একং সৎ বিপ্রা বহুধা বদন্তি
একং সৎ বিপ্রা বহুধা বদন্তি


প্রকৃতি মাতা তাঁর কোলে সব ধরনের মানুষকে স্থান দিয়েছেন। প্রকৃতি মাতার এই বৈচিত্র্য দেখে শুভ বিস্মিত হয়। কিন্তু সে ভেবে পায় না কেন মানুষেরা তাও একে অপরের সাথে দ্বন্দ্ব করে। সবই তো প্রকৃতি মাতার সৃষ্টি। কিন্তু শুভর এইসব ভালো লাগে না। সে গর্ব অনুভব করে ভারতের সন্তান বলে। এই ভারতবর্ষই প্রকৃতি মাতার বৈচিত্র্যকে হৃদয়ঙ্গম করেছে। কেউ যদি দ্বন্দ্ব করে শুভ সেই দ্বন্দ্ব থামানোর চেষ্টা করে। সেই সব মানুষগুলোকে বোঝায়,"তোমরা কিসের জন্য দ্বন্দ্ব করছো? কার সাথে দ্বন্দ্ব করছো? তোমরা নিজের সাথেই তো দ্বন্দ্ব করছো। তোমরা কি বোঝনা সমগ্র পৃথিবীই সেই ভগবানের সৃষ্টি। আর সবার মধ্যে ভগবান আছেন।" নম্র,ভদ্র,শান্ত স্বভাবের শুভ অন্যায় দেখলে রুখে দাঁড়ায়। একজন তাকে জিজ্ঞেস করে,"এই যে তুমি বলো সব ভগবানের সৃষ্টি। সবার মধ্যে ভগবান আছেন। তাহলে তুমি কেউ অন্যায় করলে তার প্রতিবাদ করো কেন? যে অন্যায় করছে তার মধ্যেও তো ভগবান আছেন।" শুনে মৃদু হেসে শুভ বলে ওঠে,"তুমি একদম ঠিক বলেছ। তার মধ্যেও যেমন ভগবান আছেন আমার মধ্যেও তেমন ভগবান আছেন। সব যখন তারই সৃষ্টি সেই ভগবানই তো আমাদের কাজ করিয়ে নেন। আমরা তো কিছু করিনা। আমি যন্ত্র তিনি যন্ত্রী, আমি ঘর তিনি ঘরনী, আমি রথ তিনি রথি। আচ্ছা দেখো এই পৃথিবীটা কত সুন্দর। এই পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের মানুষ আছেন এবং বিভিন্ন ধরনের দেশ আছে। আমাদের দেখে মনে হয় এইসবই আলাদা। একপ্রকার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলে এগুলি আলাদা এটা ঠিক। কিন্তু আরেক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যদি আমরা দেখি তাহলে দেখবে সবই এক। আচ্ছা আমরা দেশগুলোর একটা সীমানা রচনা করেছি।
বলতে পারো আদৌ কি ভগবানের সৃষ্টি কে কোনো সীমা দিয়ে বাঁধা যায়? তুমি যেখানেই যাও সেখানেই ভগবান আছেন। জীবের মধ্যেও যেমন ভগবান আছেন, তেমনি জড়ের মধ্যেও চৈতন্য বিদ্যমান। শুধু রূপ আলাদা। ভগবানই বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন আঙ্গিকে নিজেকে প্রকাশ করেছেন এই সৃষ্টিকে বাঁচানোর জন্য। তুমি যখন ভগবানকে নিজের সবটুকু দিয়ে ভালবাসবে তখন দেখবে এই সব সীমা, প্রত্যেক মানুষ এইগুলো ভেদবুদ্ধি মনে হচ্ছে। তখন বুঝতে পারবে সবই এক শুধু রূপে ভিন্ন। বুঝতে পারবে ভগবানই বস্তু আর সব অবস্তু।" শুনে ব্যক্তিটির মধ্যে অসাধারণ এক ভাবের সৃষ্টি হল। সে বলল," এই যে পৃথিবীতে এত ধরনের মত, এত ধরনের পথ, এত ধরনের মানুষ এগুলো কি সব মিথ্যে?" "নাগো! না! মিথ্যে হবে কেন। সবই ভগবান। এই ভেদবুদ্ধিও সত্যিই আবার অভেদবুদ্ধিও সত্যি। শ্রীরামকৃষ্ণ একটা চমৎকার কথা বলেছিলেন, আম খেতে এসেছো আম খেয়ে যাও। অত সব জেনে কি হবে? কটা গাছ কাটা পাতা ওসব জানার দরকার নেই। সেইরকম তুমি শুধু কাজ করে যাও। আর ভগবানে মনটা ফেলে রেখো। দেখবে সব বুঝতে পারবে। তখন দেখবে এই পৃথিবীর বহুত্ববাদ যেমন সত্য আবার সবাই এক এটাও সত্য বুঝতে পারবে, একং সৎ বিপ্রা বহুধা বদন্তি"- বলল শুভ।