STORYMIRROR

SHUBHAMOY MONDAL

Abstract Horror

4  

SHUBHAMOY MONDAL

Abstract Horror

ডাকিনীর মায়াজালে - ৩য় পর্ব

ডাকিনীর মায়াজালে - ৩য় পর্ব

4 mins
375

ডাকিনীর মায়াজালে - ৩য় পর্ব

শুভময় মণ্ডল


ওদিকে, মাধবী দেবীর পরিবারের লোকজন, তাঁর ঐসব অতিপ্রাকৃত বিষয় বা বস্তুর দর্শন সম্পর্কে, জানতো। তাই তারাও তাঁকে একটু সাবধানে, পাশ থেকে সহযোগিতা করতো।


তাই, হয়তো মাধবীদেবীর কোন ক্ষতিও হয়নি - তেনাদের থেকে। তাঁদের বাড়িতে গৃহদেবী ছিলেন স্বয়ং মা দূর্গা। হয়তো তাঁর অধিষ্টান থাকার ফলেও মাধবীর ক্ষতি হয়নি কখনও।


যাই হোক, এর কয়েক বছর পর, তাঁদের প্রতিবেশী সেই কিনু সপরিবারে বাড়িতে ফিরে এলো। বেশ কয়েক বছর থাকলোও ঐ বাড়িতে। তারপর, হঠাৎ বাড়ি ঘরদোর বিক্রি করে চলে গেলো!


জয়, তখন সাবালক হয়ে উঠেছে প্রায়। তার অনুরোধ আর সেই সঙ্গে, মাধবী দেবীও স্বামীকে বলায়, দূর্গামন্দির সংলগ্ন কিনুর বাড়িটা তাঁরা কিনে নেন।


জমি-বাড়ি কেনার সময় সাধারণত, লোকে তার বাস্তু দেখে নেয়। জমির ইতিহাস জেনে নেয়। কিন্তু সেসব কিছুই করলেন না তাঁরা - কিনুর এ বাড়িটা কেনার সময়!


একে তো প্রতিবেশী,তার ওপর তারাও দীর্ঘদিনের পরিচিত হওয়ায়, আর বাড়িটার সম্পর্কে কখনই কিছু অভিযোগও কেউ না শোনায় - তাঁরা স্থির বিশ্বাসেই বাড়িটা কেনেন।


কাহিনীতে জটিলতা শুরু হয় ঐখানেই। তাঁদের যা করা উচিত ছিলো, বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে তা না করায়, বাড়িটার বর্তমান পরিস্থিতি, তাঁদের কাছে অজ্ঞাতই থেকে গেলো।


সেটা করলেই, জানতে পারতেন - ঐ বাড়ির বাস্তু চরিত্র নষ্ট হয়েছে। বাড়িটার মাটিও দূষিত হয়ে পড়েছে। শুধু ঐ মায়ের মন্দির সংলগ্ন হওয়ায় তার দূষণের প্রভাব পড়েনি কারোর ওপর।


সেই জন্যই, তাঁরা বুঝতেই পারেননি - আসলে টাকা দিয়ে তাঁরা একটুকরো জমিই শুধু না, সঙ্গে অনেক গুলো অতৃপ্ত আত্মার যন্ত্রণাও কিনে ফেলেছেন।


ঐ আত্মাদের মধ্যে প্রধান দুজন ছিলো - রুনু আর বিশু। বাকিরা তাদের আশ্রিত। নিজেদের বাড়িতে তারা মুক্তির অপেক্ষায় দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছিলো।


বৃদ্ধা মায়ের অসহায়তার কথা ভেবে, তারা শান্ত হয়েই ছিলো প্রথমে। মাধবী বা তাঁর মতো কাউকে পেলে, তারা নিজেদের অস্তিত্বও জানান দিতো। কিন্তু, এসব করেও মুক্তির কোন সুযোগ তারা পেল না।


এরপর, কিনু সপরিবারে ফিরলে, তার মা তাকে বলেছিলো - ভাই বোনের আত্মার শান্তির জন্য, গয়ায় গিয়ে পিণ্ডদান করে আসতে। কিন্তু কিনুর আর্থিক অবস্থা সচ্ছল না হওয়ায়, সে তা করে উঠতে পারেনি।


কিনুর মন থেকেও, কোন সদিচ্ছা ছিলো না বলেই মনে হয়। তাই, রুনু ও বিশু তাকে নানাভাবে প্ররোচিত করতে শুরু করলেও, সেসবে বিশেষ পাত্তা দেয়নি সে।


বাধ্য হয়েই, তখন রুনু ও বিশু অত্যাচার শুরু করে - আরও কঠিন ভাবে নিজেদের উপস্থিতি বারবার প্রমাণ দিতে থাকে। রীতিমত ত্রাস হয়ে ওঠে তারা।


সেই ভয়েই, বাড়ি ছেড়ে পালায় কিনু, তার পরিবার নিয়ে। এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই সেই কারণেই, সে কাউকেই জানায়নি, তার বাড়ি ছাড়ার আসল কারণটাও।


মাধবীরা বাড়িটা কেনার সাথে সাথেই, তাদের ভাই বোনের আত্মার মুক্তির দায় দায়িত্বও, এসে বর্তায় যেন তাঁদেরই ওপর। 


যেহেতু, তারা মৃত্যুর পর থেকেই, ঐ বাড়িতেই আটকে রয়েছে, তাই তারা চাইছিলো ঐ বাড়ির লোকেরাই, তাদের মুক্তি পাইয়ে দিক। এখন মাধবীরা বাড়ির মালিক, তাই সে দায় তাদেরই।


মাধবী বা তার পরিবারের কেউই এটা বুঝতে পারেননি। রুনু বা বিশুর বারংবার তাঁকে দেখা দেওয়ার, বা নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার, কারণ ছিল - তাদের মুক্তির প্রত্যাশা।


এইরকম পরিস্থিতিতে, জয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় তন্দ্রার। আর, মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে, প্রথমবার এসেই সরমা জানতে পেরে যান - তাদের কথা।


তারা যে মুক্তির প্রত্যাশী, আর সে মুক্তি যে - জয় বা তার পরিবারের লোকেদের থেকেই, তাদের কাম্য, সেটাও জানতে পারেন তিনি।


কিনুরা চলে যাবার পর, আর কেউ রাত কাটায় নি, রুনুদের বাড়িতে। সরমা এসে, সেখানেই রাতে থাকতে গেলেন। রাতভ'র তন্ত্রসাধনা করে, তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে গেলেন।


দূর্গা মন্দিরের কারণে, যে তারা ঐ বাড়ির বাইরে যেতে পারছে না, বা জয়দের বাড়িতেও ঢুকতে পারছে না, একথাও জানতে পারলেন। 


যেহেতু জয়দের কেউ ঐ বাড়িতে থাকে না, তাই তারা কিছুই করে উঠতেও পারছিলো না। সরমা বুঝতে পারলেন, ঐ দুই ভাই বোনের আত্মাকে, নিয়ন্ত্রণ করা তাঁর বাঁহাতের খেল।


কিন্তু, সেই খেলা খেলবার আগে, মাধবী এবং জয়ের বাবার সম্মতি নেওয়াটা, প্রয়োজন বোধ করলেন। ওদিকে মাধবী বা তার স্বামীর এসব ঝাড়ফুঁক, কালাজাদুতে কোনো বিশ্বাস ছিলো না।


স্বভাবতই, কথা পেরেও কোন সদুত্তর - তাদের থেকে পেলেন না সরমা। ওদিকে, তাঁর এতদিনের শিক্ষা আর অভিজ্ঞতা তাঁকে বলছে - এমন সুযোগ, এমন পরিবেশ আর পাবেন না তিনি।


তাই, অগত্যা সরমা ঠিক করলেন, মেয়েকেই দলে টানবেন। কিন্তু কি করে? তাঁর নিজের রক্ত বইছে, তার শরীরে। নিশ্চয়ই সে নিতে পারবে তাঁর চাপ।


প্রথমে তাই তাকেই বশীকরণ করলেন। তাকে নিজের মতের বশ করলেন। বোঝালেন কেন তারও তন্ত্র মন্ত্র জানা ভীষণ জরুরী।


তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নাকি এসব মোটেই মানে না। এদিকে, তাদের মাথায় বিপদ হয়ে, ঘনিয়ে আসছে রুনু আর বিশুর প্রহার।


শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের, সঙ্গে তন্দ্রার নিজেরও সাবধান হবার ও সুরক্ষিত থাকার জন্যই নাকি, তার তন্ত্র সাধনা জানা এবং অভ্যাস করা খুব জরুরী। আর তাকে সাহায্য করবেন তার মা!


তন্দ্রা, নিমরাজী হয়ে, মায়ের প্রস্তাব মেনে নেয়। আর তারপর, মা মেয়ে একজোট হয়ে, রোজ রাতে জয় ঘুমিয়ে পড়লেই, শুরু করে দেয় - তন্ত্র সাধনা।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract