন না তিনি। এমন করে এক ঘন্টা ধরে কথা হলো। চঞ্চল মনে মনে বললো "সত্যি গেজেটের দৌলতে সব কতটা কাছে।" তারপর ছোট মোবাইল নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল দাদার সাথে আড্ডা মারবে বলে।

ছোটর সঙ্গে যখন কথা বলছিল, তখন চঞ্চল বিছানায় উঠে বসে,হঠাত কথা বলতে বলতে ছোট বললো " তুই একা রয়েছিস দাদা,নাকি কেউ রয়েছে। "

চঞ্চল রাগ করে বললো " আমি একা ছাড়া কে থাকবে আমার সাথে? সবসময় ঠাট্টা ভালো লাগেনা।"কিন্তু ছোটর মুখ দেখে মনে হয়নি ছোট ঠাট্টা করেছে, সে আমতা আমতা করে বললো " না মা ওই দরজার কাছে মনে হলো কে যেন দাঁড়িয়ে রয়েছে।"

" কই দেখি।" বলে চঞ্চল সেদিকে তাকাল কিন্তু কিচ্ছুটি দেখতে পেলোনা।

" কি রে বোন ভয় দেখাচ্ছিস?"

ছোট বললো " না রে ভয় দেখাবো কেন? একা থাকিস, আমারই দেখার ভুল হয়তো.."

চঞ্চল বোনের গলা শুনে বুঝতে পারলো বোন ঠাট্টা করেনি। চঞ্চল দেখলো ওদের কথোপকথনে কেমন একটা ভাটা পড়ে গিয়েছে, তখন সে ঠাট্টা করে বোনকে বললো " তা ডাক্তারবাবু কেমন আছে?"

লজ্জায় লাল হয়ে বললো " তোর তো পরিচিত, তুই ফোন করে জিজ্ঞেস কর।"

" কি জিজ্ঞেস করবো? তোমাদের প্রেম হাসপাতালেই আঁটকে, নাকি এগোলো কিছু? "

" ধ্যাৎ"

"তা আমার কথা তো খুব জিজ্ঞেস করছিস, তোর কি কাউকে মনে ধরলো, নাকি প্রাক্তনের মতো কাউকে পাসনি।"

" কই আর পেলাম। "

" চেষ্টা কি আদেও করেছিস? ভ্রমণ নামের কোনো মেয়েকে বিয়ে করিস, তোর তবে মনে ধরবে।"

" তাই বুঝি।"

" না তো কি, যা ঘুরে বেড়ানোর জন্য সময় দিস, তার ১% কোনো মেয়েকে দিলে, এতো দিনে বিয়ে হয়ে যেতো।"

হঠাৎ যেন ঝোড়ো হাওয়ার জানালায় ঠোকাঠুকি লাগলো, চঞ্চল চমকে উঠে বললো " বোন ফোনটা রাখি, মনে হয় ঝড় উঠবে জানালাগুলো লাগাই।"

" আচ্ছা রাখছি, ভালো থাকিস, সাবধানে থাকিস।"

" পাঁকাবুড়ি" বলে হেসে ফোনটা রেখে জানালার কাছে গিয়ে দেখে মেঘ পরিস্কার, ঝড়ের কোনো চিহ্ন নেই। হঠাৎ এমন হাওয়ায় জানালার ঠোকাঠুকি হওয়ার কারণটা বুঝতে পারলো না।

দরজা খুলে বাইরে এসে দেখলো সব স্বাভাবিক। তারপর কি মনে হওয়াতে বাড়ির দিকের যে জানালা দিয়ে ওর ঘরে খাবার আসে সেদিন চোখ রেখে দেখলো সে মেয়েটিকে, বারান্দায় কাঠের স্তম্ভে মাথা ঠেকিয়ে আকাশের দিকে স্তম্ভিত হয়ে চেয়ে রয়েছে। বাইরে পুর্ণিমার চাঁদের আলোয় রহস্যময়ী লাগছিলো মেয়েটিকে। চঞ্চল বিমুগ্ধতায় চেয়ে রইলো, ওর যেন বাস্তবতা হারিয়ে গেল।





Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror