Rima Goswami

Tragedy

4.0  

Rima Goswami

Tragedy

দুইহাজার বিষ আর রাকা

দুইহাজার বিষ আর রাকা

3 mins
222


সময়টা হলো দুহাজার পাঁচ সালের মাঝামাঝি । সদ্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের হাতে এসেছে বোতাম যুক্ত মুঠোফোন । নতুন বছরের উন্মাদনা সঙ্গে গ্রিটিংস কার্ড সঞ্চয় ও বিলি । দারুন একটা ব্যাপার স্যাপার ছিলো রাকার । মাধ্যমিকে ভালো ফল করার জন্য বাবা রাকাকে দিয়েছে নোকিয়ার এগারোশো মডেলের একটা মোবাইল তবে শর্ত বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে না । রাকা বন্ধুদের বলে বেড়ায় তিতলির মত উড়ে উড়ে যে তার ও একটা মুঠোফোন জুটেছে । বন্ধুরা নিয়ে আসতে বলে পাড়ার আড্ডার রকে । রাকা যখন বলে বাবা মানা করেছে বাড়ির বাইরে আনতে তখন সকলে হেসে কুটিপাটি , ওরা বলে আরে মোবাইল তো বাইরে নিয়ে যাবার জন্যই ঘরের জন্য ল্যান্ড লাইন তো আছেই । ওর দাদু খুব পছন্দ করে মোবাইলের ওই টুং টাং রিংটোন গুলো ।


সুযোগ পেলেই নাতনিকে বলেন , 'বুবাইলে গান শোনা দিদিভাই' । রাকা হেসে ফেলে দাদুকে বলে ওটা মোবাইল না কি বুবাইল । দাদু সেই একই ভুল করে যায় । ভাইটা সারাদিন সুযোগ খোঁজে কখন ফোনের ওই সাপের গেমটা খেলা যায় । সাপের সাইজ বৃদ্ধি পাবে দানা খেয়ে খেয়ে কিন্তু ল্যাজে ঠেকে গেলেই মরণ । রাকা ভাইকে দিতে চায়না ফোনটা আর মারামারি লেগে যায় । মা ভায়ের পক্ষ নেয় আর রাকাকে বকে । রাকা কেঁদে ফেলে আর বাবার দুলালী সুযোগ পেলেই ভায়ের নামে বাবার কাছে অভিযোগ করে । ভাই বাবার কাছে বকা খায় আর দিদি মজা পায় । ভাই বলে আর তিনটে বছর তারপর মাধ্যমিক দিয়ে সেও ফোন পাবে । রাকা ওকে মুখ ভেংচি দিয়ে বলে তার জন্য অন্তত তিনটে বিষয়ে লেটার আর স্টার মার্কস লাগবে । ভাই থতমত খেয়ে ঢোক গিলে বলে সে নিশ্চই পারবে । এভাবে কেটে যায় কয়েকটা বসন্ত রাকার ভাইও মাধ্যমিক দেয় তবে স্টার তো দূর একটা লেটার ও পায়না সে । কোনমতে দ্বিতীয় বিভাগে পাস করে সে আর বাড়ি এসে মুষড়ে বসে থাকে কারণ বাবা তাকে কিছুতেই ফোন দেবে না । ততদিনে তো স্কীনটাচ ফোন এসে গেছে বাজারে কিন্তু দেবে কে রাকার ভাইকে ফোন ? রাকা কলেজে পড়ে , দু চারটে টিউশনি করে । নিজের একটা টিনের বাক্সে সব টাকা জমা রেখেছিলো সে , সেই টাকার সবটা খরচ করে ভাইকে একটা ফোন এনে দেয় রাকা। ভাই ফোনটা এভাবে দিদির কাছ থেকে পেয়ে কেঁদে ফেলেছিল । বাবা ও মেয়ের এই আচরণে ভিতরে ভিতরে খুব খুশি হয়েছিলেন ।সময়টা দুহাজার বিশ , না থাক বলি দুহাজার বিষ ।


কোভিড নাইনটিন এসে সব তছনছ করে দিয়েছে । রাকার এখন অফুরন্ত সময় কারণ লকডাউনে সবাই বাড়িতে , অফিস বন্ধ । একটা রাইটার্সে চাকরি বাগিয়ে ফেলেছিলো রাকা তাই এখন বেশ সুবিধা । ভাই মা বাবাকে নিয়ে পৈতৃক বাড়িতেই থাকে । একটা এম্বুলেন্স আছে ওর নিজেই চালায় । কোভিড যোদ্ধাদের মধ্যে একজন ভাই এটা ভেবে ভালো লাগে রাকার । এখন আর ফোন নিয়ে ঝগড়া নেই শুধু ওর ছেলে মানে ভাগ্নেকে বকলেই মামা দিদির সাথে লেগে যাবে ধুন্ধুমার । সকালে ফোন এলো রাকার কাছে ভাইয়ের করোনা পজিটিভ বেড়িয়েছে ওকে ভর্তি করা হয়েছে হসপিটালে । সে ছোটে তার ভাইকে দেখতে , সকলে মানা করে বাড়িতে বাচ্চা আছে । রাকা কান দেয়না , সেদিনের সাথে আজকের কোন পার্থক্য নেই ভাই আজও তার প্রয়োরিটি । রাকা হাসপাতালে পৌঁছে জানতে পারে ভাই আর নেই সে যুদ্ধে শহীদ হয়েছে । শেষ দেখার ও অনুমতি নেই কারণ ইনফেক্টেড বডি । রাকা চিৎকার করে , কে বলেছে তার ভাইকে বডি ? যে সম্পর্ক জন্ম থেকে শুরু তা মৃত্যুর পর কি করে বডি হয়ে যায় ? রাকা গড়াগড়ি খায় হসপিটালের বাইরে , ভিতরে পলিথিন বন্দি দেহটা বিদ্রোহ করতে পারে না ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy