আরিয়ানা ইচ্ছা

Classics Others

4  

আরিয়ানা ইচ্ছা

Classics Others

চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)

চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)

5 mins
387



(চুক্তিভিত্তিক বন্ধন/বিয়ে)




পর্ব,, ১৭ 

****আজকেও নামাজ পড়ে বন্ধু রাব্বির সাথে একটু হাটাহাটি করে একদম ৮ টার দিকে বাড়িতে আসে,, মায়ান।

,,,,কলিংবেল বাজালেও অনেকক্ষন কেউ দরজা খুলেনা।,, মায়ান কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে অধৈর্য্য হয়ে আবার কলিংবেল বাজাতে যাবে তখনই দরজা খুলে দেয় আসফাক হায়দার,,। 

,,,,বাবার চোখে পানি দেখে কিছু বলার আগেই ভিতর থেকে মা আর ফুপুর কান্নার আওয়াজ আসে,, আর মায়ান ভয় পেয়ে ভেতরে ছুটে যায়।

,,,,দৌড়ে আনতারা বিবির ঘরে চলে আসে তবে ঘরে গিয়ে ওর হাত পা থর থর করে কাঁপতে থাকে।,, ওর বুকের ক্রমাগত ঢিপঢিপ আওয়াযে ওরই কান ভারী হয়ে আসে যেনো।,, ও বার বার চেষ্টা করে ঘুম ভাঙ্গার যেনো এটা স্বপ্ন হয় কিন্তু না,, ও কোনো ভাবেই জেগে উঠতে পারছেনা। 

,,,ওর এখনো একই দৃশ্য দেখছে ওর দাদীর দেহটা বিছানায় শায়িত অবস্থায় থাকলেও তাতে প্রানের সঞ্চার নেই সেখানে নিথর অবস্থায়,, আর বিছানার দুই পাশে মেঝেতে তার মা ও ফুপু সেদিকে তাকিয়ে অঝরে কেঁদেই চলেছে। 

,,,মায়ানের মাথাটা হঠাৎ করে ভোঁ ভোঁ করতে শুরু করে,, ও যেনো আর কোনো কিছুই উপলব্ধি করতে পারছেনা।,, আসফাক হায়দার উনার মায়ের মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকেন,,তিনি জানেন মরার পর নাকি ভালো মানুষদের মুখ আরও তাজা হয়ে যায়,,সুন্দর দেখতে লাগে,, আসলেই মায়ের মুখ টা এখন জ্বল জ্বল করছে তার,,,,। তিনি ছেলেকে জড়িয়ে ধরে শক্তি আনার চেষ্টা করেন,, তার যে এখন অনেক দায়িত্ব। ,,, তিনিই যদি ভেঙ্গে পড়েন বাড়ির সকলকে সামলাবেন কি করে! আর মাকেও তো চিরনিদ্রায় শায়িত করার ব্যবস্থা করতে হবে।




*****মায়ান যখন বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ব্যস্ত তখনই ছোট্ট আরাফ এতো চেচামেচি শুনে ঘুম থেকে উঠে কান্না করতে শুরু করে,,। এদিকে আসফা আর মহুয়া বেগমের কোন হুশ নেই,, নিজের মাকে হারিয়ে যেনো তারা রোবট হয়ে গেছে,, এখন শুধু দুজনের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। 

,,,,মায়ান বাবাকে ছেড়ে আরাফকে কোলে নিয়ে আবার ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করে,,কিন্তু এখন ওকে দেখতে অনুভূতিশূন্য পাথরের মতো লাগছে।,, অন্যদিকে প্রতিদিনের মতো আজও দশ বছরের পিচ্চি নওশী মায়াকে সাথে করে উঠে তারপরে মশারী খুলে বিছানা সুন্দর করে ঝেরে একসাথে ব্রাশ করে মায়াকে নিয়ে ফ্যান বন্ধ করে ঠেলে লাগানো দরজাটা খুলে বের হয়,,,,

____আর সাথে সাথে দাদীর ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ এসে তাদের কানে পৌঁছে,, ওখানে গিয়ে দেখে সবাই সবাই কান্নায় ব্যস্ত নওশী গুটি গুটি পায়ে দাদীর কাছে গিয়ে দাদীকে ঝাকাতে গেছে,, দাদীর রুগ্ন প্রানহীন হাতটা খাট থেকে বাইরে ঝুলে পড়ে এটা দেখে মায়া ভয়ে কান্না করে দেয়। 

,,,,মায়া ভয় পেয়ে মহুয়া বেগমকে ঝাকাতে ঝাকাতে বলে "ও মা মা দাদীর কি হয়েছে? মা দাদী কেনো সাড়া দিচ্ছেনা? মা! ওমা তোমরা সবাই এভাবে কেনো কান্না করছো?"

____,,,মহুয়া বেগমের এতোক্ষণে যেনো হুশ ফিরে আসে,, উনি মেয়েকে দুহাতে শক্ত করে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

***পিচ্চি নওশী মাটিতে বসে আনতারা বিবির ঝুলন্ত হাতটা ধরে ফুপাতে থাকে।,,, অনেকক্ষন পরে আসফাকে শান্ত করে মায়ের পাশে বিছানায় বসিয়ে বলে "চুপ কর বোন আমরা যত বেশী কাঁদবো মায়ের আত্মা ততই বেশী কষ্ট পাবে।"

___,,,এখন আমাদের মায়ের পরকালের জন্য শান্তি চেয়ে বেশী বেশী দু'আ করতে হবে।







🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂






***আসফাক হায়দার,, মায়ানকে নিয়ে মসজিদে মাইকিং করতে চলে গেলো,, সেদিনই বাদ যোহর নামাজের পরে উনাদের আগের বাড়ির কাছে আসফাক হায়দারের বাবার কবরের ঠিক পাশেই তার মাকে দাফন করে আসেন।,,


,,,,মায়ান এখনও যেনো কোনকিছু অনুভব ই করতে পারছে না,, ও দু চোখে যেনো অন্ধকার দেখছে,,। 

ঝাপ্সা চোখে কাঁপা কাঁপা হাতে ও দাদীর কবরে মুঠো ভরে মাটি দিয়েছিলো,,।

___,,দাফনের পর সবাই চলে গেলেও মায়ান আর আসফাক হায়দার প্রায় আরও এক ঘন্টা কাটিয়েছিলেন সেখানে।





★★★★


সন্ধ্যার পরে আস্তে আস্তে সব প্রতিবেশী শান্তনা দিয়ে দিয়ে চলে যেতে থাকে,, আত্মীয় স্বজনরা এমনকি মহুয়া বেগমের ভাই ভাবীরাও ওদের শক্ত হতে বলে চলে যায়।,,,, আজকে রাত বাড়ার সাথে সাথে বাড়িটা যেন আরোও মৃত্যুপুরির মতো লাগছে,,। যেখানে প্রত্যেকদিন রাতে খাওয়ার পরে একটা মানুষকে ঘিরে সবার আলোচনা, গল্প,হাসি চলতো আজ সেখানে বিরাজ করছে স্তব্ধতা। 

,,,,আজ আর সেই মানুষটি নেই যাকে ঘিরে এতো কোলাহল,, সবাই কি করে ভালো থাকবে,, যখনই সেই মানুষটার মুখটা কল্পনায় ভেসে উঠছে সবাই আরও ভেঙ্গে পড়ছে নতুন করে,,।

____রতন আর রেজী আজকে আসার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু কিছুতেই টিকিট ম্যানেজ হয়নি হুট করে আর তাই ওরা পনেরো দিন পর রওয়ানা দিবে। ,,, রতন যতই অভিমান করুক সবার উপরে তাও মাতৃসম শাশুরীর মৃত্যুতে না আসতে পারার আফসোস ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। ,,, রোজীর ও মন খারাপ ওতো নানুকে কখনো দেখেইনি আর এখন নানীকে ও আর চোখের দেখা দেখতে পারবেনা।,, দুই বাবা মেয়ে দূরের দেশে অসহায় হয়ে মন খারাপ করা ছাড়া কিছুই করতে পারছেনা।

,,,,আসফার শ্বশুর, শাশুড়ী ফোনে বেয়াইনের মৃত্যুর শোক প্রকাশ করলেও উনারাও বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন,, কোথাও যাতায়াত করা তাদের আর সাধ্যে নেই,,।



********


,,,আনতারা বিবি ছাড়া বাড়িটা যেনো শূন্য খা খা করছে।,, বাড়ির সবার অবস্থায় খারাপ,, কে কাকে দেখবে কে কাকে খাওয়াবে কেউ এসব ভাবার নেই,,। মহুয়ার এক দূর সম্পর্কের বোন মায়াকে আর আরাফকে রাতে খাইয়ে দিয়ে চলে গেছে। ,,,,আরাফ ঘুমানোর জন্য কান্না করায় আসফা ওকে নিয়ে মায়ের ঘরেই শুয়ে পড়েছে,,। আরাফ ঘুমিয়ে গেলেও আসফা যেনো মায়ের ফাঁকা জায়গাটার দিকে তাকিয়ে আরো কেঁদে দিলো।,, ওর মনে বারবার এ ভাবনা আসছে ও কেনো আরো আগে দেশে এলোনা! তাহলে আরও কিছুটা সময় মায়ের সাথে কাটাতে পারতো,,। 

***আসফা ওর মায়ের বালিশটা জড়িয়ে আরও কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো,, "কেনো মা আমাকে এতিম করে গেলে!! এত তাড়াতাড়ি কেনো গেলে মা!!! আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে তোমাকে ছাড়া,,,!!""!






**********-





_____,,,,মায়া আজকে এতো ভয় পেয়েছে যে ওর মায়ের গলায় ছাড়ছেনা মহুয়া বেগম অনেক কষ্টে ওকে জড়িয়ে রেখে ঘুম পাড়িয়ে ওকেই ধরেই নীরবে বালিশ ভিজচ্ছে।,,, ওর বাবা মা তো সেই কবেই ওকে এতিম করে চলে গেছে,, এখন শাশুড়ী নামক মাটাও আজ ওর মাথা থেকে আদরের, শাসনের ছায়াটুকু কেড়ে নিয়ে চলে গেল!!!! 

****আসফাক হায়দার গ্রিল ধরে বেলকনির,, নিজের অশান্ত হৃদয়কে শান্ত করার চেষ্টা করছে,, ও আজ পুরোপুরি এতিম হয়ে গেলো,, খোকা বলে আর কেউ আদর করে ডাকবেনা ভাবতেই সিক্ত আঁখিতে আবার পানি জড়ো হলো।



,,,,,,,,,,


___,,,মায়ান ওর ঘরের খাটের পাশে মেঝেতে বসে মাথা নিচু করে দুহাতে কোকড়া চুলগুলো মুঠো করে কান্নায় ব্যস্ত,,। সাদা পায়জামা আর ঘিয়ে ফুলহাতা জামা পরিহিতা পিচ্চি মেয়েটা যার শুভ্র মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ হয়ে আছে,, সারাদিন কান্না করায়,, সে এসে মায়ানের দুহাত চুল থেকে সরিয়ে মাথাটা নিজের ছোট্ট বুকে চেপে কোকড়া চুল গুলোতে হাত বুলাতে লাগলো। মায়ান একটু কষ্ট প্রকাশের আশ্রয় পেয়ে নওশীকে শক্ত করে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো..........




চলবে,,


( সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ♥️)










Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics