স্মৃতির খেলাঘর
স্মৃতির খেলাঘর
রবিবারের বিকেল, নর্ম্যালি কয়েক মাস যাবৎ অফিস আর ঘর করতে করতে খুব বিরক্ত লাগতে শুরু করেছে। জীবন টা কোথাও যেন বড্ড একঘেয়ে হয়ে গেছে। আমার দাদুভাই বাগানের সাইডের বারান্দায় একটা কাঠের চেয়ারে একমনে বসে বসে ফুল, গাছ, পাতা পর্যবেক্ষণ করছেন। যদিও এটা আমি সেই ছোটো বেলা থেকেই দেখে আসছি, ওনার গার্ডেনিং এর খুব শখ। আমি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে চেয়ারের নিচে দাদুভাই এর কোলে মাথা রেখে বসলাম। আমার মুখ ভার দেখে দাদুভাই মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো "ছেলেবেলাটা কেমন ছিল, তোর মনে আছে? যা আমার ঘরে যা, ওই সিন্দুক টা নিয়ে আয়।" আমি সুড়সুড় করে আলমারির পাশে রাখা একটা মাঝারি সাইজের কাঠের বাক্স বের করলাম, দুহাতে তুলে নিয়ে ভালো করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলাম, বলা বাহুল্য ছোটো বেলা থেকেই এটা আমার কৌতুহলের বিষয় ছিল। সিন্দুকটা চৌকো কাঠের বাক্স, অনেক পুরানো দিনের জিনিস তবে পালিশের কোনো বদল হয় নি, চকচক করছে, নিখুঁত কারুকার্য করা। দাদুভাই বললো "তোকে তোর ছেলে বেলার কিছু স্মৃতিচিহ্ন দেখাবো।" আমি খুব উৎসুক হয়ে উঠলাম, দাদুভাই সিন্দুক খুললো তবে কোনো চাবি নেই কয়েক টুকরো পাথর নিজের ট্যাকে গোঁজা থলি থেকে বের করলো, সিন্দুকের চার কোণে চারটে আর মাঝে একটা পাথর বসিয়ে চেপে দিতেই সিন্দুকের ঢাকা আলগা হয়ে গেল। আমি হা করে দাদুভাই এর কার্যকলাপ দেখছিলাম, সিন্দুকের ঢাকনাটা পুরো খোলা যায় না, ফোল্ডিং সিস্টেম। সিন্দুকের ভিতরে একটা ছোট মত ডায়েরী যার পাতা গুলো হলুদ হয়ে গেছে আর লেখা গুলো প্রায় মলিন, ডায়েরী বের করে পাশে রেখে দিল দাদুভাই। আমি হাত বাড়িয়ে নিতে গেলে আমাকে ইশারায় বারণ করলো হাত দিতে। এরপর দেখলাম অনেক গুলো মাটির গুলি, ছোটো ছোটো ঘষা কাঁচ, গুলতি, ডাংগুলি, লাট্টু.... আমার সাথে ছোটো বেলার খেলতে গিয়ে ছিড়ে যাওয়া জমা ঝেরা অংশ, মায়ের লেখা কবিতার ছেড়ে পাতা যেটা দাদুভাইকে দেখানোর জন্য আমি চুপিচুপি ছিঁড়ে এনেছিলাম মায়ের ডায়েরী থেকে, আরও ছোটো ছোটো কত জিনিস!
দাদুভাই বললো, "কি রে মনে পড়ছে এগুলোর কথা?" আমি আর দাদুভাই ছোটো বেলায় সব সময় একসাথে থাকতাম, খেলতাম, মাঠে বেড়াতে যেতাম, এখন বি. এড শেষ করে নতুন চাকরি তে জয়েন করার পর দাদুভাই কে একটুও সময় দিতে পারিনা। আজ হঠাৎ করেই আমার শৈশব কে এমন যত্ন করে তুলে রাখতে দেখে আমি আবার সেই ছোট্ট তিতিন হয়ে দাদুভাই কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম।
