আরিয়ানা ইচ্ছা

Classics Others

4  

আরিয়ানা ইচ্ছা

Classics Others

চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)

চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)

4 mins
316



(চুক্তিভিত্তিক বন্ধন/বিয়ে)





পর্ব,,,২০

*****মায়ানের যাওয়া আজ প্রায় তিন বছর হতে চলেছে তাও নওশীর অভিমান ভাঙ্গেনী।,, ছোট্ট নওশীর এখন চৌদ্দ বছর বয়সী এক কিশোরী। ,, এখন সে ফ্রক জামা পড়া ছেড়ে কামিজ পড়া শুরু করেছে। মাথার চুল গুলো এখন কোমড় পর্যন্ত ছুয়েছে। মায়ানের পিচ্চি সুন্দরী বড় হয়ে এখন আরও রূপবতী হয়েছে,, তবে, মায়ানের তা দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কারণ,,,,,,, নওশীর অভিমান এখনও কাটেনি,, বাসার সবাই মায়ানের সাথে কথা বললেও ও মায়ানের কল করার শব্দ পেলেই ঘরে গিয়ে দরজা আটকে বসে থাকে,, নওশী এবার ক্লাস নাইনের ছাত্রী।

,,মহুয়া বেগমের সংস্পর্শে থাকার দরুন কালো বোরকা আর হিজাবে নিজেকে আবৃত করে রাখে সব সময় বাইরে গেলেই,, দুই বছর হলো বোরকা পড়ছে।,, বাইরের সবাই ওর চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায়না তারপরেও দুইটা ছেলে নওশীকে বিরক্ত করত,,এ খবর মায়ার মাধ্যমে মায়ানের কানে পৌঁছে যায়,, ওর আব্বাকে কিছু বলতে নিষেধ করে দিয়ে নিজের প্রানপ্রিয় বন্ধু রাব্বির স্মরনাপন্ন হয়ে তার সাহায্যে ওদের উত্তম ব্যবস্থা নেওয়া হয়,, এরপর থেকে আর কেউ নওশীকে বিরক্ত করার সাহস দেখায়নি।,,, মায়া এবার ক্লাস থ্রি এর ছাত্রী। তবে মায়া ভীষণ চটপটে,, এই জন্য মায়ের কাছে বকা খায়,, তবে নওশীকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা সে আর নওশীর কাছেই পড়ে কারণ,

ওর পড়াশোনায় অতো মনোযোগ নেই,, তাই আব্বা, আম্মার কাছে পড়তে বসলেই বকা খায়।








🌼🌼🌼🌼🌼🌼








***মায়ান ওখানে গিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করে নিজের যাবতীয় যা যা খরচ তা চালানোর পাশাপাশি কিছু টাকা প্রত্যেক মাসে জমাও করে।,,,, মায়ান যতক্ষণ ব্যস্ত থাকে ততক্ষণই ভালো থাকে,, ব্যস্ততা কেটে গেলে আর রাতে শুয়ার সময় মন খারাপ থাকে প্রচুর,, রাতে ঘুমাতে খুব কষ্ট হয়,, রোজ রাতে ঘুমানোর জন্য স্লিপিং পিলস এর সাহায্য নিতে হয় তার। 

,,,আজও মায়ান ওর ফ্ল্যাটের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নওশেদ আলীর দেওয়া সেই টাচ্ ফোনটার গ্যালারি ঘেঁটে তার আর নওশীর সেল্ফি গুলো দেখছে,, যা তারা লাস্ট তিন মাসে একসাথে সময় কাটানোর সময় তুলেছিলো,, যখন যখন সুযোগ পেয়েছে,, সব শেষের যে ছবিটা সেটা দেখে বরাবরের মতো এখনো মায়ানের বুকটা হুহু করে উঠে। ,,, সেদিন মায়ান রাতে লাগেজ গোছাতে দেরী হয়ে গেছিলো,,। মহুয়া বেগম ওকে সাহায্য করতে চাইলেও মায়ান নিজের কাজ নিজেই করতে পছন্দ করে বলেই বলেছিলো,, "আম্মা আমি করে নিবো,, রাত হয়েছে তুমি ঘুমাও গা যাও।" 

***মহুয়া বেগম যাওয়ার পরে এক ঘন্টা কিভাবে যে পার হয়ে গেছিলো বুঝেনি মায়ান। তখন রাত প্রায় পৌনে একটা বাজছিলো,, মায়ানের হঠাৎ মনে পড়ে,, 'নওশীর জন্মদিন'। ওর পিচ্চি নওশী সেদিন ১১ বছরে পড়েছিলো,, মায়ান মনে করে নওশী হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে,, তাই ও সাথে করে আনা চকলেটের বক্স দুইটার উপর মার্কার পেন দিলে লিখে রাখে একটিতে নওশী অপরটিতে মায়া।

,,,তারপরে পকেট থেকে এক জোড়া নুপুর বের করে,,, সেটা ও নিজের জমানো টাকা থেকে কিনেছিলো,, ও যাওয়ার আগে নওশীকে কিছু দিতে চাইছিলো,, আর তাই নুপুর গুলো বক্সের সাথে রাখবে,, তখনই দুটো পিচ্চি হাত ওকে পেছন থেকে আলগোছে জড়িয়ে ধরে,, মায়ান বুঝে যায় কে এইটা।



,,,,মায়ান নওশীকে সামনে এনে দেখে নওশীর চোখ দুটো ফুলে আছে,, নাকটাও লাল হয়ে আছে। মায়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নওশীর মন ভালো করার জন্য নুপুর গুলো ওর হাতে দিয়ে বলে,, "তুমি এখনো ছোট,, একটু বড় হলে এগুলো তোমার পায়ে ঠিক হবে,, " এভাবে অনেক কথার পর নওশীর মন ভালো করতে চাইলেও নওশী কেমন থম মেরে ছিলো তাই ঘরের লাইট বন্ধ করে,, ছাদে নিয়ে যায়। ,, কিন্তু সেখানেও নওশী কান্নাকাটি করায় সেদিন ছাদের ঘরেই নওশীকে বুকে জড়িয়ে ধরে অনেক কষ্টে ঘুম পাড়ায়,,,। 

,,এই ছবিটা সেদিনের রাতেরই যেখানে নওশী একটা কোটি ওয়ালা কালো জামা আর কালো পাজামা পড়ে ঘুমিয়ে আছে আর চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে,, জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে সেই আলোয় নওশীকে আরও মায়াবী লাগছিলো যা ছবিতে ফুটে উঠেছে।,,,, সেই রাতে আর ঘুম আসেনি মায়ানের,, সারারাত ধরে নওশীকে বুকে নিয়ে বুকে নিয়ে অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে রাত রাত পার করেছে,, শেষ রাতে উঠে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নওশীর কল্যানের উদ্দেশ্যে ও দীর্ঘজীবি হওয়ার দোআ চেয়েছিলো।,,,


**** বর্তমানে,,, বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মায়ান ভাবে নওশী কি ওকে ভুলে গেছে?

,,, অপরদিকে,,,আজ প্রায় নয় বছর পর নওশেদ আলীর জ্ঞান ফিরেছে,, এতগুলো বছর নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকা শরীরে আবার প্রান ফিরে পেয়েছে যেনো। আসলে, বছর তিনেক আগে সব ডাক্তার আর ওদের ডিপার্টমেন্টের সবাই যখন হার মেনে নিয়েছিলো,,এবং তারা নওশেদ আলীর অক্সিজেন টেনে তাকে শান্তি লাভ দানে তার মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো,, তারা প্রায় প্রস্তুতি নিয়েই ফেলেছে এমন সময় রিয়াজ উদ্দিনের অতীতের কথা আর নওশেদ আলীর সব ভালো কাজগুলো মনে পড়ে যায়,, আর ও ভাবে "না এরকম একটা মানুষ এতো দ্রুত পৃথিবী ছেড়ে যেতে পারেনা। তাই ও ওর নিজ উদ্দ্যোগে নওশেদ আলীর ফ্ল্যাটে দুইজন ছেলে নার্সকে তার ২৪ ঘন্টার দেখা শোনার কাজে বহাল রেখে দেয়,, রোজ এসে দেখেও যেতেন তাকে।

,,,,আজও সেরকম দেখতেই এসেছিলেন তিনি,, তখনই দেখতে পেলেন তার হাত নড়ছে,, তিনি দ্রুত ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের নিয়ে আসলেন,, ডাক্তার তাকে পরিক্ষা নিরীক্ষা করে একটা ইঞ্জেকশন দেন,, এবং তার সাথে থাকার পরামর্শ দেন,, তাই রাতে বাড়িতে না গিয়ে ওখানে সময় কাটানোর পড়ে ফজরের নামাজ পড়লেন,, দেখেন নওশেদ আলী ছটপট করছেন আর নওশী মা, নুশু মা যাসনা এসব কি কি যেনো বিড়বিড় করছে,, রিয়াজ উদ্দিন তাকে ডাকলে তিনি আসতে আসতে চোখ মেলে তাকায় আর রিয়াজ উদ্দিন তাকে ধরে উঠে বসায়,, 

___,,পানি খেতে চাইলে তাকে পানি খাইয়ে দেন পানি খেয়েই তিনি বলেন,," নওশী কোথায়?" রিয়াজ উদ্দিন তাকে শান্ত হতে বলে শুইয়ে দিলে তিনি আবার ঘুমিয়ে পড়েন। ,, এরপরের পাঁচদিন সময় বিশেষ যত্নের পর নওশেদ আলী অনেকটা সুস্থ হয় আর তার আস্তে ধীরে সব মনে পড়ে,,সে তখন ভাবে তার কলিজার টুকরাটা কেমন আছে!!!.........


চলবে,,,


(ধন্যবাদ,, পড়ে মন্তব্য করতে ভুলবেন না।)













Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics