একতাই বল
একতাই বল


রনোদের গ্রাম গঙ্গানগর একটা ছোট শহরের পঞ্চায়েত এলাকায় । গ্রামের মাধ্যমিক স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র রনো । ওদের গ্রামের রাস্তা ঘাট ইটের তৈরি মাঝে মাঝে ভেঙে গর্ত হয়ে গেছে বরষার জল জমে থাকে । ওদের গ্রামে হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের লোকই আছে কমবেশি । একটা ছোট মসজিদ আছে নিয়মিত নামাজ পড়া হয় । দূর্গা পূজার সময় আর রথযাত্রার সময় বেশ ধুমধাম করে উৎসব পালন করা হয় ।
গ্রামের একধারে একটা রিফুজি কলোনি , বাংলাদেশের থেকে আসা উদ্বাস্তু গরীব লোকের বসবাস । এদের বাড়ির মহিলারা ঠিকাঝি কাজ করে আর পুরুষরা রিক্সা চালক । রনোদের গ্রামের নাম গঙ্গানগর আর এই নামেই স্কুলের নাম । গ্রামের ছেলে মেয়েদের মাধ্যমিক পর্যন্ত গ্রামের বাইরে যাওয়ার দরকার হয় না পড়াশুনা করতে । তবে কয়েক জন মুসলিম মেয়ে মাদ্রাসা তে পড়তে যায় । গঙ্গানগর থেকে একটু দুরেই পিচের রাস্তা , বাস অটো চলে । বাস বা অটো করে শহরের কেন্দ্রে পৌঁছতে পনেরো মিনিট সময় লাগে । গঙ্গানগরে চাকরিজীবী লোকের সংখ্যা বেশি আর কিছু মানুষ দোকান চালায় মানে ব্যবসায়ী । সকলের বাড়ির সঙ্গে জমি আছে সেখানে ফল ফুলের গাছপালা আছে । গ্রাম পঞ্চায়েত যথেষ্ট ইলেকট্রিক আলো এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ।
সরকারি হাসপাতাল গঙ্গানগর থেকে খুব বেশি দুর নয় তবুও পঞ্চায়েত থেকে একটা স্বাস্থকেন্দ্র খোলা হয়েছে । এই স্বাস্থকেন্দ্রে কর্মী নিয়োগ নিয়ে কিছু দিন ধরে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে । পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে গ্রামের মুসলমান সমাজে একটা অসন্তোষ দানা বেঁধেছে । ভারতে মুসলিম ছেলেরা সাধারণত লেখাপড়া নিয়ে মাথা ঘামায় না দৈনিক শ্রমিকের কাজ করতেই এদের দেখা যায় এবং হিংস্র প্রকৃতির মানুষ হয় । খুন রাহাজানি এদের খুবই পছন্দের বিষয় । তাই সাধারণ মানুষ এদের এড়িয়ে চলে । গঙ্গানগর গ্রামে একটা ভীতি তৈরী হয়েছে । গঙ্গানগরে বসির আলির মেয়ে ফাতিমাকে স্বাস্থকেন্দ্রে নিয়োগ করার জন্য পঞ্চায়েত প্রধানকে অনুরোধ করা হয়েছিল কিন্তু স্বাস্থকেন্দ্রে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মী চাই তাই ফাতিমার আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে তাতে বসির আলি বিক্ষোভ জানিয়েছে এবং একটা গন্ডগোল তৈরীর হুমকি দিয়েছে ।
গঙ্গানগর বেশ থমথমে করছে দু'দিন । রনোর মা রনোকে খেলতে যেতে দেয়নি ।
পিচের রাস্তা পেরিয়ে গ্রামে ঢোকার পথের দুপাশে ঝোপ জঙ্গল তবে রাস্তায় সবসময়ই লোক জনের ভীড় থাকে । গতকাল থেকে গন্ডগোলের আশঙ্কায় লোকে বাড়িতেই রয়েছে তাই রাস্তাটা ফাঁকা ছিল , ফাতিমা আর ওর মা মোমিনপুরে মাসির বাড়ি থেকে ফিরছিল রাত সাড়ে নয়টার সময় । এরকম ওরা আগেও এসেছে কোনো অসুবিধা হয়নি কিন্তু আজকে কেউ রাস্তার আলো নিভিয়ে রেখেছিল । দুজন মহিলাকে দেখে অন্ধকারে চারজন দুস্কৃতকারি হঠাৎ এসে ফাতিমার মা'কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ফাতিমাকে তুলে নিয়ে যায় । ফাতিমার মা পড়ে গিয়ে আঘাত পেলেও কোনো রকমে ছুটে গিয়ে পঞ্চায়েত অফিসে খবর দেয় । পঞ্চায়েত থেকে পুলিশকে সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় । কিন্তু গ্রামের ছেলেরা সবাই ফাতিমাকে খুঁজতে বাইরে বেরিয়ে পরে । কিছুক্ষণ পর বসির আলি খবর পেয়ে আসে এবং পাগলের মত ছুটতে ছুটতে ইটভাটার দিকে যায় । গ্রামের ছেলেরা বসির আলির সঙ্গে গিয়ে ফাতিমাকে উদ্ধার করে এবং ঐ দুস্কৃতিদের পুলিশের হাতে তুলে দেয় । গঙ্গানগর গ্রামের মানুষ এক হয়ে ফাতিমার জীবন রক্ষা করে ।