STORYMIRROR

KAJOL MANDAL

Abstract Tragedy

3  

KAJOL MANDAL

Abstract Tragedy

একা তুমি

একা তুমি

2 mins
213

 সূর্য সবে ডুবেছে।সুদীপ নদীর তীরে বসে বসে একমনে সেটা দেখেছে।কীভাবে নদীর ওপাড়ের জঙ্গলটার নীচে ধীরে ধীরে রাঙা সূর্যটা মিলিয়ে গেছে।কিঁচিমিঁচি কিঁচিমিঁচি করতে পাখিরা সব বাসায় ফিরে গেছে।এই কিছুক্ষণ হলো। চারপাশটা এখন একদম চুপচাপ।দুর্গা পূজো শেষ হওয়া দিন ক'য়েক হলো।পূজোর সেই মাতামাতি,সেই হৈচৈ হারিয়ে গেছে সময়ের সাথে সাথেই।এই মফস্বলের পরিবেশ এখন এক বিদায়ের বিষাদের মায়ায় মাখামাখি।   


 নদীর তীরের এখানে ওখানে এতক্ষণ কয়েকজন বসেছিল। তারাও বিকাল ফুরাতে ফুরাতেই উঠে গেছে সব।নদীর তীরে এখন মানুষ বলতে সুদীপ বসে।আক্ষরিক অর্থেই একা একা। বসার জায়গাটার পাশেই একটা ছোট্ট নৌকো বাঁধা আছে।দড়ি দিয়ে বাঁশের খুঁটির সাথে।নদীর জলের ঢেউ ছলাৎ ছলাৎ করে এসে তাতে ধাক্কা খাচ্ছে।নদীর ঢেউ এর সেই ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আশেপাশের নির্জনতাকে যেন আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। 


 আজ পূজোর পর প্রথম একটা টিউশনে এসেছিল সুদীপ।সেটা সেরে বাড়ী ফেরার পথে নদীর ধারে বসেছে।দু'দণ্ড জিরিয়ে নেবার ইচ্ছে। আর কী।কয়েক বছর হলো সুদীপের কলেজে পাশ করা।তারপর চলছে চাকুরীর পরীক্ষার প্রস্তুতি।সঙ্গে টুকটাক দু' একটা প্রাইভেট টিউশন।এতে পড়ার চর্চাটা থাকে।সাথে সাথে নিজের হাত খরচাটাও হয়ে যায়।সময়টাও কাটে।এই আর কী।   


 পূজোর কয়েক দিন বন্ধু বান্ধবদের কয়েক জনকে পেয়েছিল।তারপর পূজো ফুরোতেই সেই সবাই স্বাভাবিক ভাবেই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল।ওদের মধ্যে কেউ কেউ চাকরী বাকরী করে।কেউ বা ব্যবসা। কয়েক জন বিয়ে টিয়েও করেছে।কিংশুক একজনের সাথে প্রেম করে।যদিও ও বলে না সেভাবে।তবে ওদের এক সাথে অনেক জায়গায় ঘুরতে টুরতে দেখেছে সুদীপ।  কিংশুক সেদিন শুধাচ্ছিল সুদীপকে,মনের মানুষ এখনও পাওনি বন্ধু?                    


সুদীপের মন বলে উঠেছিল,মনের মানুষ আছে মনে।তবে মুখে কিছু বলেনি।একটু হেসেছিল খালি।  

আসলে কিংশুক যে রকম ভালো লাগার কথা বলছে সে রকম একজনকে পেয়েছিল।কলেজে পড়তে পড়তে।তবে কলেজ শেষ হতে হতে সে সম্পর্কেও ইতি পরে গেছে।মনের কথা মনেই রয়ে গেছে। দু'জনেই দু'জনের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে।                       


 সুদীপের একটু শীত শীত করছে।এবার দুর্গা পূজা একটু পরের দিকেই হলো। চারপাশের নদীর জলে।চারপাশের প্রকৃতিতে।একটা যেন আলতো হিমের ছোঁয়া। হেমন্ত আসছে। বাংলার প্রকৃতি থেকে তো কয়েক বছর হলো হেমন্ত হারিয়েই গেছে বলতে গেলে।এর জন্য পরিবেশ দূষণই দায়ী।আমাদের ভোগ বিলাসের বলী প্রকৃতি।এর ফলে আমরা সাময়িক সুখ পেয়েছি।বদলে হারিয়েছি স্থায়ী শান্তি। একেই হয়তো বলে বুমেরাং।              


 চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে।সন্ধ্যা নামছে।মেঘ মুক্ত আকাশে টুক্ টাক্ করে জ্বলে উঠছে ঐ একটা দু'টো করে তারারা। জ্যোৎস্নার নরম আলোয় চারাপাশ কেমন এক মায়াময়।              


বিসর্জনের পরের প্রতিমার একটা পট পরে আছে। ঐ নদীর তীরের পাশে। আর এখানে ওখানে পরে আছে কিছু ভাঙা ঘট টট। এইসব। সব যেন এখন একা। আর একা। অনেকটা আমাদের মনের মতো।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract