Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Romance Thriller

3  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Romance Thriller

একটি মেয়ে.. (অন্তিম পর্ব)

একটি মেয়ে.. (অন্তিম পর্ব)

16 mins
229



চঞ্চলের বিয়ে, বরবেশে সে চলেছে বিয়ে করতে। মাকে প্রণাম করে সাজানো গাড়িতে উঠে বসলো ও, শুধু মেয়েরা না ছেলেরাও স্বপ্ন দেখে মনের মতো এক জীবনসঙ্গীর, তারসাথে সারাজীবন সুখে কাটানোর। গন্তব্য বেশ দূর, তাই সে ডুবে যায় অতীতে।

সেদিন খেয়ার বাড়ি থেকে ভারাক্রান্ত মনে ফিরেছিলো, খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো, একা পার্কে বসে সে কেঁদেছিল, খালি মনে হচ্ছিল কতটা ছোট হয়ে গিয়েছে সুবলা দেবীদের কাছে, খেয়া কি কিছু জানে? কি ভাবছে কে জানে? আজ চঞ্চলের চোখ বারবার খুঁজছিলো খেয়াকে, দুই একবার পর্দার আড়ালে খেয়াকে লক্ষ্য করেছিল কয়েকবার, কিন্তু একবারও চাক্ষুষ দেখতে পায়নি, ওর মন বলছে খেয়া সব জানে। চঞ্চল অস্ফুটে কান্না জড়ানো গলায় বলে উঠে "কে কি ভাবলো আমাকে আমার তাতে কিছু এসে যায়না, তুমি আমাকে ভুল বুঝলে, এটা যে আমার সহ্য হচ্ছেনা খেয়া। সহ্য হচ্ছেনা।"

চঞ্চল চোখ বুজে মাথা এলিয়ে দিলো,চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে যাচ্ছে, তবে চোখের উপর হাত থাকায় সেটা বোঝা যাচ্ছেনা। আজ কত আশা নিয়ে এসেছিলো খালি একটিবার খেয়াকে চোখের দেখা দেখবে সে, কিন্তু হলো কই।

এমন করে কতক্ষণ বসেছিল সে জানেনা, একটা হাতের স্পর্শতে তাড়াতাড়ি করে উঠে বসে দেখে অর্জুন আর রাঠোর। তাই মন খারাপ করে থাকতে পারেনি সে তখন, নিজেকে সংযত করে নিয়েছিল, সবার অলক্ষ্যে চোখ মুছে নিয়েছিল।রাঠোর বললো " কাম শেষ। "

চঞ্চল বললো " হ্যাঁ কাজটা হয়ে গিয়েছে।"

অর্জুন চঞ্চলকে লক্ষ্য করেছিল, কিন্তু বলব বলব করে বলছিল না। শেষে বলেই ফেললো " তা দাদা আপনার শরীরটা সুস্থ না নাকি?"

চঞ্চল বললো " কই নাতো।"

" তবে.."

এবারে রাঠোর বলল " আপনার আঁখদুটি কেমন লাল করছে, ওস বাত বলছ না?"

অর্জুন সম্মতি জানালো।

চঞ্চল বুঝতে পারলো কাঁদতে কাঁদতে চোখটা লাল হয়ে গিয়েছে, সে সেটা না বলে বললো " ঘুম এসে গিয়েছিল, তাই চোখটা লাল হয়ে গিয়েছে। কখন কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।" তারপর তাড়া দিয়ে বললো " চলেন এবার ফিরতে হবে। "

রাঠোরও বললো " হাঁ হাঁ চলেন।"

তখন ধীরে ধীরে বাচ্চারা পার্কে আসতে শুরু করছিল, হয়তো আর কিছুক্ষণ থাকলে পিকলুকে নিয়ে খেয়া আসবে। তবে সে মুখোমুখি হতে চায়না খেয়ার।

চঞ্চল গাড়িতে উঠার আগে নিজে থেকে অর্জুনকে টাকা দিতে গেল, অর্জুন আগের মতো না বলল। কিন্তু চঞ্চল বললো " দেখো তুমি আমার কথায় রাঠোরকে ঘুরিয়েছ, তেমন কিছু দিচ্ছিনা সামান্য দিচ্ছি। বাচ্চাদের ভালো কিছু খাইয়ো।"

রাঠোর বলল " আপনি কেনে? আমি দিচ্ছি।"

" আরে বন্ধু ছাড়ো এসব। "

রাঠোরের হাতে চাবি দিয়ে বললো " বাইকে নিয়ে এসো না দাদা, আমি একটু কথা বলি অর্জুনের সাথে। "

রাঠোর খুশি মনে বাইকটা আনতে গেল।

অর্জুনকে ওর নিজের নাম্বার লেখা কার্ডটা দিয়ে বললো " অর্জুন এই কার্ডটা যত্ন করে নিজের কাছে তোমার কোনো দরকার হলে আমাকে বলবে। আর.." বলে চুপ করে যায় চঞ্চল।

অর্জুন বলে " আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন, আমি হরকিশোর বাবুদের খোঁজ নিয়ে জানাবো, খারাপ কিছু হলে তো অবশ্যই।"

চঞ্চল কিছু বলতে পারেনি,শুরু হাত দুটো চেপে ধরেছিল।কৃতজ্ঞতায় চোখ দুটো ছলছল করে উঠেছিল।

রাঠোর অর্জুনের সাথে জঙ্গল ঘুরে বেশ খুশী আর উত্তেজিত ছিল, অনেক কিছু বলছিল বাইকে বসে। তবে চঞ্চল আর একটা কথা বলেনি, সোজা পিজিতে পৌঁছে বাইকটা রেখে, টাকা মিটিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে পোশাক বদলিয়েই শুয়ে পড়েছিল। সেদিন রাতেও কিছু খায়নি।

গভীর রাতে সাড়ে বারোটা কি একটা হবে। চঞ্চল দেখতে পেলো একটা নারী মূর্তি তার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে, তার দিকেই চেয়ে রয়েছে। চঞ্চল ওর মুখ দেখতে না পেলেও বুঝতে পারলো তার দিকে অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। চঞ্চল চিনতে পারলো এই হলো সেই মেয়েটি, না চাইতেও চঞ্চলের শরীর আড়ষ্ট হয়ে গেল। হঠাৎ ওর মনে সবকিছু কাঁপছে, চোখ মেলে দেখে রাঠোর ওর দিকে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে, আর ওর মুখ ভেজা।

চঞ্চল তাড়াতাড়ি করে বিছানায় উঠে বসে, রাঠোর বলে "ভাইয়া ঠিক আছে তো আপনি?"

চঞ্চল মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলার পরে জিজ্ঞেস করলো, " আমার কি হয়েছিল দাদা?"

" আর বুলবেন না, আমাকে তো ডরায় দিয়েছিলেন। আমি তো এগারোটার দিকে শুলাম, কিছু কাজ ছিল। আপনার কি হয়েছিল কন জানে, আপনি তো সাঁঝের আগের ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন। ঘুম আসতে এগারোটা বাজকর তিরিশ হোগা মালুম নেই, হঠাৎ এক আওয়াজ আয়া আপনার বিছানা সে। গোঁ গোঁ করকে। পেহেলে মে সমজা আমার মনকা ভুল, কিন্তু আওয়াজটা বেড়ে যাওয়াতে উঠে দেখি আপকা মুখ সাফেদ হয়ে গিয়েছে, আমি কত ডাকলাম, ধাক্কা দিলাম, কিন্তু কিছু হলোনা, শেষ মে আপনার মুখে জল দিয়ে দিলাম। তব যাকে আপ জাগে।"

অন্য সময় চঞ্চল এমন বাংলা শুনে ভুলগুলো ধরিয়ে দিতো, কিন্তু এখন সে পরিস্থিতি না। চঞ্চল আজও বুঝতে পারলো না সত্যি কি কেউ আসে, যদি আসে তবে আজ মনে হলো সে যেন কিছু বলতে চেয়েছে। চঞ্চল চুপ করে বসে থাকলো কিছুক্ষণ, লক্ষ্য করলো সে কেবলমাত্র জলে ভিজে নি, ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে গিয়েছে। রাঠোর বলল "সব ঠিকঠাক আছেন? "

চঞ্চলের এই পরিস্থিতিতেও এবার হাসি পেলো, মনে মনে ঠিক করলো ও নিজের দায়িত্বে বাংলা শেখাবে, নইলে নিজের না বাংলা ভুলে যায়। অবশ্য মানুষটার শেখার আগ্রহ রয়েছে, এখন সামান্য সাহায্য করতে হবে ওকে। চঞ্চল বললো " আপনি শুয়ে পড়েন, আমি এখন ঠিকঠাক আছি।" শেষ কথাটা বলে সামান্য হাসলো।

চঞ্চলের ঘুম আসছিলো না, একটু কফি বানিয়ে নিলো, তারপর আলো বন্ধ করে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো, শিলিগুড়ি শহরটা ঘুমে ডুবে রয়েছে, কেবলমাত্র রাতের গাড়ির আওয়াজটা ভেসে আসছে অনতিদূরের হাইওয়ে থেকে। 

হঠাৎ চিন্তার সুতো ছিন্ন হলো, বাইরে শোনা গেল বর আসছে বর আসছে। পাশে বসে থাকা চঞ্চলের বোন টোপরটা পড়িয়ে দিলো চঞ্চলকে। চঞ্চলকে বরণ করে নিলেন কন্যার মা, চোখ উনার আনন্দাশ্রুতে ভিজে রয়েছে, পাশে দাঁড়িয়ে কন্যার পিতা, উনার চোখেও তেমনই আবেগপূর্ণ সজল দৃষ্টি। বেশ ভালো আয়োজন করেছে, দরজায় তার আর হবু স্ত্রীর নামের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে বিয়ের মণ্ডপে প্রবেশ করলো। দেখে বুঝতে পারলো কিছুক্ষণ আগেই তার স্ত্রী ওই সিংহাসনে বসে তার প্রতীক্ষায় বসেছিল। তার আসবার খবরে ওকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চঞ্চল নিজের মনের অবস্থা অনুমান করতে পারছে না, কেমন একটা উৎকন্ঠা ওকে ঘিরে রেখেছে। চঞ্চলকে কিছু নিয়মকানুন পালন করা হলো, তারপর শুভদৃষ্টির পালা কন্যা এলেন পিঁড়িতে চড়ে, চঞ্চল তার হবু স্ত্রীকে দেখলো, না চাইতেও ফিরিয়ে নিতে পারলো না নিজের অভিভূত মেশানো দৃষ্টি। বন্ধুদের ঠাট্টা শুনে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো,এবার

মালাবদল, এই সময় বাঙ্গালী বিয়েতে চিরাচরিত ভাবে যা হয় তাই হলো। উভয়পক্ষের মালা পড়ানো নিয়ে পিঁড়ি উঁচু করতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলো চঞ্চলের হবু স্ত্রী, চঞ্চল হাত বাড়িয়ে তাকে ধরে নেয়, তাই রক্ষা। নইলে কি হতো কে জানে। সারা বাড়ি এক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।বাকি বিয়েটা ভালো মতোই হয়ে গেল। বাসর ঘরে এলো সবাই,ভাবছিলো সারারাত ধরে মজা করবে হঠাৎ আলো বন্ধ হয়ে গেল, চঞ্চল দেখলো ঘড়িতে বারোটা বেজে দুই। সবার চোখ এড়িয়ে বাইরে চলে এলো চঞ্চল। দেখতে পেলো সেই মেয়েটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে..

এমন সময় একটা স্পর্শ পেয়ে দেখে পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী। চঞ্চল হাতখানা ধরে দূরে দাঁড়িয়ে চাঁদটা দেখতে থাকে।

চঞ্চল অনেক সাধনার ফলে পেয়েছে এই মানুষটাকে, হরকিশোর বাবুর বাড়ি থেকে যাওয়ার পরে কোনো যোগাযোগ করেনি চঞ্চল, তবে ঠিক একমাস ধরে মূক ও বধিরদের ভাষা শিখে খেয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো ওদের পরিবারের সবার সামনে, খেয়া কিছু বলেনি প্রতুত্তরে, তবে ওর চোখদুটো সব বলে দিয়েছিল। অবশ্য এই বিষয় সাহায্য করেছিলো রাঠোর, রাঠোর এই চাকরির আগে মূক-বধির স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। অবশ্য সেটা স্থায়ী চাকুরী ছিল না, আর চঞ্চলের দৌলতে সে ভালো বাংলা কেবল বলতে পারে না,লিখতেও শিখে গিয়েছে।

অবশ্য এই বিষয়টির জন্য আরেকজনের কাছে সাহায্য পেয়েছিলো, সে হলো ওর দিদির ননদ কেয়া। আশীর্বাদের দিন সবটা খুলে বলে কেয়াকে। চঞ্চল ভেবেছিলো কেয়া তাকে অপমান করবে, কিন্তু উল্টে চঞ্চলকে অবাক করে দিয়ে বলেছিলো " চঞ্চল তোমাকে আমার স্যালুট, দেখো ভালো তো অনেকেই বাসতে পারে,কিন্তু কয়জন দায়িত্ব নেওয়ার কথা ভাবে। তুমি এমন একজনকে ভালোবেসেছ যার জন্য সমাজের সাথে পরিবারের সাথে লড়াই তোমাকে করতে হবেই, শুধু এই লড়াই এখন না সারাজীবনের জন্য। তুমি তৈরি তো চঞ্চল, পরে তো মনে হবে না ভুল করছ।"

চঞ্চল হেসে বলল " না মনে হবে না,বিশ্বাস করো কেয়া এমন অনুভূতি কারো জন্য হয়নি আর হবেও কিনা জানিনা। তুমি তো জানো আগেও আমার সম্পর্ক ছিল, সবাই সবটা জানেনা,তবুও তোমায় বলছি ব্যাঙ্গালোরে আমরা লিভইনে থাকতাম, কিন্তু খেয়াকে আমি বার তিন চারেক দেখেছি মাত্র, দেখার পরে থেকে কি একটা আকর্ষণ অনুভব করেছি কে জানে?"

" হু বুঝলাম, তোমার এই লড়াইয়ে আমি পাশে আছি, আরে নাইবা হলাম জীবনসঙ্গী, কিন্তু বন্ধু তো হতেই পারি তাই না?." বলে হাত এগিয়ে দিয়েছিল সে, চঞ্চল সংকোচে হাতটা ধরে। তারপর বলে " কেয়া তোমাকে আমি ঠকাতে চাইনি, তোমার সাথে আমার আশীর্বাদের ইচ্ছে ছিলো না, কিন্তু দিদির.. "

কেয়া চঞ্চলকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিল " তুমি তো আমাকে ঠকাওনি, বরং সবটা সত্যি বলার জন্য এখানে নিয়ে এসেছ। তোমার এতে দোষ কোথায়? মাত্র দিন তিনেকের মধ্যে আমাদের বিয়ে ঠিক করে আশীর্বাদ হয়ে গেল।তুমি তোমার ব্যবহার দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করে গিয়েছ আমাকে বারবার। আমি তো আগেই ঠকেছি চঞ্চল, আমার পাঁচ বছরের নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে বৃথা করে দিয়ে অর্থের পেছনে চলে গেল। " মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো, নিজেকে সংযত করে বলেছিল " সবই তো হলো খেয়াকে propose করেছ?"

চঞ্চল লজ্জিত হয়ে মাথা দুলিয়ে না বললো।

কেয়া বললো " এবার গিয়ে বলে দাও।"

" সে না হয় বলে দেবো,এদিকের বিষয়টা কি হবে? "

" আমি সব সামলে নেবো ভেবোনা, বৌদিদির ডেলিভারিটা ভালোয় ভালোয় হয়ে যাক, পুচকেটা সুস্থ মতো পৃথিবীতে আসুক,আমি বলে দেবো বুঝে শুনে। আমাদের বিয়ের দিনের দেরী আছে অনেক, তার আগে পুচকেটা এসে যাবে আমাদের মাঝে।"

চঞ্চল বললো " অনেক ধন্যবাদ। "

" ধন্যবাদ দিতে হবে না,বন্ধুদের কে ধন্যবাদ দেয়?"

চঞ্চল আর কিছু বলতে পারেনি।

সত্যিই কেয়া বড় সাহায্য করেছিল, খেয়াকে propose করার খবরটা শোনার পরে ও নিজের বাড়িতে জানিয়ে দেয় সে বিয়ে করতে চায়না। কিন্তু ওর বাড়ির লোক সেটা ভদ্রতার খাতিরে ওকে চঞ্চলের বাড়িতে জানায়নি তখন। যখন খেয়া ওর Proposal accept করে, তখন চঞ্চল বাড়ি গিয়ে সবটা জানায়,সেই সময়ও কেয়া চঞ্চলের পাশে ছিল সত্যিকারের বন্ধুর মতো। ওই সবাইকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করায়, এজন্য চঞ্চল ওর কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।

খেয়া চঞ্চলের কাঁধে মাথা রেখে দাঁড়িয়েছিল, আজ চঞ্চলের নিজেকে সর্বাপেক্ষা সুখী মানুষ মনে হচ্ছিলো। এমন সময় পিকলু কোথা থেকে এসে জড়িয়ে ধরে ওদেরকে, চঞ্চল কোলে তুলে নেয় পিকলুকে। সে মাসিকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারে যে।

পরের দিন হরকিশোর বাবুর বাড়িতে তোরজোড় শুরু হয়ে গিয়েছে, কন্যা শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে, আজকে উনার মনটা কতটা আনন্দে ভরে আছে তা উনার ডাক-হাক থেকে বোঝা যাচ্ছে। খেয়া চঞ্চল পাশাপাশি বসে,সবাই একে একে আশীর্বাদ করছে। খেয়ার মায়ের সুস্থতার জন্য কিছুটা অবদান চঞ্চলের, যেদিন খেয়াকে বিয়ের কথা বলে, সেদিন খেয়ার মাকে বলেছিল " মা একটিবার আমাকে বিশ্বাস করে দেখুন সবাই খারাপ হয়না মা, আপনি আমাকে আশীর্বাদ করবেন না, বরণ করবেন না। তাহলে কি করে আমাদের বিয়েটা হবে, আমার দিকে একটি বার তাকান, আমি জানি যে চলে গিয়েছে সে ফিরবেনা। কিন্তু সে যে তার অংশকে আপনার ভরসায় রেখে গিয়েছে, তাকে তো মানুষ করতে হবে।" বলে পিকলুকে তার দিদার কোলে তুলে দেয়। তারপর কি একটা ঘটে যায়,পিকলুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন তিনি। সেদিনের পরে থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেন। বিয়ের অনেক কাজ তিনি নিজে হাতে করেছেন।

সবাই একে একে আশীর্বাদ করলো তাদের। খেয়া চঞ্চল দুইজনই একটি মানুষকে খুঁজছিলো, সে হচ্ছে সুবলাদেবী। কিন্তু তাকে কোথাও দেখতে না পেলো না, কাল এসে থেকে দেখেনি। খেয়ার মা জিজ্ঞেস করলেন "বাবা কাউকে খুঁজছো?"

চঞ্চল প্রথমে কিছু বলতে পারলোনা, নতুন জামাই বলে, কিন্তু স্ত্রীর চোখের ভাষাও একই কথা বলছে দেখে সে

বাধ্য হয়ে হরকিশোর বাবুকে বললেন " সুবলা মাসি কই? "

পাশে থাকা খেয়ার মা বললো " ও ওর নিজের ঘরে বাবা।"

" কেন? উনি আমাদের আশীর্বাদ করবেন না?"

" আর বলোনা আমাদের কথা শুনছেই না, বলছে আমি বিধবা, আমি এই অনুষ্ঠানে থাকলে আমার খেয়ার ক্ষতি হবে।"

চঞ্চল বললো " উনি আশীর্বাদ না দিলেই ক্ষতি হতে পারে, উনাকে ডাকুন। উনার আশীর্বাদ ছাড়া আমাদের নবজীবন কি করে সুখের হবে। আর দেখুন খেয়ার চোখও ওর পিসিমাকে খুঁজছে।" সুবলা দেবীর কাছে খবর পৌঁছালো, তিনি বাধ্য হয়ে বেড়িয়ে এলেন।

সুবলা দেবী আশীর্বাদ করতে গিয়ে নিজের চোখের জল আর আঁটকে রাখতে পারলেন না। চঞ্চল বললো " মাসিমা চিন্তা করবেন না আপনার মেয়ের পাশে আমি সবসময়ই থাকবো।"

সুবলা দেবী বললেন " আমি তা জানি বাবা, আমার তো লজ্জা লাগছিলো এই ভেবে তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। "

" সেসব পুরোনো কথা ছাড়ুন, আপনারা তো জীবনে অনেক খারাপ দেখেছেন, তাই আমাকে সেসময় দাঁড়িয়ে ভুল বোঝা স্বাভাবিক। "

এবারে সুবলাদেবী একটা সোনার মালা চঞ্চলকে পড়িয়ে দিয়ে বললো " এটা আমার স্বামী একমাত্র চিহ্ন,তা আমি তোমাকে দিলাম, জানি তুমি এর মূল্য বুঝবে। " চঞ্চল বারণ করলেও শুনলেন না, বললেন " না নিলে মনে কষ্ট পাবো।" তাই চঞ্চল সেই স্নেহের দান ফিরিয়ে দিতে পারল না।

আজ চঞ্চলের বৌভাত, সব সারতে রাত বারোটা বেজে গেল। ঘরে খেয়া ওর জন্য অপেক্ষা করছে। চঞ্চল ব্যলকনীতে দাঁড়িয়ে সিগারেটে সুখটান দিচ্ছিলো। চঞ্চলের সিগারেটের নেশা নেই, তবে আজ উত্তেজনা কমাতে খাচ্ছে। হঠাৎ আগের দিনের মতো আঁধার হয়ে গেল , চঞ্চল দেখলো অনতিদূরে সেই মেয়েটি দাঁড়িয়ে, চঞ্চল ভয় পেয়ে চিৎকার করতে যাচ্ছিল। সেই মেয়েটি আজ প্রথম কথা বললো, আর চঞ্চল দেখলো ধীরে ধীরে মেয়েটার রূপ পরিবর্তন হচ্ছে, কি সুন্দরী সে, যেন ওর শ্বাশুড়ি মায়ের মুখ বসানো , সে বললো " ভয় পেয়োনা চঞ্চল, আমি কেয়া, তোমার স্ত্রীর দিদি।আজ তোমার সামনে নিজের অ্যাসিড পোড়াহীন মুখ নিয়ে এলাম, অবশ্য এসব কোনোটাই বাস্তব না। প্রেতলোকে যাওয়ার পরে কিছু কিছু কাজ আমার করতে পারি। এসবই মায়া, বাস্তবে আমি কেবলমাত্র ছায়া। চঞ্চল তুমি সবটাই জানো, শুধু এটা জানোনা আমার মুখে যারা অ্যাসিড ছুঁড়েছিল তারা তেমন শাস্তি পায়নি,খালি আমাকে অকালে চলে যেতে হলো, বেঁচে থাকলে আরও যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো আমার পরিবারকে।চলে গিয়েও চলে গিয়েও যেতে পারিনি,কারণ আমিই আমার পরিবারের অসহায়তার কারণ,এদের উপর যাতে পুণরায় কোনো আঘাত না আসে এই ভেবে চলে যেতে পারিনি। তাছাড়া ছিল পিকলুর টান, তাই বারবার ফিরে ফিরে এসেছি আমি, একেই বুঝি বলে অপত্যস্নেহ। আর খেয়াকে নিজের মনের মতো করে বড় করেছি, তাই ওর টানটাও কম না। ওকে ঘিরে রেখেছিলাম বিপদ থেকে এড়ানোর জন্য। তাই তুমি যখন বাড়ি এলে তোমাকেও নজরে নজরে রাখলাম, তুমি আজ পর্যন্ত যা দেখেছ যা করেছ, সবই মায়া, যা আমার তৈরী ছিল। যাতে তুমি ভয় পেয়ে আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাও, কারণ আমার জীবনের সাথে যা ঘটেছিল,তা খেয়ার সাথে ঘটুক আমি তা চাইনি। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম, আজ প্রথমবার নিজের ভুলে আফসোস না আনন্দ লাগছে। আর নিশ্চিন্তও লাগছে, এবারে আমি নিশ্চিন্তে মুক্তি নিতে পারব।"

চঞ্চল বাক্যহীন স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে, কথা বলার ক্ষমতা যেন হারিয়ে ফেলেছে ও। হঠাৎ মনে হলো কেয়ার কায়াহীন দেহটা ওর দিকে যেন কিছুটা এগিয়ে এলো। এক পাক ওর চারিদিকে ঘুরে নিয়ে বললো " তুমি বেশ দেখতে, আজ আরও সুন্দর দেখাচ্ছে। "তারপর কি একটা এগিয়ে দিলো কেয়া। চঞ্চল তেমনি ভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো দেখে, কেয়া বললো " নাও বলছি," তারপরে কিভেবে বললো " ঠিক আছে তুমি না নিলেও আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।" চঞ্চল একটা শক পাওয়ার মতো কি একটা অনুভুত হলো। দেখলো ওর হাতে একটা Rolex এর ঘড়ি। চঞ্চল ঘড়ি পড়তে ভালোবাসেনা। ওর শৌখিনতা তেমন নেই, শুধুমাত্র রয়েছে ঘুরার নেশাটুকুই রয়েছে। কেয়া যেন ওর মনের কথা পড়ে নিয়ে বললো " আমি জানি তুমি ঘড়ি তেমন পছন্দ করনা, আমি করতাম। বোনের হবু স্বামীর জন্য অনেক আগেই এখানা কিনে রেখেছিলাম। আমি কি জানতাম আমার ভাগ্যে ওর বিয়েতে সশরীরে থাকা হবেনা, আর আমি যে এটা কোথায় রেখেছি কেউ জানতো না, তাই তোমায় এটা দিতে আমাকে আজ আসতেই হলো।আজ তোমার জন্য অনেক কষ্টে কেয়ার এই রূপটা ধারণ করেছি, এই রূপে আসতে যেমন কষ্ট তেমনি অনেক শক্তি ক্ষয়ের সাথে সাথে যন্ত্রণা হয়, কারণ আমি তো এই রূপে মরিনি। আমি চলে যাচ্ছি, আর তোমাকে ভয় পেতে হবে না। খেয়াকে যত্নে রেখো, আর পিকলুর দায়িত্বও তুমি নিয়েছ। পালন করতে পারবে তো? " তারপর থেমে বললো " আমি জানি পারবে, তুমি বাকি ছেলেদের মতো না। তবে আজ যাওয়ার আগে তোমার কাজটা কিছুটা হালকা করে দিয়ে যাবো,ভালো থেকো তোমরা।" বলে কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেল কেয়া। চঞ্চল কত কি বলতে চেয়েছিল, সে যে কতটা শ্রদ্ধা করে তাকে সেটা জানানোই হলোনা।

এমন সময় একটা ধাক্কায় চঞ্চল ধরমর করে উঠে বসলো, দেখলো ওর ছোট বোন আর দিদির ননদ কেয়া দাঁড়িয়ে,

"কি রে দাদা কি তুই? এখানে শোফায় পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস আর ওদিকে বৌদিদি তোর অপেক্ষায় বসে রয়েছে। "

চঞ্চল দেখলো সে তাদের বারান্দায় রাখা শোফায় আধশোয়া ভাবে শুয়ে রয়েছে।

কেয়া ঠাট্টা করে বললো " কি গো তুমি, যার জন্য এতো তপস্যা তাকে একা রেখে এখানে বসে রয়েছ।"

চঞ্চল লজ্জিত হয়ে উঠে দাঁড়ালো, তবে মনে মনে ভাবলো আজও কি মনের ভুল। এমন সময় একটা বাচ্চার কান্না আর চিৎকারে সবাই নীচে ছুটে গেল, সবাই অবাক হয়ে দেখলো পিকলু মা মা বলে চিৎকার করে কাঁদছে। চঞ্চল গিয়ে কোলে তুলে নিলো, সবাই পিকলুকে কথা বলতে দেখে এতোটা হতবিহ্বল যে কে কি করবে বুঝতে পারেনি কেউ। খেয়া অনেক আগেই ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল, দূরত্ব অনেকটা দেখে বৌভাতের সকালে সবাই এসে পৌঁছেছে। চঞ্চলকেও আগের দিন পৌঁছাতে হয়েছিল শিলিগুড়িতে বিয়ে করতে গিয়ে, ওদের জন্য অবশ্য একটা অনুষ্ঠান ভবন ঠিক করে রেখেছিলেন হরকিশোরবাবু। শিলিগুড়ি শহরের বেশ ভালো জায়গায় ছিল সেটা, যাতে সবাই ঘুরে ফিরে শিলিগুড়িটা দেখতে পারে।

চঞ্চল কোলে তুলে নিয়ে চোখ মোছাতে যেতেই নিজের হাতের দিকে চোখ পড়াতে নিজেও চমকে উঠলো, তারমানে কেয়াদি সত্যি এসেছিলো, চঞ্চল বুঝতে পারলো পিকলুর কথা বলতে পারা ওর একটা উপহার। চঞ্চলের নিজের চোখও আর্দ্র হয়ে উঠলো, সে বুকে জড়িয়ে ধরলো পিকলুকে। পিকলুও শান্ত হয়ে গেল চঞ্চলের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের মাঝে।


_______


এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে, খেয়া নিজেও মা হয়েছে। ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে, সবাই যেটা ভয় পেয়েছিলো সেটা হয়নি, মেয়ে সুস্থ আর স্বাভাবিক, শুধু স্বাভাবিক না ওর কথার ফুলঝুরিতে দাদু- ঠাম্মা -দিদাদের মাতিয়ে রাখে। আজ পাঁচ বছরে পড়েছে সে। বাড়ি ভর্তি আত্মীয় স্বজন, পিকলুও আজ ব্যস্ত ওর বোনের জন্মদিন বলে কথা মানির হাতে হাতে কত কাজ করে দিচ্ছে। চঞ্চলের তো দম ফেলার ফুরসত নেই। দিন দুই হলো মেদিনীপুরে এসেছে সবাইকে সাথে নিয়ে, অর্জুনকেও বাদ দেয়নি। সে শিলিগুড়িতে থাকে চাকরির জন্য, ওই বাড়িতেই থাকে। খেয়ার একার পক্ষে অসুবিধা দুটোকে সামলানো।অবশ্য ছুটি পেলেই চলে আসে তারা। চঞ্চল না আসতে পারলেও খেয়া ছেলে মেয়ে দুটোকে নিয়ে চলে আসে। চঞ্চলের মা খেয়াকে শুধু ভালোবাসেনা, মাথায় তুলে রাখে। বুঝতে পেরেছে মেয়েটা কতটা ভালো, তবে সহজে বুঝে নিই, একটা ঘটনা বুঝতে সাহায্য করেছে। চঞ্চলের মা সিঁড়ি থেকে পড়ে পা ভেঙ্গে ফেলেন, তখন সবে চঞ্চলের বিয়ে হয়েছে। খেয়া তখন এখানেই ছিল, পরের সপ্তাহে চঞ্চলের এসে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পা ভেঙ্গে যাওয়ায় খেয়ার আর ফেরা হয়নি, অবশ্য ও ফিরতেও চায়নি৷ তিনমাসের কঠোর পরিশ্রম করে মাকে উঠে দাঁড় করালো,তবে চলার ক্ষমতা তখনও তার হয়নি। প্রায় আটমাসের পরিশ্রমে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন। শুধু দেহের সুস্থতাই পেলেননা, মনের কালিমাটাও দূর হলো তার। তারপর থেকে চঞ্চল লক্ষ্য করেছিল সে যা রাঠোরের কাছে থেকে হাতে কলমে শিখেছিলো, ওর মা খেয়ার সাথে থাকতে থাকতে এমনিই শিখে গিয়েছিল। শুধু মা না,বাবা বোন, দিদি, জামাইদাদাও বেশ বুঝতে শিখেছিলো খেয়াকে। জামাইদাদা যে কখন খেয়ার দাদা হয়ে উঠেছিল তারা নিজেরাই বুঝতে পারেনি।

" চঞ্চল ও চঞ্চল গিয়া কাহা?"

"আরে রাঠোর" চঞ্চল এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বন্ধুকে। বলে " কি রে দেখছি আগের রাঠোর হয়ে গিয়েছিস।"

" আরে মোটেও না, ঘরে বাঙ্গালী বৌ, ভুল বাংলা বললে কি খাওয়ার জুটবে কপালে। তোমাকে পুরোনো রাঠোরকে মনে রয়েছে কিনা তাই দেখলাম" এমন করে বললো চঞ্চল হো হো করে হেসে উঠলো। রাঠোর কেবলমাত্র ওর বন্ধু না, এখন আত্মীয়ও বটে। চঞ্চলের মুখে কেয়ার কথা শুনে বড় দেখার ইচ্ছে হয়েছিল ওর, এমনই মেয়ে আছে, যে স্বেচ্ছায় নিজের দাবি ছেড়ে দেয়।চঞ্চলের বিয়েতে কেয়াকে দেখে ভালোবেসে ফেলে, চঞ্চল শুনেছে পরে নাকি বাংলায় গান গেয়ে Propose করেছিল কেয়াকে। কেয়াও বুঝতে পেরেছিলো মানুষটা কত সরল। বিয়ে নিয়ে দুই পরিবার থেকে বেশ ঝামেলা হয়েছিল, দুটো ভিন্ন রাজ্যের মানুষ। তার উপর রাঠোরের পরিবার নিরামিষাশী, তবে রাঠোর কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। তাই ও এতো নিয়মকানুন মানেনা। রাঠোর ও কেয়া নিজের পরিবারকে জানিয়ে দেয় ওদের বিয়ে না দিলে, তারা কোনো দিনও অন্য কাউকে বিয়ে করবেনা। তারপর উভয় পরিবারই রাজি হয়, খুব আনন্দ হয়েছিল ওদের বিয়েতে। প্রথমে ওদের বাঙ্গালী নিয়মে বিয়ে হয়, তারপর রাজস্থানি নিয়মে। বরযাত্রীদের জন্য আলাদা নিরামিষ খাবারের ব্যবস্থা ছিল। তবে সম্পূর্ণভাবে বাঙ্গালী খাবার। সবাই খেয়ে ধন্য ধন্য করেছিল, বাঙ্গালী নিরামিষ রান্নার যে এতো সমাহার, তা তারা জানতো না, কেয়াকে কিছু পদ রেঁধেও খাওয়াতে হয়েছিল, কেয়া পরে এসব কথা মজা করে চঞ্চলকে জানিয়েছিল। কেয়া এখনো মজা করে বলে, "জানো চঞ্চল ভালোই হয়েছে ওকে বিয়ে করে, দুই ধরনের বিয়ের গহনা শাড়ি পেয়েছি। আর দেখতে পেয়েছি দুই রাজ্যের নিয়মে কতটা মিল রয়েছে আর কতটাই বা অমিল। " এখন তো চঞ্চল দেখে মাঝে মাঝে দুই পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে যায় কেয়ারা। কয়েকবার চঞ্চলরাও ওদের সঙ্গী হয়েছিল৷ কেয়াও বেশ রাজস্থানি ভাষা শিখেছে, অবশ্য ভাষাটাকে রাজস্থানি বলে না, কি একটা যেন বলে। চঞ্চল বুঝতে পেরেছে খেয়াদেরই ভালো, ওদের কথা বলতে কোনো ভাষার প্রয়োজন হয়না। তাই সহজে মিশে যেতে পেরেছিল।

চঞ্চল তখন খাবারের দিকে তদারক করছিলো, এমন সময় পেছনে একটা চাপড় পড়াতে পেছন ঘুরে দেখে চঞ্চলের জামাইদাদা অর্ণবকে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই মানুষটা চঞ্চলকে খুব সাহায্য করেছিল কেয়াদিকে সুবিচার দেওয়াতে। আজ অ্যাসিড আক্রান্তকারীরা সবাই জেলে। 

" কি মেয়ের বাবা খুব ব্যস্ত দেখছি।"

" তা তো একটু ব্যস্তই বটে.."

" এ যে এলাহি কাণ্ড করেছ।"

চঞ্চল জামাইদাদার দিকে তাকিয়ে বলে " শুধু মেয়ের বাবাকে দোষ দেওয়া কেন? মেয়ে পিসানরাও কি কম যায়, আমি তো ছোট করেই করতে চেয়েছিলাম, তার দুই পিসি, দুই পিসো। দুই দাদু, ঠাম্মা, দুই দিদা মিলে তো উঠে পড়ে লেগেছে। আমি এখানে উপলক্ষ্য মাত্র। " চঞ্চল এমন করে বলল কথাটা সবাই হেসে উঠলো, চঞ্চলের দিদি আর বোন দুইজনেরই ছেলে, মেয়ে নেই। তাই চয়নিকা ওদের চোখের তারা।

চঞ্চল নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো, পরীর চেয়ে কম লাগছেনা। দুপুরে পায়েস আর ধান দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করেছে সবাই, তখন বাচ্চাদের জন্য পাওয়া যায় যে শাড়ি জামা সেটাই পড়িয়েছিল, এখন লেহেঙ্গা। কেক কাটানোর ইচ্ছে ছিলো না, কিন্তু ওর ছোট পিসান এনেছে, মেয়ে চয়নিকা তো কেবলমাত্র তার মেয়ে না।

হই হই করে কেক কাটা শুরু হয়, সবাইকে কেক খাওয়ানোর পরে এক দিকে হাত বাড়ায় চয়নিকা। দেখে মনে হচ্ছে সেখানে কাকে যেন কেক খাইয়ে দিচ্ছে সে, কিন্তু সেখানে কাউকে দেখতে পায়না বাড়ির কেউ। সবাই ভাবে চয়নিকার বাচ্চা মতি তাই এমন করেছে, কিন্তু চঞ্চলের আবার সেই ভয়টা ফিরে আসে, শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়........



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror