আরিয়ানা ইচ্ছা

Classics Others

4  

আরিয়ানা ইচ্ছা

Classics Others

চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)

চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)

4 mins
436



(চুক্তিভিত্তিক বন্ধন/বিয়ে)




পর্ব,, ১৮,,

***আনতারা বিবি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে আজ প্রায় দুই মাস হলো,,। তবে বাড়িতে বসবাসরত প্রতিটি সদস্যের জীবন যেনো থমকে থেকে গেছে,,।


____,,,এটা পৃথিবীতে চিরন্তন সত্য ঘটনা যে,,,,

"কারোর জন্য কারো জীবন থেমে থাকেনা" কিন্তু তবুও একটা ভালোবাসার মানুষের অনুপস্থিতি তার চিরতরে হারিয়ে যাওয়া বা তার রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলো আমাদের বুকের ভেতর তীব্র হাহাকার সৃষ্টি করে।

,,, "কর্ম ব্যস্ততায় সব ভুলে গেলেও প্রকৃত পক্ষে যখন আমরা একা থাকি বা খুব কষ্টে থাকি তখন সে মানুষটাকে আমরা আবার আমাদের জীবনে কামনা করি।,, আর একটা আপনজন হারিয়ে গেলে তখন আমাদের তাদের খারাপ আচরণগুলোও মনে করতে ভালো লাগে,,, আর বার বার তা স্মরনে এসে তাদেরকে মনে করিয়ে দেয়,,। 

____,,,,আসফা আজ আবার পাড়ি দিবে সুদূরে,, নিজ সংসার। সংসার ধর্মটাই আসলে এমনই হয়,, খুব বেশীদিন কাউকে অন্যত্র আঁটকে রাখতে পারেনা,, আলাদায় এক টান থাকে তা বারবার আকর্ষণ করেই যায়,,,। 

*******এর মাঝে রতন হাসান আর রোজী এসে এক সপ্তাহ থেকে গেছে,, আসফার আসাও অনেক দিন হয়ে গেছে আর তাই তাকেও ফিরে যেতে হবে নিজ সংসারে,,। মেয়েদের জন্য এইটাই বাধ্য বাধকতা,, বিয়ে হয়ে গেলে বাপের বাড়িতে একেবারে না থাকলেও তা স্বাভাবিক কিন্তু তার সংসারে নেই মানেই তা আর স্বাভাবিকে নেই,,,, তাকেও ফিরে যেতে হবে তাই সেই দূরের দেশেই.....

কারণ যত যায় হোক নিজ সংসারেই যত অধিকার,, বাপের বাড়িতে থেকে যাওয়ার আর তাদের কোনো অধিকার থাকেনা।







★★★★★★★★★★







____,,,সকালে ১০ টা বাজে এখন আসফা তৈরী হয়ে নেয় যাওয়ার জন্য, আর ছোট্ট আরাফ এখন মায়ানের কপ্লে গভীর ঘুমে ব্যস্ত। ,, আসলে এখানে থাকার বেশ কিছুদিন হয়ে যাওয়ায় আর মায়ার আর নওশীর সাথে সময় কাটিয়ে আরাফ এর ছোট্ট হৃদয় অভ্যস্ত হয়ে গেছে,,৷ তাই ওকে রেডি করাতে গেলেই ও কান্না করা শুরু করে বলে আসফা ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।,,,, আসফার বুকের ভেতরটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগে।,, সব সময় ও বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় ওর মা ওকে অনেকক্ষন জড়িয়ে ধরে রাখতো,, দো'আ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে দিতো,,আর সামনে শক্ত হলে দেখালেও আড়ালে গিয়ে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে ফেলতো।








___,,,,আজ সবি অতীত,,মা নামক ব্যক্তিটাকে আসফা চিরতরে হারিয়ে ফেলেছে আর ডাকলেও সাড়া দেবেনা।,,, বিদায়ের সময় কেউ কপালে স্নেহের চুমু এঁকে দেবেনা।,, আসফা একটা গভীর নিঃশ্বাস গোপন করে,,মায়া আর নওশীকে আদর করে দিলো। 

,,*****মায়ানের কাছে গেলে ওর বুকের ভেতরটা আবার কষ্টে ব্যথায় হুহু করে উঠলো, মায়ানের মুখের আদলটা অনেকটাই আনতারা বিবির মতো।

,,,,,আনতারা বিবি যাওয়ার পর থেকে ছেলেটা কেমন ঝিম ধরা হয়ে গেছে।

,,আসফা মায়নের হাত ধরে অনেকটা আদুরে সুরে বললো “বাবা তুমি তো অনেক বড় হয়েছো এখন,, এখন বাস্তবতা বুঝতে হবে!!! তুমি এভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিলে তো হবেনা বাবা।"

,,,,আমার মায়ের যে তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো। আর তোমার উপর ভরসা করতো,, "তুমি অনেক বড় হয়ে সবার মুখ উজ্জ্বল করবে। ",,, তুমি তোমার দাদীর কথাগুলো, আশা পূরন করবেনা?,, এখন আমিও তোমাকে অনেক উঁচুতে দেখতে চায়!!! অনেক বড় হও বাবা,, তোমার দাদী নেইতো কি হয়েছে? তুমি তার স্মৃতিতে তার নাম উজ্জ্বল করো।!"

****মায়ানের চোখ থেকে টুপ করে একফোটা অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়লো।,, মহুয়া বেগম আসফাকে সব সময় বোনের মতো শ্রদ্ধা করে তাই তাকে জড়িয়ে মহুয়া বেগম বললো,, "আপা তুমি চলে গেলে আমি কিভাবে সব সামলাবো আম্মা তো চলে গেলো আমায় ছেড়ে, এখন তো, আমি এতোসব কিভাবে সামলাবো আম্মা তো চলে গেলো,আমাদের ছেড়ে। মহুয়ার পিঠে হাত ডলতে

বললো,," দেখ সময় কারো জন্য অপেক্ষা করেনা, মায়ের আদর্শের চলো আর আমরা ফোনে রোজ,কথা হবে নিয়মিত। " চোখের আড়াল হতে পারো মানেই মনের আড়াল কিন্তু নয়!!" এই কথা সব সময় তুমি আমার মনের মধ্যে একটা আদরের ছোট বোন আর তা হয়েই থাকবে আমার মনের মধ্যে,,,


***** আসফা সবার থেকে বিদায় নিয়ে আসফাক সাহেবের সাথে রওনা দিলো,, বিকেল ০৪ঃ০০ টার দিকে প্লেনের সিটে ছেলেকে বুকে নিয়ে একদিকে নিজ দেশকে আর অপরদিকে আপনজনদের ছেড়ে যাওয়ার শোকে ব্যস্ত!!! 

,,,আসফাক হায়দারও বিমান বন্দরের বাইরের ওয়েটিং সিটগুলোয় মাথা নিচু করে বসে কলিজার টুকরা বোনকে বিদায় জানিয়ে শোক প্রকাশ করে চলেছেন। অনেক চেষ্টা করছেন কান্না থামানোর,, এই বয়সে তাও আবার পুরুষদের চোখে অশ্রু বড্ড বেমামান। এখনো তো অনেক গুলো মানুষের ভালো রাখার দায়িত্ব তার কাঁধে তাকে যে এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা। সব দায়িত্ব পালন করতে পারলে তবে না একজন দায়িত্বশীল মানুষ। করতেই হবে তাকে তার নিজ কর্তব্য পূরন। 

,,,, সেদিন রাতেই মায়ানের জন্য একটা ল্যাপটপ কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন তিনি।,, মায়ানকে ডেকে বললেন,, "একমাস পর তোমার উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বের হবে,, যেহেতু বাইরের দেশে যাওয়ার ইচ্ছে তাহলে অনলাইনে আই. এল. টি. এস. এর কোর্স কর বা ভাষা শিক্ষার প্র‍্যাক্টিস শুরু করে দাও

, আর দেশের বাইরের ভালো বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কোনটাই আবেদন করতে চাও সেসব ঠিক করো। 

,,,এরপর থেকে মায়ান বাড়ির মানুষ গুলো কে বেশী করে সময় দেওয়ার পাশাপাশি বিদেশে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন যোগ্যতা অর্জন করতে থাকে,, মায়ান ছোট্টকাল থেকে খুব বাধ্যগত ছেলে,, মা,বাবা, দাদী, ফুফু সবার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে এসেছে। ও এমন একটি ছেলে যা আজকের সমাজে বিরল। 

,,,,মায়ানের মধ্যে যেটা সবচেয়ে বেশী তা হলো ওর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য,,, ওর চরিত্রে দাগ লাগার মতো এখন পর্যন্ত কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে,, ইদানীং মায়ান খুব অপরাধবোধে ভুগছে।,,, ও বুঝতে পারছেনা ও কি খুব পাপ করে ফেলছে ওর মায়ের কথা অমান্য করে!!!!

,,মায়ান রোজ ই ছাদের ঘরে শুতে গিয়ে ও ঘুমাতে পারেনা সেখানে,, সাড়ে পাঁচ বছর থেকে নওশীকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে নেশায় পরিনত হয়েছে,, 

****মানুষ যেমন নেশা ছাড়া একদিনও কাটাতে পারেনা তেমনি শত চেষ্টা করেও মায়ান নওশীকে বুকে না জড়িয়ে ঘুমাতে পারেনি।,, পিচ্চিটাকে নিয়ে খারাপ কোনো উদ্দেশ্যই ওর নেই ও শুধু ওকে আগলে রাখতে চাই।,, মায়ান ভাবে অনেক ভাবনা চিন্তার পর ঠিক করে,, আরতো মাত্র কটাদিন,,তারপরই ও দেশের বাইরে চলে যাবে,, সব নেশায় কেটে যাবে!!!...........


চলবে,,,,


(পড়ে মন্তব্য করবেন,, ধধন্যবাদ ♥️)










Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics