ডিভোর্সড
ডিভোর্সড
--মিস করিস ওকে?
হ্যাঁ করি তো; করবনা কেনো। করি তো প্রচন্ডভাবে।
একটা জলজ্যান্ত মানুষ, যার হাত ধরে সাতপাকে ঘুরেছিলাম, অগ্নিসাক্ষী রেখে যার সাথে মালাবদল করেছিলাম, সুখে দুঃখে একসাথে থাকবো ভেবেছিলাম, যার সাথে সব আশা, ভরসা,ভয়, দুঃখ,বেদনা,যন্ত্রণা, অনিশ্চয়তা ভাগ করেছিলাম,যাকে হারানোর হয়ে হঠাৎ মাঝরাতে ভয়ে আঁকড়ে ধরেছিলাম, যে অফিসের কাজে বাইরে গেলে তার বালিশ আঁকড়ে একা খাটে ঘুমাতাম;তার গায়ের গন্ধ পেতে;যাতে মনে হয় সে পাশেই আছে,যার পায়ে হালকা ব্যাথা হলে গরম জল করে সেঁক দিতাম, যার পরীক্ষার জন্যে নিজের ক্যারিয়ারের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে বিভিন্ন বই বের করতাম ;আর মার্ক করে রাখতাম যাতে তার পড়তে সুবিধে হয়, তাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে প্রাণপণ প্রচেষ্টা করতাম, কারণ চাইতাম তার সাফল্যের হাসির আলোয় নিজের সব অন্ধকার,সব ব্যার্থতা ,ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাক।
জানিস, রাস্তায় একসাথে বেরোলে আলগোছে গাড়ির সাইড এ চলে যেতাম যাতে তার গায়ে আঁচ না লাগে।সে ঘুমোবার সময় আলতো করে তার কপালে একটা চুমু খেতাম; তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম যতক্ষণ না সে ঘুমোয়। ঘুমালেও তার দিকে আলগোছে চেয়ে থাকতাম, ভাবতাম এই কি সেই স্বর্গের পরী? ঘুমোবার সময় তার মুখের আলতো হাসি দেখলে কি যে লাগতো;কি বলবো তোকে। আত্মীয়স্বজন;বন্ধুবান্ধব যখন তার একটু প্রশংসা করতো; গর্বে বুক ফুলে উঠতো, ভাবতাম এই না আমার বউ।
--যাঃ বাবা ;এতই যখন ভালোবাসা; তাহলে আলাদা হচ্ছিস কেনো?
কেনো জানিস; সব স্যাক্রিফাইস এর বিনিময়ে হালকা একটু সম্মান আর সম্পর্কে উষ্ণতাটা চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম সে যাতে বোঝে আমায়;অনেক না বলা কথার মাঝে , চেয়েছিলাম সে যাতে দেয় আমাকে এক পরম আশ্রয়; আগলে রাখে সব ঝড়ঝাপটার থেকে। সে যাতে মায়া; মমতা;স্নেহ; ভালোবাসার গুরুত্ব বোঝে; আর বোঝে আমায়।
--বোঝেনি বলছিস?
না বুঝত; যখন সবকিছু মতে মতে খাপে খাপে মিলত। নিজের প্রয়োজনে বুঝত। নিজের দরকারে বুঝতো। আরে; মেকি ভালোবাসা আর দিলের ভালোবাসার ফারাক বোঝা যায় রে। ভালোবাসা আর সম্মান যে একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ তাতো নয় ঠিকই, কিন্তু পুরো আলাদাও তো নয়। কাউকে ভালোবাসা মানে নিজেকে তার জন্য উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকা , আর যার জন্য উৎসর্গ করবি সে যাতে তোর এই উৎসর্গের মান রাখে, তাই তো সম্মান নাকি? হলো কি দুটো একদম আলাদা? সম্মান না পেলে, মর্যাদা না পেলে একসময় ত শীতলতা আসবেই, তা যতই ভালোবাসা থাকুক না কেনো। কারণ দিনের শেষে যে নিজেকেও ভালোবাসি। নিজেকে অসম্মান করি কি করে? নিজের ছোটবেলার শিক্ষা দীক্ষা কে গঙ্গার জলে ভাসাতে পারিনা সম্পর্ক রক্ষার স্বার্থে, তাই না?
---হমম বুঝলাম;কিন্তু ছেড়ে থাকতে পারবি তো আজীবন?
থাকতে হবে রে, শক্ত হতে হবে আমায়, তা যতই বুক ফাটুক, মুখ ফাটবে না আমার। দেখে নিস, প্রাণ খুলে কাঁদবো, কিন্তু চোখে জল দেখবিনা আমার, বরঞ্চ হাসতে দেখবি। একা বিছানায় ঘুমাবো, কিন্তু তার জন্য বালিশে শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে দেখবিনা আমায়।
কারণ কেউ না থাকুক, কিছু না থাকুক, আমার ডায়েরি আর কলম তো আছে। তারাই তো আমার এখন চিরদিনের বন্ধু হয়ে থাকবে, ডায়রির পাতাতে থাকবে আমার কলমের ঘর্ষণ, তার সাথে মিশে থাকবে আমার মনের অশ্রুবর্ষণ, আর আমার একা ঘর নির্বাক সাক্ষী হয়ে থাকবে আমার সাথে।
--সবই বুঝি; তবু অবুঝের মতো
তোমায় খুঁজি;নিয়ে হারানোর ক্ষত --