The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Sayandipa সায়নদীপা

Tragedy

2  

Sayandipa সায়নদীপা

Tragedy

দহন

দহন

4 mins
1.2K


রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করা মিহির পালের বরাবরের অভ্যেস। আয়নার সামনে কেন দাঁড়ায় সে নিজেও জানেনা কারণ তার চোখ তো এসময় থাকে প্রায় বন্ধ। যাইহোক, আজকেও নিয়মের অন্যথা হলোনা,রোজকার মতো ব্রাশ হাতে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো মিহির পাল। চোখ দুটো আধ বোজা। ব্রাশটা নিয়ে প্রথমবার দাঁতের ডান পাশ থেকে বাম পাশে ঘোরানো মাত্রই মনে হলো যেন জ্বালা করে উঠলো গালের ওপরটা; পাত্তা না দিয়ে বাম পাশ থেকে এবার ডান পাশে টেনে আনলো মিহির পাল। জ্বালাটা যেন আরেকটু বাড়লো। চোখ দুটো খুলতেই হলো তাকে,আর খুলেই একটা আর্ত চিৎকার করে সে ছিটকে গেল কয়েক পা। মেঝেতে বোধহয় জল পড়েছিল,পা স্লিপ করে সোজা গিয়ে পড়লো পায়খানায় প্যানের পাশে। বাথরুমের দরজা খোলাই ছিলো,চিৎকার শুনে ছুটে এলো বান্টু। দেখলো তার বাবার ব্রাশটা বাথরুমের মেঝেতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর বাবা স্বয়ং প্যানের পাশে বসে কাঁপছেন থরথর করে। 


“কি হয়েছে বাবা? এভাবে কাঁপছো কেন! আর ছিঃ এভাবে জামাকাপড় পরে প্যানের কাছে বসে আছো কেন?” ছেলের কথার ঠিক মতো উত্তর দিতে পারল না মিহির পাল, সে শুধু তার কাঁপা কাঁপা হাতটা নিজের গালের দিকে ইশারা করে কিছু দেখানোর চেষ্টা করলো কিন্তু সফল যে হলোনা তা বোঝা গেল বান্টুর প্রতিক্রিয়ায়, “কি হলো টা কি কথা বলছো না কেন? মা তোমাকে এখানে দেখলে কিন্তু সর্বনাশ হবে বলে দিলুম।”

“হারামজাদা আমার গালটা দেখতে পাচ্ছিসনা নাকি? উফফ মাগো জ্বলে যাচ্ছে…” অবশেষে মুখে কথা ফুটলো মিহির পালের কিন্তু বান্টু আদৌ কিছু বুঝতে পারলো কি!

“কি দেখবো তোমার গালে? ওই তো খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো শুধু। ওহো! আচ্ছা বুঝেছি, ব্রাশ করতে গিয়ে ভেতর দিকে গাল কামড়ে ফেলেছ তাই না? মা বলে ঠান্ডা লাগলে নাকি মাঝে মাঝে হয় এমনটা!তুমি চিন্তা কোরোনা মাকে বলবে টক শুসনির পাতা সেদ্ধ করে দিতে।”

“উফফ মাগো… চুপ কর হতভাগা। চোখের মাথা খেয়েছিস নাকি? দেখতে পাচ্ছিসনা আমার গালটা কেমন হচ্ছে? দেখতে পাচ্ছিসনা কিছুই? ওমা গো!”

“আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা বাবা, কিসব বলছো তুমি?” বান্টু অবাক হলো।


বান্টুর মুখ দেখে মিহির পালেরও মনে হলো না যে সে মিথ্যে বলছে,তবে কি সত্যিই সে কিছু দেখতে পাচ্ছেনা? কিন্তু গালের জ্বালাটা যে আস্তে আস্তে গলার দিকেও অনুভব করতে পারছে মিহির পাল। তবুও বান্টুর দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে,তারপর মনে মনে সাহস এনে আরেকবার আয়নার দিকে তাকাতেই আগের চেয়েও বেশি শক্তিতে ছিটকে গেল পেছনের দিকে।


“এ… এসব কি হচ্ছে! বান্টু রে…” মিহির পাল স্পষ্ট দেখল তার গাল থেকে গলা ক্রমশ পুড়ছে বা বলা ভালো চামড়াটা ফুটেছে যেন, ঠিক যেমনটা গায়ে এসিড পড়লে হয়!

“বান্টু তুই কি দেখতে পাচ্ছিসনা নাকি কিছুই? শিগগির জল দে আমায়… উফফ মাগো জ্বলে যাচ্ছে… আ… আ… জল জল…”

“বাবা তোমার কি হয়েছে? আমি তো কিছু বুঝতে পারছিনা। বাবা… বাবা গো! কোথায় যাচ্ছ? বাবা দাঁড়াও…” মিহির পাল উন্মাদের মত ছুটে বেরিয়ে গেলেন বাথরুম থেকে, বান্টুও ছুটলো পেছন পেছন…


  “মা।”

“কে?” ঘরের এক কোণে স্থবিরের মত বসেছিলেন নিরুপমা দেবী, অশ্রুসজল চোখে মুখ তুলে তাকালেন।

“মা আমি, শান্তু।” ছেলের দিকে ভ্যালভ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন নিরুপমা দেবী, কোনো কথা বললেন না।


“মা জানো তো ওই মিহির পাল আজ সকালে কুঁয়োয় ঝাঁপ দিয়ে মরেছে। ওর ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে সবাইকে বলছিল শুনছিলাম ঝাঁপ দেওয়ার আগে নাকি লোকটা কিসব জ্বলে যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে বলে চেঁচাচ্ছিল।”


শান্তুর কথায় চমকে উঠলেন নিরুপমা দেবী। চোখ থেকে এবার দু’ ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো তাঁর কোলে। সুমনা, তাঁর একমাত্র মেয়ে আজ তিনদিন হলো বুকে এক পৃথিবী কষ্ট আর শরীরে একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে তাঁদের সকলকে ছেড়ে পাড়ি দিয়েছে এক অজানার উদ্দেশ্যে। পাড়ারই এক লোফার ছেলে পল্টনের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার শাস্তি ছিল অ্যাসিডের দহন; মুখের মধ্যে দিয়ে অ্যাসিড শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে জ্বালিয়ে দিয়েছিল অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু কলকব্জা। চাঁদপানা মুখটাও ঝলসে গিয়েছিল পুরো। ওর দিন মজুর বাবার সামর্থ ছিলনা চিকিৎসার বিপুল খরচ সামলানোর তাই বিভিন্ন ভাবে টাকা জোগাড়ের আপ্রাণ চেষ্টা চলছিল কিন্তু তারই মাঝে সকলকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল মেয়েটা। শুধু সুমনা নয়,এর আগেও বেশ কিছু মেয়ে বলি হয়েছে এভাবেই। আর ওইসব দুষ্ট ছেলেগুলোকে অ্যাসিড সাপ্লাই দিত ওই মিহির পাল। লোকটার মধ্যে নৈতিকতা বলে কিচ্ছু নেই, নয়তো দিনের পর দিন একই পাপ করে যেতে পারে! আক্রমণকারী ছেলেগুলো গ্রেপ্তার হলেও মিহির পালের সম্বন্ধি কোনো এক রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ার সুবাদে লোকটার গায়ে একটা আঁচড়ও পড়েনি, সে ব্যবসা চালিয়ে গেছে রমরমিয়ে। শোনা যায় অনেককে নাকি এই কুকর্মে ইন্ধনও জুগিয়েছে লোকটা। কিন্তু সে কি কোনোদিনও ভেবেছিল এভাবে মরতে হবে তাকে! সত্যি পাপ কাউকে ছাড়েনা। 


দেওয়ালের দিকে তাকালেন নিরুপমা দেবী। গরিবের ঘরে সস্তা ফ্রেমে বন্দি ওঁরা চারজন। সুমনার অবদারেই ছবিখানা তোলা হয়েছিল বছরখানেক আগে, মায়ের গলা জড়িয়ে হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে সুমনা। ছবিটা দেখলে সবসময়ই মনে হয় যেন এই তো মেয়েটা বেরিয়ে আসবে ছবি থেকে, কথা বলবে সবার সাথে। কিন্তু নিরুপমা দেবীর হঠাৎ মনে হল ছবিটা যেন আজ একটু বেশিই জীবন্ত লাগছে না!


(শেষ)


Rate this content
Log in

More bengali story from Sayandipa সায়নদীপা

Similar bengali story from Tragedy