শিপ্রা চক্রবর্তী

Abstract Horror

4.0  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Abstract Horror

দ‍্যা লাস্ট জার্নি....

দ‍্যা লাস্ট জার্নি....

5 mins
370


ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। এ বছরের শীতটা খুব ভালো মত অনুভব করা যাচ্ছে। আজ রাত পার হলেই কালকে বড়দিন। শহর যেন উৎসবের আমেজে সেজে উঠেছে। চারিদিকে আলোয় আলোয় ভরা। কৌশিকের বাড়ি হাসনাবাদে, কোলকাতার পার্কস্ট্রিটের একটা বড় হোটেলে ম‍্যানেজারের পদে কাজ করে কৌশিক। নতুন বছর এবং ক্রিসমাস ইভের পার্টির জন‍্য এই সময় হোটেলে বড্ড কাজের চাপ। কৌশিকের এখন নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় পর্যন্ত নেই। ডিসেম্বর মাস পড়ে থেকেই কৌশিক বাড়ি ফিরতে পাড়েনি তবে আজকে রাতে ফিরবে কারন কৌশিক তার পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়েকে কথা দিয়েছে বড়দিনের দিন তার সাথে সময় কাটবে। তাই হোটেলের সমস্ত কাজ সবাই কে ভালো করে বুঝিয়ে দিয়ে মেয়ের জন‍্য কেনা কেক,ও চকলেটের বক্সটা ব‍্যাগের ভিতরে ঢুকিয়ে সবাই কে অগ্রীম বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে কৌশিক বেড়িয়ে পড়ল শিয়ালদহ স্টেশনের উদ্দেশ্যে।


সত‍্যি ডিসেম্বর মাসে পার্কস্ট্রিট যেভাবে রঙিন আলোয় সেজে ওঠে তাতে অপূর্ব লাগে। কৌশিক শিয়ালদহ যাওয়ার বাসে উঠে পড়ল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল দশটা বাজে। কলকাতা শহরের বুকের ওপর দিয়ে ছুটে চলল বাস তার নিজের গন্তব‍্যের উদ্দেশ্যে। তবে তিলোত্তমা সুন্দরী ঘুমায়নি এখনও, সে যে সারারাত জেগেই থাকে।। চারিদিকে এখনও প্রচুর মানুষের ভীড় এবং গাড়িও চলাচল করছে। কৌশিক যখন শিয়ালদহ স্টেশন পৌঁছাল তখন ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে সময় সাড়ে দশটা। কৌশিক এক ঢোক জল খেয়ে শান্তির একটা নিঃশ্বাস নিল, কারন এখনও অনেকটা সময় আছে হাতে, তাই ট্রেন মিস হওয়ার ভয় নেই। আর এটাই হাসনাবাদ যাওয়ার শেষ ট্রেন। এরপর আবার সেই সকালে আছে। কিছুক্ষনের মধ‍্যেই যান্ত্রিক আওয়াজ ভেসে উঠল.... ট্রেন নাম্বার ৩৩২১৪৩ আপ শিয়ালদহ... হাসনাবাদ...... লোকাল বাইশটা বেজে আটান্নো মিনিটে পাঁচ নম্বর প্ল‍্যাটর্ফম থেকে ছাড়বে।


কৌশিক পাঁচ নম্বর প্ল‍্যাটফর্মে গিয়ে ট্রেনের মাঝ বরাবর একটা কামরায় উঠে ভালো করে নিজেকে চাদর দিয়ে ঢেকে কানে হেডফোন লাগিয়ে বসল। একেই রাতের শেষ ট্রেন, তার ওপর শীতকাল লোক নেই বললেই চলে। এখন যাও বা দু একটা লোক আছে, দুটো কি তিনটে স্টেশন পার হতে না হতেই সবাই নেমে যাবে। কিন্তু কৌশিক তো শেষ অবধি যাবে তাই এত গুছিয়ে বসা।


দশটা আটান্নো বাজতেই ট্রেন হুইশেল দিয়ে ধীরে ধীরে চলতে শুরু করল। কখনও আলো আবার কখনও আঁধার এইভাবেই সবকিছুকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলল ট্রেন তার গন্তব‍্যের উদ্দেশ‍্যে। কৌশিক যেমনটা ভেবেছিল ঠিক তেমনই হল বারাসাত আর মধ‍্যমগ্রাম পাড় হতেই ট্রেন পুরো ফাঁকা। এই গোটা কমপার্টমেন্টে কৌশিক একা। কৌশিক এর আগে কোনদিন এত রাতের ট্রেনে যায়নি। কৌশিকের ঠিক ভয় করছেনা তবে কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে মনের মধ‍্য। আসলে অন‍্য সময় হলে তো বাঁদর ঝোলা করে যেতে হয়!! সেই একই ট্রেন এখন পুরো ফাঁকা জন মানব হীন, তাই হয়তো মনের মধ‍্যে একটা অন‍্য রকম অনুভূতি হচ্ছে।


বেশ কিছুক্ষন ট্রেনটা দাঁড়িয়ে রয়েছে, হয়তো স‍িগন‍্যাল পায়নি!! কৌশিকের চোখটা লেগে এসেছিল তাই খেয়াল করেনি এটা কোন স্টেশন। হঠাৎ করে খুব ঠান্ডা অনুভব হওয়ায় কৌশিকের ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। জানলা উঠিয়ে মুখটা বার করে চেয়ে দেখল বসিরহাট স্টেশন। চোখটা লেগে গেছিল তাই কখন বসিরহাট ঢুকেছে ট্রেনটা কৌশিক বুঝতেও পাড়েনি। আর হাতে গোনা চারটে স্টেশন তারপরেই নেমে পড়বে ভেবেই কৌশিকের মনটা আনন্দে ভরে উঠল। জানলাটা ভালো করে খুলে বাইরে চেয়ে দেখল কুয়াশায় ঢেকে গেছে চারিদিক। স্টেশনে আলো জ্বললেও চারিদিকে যেন ধোঁয়া ধোঁয়া লাগছে। দূর থেকে শিয়ালের করুন সুর শোনা যাচ্ছে। কৌশিক জানলাটা নামিয়ে ভালো করে নিজেকে ঢেকে নিয়ে আবার চোখটা বন্ধ করলো।


কিছুক্ষনের মধ‍্যে আবার যান্ত্রিক আওয়াজ কানে ভেসে আসল ৩৩২১৪৩ আপ শিয়ালদহ হাসনাবাদ লোকাল এক্ষুনি এক নম্বর প্ল‍্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে যাবে। আওয়াজ টা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে ট্রেনটা চলতে শুরু করল। কিছুক্ষন যাওয়ার পর ট্রেনের ভীতরটা অস্বাভাবিক রকম ঠাণ্ডা হয়ে উঠলো। মনে হতে লাগল চারিদিকে যেন মোটা বরফের চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কৌশিকের শরীর যেন ঠান্ডায় অবশ হয়ে যেতে লাগল। হাত পা ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল। কৌশিক চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে চমকে উঠল। কারন কৌশিকের সামনে একটা খুব সুন্দর দেখতে মেয়ে বসে আছে এবং মুখে একটা অদ্ভুত রহস‍্যময় হাসি।


কৌশিক মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগল এই মেয়েটা চলন্ত ট্রেনে কি করে উঠল??? আর এত রাতে একটা মেয়ে একা একা কোথায় যাচ্ছে?? আগে তো দেখলাম না তা হলে কি বসিরহাট ছাড়ার সময় উঠেছে?? হবে হয়তো!!!আমি খেয়াল করিনি।

কৌশিকের ভাবনায় ছেদ পড়ল কারন মেয়েটি কৌশিককে দেখে আরও একটু খানি হাসলো এবং কৌশিকের চোখে চোখ রেখে বলল কি ভাবছেন কখন ট্রেনে উঠলাম?? এত রাতে মেয়ে হয়েও একা একা কোথায় যাচ্ছি??


কৌশিক অবাক হয়ে চেয়ে রইল এবং মনে মনে বলে উঠল মনের কথা পড়তে পাড়ে নাকি! অদ্ভুত তো!!

মেয়েটি বলে উঠল মাথার ওপর অত চাপ দেবেন না। আমি রোজ রাতে এই ট্রেনে যাই। একটু পরেই নেমে যাব। অন‍্যদিন কোন সঙ্গী পাই না, আজ না হয় একজন সঙ্গী পেলাম! কি বলেন? এই বলে হো.... হো.... করে হেসে উঠল।


কৌশিক একটু হাল্কা হাসল। কারন হাসতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। শরীর ঠান্ডায় অবশ হয়ে গেছে, মনের মধ‍্যে কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে। আর মাথার মধ‍্যে বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। হঠাৎ করে চারিদিক থেকে একটা তীব্র পচা এবং আঁশটে গন্ধ ভেসে আসতে লাগল। কৌশিকের গা ঘুলিয়ে উঠল। কৌশিক নাক মুখ কুচকে বলে উঠল কি বাজে গন্ধ মনে হয় কিছু মরে পচেছে।


মেয়েটি অদ্ভুত ভাবে হেসে উঠল।

কৌশিক আবার কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই চোখের সামনে দেখল মেয়ের অবয়ব টি একটু একটু করে একটা গলাকাটা পচা দেহতে পরিনত হচ্ছে। চারিদিকে রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে, এবং সেই দেহের মধ‍্যে পোকা লটলট করছে। মাছি ভিনভিন করছে, বিভিষিকাময় সেই দৃশ‍্য। অত ঠান্ডার মধ‍্যেও কৌশিকের সর্ব শরীর যেন আগুনের গোলার মত গরম হয়ে গেছে , কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠেছে, এবং পর মুহুর্তে চোখের সামনে ধীরে ধীরে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল কৌশিকের।


প্রবল একটা ধাক্কা এবং ঝাকুনিতে কৌশিক চোখ খুলল এবং আশে পাশে চেয়ে দেখল কিছু মানুষের ভীড়। কৌশিক ভালো করে চোখটা রোগড়ে বোঝার চেষ্টা করতে লাগল ও কোথায়। তারপর চেয়ে দেখল ট্রেনের মধ‍্যে শুয়ে আছে। এবং চারিপাশে প্রচুর মানুষের ভীড় হয়তো ট্রেনটা আর কিছুক্ষনের মধ‍্যেই ছাড়বে। কৌশিকের চোখের সামনে কালকে রাতের সমস্ত ঘটনা ভেসে উঠল। কৌশিক ঝটপট ট্রেন থেকে নেমে চোখে মুখে জল দিতে লাগল।


পিছন থেকে একটা গলার আওয়াজ ভেসে আসল কি হল দাদা কিছু দেখে ভয় পেয়েছিলেন মনে হল? কালকে রাত্রে এই শেষ ট্রেনে ফিরে ছিলেন বুঝি!

গলার উৎস বুঝে কৌশিক পিছন ফিরে দেখল একটা হকার যে ট্রেনের মধ‍্যেও ওকে ডাকছিল। কৌশিক আমতা আমতা করে বলল ঐ একটা মেয়ে...,,.

লোকটি বলল বুঝতে পেরেছি আপনাকে জ্ঞান হারানো অবস্থায় দেখেই, থাক আর বলতে হবেনা। আসলে কিছুদিন আগে একটা মেয়ে বসিরহাট ছাড়িয়ে এসে ট্রেন লাইনে গলা দিয়েছিল। তাই শেষ ট্রেনে যারা ফেরে তারা ওকে দেখতে পায়।

কৌশিক এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলল ও......।আর কৌশিকের কানে ভেসে উঠল মেয়েটির শেষ কথাটা..... অন‍্যদিন কোন সঙ্গী পাই না এই শেষ ট্রেনে,আজ না হয় একজন সঙ্গী পেলাম কি বলেন!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract