আরিয়ানা ইচ্ছা

Classics Others

4.5  

আরিয়ানা ইচ্ছা

Classics Others

চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)

চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)

5 mins
333



(চুক্তিভিত্তিক বন্ধন/বিয়ে)



পর্ব,,, ২৩,,, 

***নওশী লক্ষীপুর সরকারী কলেজে একাদশ শ্রেণীতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়েছে। ,,, নওশী মায়ানের মতো এস.এস.সি. তে গোল্ডেন এ প্লাস না পেলেও এ প্লাস পেয়েছে। বাড়ির সবাই ওর রেজাল্টে খুশি হয়েছে।,,, মহুয়া বেগম কালকে নওশী আর নওশেদ আলীকে দাওয়াত করেছে।,, তাই নওশী খুব খুশিতে আছে আর ওর বাবার কাছে ওই বাড়ির সবার সম্পর্কে কথা বলেছে।,, নওশেদ আলী একটা বিষয় খেয়াল করেছে নওশী মায়ানের ব্যাপারে কিছু, কোনো কথায় বলেনা। 

,,,যেখানে উনি আসফাক হায়দারের কাছে শুনেছেন যে,, নওশীর বেশী খেয়াল মায়ানই রেখেছে আর নওশী নাকি তখন মায়ান ছাড়া কিছুই বুঝতোনা!!!!!!

____,,,তাহলে কি নওশী এখন মায়ানকে ভুলে গেছে?



★★★★★★





নওশী অনেকক্ষন হলো ওর ঘরে ঘুমাতে চলে গেছে আর নওশেদ আলী ওর আলমারীর কাছে গিয়ে কাগজপত্রর মধ্যে থেকে একটা কাগজ বের করলো যেটা এগারো বছর আগে নওশীকে এখানে রেখে যাওয়ার সময় আনতারা বিবির জিদের কাছে হার মেনে অনেকটা বাধ্য হয়ে করেছিলেন!!! তারই একটা ছোট্ট প্রমান। ,,, নওশেদ আলী কাগজটার দিকে তাকিয়ে অনেক কিছু ভাবলেন তারপরে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে ঘুমাতে গেলেন।


,,,,,পরেরদিন সকালে কলেজের ক্লাস এখনো শুরু না হওয়ায় নওশী আজকে খিচুড়ি আর ডিম ভাজি করলো।,,, মহুয়া বেগমের সাথে থাকতে থাকতে এখন প্রায় সব রান্নায় পারদর্শী হয়ে গেছে নওশী।

___,,মহুয়া বেগমের দেওয়া বড়ই আর তেতুলের আচার দিয়ে বাবা মেয়েতে তৃপ্তি করে খেলো,,।

নওশী খাওয়া দাওয়া করেই ও বাড়িতে ছুটলো।,, গিয়ে দেখলো ক্লাস ফাইভে পড়া পিচ্চি মেয়েটা গিন্নিদের মতো বকবক করছে আর পেয়াজের খোসা ছড়াচ্ছে। 

,, নওশীকে আসতে দেখেই মায়া বললো,, "আপু দেখোনা আমার চোখ পুরো জ্বলে গেলো।,, মা' আমাকে এই এগারো বছর বয়সেই বুড়ি করে দিতে চাইছে,, তুমি এগুলো করোতো আপু, আমি এখনই চোখে ঠান্ডা পানি দিয়ে আসি। নাহলে আমার মুখের স্কিন চোখের পানিতে নষ্ট হয়ে যাবে।"

,,,, নওশী তো পেয়াজ হাতে নিয়ে কিছুক্ষন হাবলা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো,, মায়া বেসিনের ওখানে যাওয়ার পরেই হিহি করে হেঁসে ফেললো,,। মহুয়া বেগম মেয়ের কথা আর কাজে রেগে গেলেও নওশীর হাঁসি মাখা মিষ্টি মুখটা দেখে নিজেও হেঁসে ফেলেন,,।










🍂🍂🍂🍂🍂







,,,,

সেদিন নওশী আর মহুয়া বেগম মিলে পোলাও, ডিম ভাজা, বেগুনভাজা, আলু কুচি ভাজি আর পায়েস রান্না করলো,,।,, নওশী মহুয়া বেগমের রান্না চলার সময়ই মায়ানের ঘরে গিয়ে আলমারীতে রাখা জামার ভিতর থেকে একটা জামা নিয়ে গোসল করে নামাজ পড়ে নেয়। 

,,তারপরে রান্নাঘরে গিয়ে দেখে রান্না শেষ এখন মহুয়া বেগম হাড়ি পাতিল পরিস্কার করছেন তাই ও মহুয়া বেগমকে মাজা শেষে জোর করে পাঠিয়ে দেয় গোসলের জন্য আর বলে ও নওশেদ আলী আর আসফাক হায়দারকে কে খেতে দিয়ে দেবে।,, ডাইনিং এর টেবিলে বসা বাবা আর আংকেল কে খুব যত্ন করে খেতে দিচ্ছে নওশী আর মায়া বক বক করে যাচ্ছে অনর্গল আর দুজনের কাছেই একবার করে ভাত মাখা খাইয়ে নিচ্ছে। 

***

নওশী মায়াকে খেতে দিতে চাইলে বলে,,," আমি এখন শুধু টেস্ট করছি আপু,, আম্মা আর তোমার সাথে বসে ভালো করে খাবো তুমি জানো আপু একেকজনের হাতে খেতে একেক রকম খাবারের স্বাদ পাওয়া যায়। ,, তাই আমি আজ সবার কাছেই একটু করে খাবো।" ওওর কথা শুনে সবাই আরেক দফা হাঁসে,,। 

***গোলাপি রঙের ওরনা পড়া মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে তারা অনেক কিছুই ভাবছেন,, 

,,,,নওশেদ আলী ভাবছেন তিনি নওশীকে এখানে রেখে গিয়ে ভুল কিছু করেননি। উনিও হয়তো উনার মেয়েকে এভাবে এতোটা ভদ্র,সভ্য, নম্র করে মানুষ করতে পারতেন না। আর একটা সুখি পরিবারের মতো ভালো দিতেও পারতেন না।


,,আর আসফাক হায়দার ভাবছে উনি প্রথম দিকে যদি মেয়েটাকে আরেকটু ভালোবাসা দিত তবে হয়তো উনার এতো আফসোস হতোনা,, উনি কিভাবে প্রথম দিকে এতো মিষ্টি একটা মেয়ের সাথে ওমন রাগী আচরণ করেছেন!!! মায়ার কথা শুনে ওদের দুজনেরই ঘোর কাটে। 

,"এই তোমরা দুজন তখন থেকে আপুর দিকে ওভাবে দেখছো কেনো?,, আমি জানিতো আপু সুন্দর! তাই বলে তোমরা আপুকে নজর দিবে!! হ্যাঁ?" 

,,আসফাক হায়দার আর নওশেদ আলী দুজনেই থতমত খেয়ে যায় আর অনেকটা দৌড়ে বেসিনের কাছে চলে যায় আর মনে মনে ভাবে এই মেয়েটাও না! মনে মনে ভাবে "এই মেয়েটাও না!!" 

,,,নওশী রান্না ঘর থেকে পায়েসের বাটি নিয়ে এসে চেয়ার ফাঁকা দেখে বলে,, "মায়া বাবারা কোথায়?", "ওইতো আপু, হাত,ধুতে গেছে" নওশী বলে,, "আগে পায়েস টা খেয়ে রেস্ট নিতে যান,আপনারা।" 

***খাওয়া দাওয়া সেরে আনতারা বিবির ঘরে নওশী, মায়া আর মহুয়া বেগম শুয়ে শুয়ে কথা বলছিলো।,, মায়াকে আসফাক হায়দার ডাকায় ও উঠে চলে গেলো,, কিছুক্ষণ পর একটা বোরকা নিয়ে এসে মহুয়া বেগমকে ধরিয়ে বলে,, "মা তোমাকে নওশেদ কাকু ডাকছে,, মানে তোমার আর বাবার সাথে নাকি কি জরুরী কথা আছে তাই ছাদে ডাকলো তোমাদের!!!" 

,,,মহুয়া বেগম বোরকা পড়ে আর ওরনা দিয়ে সুন্দর করে মুখটা ঢেকে উপরে ছাদের ঘরে যেয়ে দেখে নওশেদ আলী আর আসফাক হায়দার বিছানায় বসে আছে,, তাইসে মায়ানের পড়ার চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসে বললো,, "বলেন ভাই কি বলবেন!! " এদিকে মহুয়া বেগম মোবাইল রেখে যাওয়ায় তাতে মায়ান ভিডিও কল করেছে দেখে নওশী মায়াকে কথা বলতে বলে ভুলে ছাদে চলে আসে।

,,ও বুঝতে পারে দরজা ভিড়ানো আছে আর মামনীরা হয়তো কথা বলছে তাই আবার সিড়ির দিকে পা দেওয়ার আগেই ওর বাবার কিছু কথা কানে আসে,,,

________ "দেখুন আমার নওশীকে রেখে যাওয়ার খুব দরকার ছিলো, বলে নওশী আর মায়ানের অবুঝ বয়সে হুট করে বিয়েটা দিই আর আমার তো মনে হয়না মায়ানও এখন এই বিয়েটা মানে বা মানবে বলে।,, ওর এখন মাস্টার্স কমপ্লিট হয়ে গেছে আবার সেদিন তো বললো,, একটা কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিয়েছে তাহলে ওখানেই সেটেল হওয়ার ব্যবস্থা করছে। ,, আমারতো মনে হয়না ও আর দেশে আসতে চাইবে।"

,, নওশী এটুকু শুনেই তাড়াতাড়ি করে সিড়ি দিয়ে নেমে মায়ানের ঘরে গিয়ে বালিশে মুখ গুজে কান্না করতে থাকে,, ওর আজও মনে পড়ে সেদিনের কথা,,,অতীতে তখন নওশীর দশ বছরেরর,, আনতারা বিবি অসুস্থ হয়ে বিছানায় থাকতো সব সময়,, মায়ার দাঁত ব্যাথা হওয়ায় মহুয়া বেগম ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল,, আর মায়ান প্রাইভেটে,, তখন আসফাক হায়দারও বাইরে ছিল,কোনো কাজে। 

***নওশী আনতারা বিবির পাশে শুয়ে ছিল,, আনতারা বিবি ওর দিকে তাকিয়ে ওর চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলেছিলো,, "তোর কি মনে আছে তখনকার ঘটনা! যখন,প্রথম এই বাড়িতে এসেছিলি!!" নওশীঃ "হ্যাঁ, আমার মনে আছে,, তবে তখন অতো বুঝতাম না খালি,জানি যে সবাই,আমাকে খুব আদর করলেও আংকেল খুব রেগে থাকতো আর বাবা রাতে আমাকে ঘুম,পাড়িয়ে চলে গেছিলো তখন

আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো।" আনতারা বিবি বলে "তোর সেদিনের কথা মনে আছে দিদিভাই,, যেদিন তোর বাবা তোকে 'কবুল' বলতে বলেছিলো!!? "

"হ্যাঁ একটু একটু মনে আছে,, অতটা মনে নেই",, আনতারা বিবি নওশীর মাথায় হাত বুলিয়ে বিয়ের কথা বলেছিল,, আর মায়ানকে কখনো ছাড়তে নিষেধ করেছিল,, """""""

বর্তমানে,, নওশী কাঁদছে,, তার কাঁদার জন্য খাটে কাপুনির সৃষ্টি হচ্ছে,, সে ভাবছে,, সেতো তখন থেকেই শুধু মায়ানকেই চাই,, "তবেকি মায়ান ওই দেশে গিয়ে ওকে ভুলে গেছে!!!"...........





চলবে,,,




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics