সন্ধ্যার সন্ধ্যামণি
সন্ধ্যার সন্ধ্যামণি


তখন লকডাউন চলছে।বাড়ীর বাইরে নেহাৎ দায়ে না পড়লে বেড়াচ্ছিলাম না।প্রায় প্রত্যেক বিকালেই বাড়ীর ছাদে পায়চারী করতাম।রাস্তায় গাড়ী টারী একদম চলছিল না।হাতে গোনা দু' একটি ছাড়া।আর রাস্তা ঘাটে লোকজনও নাম মাত্র।তাই যান্ত্রিক শব্দ প্রায় সেরকম ছিলই না। চারপাশটাতে একটা কান আরাম দেওয়া পরিবেশ। আমাদের বাড়ীটাও মফসল অঞ্চলে।চালচলনে মানুষের মনে পাশের শহরের ছোঁয়া লাগলেও এপাশে ওপাশে নানা রকম গাছপালা,টুকটাক পুকুর,মাঠ এসবও আছে।মানে পাড়ায় প্রকৃতির পরশ বেশ কিছুটা রয়ে গেছে। তো বাড়ীর ছাদে সেদিন পায়চারী করছি।মেঘ মুক্ত আকাশী আকাশ।বিকাল এই শেষ হব হব।কিঁচির মিঁচির করতে করতে পাখিরা নীড়ে ফিরছে সব।থেকে থেকেই উঁচু আকাশ পথে রাস্তার ঐ পাশে লালচে লালচে ফুলে ফুলে ভরা একটা গাছ।করবী গাছ।তার ডালে ডালে কিঁচির মিঁচির করে হুটোপুটি করছে একটা চড়ুইয়ের ঝাঁক।ফুল,পাতার আড়ালে আড়ালে দেখা যাচ্ছে ওদের লাফালাফি।হঠাৎই ঝাঁকটি ফড়্ ফড়্ করে উড়ে গেল খুব নীচ দিয়ে।ফুরুৎ ফুরুৎ করে ঝাঁকটি আড়াল হয়ে গেল বাগানের মস্ত আমগাছটির ওপাশে।সাদা সাদা মুকুলে ভরে উঠেছে গাছটির ডালটি।তার হাল্কা নরম মন ভালো করা গন্ধ নাকে আসছে আমার ।ট্যা ট্যা করে করে একটা সবুজ টিয়ার ঝাঁক উড়ে গেল খুব নীচ দিয়ে। উড়তে উড়তে ঝাঁকটি ঐ পশ্চিম দিকে মিলিয়ে গেল।যেখানে সূর্যটা সবে অস্ত গিয়েছে।তার রাঙা রঙ ছড়িয়ে পড়েছে গাছের পাতায় পাতায়।উড়ে চলা পাখির ডানায় ডানায়।রাঙা রঙ লেগেছে মেঘ মুক্ত ঝকঝকে আকাশী আকাশে আকাশে।এপাশে ওপাশে।চারপাশে। ঝিঁঝিঁর সুরে চারপাশের নির্জনতা ফুটে উঠছে আরো। ছাদের টবগুলির দিকে চোখ গেল আমার।সেখানে ফুটেছে বেশ কিছু সন্ধ্যামণি।নরম লালচে লালচে সন্ধ্যার সন্ধ্যামণি।