দুর্বল না শক্তি
দুর্বল না শক্তি
দীপাবলীর সন্ধ্যে, অরণ্যের বাড়ি ভর্তি আত্মীয় স্বজন। সমস্ত ডেকোরেশন শেষ, এবার তিথি নিজে সাজুগুজু করতে যাবে। হঠাৎ মনে পড়ে গেল, কয়েকটা কাজ এখনও বাকি , সাজগোজ টা সে পরেই করবে। কাউকে কিছু না বলে হুট করে বেরিয়ে গেল নিজের স্কুটি নিয়ে ওদের বাড়ি থেকে একটু দূরের একটা বস্তিতে। তিথির বেশ কিছু বন্ধু সেখানে আগে থেকেই হাজির ছিল, তারা কাজ ও শুরু করে দিয়েছে, বেশ কয়েক প্যাকেট মোমবাতি, শ তিনেক প্রদীপ ও কিছু খাবার দাবার। ওহ বলাই হয় নি ,,
তিথি সদ্য বিবাহিত চব্বিশ বছরের তন্নী। মানুষের বিভিন্ন উপকার, গরীব দুঃস্থ কে সাহায্য করা ওর ছোট্ট বেলার অভ্যাস, সেই অভ্যেস কে ভালোবেসেই অরণ্য তিথির প্রেমে পরে। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে প্রেম করার পর কিছুটা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অন্য দিকে সে আইপিএস অফিসার। যাই হোক ঐ ছোট্ট বস্তিটাতে অনেক বাচ্চা আছে যারা তিথির খুব প্রিয়। সেখানে মোমবাতি প্রদীপ দিয়ে সাজিয়ে সবাই কে খাবার দাবার গুলো দিয়ে বাড়ির ফেরার তাড়াহুড়ো করছে,বাড়িতে না বলে চলে এসেছে, সবাই তাকে খুঁজবে। এদিকে অরণ্য খুব ভালো করেই তিথিকে জানে ও বোঝে তাই বাড়ির সকলকে পুজোর কাজেই ব্যস্ত রেখে অপেক্ষা করছে তিথির। বাড়িতে উমা পিসি মহাকালীর গল্প জুড়েছেন, "মা কালী কেন দেবাদীদেবের বুকে পা তুলে দাঁড়িয়ে ছিলেন?"। ছোটো থেকে সকলেই খুব উদগ্রীব, উমা পিসি বললেন,
মাতা কালী নারী শক্তির ধ্বংসাত্মক রূপ, কালিকা পুরাণ অনুযায়ী শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে দুই রাক্ষস পৃথিবীতে অত্যাচার শুরু করেছিলেন। স্বর্গ দখলের নানা কৌশল বার বার করে দেবতাদের স্বর্গ ছাড়া করে ছিলেন। মাতা আদিশক্ত ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁর তৃতীয় চক্ষু থেকে সৃষ্টি করেন খড়্গ ধারিনি দেবী মহাকালী কে। সকল অসুর দের উপর খড়্গের প্রহারে মুন্ডচ্ছেদ করেন ও সেই অসুর মুন্ড গুলি মালা করে গলায় পরিধান করেন এবং কাটা হাত গুলি দিয়ে বসন বানিয়ে নেন। এমত অবস্থায়
ওদিকে অরণ্য একটু চিন্তিত, অনেক ক্ষন হয়ে গেল অথচ তিথি এখনও এসে পৌঁছলো না।
তিথি খুব তাড়াহুড়ো করে নিজের স্কুটি চালিয়ে ফিরছে , হঠাৎ বেশ কয়েকজন ছেলে তিথির পথ আটকে দাঁড়ালো, তিথি তাদের জিজ্ঞাসা করলো কি প্রয়োজন, বলার সঙ্গে সঙ্গে ওই ছেলে গুলো চড়াও হল তিথির উপর , রাগ বা ক্ষোভ যে পুরানো সেটা বুঝতে একটুও অসুবিধা হল না তিথির। তিথিও সমহিমায় এক একটি ঘুসির আঘাতে কাথ করলো, পুলিশ স্টেশনে ফোন করে খবর দিল ও অরণ্য কে ফোন করে জানালো, এদিকে উমা পিসি বলছেন..... এমত অবস্থায় অসুররা যখন দিশেহারা তখনই আবির্ভাব হয় অসুর সেনাপতি রক্তবীজের। ভগবান ব্রম্ভাকে সন্তুষ্ট করে এক অদ্ভুত বর পান রক্তবীজ, তার একফোঁটা রক্ত ও যদি মাটিতে পরে তবে আরও একটি রক্তবীজ সৃষ্টি হবে। দেবী কালী রক্তবীজ কে দেখা মাত্রই বধ করতে ছুটে আসেন,কিন্তু রক্তবীজের রক্ত মাটিতে পর়ার সঙ্গে সঙ্গে শয়ে শয়ে রক্তবীজের জন্ম হয়।কোনো উপায় না পেয়ে দেবী কালী রক্তবীজের মুন্ডচ্ছেদ করে সব রক্ত পান করেন ও রক্তবীজের নিধন করেন। শত্রু নিধনে উন্মত্ত হয়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে নৃত্য করে বেড়ান। স্বর্গ মর্ত পাতাল দেবীর তাণ্ডব নৃত্যে ধ্বংসের মুখে চলে যায়, সকল দেবতারা দেবী কে শান্ত হতে বলেন কোনো লাভ হয় না, অতঃপর সকল দেবতা দেবাদী দেব মহাদেবের সন্মুখে প্রার্থনা করেন , মহাদেব দেবী কে শান্ত করতে দেবীর পথের উপর শুয়ে পড়েন । ক্রুদ্ধ মাতা কালী তাণ্ডব নৃত্য করতে করতে মহাদেবের বুকের উপর পা তুলে দাঁড়িয়ে পড়েন এবং যখন বুঝতে পারেন তিনি তাঁর স্বামীর বুকের উপর দাঁড়িয়ে তখন লজ্জায় দেবী কালী জিভ বের করে ফেলেন। সেই থেকেই ঘরে ঘরে দেবী কালী এই রূপেই পূজিত হন।
পিসির গল্প শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তিথি এসে দাঁড়ালো মা কালীর মূর্তির সামনে, রাগে ক্ষোভে তিথির মুখ রক্তাভ যেন সেও তাণ্ডব নৃত্য করে সবে শান্ত হয়েছে। অরণ্য তিথির হাত ধরে নিয়ে গিয়ে হাত জোড় করে বসে মায়ের চরণে প্রণাম করলো ও সকলে বলে উঠলো শয়ং তিথি হল বাস্তবের দেবী কালী।
