STORYMIRROR

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Inspirational Thriller

3  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Inspirational Thriller

একটি মেয়ে (পর্ব চার)

একটি মেয়ে (পর্ব চার)

6 mins
340

চঞ্চল মেষপালকের সাথে গল্প করতে করতে জানতে পারে ওর নাম অর্জুন।বাড়িতে ও ছাড়া মা বাবা বৌ তিনটা বাচ্চা, দুটো কুমারী বোন আর একটা ভাই রয়েছে। আর দুই ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে তারা আলাদা থাকে। ওর বৌ একটা খাবারের দোকান চালায়, দুটো বোন আর ভাই স্কুলে পড়ে। অর্জুনের একটা বাচ্চা সবে স্কুলে যেতে শুরু করেছে। চঞ্চল বুঝতে পারলো অভাবের সংসার, কিন্তু অদ্ভুতভাবে এই মানুষটার মুখে কোনো দুখের চিহ্ন নেই। বিয়ের আগে পাহারাদারের কাজ করতো। এখন মেষপালন এটাই ওর প্রধান কাজ, ২০-২৫টার মতো রয়েছে। ওর সাথে গল্প করে জানতে পারে বেশ লাভজনক কাজ নাকি এটি। ভেড়ার লোম, মাংস, দুধ সবই কাজে লাগে আর বিক্রি হয়।

চঞ্চলের এই মানুষটার সাথে গল্প করে খুব ভালো লাগছিলো। কত সরল মানুষ, চঞ্চলের ঘুরতে ঘুরতে বেশ খিদে পেয়ে গেলো, অর্জুন যেন তা বুঝতে পেরে একটা দোকানের নিয়ে গেল। তবে তার আগে বললো " দাদাবাবু ওই দেখছেন ওটা আমার বৌয়ের দোকান। ভালো খাবার পাবেন।"

চঞ্চল দূর থেকে দেখলো একটা কাঠের তৈরী ছোট দোকান, দার্জিলিং জেলায় যেমন দেখা যায় তেমনি। দূর থেকে দেখে মনে হলো বেশ লোক রয়েছে, সামনে একটা পার্কের মতো রয়েছে। যারা ঘুরতে আসে তারা খায়, অবশ্য অনেকে জঙ্গল ঘুরতে আসে, তারাও খায় হয়তো।

হঠাৎ অর্জুন ইতস্তত করে বললো "তবে একটা কথা আপনি কোথায় থাকেন সেটা জানাবেন না।"

" তবে কি জানাবো?"

অর্জুন কিছুটা ভেবে বললো " আপনি বলবেন সামনে যে নতুন খ্রিস্টান পাড়া রয়েছে, সেখানে একটা বাড়িতে এসেছেন।"

চঞ্চল অবাক হলো এই ভেবে বাঙ্গালির ছেলে একটা ভদ্র বাঙ্গালির বাড়িতে রয়েছি, সেটা না বলে কেন অন্য জায়গার কথা বলবে সে, বিশেষ করে সে জানেই না কোথায় রয়েছে সেই খ্রিষ্টান পাড়াটা।আর হঠাৎ করে মিথ্যা বলতেই যাবে কেন সে? তাছাড়া অর্জুনকে তো তার বেশ সরল মনে হয়েছিলো, সে হঠাৎ তাকে মিথ্যা বলতে বললো কেন? চঞ্চল কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো " থাক আমার খেয়ে কাজ নেই, ঘরে গিয়ে খাবো।"

অর্জুনের মুখটা ভারী হয়ে গেল, মনে হলো সে কেমন একটা অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পরে হেসে বললো " আপনি চলুন,আমি যা বলার বলব, আপনাকে কিছু বলতে হবে না, আপনি অতিথি আপনি না খেয়ে থাকবেন তা কেমন করে হয়।"

চঞ্চল কথাটা ফেলতে পারলো না, কিন্তু মনে একটা অস্বস্তি রয়েই গেল। চঞ্চল দোকানে গিয়ে দেখলো সাধারণ ভাবে বেঞ্চ পাতা,ডিম টোস্ট, ডিমসেদ্ধ, বাটার স্টোস্ট এসবও পাওয়া যায়। চঞ্চলকে বসতে বলে অর্জুন নিজে হাতে খাবার নিয়ে এলো, নেপালী ধরনের রান্না, বাঙ্গালী রান্নার সাথে বেশ মিল, তবে ওরা মশলা কম খায়। ভাত, মুরগীর মাংস,ডাল, সবজি, বেশ তৃপ্তি করেই খেলো। চঞ্চলের সব ধরনের খাবার খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। তাছাড়া আড়াইটা বেজে গিয়েছে, খিদের পেটে সবই ভালো।  চঞ্চল লক্ষ্য করলো অর্জুনও বসে খাচ্ছে। খেয়ে টাকা দিতে এসে কিছুতেই টাকা নিতে চাইলো না, শেষে চঞ্চল বললো " এটা তোমার ব্যবসা অর্জুন দাদা, নিতে তোমাকে হবেই।" অর্জুনের বৌ বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে, তবে অর্জুনের মতো পরিস্কার না। অর্জুনের বৌ কিছু জিজ্ঞেস করেছিলো তার উত্তর অর্জুনই দিলো। চঞ্চল বুঝতে পারলো যে করেই হোক অর্জুন জানতে দিতে চঞ্চলের প্রকৃত ঠিকানা। অর্জুন দোকান থেকে বেড়িয়ে এসে বললো " দাদা আপনি পার্কটা ঘুরে নিন টিকিট কেটে, ভালো লাগবে আপনার। তারপর বেড়িয়ে এই রাস্তা ধরে সোজা হেঁটে যাবেন, তারপর রাস্তাটা দুই দিকে ভাগ হয়ে যাবে" ডান হাত তুলে বললো " এই দিকের পথ ধরবেন।"

চঞ্চল বললো " তুমিও সাথে চলো, এতোক্ষণ ছিলে সাথে। "

" আমাকে ভেড়া গুলো ঘরে নিয়ে আনতে হবে, তাছাড়া আমি এসব দেখেছি, আপনি পারবেন না পথটা চিনে যেতে?"

চঞ্চল হেসে বললো " তা পারবো না কেন? "

তারপর পকেট থেকে বেড় করে ৫০০ টাকার নোট দিতে, সে কিছুতেই নেবেনা অর্জুন।

চঞ্চল বললো " এটা তোমাকে দিই নি, তোমার ছেলে মেয়েদের কিছু কিনে দিও, আর না করোনা।"

অর্জুন টাকা নিলো শেষে, তারপর ফিরে যাচ্ছিল, চঞ্চল ডেকে বললো " অর্জুন দা.."

থমকে দাঁড়ালো অর্জুন, অর্জুনের তাড়াতাড়ি করে চলে যাওয়াটা চঞ্চলের চোখ এড়ায়নি। আগের দিন বেলা চারটা কি সাড়ে চারটায় ভেড়া নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল, এখন সবে তিনটা।

" তোমাকে একটা প্রশ্ন করবো?"

অর্জুন চুপ। চঞ্চল নাছোড়, ওর কয়েকটা হিসেব মিলছেনা। সারাদিন ঘুরতে ঘুরতে ভুলে গিয়েছিল বিগত রাতগুলোর কথা, এখন যেন ওর বারবার মনে হচ্ছে অর্জুন কিছু লুকাচ্ছে ওর কাছে থেকে। যা জানতে পারলে ওর উত্তর মিলে যাবে।

" তুমি কেন বৌদিকে আমি কোথায় থাকি বলতে নিষেধ করলে?"

অর্জুন চুপ।

" চুপ করে থেকোনা বলো অর্জুন দা"

অর্জুন আস্তে আস্তে মুখ খুললো, বললো " আমি পাহারা দেওয়ার কথা বলছিলাম, সেটা ওই বাড়িতেই দিতাম।"

" ও তাতে কি হয়েছে.. "

অর্জুন বেশ জোরের সাথে বললো " কি? কি হবে? কিছু হয়নি... আমার বৌ চায়না আমি ওখানকার কারো সাথে যোগাযোগ রাখি।"

" কেন?"

" আ..আমি কিচ্ছু জানিনা, কিচ্ছু জানিনা... আমি আসি.." তারপর দৌড়ে চলে যাচ্ছিলো। হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে ফিরে এসে বললো " দাদাবাবু ওই বাড়ি ছেড়ে দিন থাকবেন না ওই বাড়িতে, থাকবেন না.." বলে আর কোনো কথার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। চঞ্চলের আর ইচ্ছে করলো না পার্কে যেতে, আবার ঘরে ফিরতেও ইচ্ছে হলোনা। কি হচ্ছে? এসব ওর মাথায় ঢুকলোনা। শেষে একটা টিকিট কেটে পার্কে ঢুকে গেল। দেখলো বেশ কিছু বাচ্চা, অল্প বয়সী ছেলে মেয়ে এসেছে। সবাই সবার মতো মত্ত, চঞ্চল এসে একটা ফাঁকা স্থানে বসলো। বারবার একটা প্রশ্নই মনে আসলো কেন অর্জুন তাকে বাড়িটা ছাড়তে বললো এমন করে।

বেশ কিছুক্ষণ এমন করেই কেটে গিয়েছে, হঠাৎ মনে হলো ওর দিকে পেছন করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে সে যেন চেনে, হঠাৎ মনে পড়ে গেল সেদিন এই মেয়েটিকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেছে, আর ও নিশ্চিত এই মেয়েটি রাতে বসেছিলো বারান্দায়। মেয়েটি একটা বছর সাত আটেকের বাচ্চার হাত ধরে পিছু নিলো কিছুটা দূরত্ব রেখে। বাচ্চাটার হাত ধরে নীরবে হেঁটে যাচ্ছে মেয়েটি, বাচ্চাটা নাচতে নাচতে এগোচ্ছে, কিন্তু মুখে কোনো কথা নেই। চঞ্চল পিছু নিতে নিতে যেখানে এসে পৌঁছালো সেই পথটা ওর চেনা, দূর থেকে দেখা যাচ্ছে সেই বাংলোটা।

চঞ্চল দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো, এই যে শুনুন করে বারকয়েক ডাকলো, মেয়েটি তার হাঁটার গতি কিছুটা শ্লথ করলেও পেছনে তাকালো না একবারও। চঞ্চল ছুটে এসে পাশে দাঁড়িয়ে বললো

" আপনি এই বাংলাতে থাকেন? "

মেয়েটি কোনো উত্তর দিলো না, হাঁটার গতি দ্রুত করে দিলো। বাচ্চা ছেলেটা একবার চঞ্চলের দিকে তাকিয়ে মেয়েটির দ্রুত হাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটার চেষ্টা করতে লাগলো।

চঞ্চল আবারও বললো "আমি আপনার এই বাড়িতে দিন ২০-২৫ হলো ভাড়া এসেছি, আপনাকে কালকে দেখলাম, তাই পরিচয় করতে এলাম.."

ওরা এবারে প্রায় বাংলোর দরজার কাছে এসে পৌঁছে গিয়েছিল, চঞ্চলের শেষ কথাটা শুনে, একটা নিশ্চল দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেল কোনো কথার উত্তর না দিয়ে। চঞ্চল মনে বেশ অপমানিত বোধ করলো, মনে ভাবলো সামান্য ভদ্রভাবে তো কথা বলতে পারতো। তা না করে বাড়ির ভেতরে চলে গেল, কেমন অভদ্র রে..

বেলা প্রায় পড়ে এসেছিলো, চঞ্চল সেখান থেকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ওর ঘরের দরজার সামনে এসে,দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করলো। বাংলো একটা হলেও ভাড়াটিয়া আর মালিকের ঢোকার পথ ভিন্ন,কারো সাথে কারো যোগাযোগ নেই। ঘরে প্রবেশ করে জামা বদলে হাত পা ধুয়ে রোজকার মতো ওর সবসময়ের সাথী ছোট্ট গনেশের মূর্তিতে প্রণাম করে ধূপ জ্বালিয়ে দিলো, ও প্রতিদিন স্নান করে এবং সন্ধ্যার সময় ধূপ জ্বালিয়ে দেয়।তারপর কফি করে ভ্রমণের বইটা নিয়ে বসলো। কিন্তু চঞ্চল মন দিতে পারলো না, মেয়েটির এমন রূঢ় ব্যবহারের পরেও ওই মেয়েটিকে বারবার মনে পড়তে লাগলো। কাজল কালো শান্ত চোখের চাহনিটা মন কেড়ে নিলো ওর। কফি ঠান্ডা হয়ে যেতে থাকলো, হঠাৎ একটা বিকট শব্দে সম্বিত ফিরলো চঞ্চলের। তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলো,দেখলো সারা ঘর আঁধার, বুঝতে পারলো সে এমন ডুবে ছিলো মেয়েটির ধ্যানে লক্ষ্যই করেনি যে কারেন্ট চলে গিয়েছে। হঠাৎ সামনে চোখ পড়তেই চমকে চিৎকার করে উঠলো, ওর চিৎকারে একটা বেড়াল ছুটে পালালো চঞ্চলের গা ঘেঁষে। চঞ্চল বুঝতে পারলো বেড়াল, তবুও যেন ভয়ে ওর বুকটা ধুকধুক করতে লাগলো।বেড়ালটা যখন চঞ্চলের গা ঘেঁষে যাচ্ছিলো চঞ্চল লক্ষ্য করেছে বেড়ালটার গাঁয়ের রঙ কালো। সাদা হলে আঁধারেও কিছুটা বোঝা যায়। চঞ্চল চোখ বন্ধ করে কতক্ষণ বসে ছিলো কে জানে, হঠাৎ করে ঘরের আলো জ্বলে উঠতে চঞ্চল চোখ খুললো। বলেনা আলোতে ভয় কেঁটে যায়, চঞ্চলের ঠিক তাই হলো, অনেকটা ভয় কেঁটে গেল। তবে কেমন একটা ক্লান্তিও অনুভব করলো, সারাদিনের প্রতিটি কথা মনে হতে থাকলো। চঞ্চল আলো না নিভিয়ে বালিশে মাথা রেখে ক্লান্তিতে চোখ বুজলো...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror