একটা স্মৃতি
একটা স্মৃতি
ঐ বয়সের কোনো কথা হয়তো মনে থাকার কথা না কারোর।কিন্তু আজো আমি ভুলিনি সেইদিনে সেই ছোট্ট ঘটনাটা। স্কুলে আমরা সবাই এক ইউনিফর্ম পড়ে যেতাম । তাই বুঝতে পারি নি কখনো, কে বড়োলোক , কে গরীব লোক। আর বয়সটাই বা কতো ছিলো তখন, মাত্র চার বছর, অতশত বুঝতে পরবো। গোটা একটা বাক্য এক সাথে পড়তে পারতাম না নিজে থেকে।
মা বাবা গরিব ছিলো। টিফিন দিতে পারতো না। সবাই টিফিন খেতো যখন , তখন হা করে দেখেতাম, কিন্তু সত্যি বলছি চাইতাম না। মা বাবা বলেছিলো কেউ কিছু দিলে নিতে নেই। ভয় দেখিয়ে ছিলো আমাকে খাবারে কিছু মিশিয়ে দিয়ে ধরে নিয়ে যাবে আমাকে।আমি যে ওদের রাজপুত্তর। একদিনে রূপকথার মতো সব কষ্ট দূর করে দেবো । তাই আমাকে ধরে নিয়ে যাবে ওরা। আমি ও হারিয়ে যাব সবার থেকে।
স্কুলে সবাই বন্ধু হলো। সবাই খেতে দিতে চাইতো, নিতাম না। অরিজিৎ একটু ভালো বন্ধু হয়েছিলো। কিন্তু ওর কাজের মেয়েটা আমাকে পছন্দ করতো না।
আমার সামনেই বলতো-" খোকা বাবু , ওর সাথে মিশো না, ঘা হবে গায়ে, উকুন হবে মাথায়। ওরা যে গরীব , ওরা কেমন নোংরা জামা কাপড় পড়ে দেখো না।"
গরীব বলে কি আমাদের ঘেন্যা করতে হয়।আমি খেতে পাই নে এমন নয়। ওদের মতো হয়তো ভালো কিছু পাই না।আমার মাও কখনো কখনো পটল বিস্কুট কিনে দিতো , লম্বু কিনে দিতো, বাপুজির কেকও কিনে দিতো, লাল কমলা কাঠি আইসক্রিম কিনে দিতো। কিন্তু অরিজিৎ যে কেকটা খেতো তাকে "প্রেস্টি " না কি জেনো একটা বলে। কখনো সাদা মেঘের মতো, কখনো কাঠগোলাপের মতো গোলাপী রঙের ক্রীম লাগনো থাকে ওতে। একদিন ওকে জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম- "কোথায় কিনতে পাওয়া যাবে ওটা।"
ও বললো -" খাবি তো , খা না একটু, খুব ভালো খেতে।"
আমি বললাম -"না"
ও জানে কেন আমি খাই না, কিছু ও দিলেও।
ও বললো " আমার মাথাটা দেখতো একটাও উকুন আছে। আমি তো তোর সাথে মিশি। ওরকম বড়রা বলে, তাছাড়া আমি তো তোর বন্ধু, ছেলেধরা নৈ। খা না। "
বলে জোর করে খাইয়ে দিল ক্রীম কেকটা। ওর কাজের দিদি দেখে নিয়ে , আমার মাকে নালিশ করে ছিলো। আমি নাকি জোর করে ওর টিফিন কেড়ে খেয়ে নিয়েছি। অনেক মেরেছিলো মা। বুঝেছিলাম বন্ধুত্ব করতে গেলেও কিছু শর্ত চলে, আসে গোপনেই। অথচ ছেলেবেলাতো অবুঝ , অতোশত শর্ত কিভাবে সে বুঝবে!

