Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Romance Thriller

3  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Romance Thriller

একটি মেয়ে (পর্ব ছয়)

একটি মেয়ে (পর্ব ছয়)

6 mins
403



চঞ্চলের যখন চোখ খুললো, তখন দেখলো তিন জোড় চোখ ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে,আর বাড়ির মেয়েটা ওর মুখের জল ছিটিয়ে যাচ্ছে। চঞ্চলের তখনও বুক ধকধক করছিল। মাথা ঠিক কাজ করছিলো না,চারিদিকে বেশ ভালো করে দেখে নিলো,যেন কিছু খুঁজছে সে। এবারে ওই বাড়ির কর্তা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন " বাবা জ্ঞান ফিরেছে তোমার! কখন থেকে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছি, তুমি তো বড় ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে আমাদের। মাঝ দুপুরে এমন করে চিৎকার করে উঠলে কেন? সব ঠিক আছে তো? ভাগ্যিস তুমি এই দরজাটা খুলে রেখেছিলে,নইলে কি হতো কে জানে? নির্ঘাত দরজা ভাঙ্গতে হতো, অবশ্য আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না,কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বাধ্য হতাম।"

চঞ্চলের ভয়টা এতো লোকের মাঝে কিছুটা কম লাগলো, তবে কথা বলতে পারলোনা তখনও, "এখনও সেই ভয়ানক... " না আর মনে করতে পারলো না, সে চায়ও না মনে করতে।

ওই বাড়ির মেয়েটা এতোক্ষণ বসে চঞ্চলের চোখে মুখে জল দিয়ে হাতে তেল মালিশ করে দিচ্ছিলো। চঞ্চলকে চোখ খুলে একটু স্বাভাবিক হতে দেখে সে উঠে যাচ্ছিলো দেখে চঞ্চল বললো "আমাকে আপনি ক্ষমা করেন, আমার ভুল হয়ে গিয়েছে, সকালে যা বলেছি সেগুলো আমার ভুল ছিল, দোষ করে ফেলেছি।"

মেয়েটি তবু উঠে যাচ্ছিলো দেখে চঞ্চল তাড়াতাড়ি করে উঠে বসে হাত জোর করে, আবারও ক্ষমা চাইতে যাওয়ার আগেই,প্রৌঢ়া ভদ্রমহিলা, যিনি চঞ্চলের ঘরে খাবার দিয়ে যান, তিনি এসে মেয়েটির হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বললেন " অনেক হয়েছে, চল..., দয়ার শরীর হয়েছে... " বৃদ্ধ ভদ্রলোক সেদিকে তাকিয়ে বললেন " কিছু মনে করোনা, সুবলা আমার খেয়া মাকে বড্ড ভালোবাসে, সেই ছোট্ট থেকে কোলে পিঠে মানুষ করেছে তো,তাই মেয়েটার সামান্য কিছু সইতে পারেনা, তার উপর সকাল বেলা নাকি কিসব বলেছ..."

চঞ্চল লজ্জায় মরে যেতে লাগলো। সে মাথা নিচু করে নিলো কথাটা শুনে। এবারে ভদ্রলোক বললেন "তুমি বিশ্রাম নাও, আমি আসি বাবা।"

চঞ্চল এতোক্ষণ লোকজনের সঙ্গে থেকে ভয়ের বিষয়টা মাথা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলো, এই ঘরে একা থাকবার কথা মনে পড়তেই শিউরে উঠলো।সে বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি নেমে এসে ভদ্রলোকের একটি হাত ধরে অনুনয়ের সুরে বললো "কাকাবাবু দয়া করে যাবেন না, আ...আমি এ..এখানে একা থাকতে পারবো না।"

ভদ্রলোক একবার ওর দিয়ে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বললো "আচ্ছা চলো আমার সাথে আমার ঘরের বৈঠকখানায় চলো...."

চঞ্চল এক মুহূর্ত দেরি না করে উনার পিছু নিলো। বাইরে আঁধার ছিল, চঞ্চল ভদ্রলোককে অবাক করে দিয়ে হাতখানি এসে ধরলো।ভদ্রলোক অবাক হয়েছে বটে, তবুও হাত ছাড়িয়ে দিলো না, তারপর ধীরে ধীরে ভদ্রলোকের সাথে ওদের বসার ঘরে এলো চঞ্চল। বেশ বড় ঘর, বেশ দামী আসবাব দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। তবে কিছুটা মালিন্য,

হয়তো আগের মতো সচ্ছলতা নেই, চারিপাশ দেখে বোঝা যায়। বাড়ির কর্তা হরকিশোর বাবু কাঠের বসার গদী আটা চেয়ারের দিয়ে হাত দেখিয়ে বললেন "বাবা তুমি এখানে বসো।"

চঞ্চল ব্যাকুল হয়ে বললো " আপনি? "

তিনি হেসে বললেন "আমি কোথাও যাচ্ছি না, শুধু সুবলাকে গিয়ে বলে আসি এক কাপ চা দিয়ে যেতে।"

চঞ্চল ব্যস্তসমস্ত হয়ে বললো " না না কাকাবাবু কিছু লাগবেনা।"

তিনি বললেন " তা কি হয়?"

চঞ্চল বাঁধা দিলেও তিনি শুনলেন না, বল্লেন " একটু চা খাও ভালো লাগবে। "

চঞ্চল আরও বাঁধা দিতে যাচ্ছিলো, কিন্তু তিনি চলে গেলেন।

চঞ্চল চারিদিক ভালো করে দেখছিলো,বেশ বড় বসার ঘরখানি, কিছুটা দূরে লক্ষ্য করলো একটা বইয়ের আলমারি, বইয়ে ভর্তি আর সামনেটা বইয়ের সেল্ফ,সেখানেও কিছু কিছু বই সাজানো রয়েছে। চঞ্চলের বই পড়ার নেশা, অন্যসময় হলে ঠিক উল্টে পাল্টে বইগুলো দেখতো। আজকে সব কিছুই গোলমাল হয়ে গিয়েছে, জীবনভর যুক্তি তর্ক। এখানে বসে থাকতেও ভয় ভয় করছে। খালি ঘরের চারপাশ ভালো করে চোখ ঘুরিয়ে দেখছিলো। এমন সময় সেই প্রৌঢ়া ভদ্রমহিলা এসে দাঁড়ালো ওই ঘরে, দূর্গাং দেহী মূর্তি।

" কি শুরু করেছ বাবা একটু বলবে দয়া করে? তুমি কি চাইছো এবার বলো। মানলাম দাদাবাবু দয়ার শরীর, অতি ভদ্র মানুষ, তাই বলে সেটার সুযোগ নিতে হবে?"

এই কথা শুনে চঞ্চল মাটিতে মিশে যাচ্ছিলো, এবার ও ভাবলো যা হবে তাই হোক। তবুও এভাবে অপমানিত হওয়া যায় না। চঞ্চল উঠে চলে যাচ্ছিলো দেখে হরকিশোর বাবু বললেন " বাবা তুমি কোথাও যাবেনা, তুমি যদি চলে যাও,আমি এটাকে আমার অপমান হিসেবে ভাববো।"

চঞ্চল থমকে দাঁড়ালো পড়লো। এবারে হরকিশোর বাবু সুবলাকে ধমক দিয়ে বললো " অতিথির সাথে এমন ব্যবহার করতে নেই.."

আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো, হরকিশোর বাবু ধমকে বললেন " তোকে চা করতে হবে না সুবলা, আমার ভুল হয়েছে তোকে ডাকা। "

সুবলা ক্ষেপে উঠে বললো " ভুল আপনার আমাকে ডাকা হয়নি দাদাবাবু, ভুল হয়েছে বাইরের ছেলেকে ঘরে ডেকে এনে।"

" আহ্ সুবলা আবার। "

" দেখো দাদাবাবু তোমার দয়ার জন্য আমি আমার কেয়া মাকে হারিয়েছি, আর কোনো মতে আমি আমার খেয়ার সামান্যতম ক্ষতি সইবো না। তারজন্য যদি অন্যের কাছে ছোট, খারাপ যাই হতে হয় হবো।"

সুবলবাবু এই কথাটা শুনে কেমন যেন হয়ে গেলেন, মাথাটা যেন উনার ঘুরে উঠলো। তিনি পড়ে যাচ্ছিলেন, চঞ্চল তাড়াতাড়ি করে উনাকে ধরে বসিয়ে দিলেন। অস্ফুটে হরকিশোর বাবু বলছিলেন "হ্যাঁ আমার জন্য, আমারই দোষ। " তারপর আরও কিছু বলতে শুরু করলেন, কিন্তু সেটা চঞ্চলের কর্ণগোচর হলোনা। চঞ্চল তাড়াতাড়ি করে এক গ্লাস জল এগিয়ে দিয়ে বললো " কাকাবাবু জল টুকু খেয়ে নিন।" ভদ্রলোক শূন্য দৃষ্টিতে চঞ্চলের দিকে তাকালো মাত্র, যেন উনার কানে কোনো কথাই ঢোকেনি। চঞ্চল আরেকবার কথাটি বলল, অস্ফুটে হরকিশোর বাবু কিছু একটা বললেন কিন্তু জলের গ্লাস খানি নিলেন না। কি মনে করে চঞ্চল জলের গ্লাসখানি নিয়ে খাইয়ে দিতে যেতে ভদ্রলোক শিশুর মতো কেঁদে উঠলো , চঞ্চলের বড় কষ্ট হলো। নিজের বাবার কথা মনে পড়লো চঞ্চলের। সে ভদ্রলোকের হাতদুটো ধরে বললো " কাকাবাবু কি হয়েছে আমাকে বলেন।"

ভদ্রলোক কান্না ভেজা চোখে চঞ্চলের দিকে তাকালেন, কি একটা বলতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় কে একজন বলে উঠলেন " দাদাবাবু কি করছেন?"

ভদ্রলোক যেন চমকে উঠে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে চুপ করে গেলেন।

চঞ্চল পেছন ঘুরে দেখে সেই প্রৌঢ়া দাঁড়িয়ে রয়েছে, পাশে আর একজন প্রৌঢ়া ভদ্রমহিলা,দেখে বোঝা যায় বয়সকালে বেশ সুন্দরী ছিলেন, তা বোঝা যায়। কিন্তু কেমন একটা অদ্ভুত দৃষ্টি উনার চোখেমুখে। হাতে একটা ছোট্ট পুতুল ধরা। সুবলা দেবী এবার বললেন " তুমি এখনো এখানে বসে? দাদার সাথে কি বিষয় কথা বলছিলে?"

চঞ্চল অবাক তাকিয়ে বললো " আমি তো কিছু বলিনি।"

"থাক অনেক হয়েছে, এবার এসো। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে, আশা করি আর কোনো অসুবিধা হবে না।"

চঞ্চল তাকিয়ে দেখলো ঘড়িতে সাড়ে তিনটা বেজে গিয়েছে, বাইরে এখনো তেমন ভাবে ভোরের আলো ফোটেনি, তবে কিছুটা পরিস্কার হয়ে এসেছে। তবুও চঞ্চল বেড়িয়ে আসলো, আর থাকা যায়না। ভদ্রলোকও আর বাঁধা দিলো না। চঞ্চল বাইরে এসে শুনতে পেলো সুবলা দেবী বলছেন " দাদা আপনি কি করতে যাচ্ছিলেন? কি হয়েছে আপনার? ও বাইরের ছেলে, এসব কথা ওর কাছে গল্প ছাড়া কিছুই না, হয়তো বাইরে গিয়ে বলে বেড়াবে। কি দরকার এসবের, আজ আছে কাল চলে যাবে। আর যত তাড়াতাড়ি যায় তত মঙ্গল। আমি আর কোনো বাইরের ছেলেকে বাড়িতে রাখতে দেবো না৷ এতো বছর দেয়নি। জানি এখন একটু অর্থের প্রয়োজন, তবু যেভাবে হোক চালিয়ে নেবো। কাউকে ভাড়া দিতে হবে না আর। "

ভদ্রলোক কি একটা বললেন শোনা গেল না। এবারে সুবলা দেবীর গলা আবার শোনা গেল, তিনি বললেন " যান দাদা ঘরে যান, বৌদি দেখুন উঠে চলে এসেছে। বৌদির বড় ঘুমের দরকার, উনি তো ঘুমের ওষুধ খাও। তাছাড়া আপনার ঘুম হয়নি, ক্লান্তি লাগবে প্রেসারটা বেড়ে যাবে। যান একটু গড়িয়ে নিন।"

চঞ্চল বাইরে দাঁড়িয়ে বাইরের প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে ছিলো, তাই সব কথাই ওর কানে ঢুকলো। শরীরটা বড্ড খারাপ লাগতে শুরু করায় ভয়কে দূরে সরিয়ে ওই ঘরেই প্রবেশ করলো, কিন্তু বিছানা শুয়েই চোখ বুজলেই বিভৎস স্মৃতি মনে ভেসে উঠতেই চঞ্চল আর শুয়ে থাকতে পারলো না,বের হয়ে চলে গেল বাইরে। কিছুই মেলাতে পারছেনা ও, সব যুক্তি তর্ক আজ যুক্তিহীন মনে হচ্ছে।অন্যসময় ভোরের বাইরের প্রকৃতি ওর মন টানতো। শরীর খারাপ লাগা সত্ত্বেও ও হাঁটতে শুরু করে যেদিকে চোখ যায়, আজ খালি একটা মুখই মনে পড়ছিল, সেই মুখখানা, এরই মাঝে হরকিশোর বাবু না বলা কথা গুলো মনে পড়তে লাগলো। কতক্ষণ হেঁটেছে কেউ জানেনা,কতটা পথ হেঁটে এসেছে তাও জানেনা। হঠাৎ কেমন শীত শীত অনুভব করলো, মাথাটাও হালকা ঘুরে উঠলো চঞ্চলের। তারপর কিছু মনে নেই....

চলবে...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror