আরিয়ানা ইচ্ছা

Classics Others

4  

আরিয়ানা ইচ্ছা

Classics Others

চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)

চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)

4 mins
262



(চুক্তিভিত্তিক বন্ধন/বিয়ে)




পর্ব,, ২১,,

****একটা কথায় আছে,, "পাপ বাপকেও ছাড়েনা" তাই হয়েছে মতো মিনিষ্টার রজব আহমেদের সাথে।

,,অতীতে নওশেদ আলীকে পরিকল্পিতভাবে আহত

করে তার এক বছর পরেই উনি নিজের ক্ষমতা বলে গুন্ডা সন্ত্রাসী ছেলে রাজুকে জেল থেকে বের করে আনেন,,। ___,,,এর এক সপ্তাহ একদিন বাপ-ছেলে মিলে অনেক মদ্য পান করেন।,,, মদের নেশায় মানুষের স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ পায়,,!!!!

,,,,,একটা জমি ছিলো তাতে রাজু কারখানা গড়ে মদের ব্যবসা করতে চেয়েছিলো আর রজব আহমেদ সেখানে একটা শপিং মল করতে চেয়েছিলেন!!!!

,,সেদিন মদের নেশায় দুজনেই যখন নিজেদের জাগতিক হুশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে তখনই ওই জমির কথা উঠায় দুজনে তর্কে জড়িয়ে পড়েন,, আর তর্কের এক পর্যায়ে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে রাজু টেবিলের উপর থাকা চকচকে ফল কাটা ছুড়ি ওর বাবার গলায় চালিয়ে দেয় আর নেশার ঘোরে অজ্ঞান হয়ে যায়। 

,,,ওদের বাংলোটা নিরিবিলিতে হওয়ায় প্রায় এক ঘন্টা অসহ্য যন্ত্রণা আর রক্তক্ষরণের জন্য রজব আহমেদ মৃত্যুবরন করেন।

 ,,,আর রাজু পরেরদিন সকালে যখন নিজের সজ্ঞানে ফিরে আসে তখন তার হাতের কাছে রক্ত মাখা ছুড়িটা পড়ে থাকতে দেখে আর ওর জন্মদাতা পিতাকে রক্ত রঞ্জিত অবস্থায় দেখে অনেক ক্ষন সময় লাগে তার অবস্থান বুঝতে,, আর ও যতই খারাপ হোক,নিজের বাবাকে খুব ভালোবাসতো ও,, ছোট বেলায় যখন মা মারা যায়,, ওর বাবাই তো ওকে আদর যত্নে বড় করে তুলেছে। 

***এই ঘটনা রাজুকে এতোটা মানষিক আঘাত করেছে যে ও আর স্বাভাবিক হতে পারেনি,, দীর্ঘ আট বছর ধরে রাজুর ঠিকানা পাবনা মানষিক হাস্পাতাল... । এখনও রাজু ওর বাবার গলাকাটা আর রক্তস্রোতে ভেসে যাওয়া লাশটা ভুলতে পারেনা,,। আর ঘুমের মাঝেই চেচিয়ে উঠে। 







🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸





★★বর্তমানে,,,

,,নওশেদ আলী এতোক্ষণ ধরে রিয়াজ উদ্দিনের কাছে এসব শুনছিলেন,, যতই তারা অপরাধী হোক তবুও রজব আহমেদ আর রাজুর পরিনতি শুনে উনার বুক বেদনায় ভারী হয়ে আসে,,। আর একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে পড়ে,, অথচ এই মানুষ দুটোর জন্যেই ও আজ এতো বছর যাবত নিজের কলিজার টুকরোটার থেকে এতোটা দূরে আছেন,,


********

____,,,,নওশেদ আলীর জায়গায় থানাতে এখন অন্য অফিসার কাজ করছে। 

,,,যদিও নওশেদ আলী চাকরী ছেড়েই দিতো তাও যখন জানতে পারলেন উনাকে মৃত ঘোষণা করে দিয়ে রিটায়ার্ড সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে... তখন উনি খুব কষ্ট পেলেন। ,,, কোমা থেকে উঠলেও,পুরোপুরি সুস্থ হতে এক মাস লেগে গিয়েছিলো নওশেদ আলীর,,।







🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂








*,,,,আজকে খুব খুশী,, এতো বছর পর মেয়ের কাছে যাচ্ছেন তিনি।,, বাসের জানালা দিয়ে বাইরের রাস্তা ঘাট ও পথিকদের আর এই কয়েক বছরের পরিবর্তন দেখছেন।

,,নওশেদ আলী একবার মনে করেছিলো ওই বাড়িতে একবার কল করে কথা বলে নিবে,, কিন্তু পরে আবার চিন্তা করলেন যে সামনাসামনি গিয়ে বুঝিয়ে কথা বললেই ভালো হবে বেশি...। 

,,,সারা রাস্তা নওশীকে নিয়ে ভেবে চললেন হাজার রকমের চিন্তা,ভাবনা মন জুড়ে,, ভাবতে ভাবতে লক্ষীপুরে এসে পৌঁছে গেলেন নওশেদ আলী,,। বাড়ির সবাই বিকেলের নাস্তা করতে ব্যস্ত ছিলো। এর মধ্যে হঠাৎ কলিংবেল বাজায় আসফাক হায়দার চা'য়ের কাপ রেখেই উঠে দাঁড়াবেন,,তার আগেই মায়া দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো। 

,,একটা নয়/দশ বছরের পিচ্চি মেয়েকে দেখে নওশেদ আলী একটু ভড়কে গেলেও পরে শ্যামলা মায়াবী মুখটা আর মুখের আদলটা পরিচিত লাগায় বললো,, "তুমি কি মায়ানের বোন..??? "

,,মায়া ছটপটিয়ে উত্তর দিলো,, "হ্যাঁ,, আমি মায়ান ভাইয়ার বোন 'মায়া'। ,, কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।"!!! 

_____,,নওশেদ আলী বললেন,, " নওশী আছেনা!! আমি ওর বাবা।"

,,,মহুয়া বেগম নওশেদ আলীর কণ্ঠ পেয়ে ঘরে গিয়ে বোরকা পরে আসলেন আর নওশী এখনও থম মেরে বসে আছে।,, আর অন্য সাড়ে পাঁচ বয়সের সময়ের বাচ্চাদের কিছু মনে থাকে কিনা নওশীর জানা নেই,, তবে ওর এই বাড়িতে আসার কিছু ঘটনা আর ওর বাবাকেও স্পষ্ট মনে আছে।,, ছোট্ট নওশী হলে হয়তো এতোক্ষণ দৌড়ে গিয়ে বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়তো,, কিন্তু কিশোরী নওশী বড্ড অভিমানী যে!!! ও ওর রাগ, অভিমান,কষ্ট অধিকার শুধু দুইজন পুরুষের কাছেই প্রকাশ আর ব্যক্ত করে,, একজন ওর বাবা আরেকজন ওর কে হয় সেটা ও জানেনা।

,,নওশেদ আলীর হাত ধরে বকবক করতে করতে মায়া উনাকে বসার ঘরে অর্থাৎ ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসে,, "আঙ্কেল তোমাকে তো আমি কোনো দিন দেখিনি,,তুমি এতো দিন আসোনি কেনো একবারো? জানো নওশী আপু রোজ কত্ত মন খারাপ করে!! এখন বুঝলাম তার কারন!!" আগেতো জানতাম না!! "


*****

,,,আসফাক হায়দারের মনে যতই ক্ষোভ থাকুক না কেনো! এখন নওশেদ আলীর রুগ্ন আর চেহারা দেখে কিছুই বলতে পারলেন না।,,, নওশেদ আলী আসফাক হায়দারের সাথে সালাম বিনিময় করে নওশীর কথা জিজ্ঞেস করার আগেই দেখলো বড় সোফার এক কোনে মাথা নিচু করে রাখা মেয়েটাকে,,,,।


,,,,, তিনি দেখলেন,, তার পিচ্চি ফ্রক পরা মেয়েটা এখন কামিজ পরা আর একটা ঘিয়ে ওরনা দিয়ে মাথা থেকে শুরু করে গা পর্যন্ত ঢেকে আছে।,, তিনি দেখলেন একদম শীমার মুখের আদল পেয়েছে আরও বেশী রুপের শ্রী সুদ্ধ এক কিশোরী মেয়েকে।, তার পিতৃ হৃদয় হুহু করে উঠলো।

________,, তার মেয়ে কবে এতো বড় হলো!! সে তার ছোট্ট পরীর খেয়াল রাখতে পারেনি,, তার একটু একটু করে বেড়ে উঠা দেখা হয়নি,, নওশেদ আলী ব্যাগটা হাত থেকে মেঝেতে রেখে নওশীর পাশে সোফায় বসে,, ওকে ঝাপ্টে ধরে আর্তনাদের সুরে কেঁদে উঠলো,, কান্নাটা এতোটাই করুন ছিলোযে দাড়িয়ে থাকা আরও তিনজন মানুষেরও চোখের কোণায় পানি চলে আসলো।,, আর অভিমানী নওশীও সব অভিমান ভূলে নিজের হাতে ওর বাবার পিঠের কাছের শার্টের অংশটা শক্ত করে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।,, সেদিন রাতে মেয়ের অভিমান ভাঙ্গিয়ে অতীতের সব কথা তার যাওয়ার পর থেকে যা যা হয়েছে তার সাথে সব খুলে বললো,, সব ঘটনা শুনতে শুনতে আর তার বলতে অনেক রাত হয়ে গেলো,,খাওয়া দাওয়া সারতে, আনতারা বিবির খবর ইতোমধ্যে জেনে ফেলেছেন,, খুব কষ্ট পেয়েছেন শুনে। 

,,,ছোট্ট নওশীর মতো বাবার বুকে ঘুমাতে না পারলেও কিশোরী নওশী ছাদের ঘরের বিছানা রেডি করে মশারী টানিয়ে বাবার ওষুধ খাইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো যতক্ষন না নওশেদ আলীর ঘুম এসছে,,। ঘুমন্ত বাবার দিকে তাকিয়ে নওশী তখন ভাবে,, এখানে আমার খেয়াল রাখার মতো কত কেউই তো ছিলো,, কিন্তু বাবা ওখানে একা একা কতনা কষ্ট পেয়েছে!! এক কটা বছরে!!!। """ নাহ্ এখন থেকে আমি এই নিঃসঙ্গ মানুষটাকে দেখে রাখবো..........




চলবে,,,




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics