STORYMIRROR

Arpita Pramanick

Classics Others

4  

Arpita Pramanick

Classics Others

ভালো পিঠে মন্দও থাকে

ভালো পিঠে মন্দও থাকে

3 mins
426

ভালো পিঠে মন্দও থাকে

কলমে_অর্পিতা_ইমি


রমার বাড়ি মিশ্র পাড়ায়। দর্মার ছোট্ট ঘর। রমার স্বামী একটা কারখানার কাজ করে। এক ছেলে আছে। সুখে দুঃখে দিন কেটে যায়। অনেক সুবিধা অসুবিধার মধ্যে থাকলেও একে অপরের প্রতি উদাসীন হতে পারে না। 


এখন বৈশাখ মাস। আকাশে মেঘ আর রোদ্দুরের দারুণ রেষারেষি। মাঝে মধ্যে তো পবন দেবের ক্ষিপ্রতা এত প্রবল হয় যে ভীষণ ঝড়ের সৃষ্টি করে। গাছে গাছে সংঘর্ষ হয়, ধুলো বালির সাথে ঝড়ের দুরন্ত গতি পৃথিবীর বুকে একটা অস্বচ্ছ ঝাপসা আবরণ তৈরি করে। রমা ভীষণ আবেগ প্রবণ। আবার কিছুটা কল্পনাপ্রবণও বটে। ছোটো ছোটো বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতে কোনো এক অন্য জগতে চলে যায়। 


গতকাল একটা ঝামেলার মুখোমুখি হয়েছিল ও। এর আগেও নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে গতকাল পবন দেব ও বরুণ দেবের মধ্যে বিশাল যুদ্ধ শুরু হয়। আর সেই যুদ্ধের মাঝে বরুণ দেব ঝরঝরিয়ে বৃষ্টি নামান। পৃথিবীর বুকে বিগত দুমাসে বৃষ্টি না হওয়ায় সকলে চাইছিল একটু বৃষ্টির ছোঁয়া পেতে কিন্তু সূর্য দেবের তেজ দিন দিন বেড়ে চলেছিল। প্রচণ্ড গরমে মানুষ, গাছপালা, পশুপাখি সকলেই বিপর্যস্ত হয়েছিল। 

গতকাল বৃষ্টি যখন এলো তখন সন্ধ্যে সোয়া সাতটা। ঘরের বাইরে বস্তার ছাউনী করা একটা জায়গা। একটা মাটির উনুন। প্রতিদিনের অন্নের আয়োজন সেখানেই হয়। প্রতিদিনের মতোই রমা রান্না করছিল। সেই সময় হলো লোডশেডিং। ম্যারম্যারে হলেও ওই হলুদ বাল্বের আলো রমার বাইরের রান্নার জায়গাতেও বেশ পৌঁছে যেত। হয়তো ওই বাল্বও বুঝতো, রমার তাকে প্রয়োজন।

হঠাৎ বৃষ্টি নামার তড়িঘড়ি সব অগোছালো হয়ে গেল। কাঠের গুঁড়ো, শুকনো চ্যালা করা কাঠ, কেটে ধুয়ে রাখা সবজি ঝড় বৃষ্টির কবলে পরে সাংঘাতিক বিপদে পড়েছে। এদিকে সদ্য জ্বলন্ত উনুনে বসানো কড়ায় তেল গরম হয়ে বৃষ্টির জলের ছিটে পরে চরবর করে উঠছে। তেল ছিটকে রমার হাতে মুখেও লাগলো। চটপট করে জ্বালানী কাঠ চাপা দিয়ে সমস্ত জিনিস গোছাতে গিয়ে একদম ভিজে গেল। 


এমনি তো বৃষ্টি খুব প্রিয়। রমাও মনে মনে ভীষণ ভাবে চেয়েছিল বৃষ্টি আসুক। বৃষ্টির জলে শরীর ভিজিয়ে শীতল আলিঙ্গনে প্রকৃতির বুকে দুহাত ছড়িয়ে দেবে। চোখ বন্ধ করে অনুভব করবে এক একটা বৃষ্টি কণার কপাল ছুঁয়ে গাল বেয়ে নেমে আসা। এক একটা কণার ঠোঁট ছুঁয়ে চিবুকে মিশে যাওয়া, কিন্তু এই গতকালের বৃষ্টি রমাকে অসুবিধায় ফেলেছিল। রান্না কিভাবে করবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছিল না। সেই দামাল ঝড় আর ছটফটে বৃষ্টি গুলো যখন রমাকে জড়িয়ে ধরছিল বড়ো বিরক্ত হয়ে রমা রাগে জ্বলছিল। যেন ঘর্মাতক শরীরে, অসহ্য গরমে কেউ একজন জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার আবেদন জানাচ্ছে। 

রমা গরম উনুন টাকে ভিজে কাপড়ে ধরে ঘরের ভিতরে নিয়ে গেল। নিজের শরীরে লেপ্টে থাকা ভিজে কাপড় বদলে নিল। রাত হচ্ছে। রান্না তো করতেই হবে। ছেলেটা খাবে কি! রমার স্বামী বললো "রান্না করতে হবে না"। তবে সেটা যে খুবই রাগ আর বিরক্ত থেকে বলছে সেটা বুঝতে রমার অসুবিধা হয়নি। কাঠের ধোঁয়ায় দুচোখ জ্বলছে। শ্বাস নেওয়াও অসহ্য হয়ে উঠেছে। তবুও তো রান্না করতেই হবে। বাইরের ঝড় বৃষ্টি আর ছোট্ট ঘরে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী রমাকে আরও বেশি বেপরোয়া করে তুললো। "যেভাবেই হোক রান্না তো আমি করবোই" বলে দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে উনুনে দিল। দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো ভিতরের কাঠ গুলো আর রমার ভিতরে কোনো একটা দুঃখ মোচড় দিয়ে উঠলো। চোখ দুটো জলে টলটল করছে, তবে তা ধোঁয়ার জন্য না মনের দুঃখে সেটাই স্বাভাবিক ভাবে বোঝা যাবে না।


ಈ ವಿಷಯವನ್ನು ರೇಟ್ ಮಾಡಿ
ಲಾಗ್ ಇನ್ ಮಾಡಿ

Similar bengali story from Classics