আমি নারী
আমি নারী
চনমনে সকালে যখন সবাই প্রতহ্যের কাজে খুব ব্যস্ত। আমি তখন মুখ নিচু করে ক্লান্ত চোখে মাটিতে আঁকোড় কাটছি। সবার মত ব্যস্ত হওয়ার হাজারটা কারণ থাকলেও আমি শান্ত, খুব শান্ত। ভাবতে পারো আমার কর্মের প্রতি অনীহা জন্মেছে। অলস ও অকর্মণ্যতা আমাকে পেয়ে বসেছে। এই সংসার বৈচিত্র্যপূর্ণ, তবে অত্যাধিক জটিল। "সুবর্ণলতা" নিজের সংসারে কত গোছালো, সংসারে শ্রী ধীরে ধীরে শিখরে এনেছিল। তাকেও তো সংসার ছাড়েনি! অসম্মান, কটুকথায় জর্জরিত করেছিল। এমন কত গৃহলক্ষ্মী আছে, যাদের সৌভাগ্যে সংসার সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরপুর। ভগবান তো সকল কে নিজের হাতে তৈরি করেন, তবে একটি মেয়ের ললাটে সৌভাগ্যের তিলক আর একজন কে, অলক্ষ্মীর শিরোপায় ভূষিত কেন করেন?
গভীর চিন্তার খাত থেকে ধীরে ধীরে উঠে এলাম। আসলে আমার কাছের মানুষ গুলো আমার জন্য অসুখী, এটাই সত্য, এটাই মর্মার্থ। যে বাসস্থানে একটা যুগ কাটিয়ে ফেললাম, সেই বাসস্থানে আমার সামান্য তম কথা বলার অধিকার নেই। দিন দিন অত্যাধিক অস্তিত্ব সংকট হচ্ছে। এই নিশ্চুপ - নিরবতার মাঝে মনের মধ্যে আগুনের স্ফুলিং উঠছে। হঠাৎ হঠাৎ ছ্যাঁকা খাওয়ার অনুভূতিই প্রোগাঢ় হচ্ছে।
বিস্তৃত সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে সামনে যত দূর দেখা যায় শুধুই জলরাশি, আমার জীবনেও যত দূর চোখ যায় ক্লান্তি, ক্লেশ, পীড়া! সুখ-সমৃদ্ধির লেস মাত্র দৃষ্টিপটে আসে না, কী অদ্ভুত না!
নানা জায়গায় শোনা যায়, মেয়েরা হল শক্তির আর এক রূপ। নারীর মধ্যেই প্রকৃতির সৌন্দর্য্য বিত্তমান। একটা মেয়ের মধ্যে সেই শক্তি প্রস্ফুটিত হতে সময় নেয়। বাস্তবতার মুখোমুখি হলে সত্য - মিথ্যার ভ্রুকুটি, সম্মান - অসম্মানের বাক্যবাণ একটা মেয়ের মধ্যে বদল আনে। সমাজ -সংসার থেকে পাওয়া অপ্রীতি কর ব্যবহার মনের মধ্যে আলোড়ন ফেলে। দীর্ঘ দিন বাস্তবতার অঙ্গারে, অসম্মানের কাঠ-কয়লায়, বিষ- বাক্যের আঁচে উত্তপ্ত হতে হতে একসময় গনগনে রোষে বিস্ফোরণ ঘটায় নারীশক্তির। নীরবতার আস্তরণ সরে আগ্নেয়গিরির লাভা নিঃসৃত হয় সমস্ত অত্যাচারীকে ধ্বংস করার জন্য...
"ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শক্তি রূপেন সংস্থিতা,
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমোহ:
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা,
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমোহ:"
