দুর্গারা.. 🍂
দুর্গারা.. 🍂
# অণু গল্প (পর্ব -১)
এবার দূর্গাপুজোর সময় এক অদ্ভুত ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলাম । সপ্তমীর দিন বসেছিলাম মণ্ডপে , সাথে পাড়ার আরও কিছু মেয়ে ছিল । রিয়া , সুপর্ণা , দয়িতা , রিখিয়া আরও অনেকে । ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি আমরা l তবে বড্ড মিস করছিলাম শর্মিলাকে। ও প্রতিবার থাকে আমাদের সাথে । কিন্তু এবার নেই l কারণ ওর বর কোভিড নাইন্টিনের ছোবলে চলে গেছে । ও মুম্বাইতে থাকতো বরের সাথে । কিন্তু স্বামী মারা যাবার পরেও ফিরে আসেনি, ওখানেই রয়েছে এখনো । শুনেছি, ওখানে এখন ও চাকরি করছে।
--- " ইশ ! কি খারাপ লাগছে শর্মিলার জন্য । মাত্র তো তিন বছর বিয়ে হয়েছিল । এর মধ্যেই বিধবা হয়ে গেলো । বড্ড কষ্ট লাগে রে ভাবলেই । " দয়িতা বলছিলো মুখটা করুণ করে l
---" হ্যাঁ রে যা বলেছিস ! এই বয়সেই সব রং মুছে গেলো মেয়েটার জীবন থেকে । এখনো ওই শহরেই পড়ে আছে । বোধহয় স্মৃতি আঁকড়ে পড়ে আছে বরের, " বললো রিখিয়া l
-- "আমার সাথে তো মাঝে একবার কথা হয়েছিল । বলেছিলো আসবে পুজোয় । কেন যে এলো না কে জানে ! বোধহয় পালিয়ে বেড়াতে চায় সব কিছু থেকে।" বললো সুপর্ণা ।
কিন্তু শর্মিলা ফাইনালি এসেছিলো । নবমীর দিন ওকে দেখে অবাক আমরা ! বেশ হাসিখুশি , সপ্রতিভ। পরনে কচি কলাপাতা সালোয়ার । ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক , কপালে ছোট টিপ্ । গলায় সরু চেন ।
-- ' আসবো না ভেবেও চলে এলাম রে l গতকাল এসেছি l সন্ধ্যাতেই আসবো তোদের কাছে ভেবেছিলাম , কিন্তু স্কুলের বন্ধুরা জোর করে ডিনারে নিয়ে গেলো ' l
--' তুই বাইরে ডিনার করিস এখনো '? অদ্ভুত প্রশ্নটা করেই ফেললো রিখিয়া l
-- ' ওমা ! করবো না কেন l তোরা তো জানিসই আমি বরাবরই চাইনিজ খেতে ভালোবাসি ' l
তারপরেও আরও খানিকক্ষণ গল্প করলো শর্মিলা l বললো, " ও মুম্বাইতে রয়ে গেছে কারণ ওখানে ও একটা চাকরি করে l এমনিতে একা থাকলেও , ওর বেশ কিছু বন্ধু আছে ওখানে l " ঘন্টাখানেক গল্প করে চলে গেলো শর্মিলা l
অদ্ভুত ভাবে শর্মি চলে যেতেই ফেটে পড়লো বাকিরা , যারা ওর তথাকথিত 'বন্ধু' বলে পরিচিত l
--"দেখলি দুঃখের কোন লেশমাত্র নেই l কে বলবে দিন কয়েক আগেই ও বিধবা হয়েছে ' ! খরখর করে বলে উঠলো রিখিয়া l
--- ' ছাড় তো ! দেখ আবার কাউকে জুটিয়ে নিয়েছে কিনা ! সাজের বহর দেখলি না ' ? মুখ বেঁকিয়ে বললো দয়িতা l
--- ' হ্যাঁ চাকরি , বন্ধু সব নিয়ে বেশ রয়েছে l ঐজন্যই তো মায়ানগরী মুম্বাই ছেড়ে আসতেই পারেনি মহারানী l ভাব , বিধবা হয়েও লজ্জা নেই l নির্লজ্জের মতো চাইনিজ খেয়ে বেড়াচ্ছে এখনো ' l গলায় শ্লেষ ঝরে পড়লো সুপর্ণার l
আমি স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছিলাম ওদের আলোচনা দেখে l দু দিন আগেই তো শর্মিলা খারাপ আছে দেখে দুঃখে কাতর হচ্ছিলো ওরা , "তাহলে আজ ও ভালো আছে দেখে এরা এতো জ্বলছে কেন?!"
দশমীর দিন আমি গিয়েছিলাম শর্মিলাকে শুভেচ্ছা জানাতে l শুভেচ্ছা জানিয়ে বললাম ,
---' এভাবেই ভালো থাকিস রে ' l উত্তরে শর্মি ম্লান হাসলো , "ভালো থাকার চেষ্টাই করি রে সব সময় l হঠাৎ করে নিজের মানুষটাকে হারিয়ে ফেলার পর ডিপ্রেশনে ডুবে গেছিলাম l তারপর নিজের মনের জোরে আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠেছি সেই ফেজটা l এখন অনেক ভালো আছি রে l কারোর সহানুভূতি আমি চাই না রে l ওই জিনিসটা বড্ড হার্ট করে l তাই নিজেই নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করি l"
আমি হাতে হাত রাখলাম শর্মিলার l মনে মনে বললাম ,"এই মনের জোরটাই বজায় রাখিস l আসলে পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষই বোধহয় অন্যকে করুণা দেখাতেই বেশি ভালোবাসে , অন্যের ভাল থাকাটা দেখে সবাই খুশি হতে পারে না l তাই প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলেও ভালো থাকতে হলে নিজেকে নিজেরই সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে হয় , মনের জোর রাখতে হয় l"
---' কিরে কি ভাবছিস ' ? বললো শর্মিলা l
--- ' ভাবছি যেন তোর মতো মনের জোর আমিও পাই সব পরিস্থিতিতে ' , হেসে জবাব দিলাম আমি ।।
(কলমে-পিয়ালী মুখোপাধ্যায়)
