বন্ধু
বন্ধু
#সাহিত্যের অণুপ্রেরণা🐦কল্পনা
------------------------
আমরা জনা পাঁচেক বন্ধু বান্ধব মিলে রাঙাদাদুর বৈঠকখানায় বসে বসে আড্ডা দিচ্ছি।ক্যারাম পিটাচ্ছি।আর মাঝে মাঝে ঘরের মস্ত ঘড়িটার দিকে তাকাচ্ছি।কখন পাঁচটা বাজে।আজ যে রবিবারের বিকাল।রাঙাদাদু প্রতি রবিবার রবিবার আমাদের একটি করে গল্প বলেন।ঠিক বিকাল পাঁচটায়। ঢং-ঢং- করে পাঁচটা ঘন্টার রেশ মিলিয়ে যেতে না যেতেই রাঙাদাদু ঘরে ঢুকলেন।সাদা ধুতি পাঞ্জাবী পরে।আমরা খেলা টেলা ছেড়ে দাদুর কাছে গিয়ে সকলে বসলাম।দাদু বেতের চেয়ারে পা মুড়ে বসে শুরু করলেন।
''গ্রীস। পুরানো আমলের গ্রীস।আজ থেকে তাও এক হাজার বছর আগের হবে।তখন দেশটা ছোট ছোট অঞ্চলে বিভক্ত ছিল।আর প্রত্যেক অঞ্চলের ছিল একটা রাজা।সেইসব রাজারা অন্য অঞ্চলের রাজাদের সঙ্গে পরস্পর যুদ্ধে বিগ্রহে মেতে থাকতো।আর যুদ্ধে বিজয়ী রাজারা পরাজিত রাজার সৈনিকদের যুদ্ধ বন্দি করে আনতো।তারপর তাদের ওপর অনেক সময়ই চালাতো অকথ্য অত্যাচার। তো একবার এক সেই রকম রাজা যুদ্ধে জয়ী হয়ে দেশে ফিরছে।সঙ্গে বেশ কিছু যুদ্ধ বন্দীও আছে।হাতির পিঠে গাদাগাদি করে বাঁধা।অনেকটা পথ।যেতে যেতে সন্ধে নেমে এলো।একটা বনের পাশ দিয়ে যাচ্ছে দলটা।পথ বড় অন্ধকার।তার উপর ঝম্ ঝম্ বৃষ্টি হচ্ছে।
' তাঁবু খাটাও এখানে।' রাজার হুকুমে সৈন্যরা সব মিলে পথের পাশে জঙ্গলের ধারে তাঁবু খাটালো।ইচ্ছে রাতটা এখানে কাটিয়ে আবার সকালে যাত্রা শুরু করা।তাঁবু খাটানো হল বেশ কিছু।কোনোটা রাজার।কোনোটা মন্ত্রীর।কোনোটা বা সেনাপতির।এছাড়াও সৈন্য সামন্তদের জন্য কয়েকটা।আর যুদ্ধ বন্দীদের রাখা হলো খোলা আকাশের নীচে।গাছের সঙ্গে হাত পা বেঁধে।কিছু সৈন্য থাকল পাহাড়ায়।মশাল জ্বালানো হলো তাঁবুর ভিতরে ভিতরে।
বাইরে দু একটা মশাল জ্বালানো হয়েছিল প্রথমে।কিন্তু বৃষ্টির দাপটে তা জ্বলতে না জ্বলতেই নিভে গেছে কখন।তাঁবুর বাইরে চারপাশে এখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। হুক্কাহুয়া--হুক্কাহুয়
া--করে শোনা যাচ্ছে শিয়ালের ডাক।কখনও বা জঙ্গলের ভিতর থেকে শোনা যাচ্ছে পিলে চমকানো বাঘ,সিংহের গম্ভীর গর্জন।তার উপর ঝম্ ঝম্ বৃষ্টি।খোলা আকাশের নীচের যুদ্ধবন্দি গুলোর অবস্থা আর বলার না।ইচ্ছে করছে পালিয়ে যেতে,কিন্তু ওদের হাত পা যে গাছের সঙ্গে বাঁধা।শক্ত করে বাঁধা। এইভাবে এক সময় ভোর হয়ে আসলো।বৃষ্টি থেমে গেছে।মেঘ মুক্ত ঝকঝকে আকাশী আকাশ। সৈন্যরা সব তাঁবু টাঁবু গুটিয়ে যেতে যাবে,এমন সময় দেখলো একজন যুদ্ধবন্দি কম।কখন পালিয়েছে। খোঁজ খোঁজ।জঙ্গল টঙ্গল তোলপাড় করে সব খুঁজতে লাগলো।বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে ওকে ধরে ফেললো।রাজা ভীষণ রেগে উঠে বললে,'দেশে ফিরে ব্যাটাকে দেখছি।'
রাজপ্রাসাদের অদূরে কিছু কিছু জায়গা লোহার জাল দিয়ে দিয়ে ঘেরা।তার কোনোটায় বন থেকে ধরে আনা সিংহ।কোনোটায় বাঘ।একটায় একটি ষাঁড়।কয়েক দিন আগে ধরে আনা হয়েছে।বিশাল দেহ।রাগী চোখ দুটো লাল লাল।জবাফুলের মতো টকটকে লাল।মাঝে মাঝে সে রাগে গোঁ গোঁ করছে।সে ডাক শুনে বুকের রক্ত হিম হয়ে আসছে আশে পাশের সব যুদ্ধ বন্দীদের।
সেই পালানো যুদ্ধ- বন্দীটাকে একদল সৈন্য ধরে নিয়ে আসলো।ষাঁড়ের খাঁচাটার দরজার সামনে।সেই দরজা খুলে বেচারাকে ধাক্কা দিয়ে খাঁচার ভিতরে ফেলে দিল।ফেলে দিয়ে ঘটাং করে আটকে দিল খাঁচার দরজাটা। প্রকান্ড ষাঁড়টা রাগে ফুঁসছে।সামনের দুই পায়ে মাটি ঠুকছে।আক্রমণের ঠিক আগের মুহুর্ত।বেচারা বন্দীটার ব্যর্থ চাউনি বন্ধ খাঁচার দেওয়ালে দেওয়ালে কেঁদে উঠলো।তারপর ভয়ে ওর চোখ দু'টি বুঁজে এল। 'আমার কোনো ব্যথা লাগছে নাতো।বেশ কিছুক্ষণ তো হলো।আমি তাহলে বেঁচে আছি!'- এইসব ভাবতে ভাবতে বন্দীটা চোখ খুললো।দেখে তার পাশে মস্ত ষাঁড়টা শান্ত হয়ে বসে বসে জাবর কাটছে।ওর চোখ দু'টোই এখন বড় মায়া মাখা। ষাঁড়টা যখন ছোট ছিল তখন এই বন্দীটা ছিল ওর রাখাল বালক।ষাঁড়টাকে ও খেতে দিত।চরাতো।সেটা এই বন্দীটা ভুলে গেলেও ষাঁড়টা ভোলেনি।''