(চুক্তিভিত্তিক বন্ধন/বিয়ে)
(চুক্তিভিত্তিক বন্ধন/বিয়ে)

(চুক্তিভিত্তিক বন্ধন/বিয়ে)
পর্ব,,,২৫,, অন্তিম পর্ব,,,
***নীল পাঞ্জাবী আর সাদা পাইজামা পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মায়ান,, মুখটা ঝড়ের আগে আকাশ যেমন থমথমে হয়ে থাকে ওই রকম ই সকাল থেকে ঘর থেকে বের হয়নি ও,,,। মহুয়া বেগম সকালে নিজ হাতে লুচি আর কলিজা ভাজি, বুন্দিয়া দিয়ে খাইয়ে দিয়ে গেছে। ,,, খাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও মায়ের হাঁসি মাখা মুখটা দেখে না করতে পারেনি,,, খেয়ে নিয়েছে।
____,,,মায়া একটু আগে এসে পাঞ্জাবী আর পায়জামা দিয়ে বলেছিলো,, "আব্বা তোমায় এটা পড়ে ডাকছে বাইরে,," মায়ান লাল নতুন জামা পরিহিতা বোনকে দেখে বললো,, "নওশী এসেছে?"
হ্যাঁ,, "আপুতো সকাল থেকে মায়ের সাথে রান্নাঘরে কাজ করছে" বলে লাফাতে লাফাতে চলে গেলো।
___মায়ানের মুখটা আরও বিষন্ন হয়ে গেলো,, ওতো ভেবেছিলো নওশীর একটু হলেও খারাপ লাগবে কিন্তু না পিচ্চিটার সত্যি ওকে মনে নেই।
"মায়ান হয়তো ওর মনের একটু ও জায়গা দখল করতে পারেনি।
🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼
**নওশী চমকালো যখন ওকে একটা কালো চকচকে থ্রি পিস ধরিয়ে মহুয়া বেগম পরে আসতে বলল।,, তারপরে ওকে হালকা একটু সাজিয়ে বাইরে নিয়ে আসলো মায়া আর মহুয়া বেগম,,,,,!!!!! মায়া আর মহুয়া বেগম।
,,,,বসার ঘরে নওশেদ আলী, আসফাক হায়দার আর কলেজের প্রিন্সিপাল আফাজ হোসেন বড় সোফাটায় বসা,,আরেকটা সোফায় সেই বৃদ্ধ কাজী বসা যে দীর্ঘ এগারো বছর আগে দুটো অবুঝ হৃদয়কে এক বন্ধনে বাঁধতে সাহায্য করেছিলো।
____,,,আজকেও আসফাক হায়দার উনাকে খুব ভোরে গিয়ে গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে এসছেন,, আর একটা সিঙ্গেল সোফায় মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। ,,, নওশীকে নিয়ে আসা আসা মাত্রই বড় সোফায় নওশেদ আলীর পাশে পাতলা ছোট্ট মেয়েটাকে বসতে দেওয়া হয় সবাই সরে।,,, মায়া সোফার পেছনে দাঁড়ায় আর মহুয়া বেগম নিজ ঘরের দরজার কাছে কান পেতে দাঁড়িয়ে থাকেন।
***সাদা টুপির আড়াল দিয়ে ঝাকড়া চুল বেরিয়ে থাকা ছেলেটা সামনের সোফায় একবার ভুল করে তাকালে,, নিজের প্রিয় রংয়ে সুসজ্জিত মেয়েটাকে দেখে ওর মনে একশো প্রজাপতির মেলা বসলো যেনো।
,,,,বিয়েটা সুষ্ঠুভাবে হয়ে গেলে বাড়ির সব ছেলেরা খেয়ে নামাজ পড়তে গেলো।,, মায়ানতো নামাজ পড়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো মোনাজাতের মাধ্যমে,, আর এদিকে নওশী যেনো লজ্জায় খেতে পারছিলোনা। ,,, মহুয়া বেগম ওকে খাইয়ে দিয়ে মায়ার অভিযোগ, "আম্মা তুমি আমায় ভালোই বাসোনা আর সব ভালোবাসা খালি ভাইয়া আর ভাবীপুর জন্য"।
,,,মহুয়া বেগম ওকেও খাইয়ে দিতে দিতে বলে,, "ভাবীপু কিরে?"৷ মায়া হেঁসে বললো "ভাবী+আপু =ভাবীপু। বুঝলে মা?" আমার কত্ত বুদ্ধি!!!
*****বিকেলে সবাই ছাদে গিয়ে কথা বলার সময় আসফাক হায়দার বললো, "দেখো,, আমাদের ও ইচ্ছে ছিলো তোমাদের মানুষজন ডেকে বিয়ে দেওয়ার তবে,, নওশীর এখনো আঠারো বছর হয়নি আর তাছাড়া আমি চাইনা মানুষ তোমার সম্পর্ক নিয়ে বাজে মন্তব্য করুক।,,,, সেদিন সন্ধ্যার পরেই শরীর খারাপের বাহানায়,, ফ্লাটে চলে আসে নওশেদ আলী।
****নওশেদ আলী কখনোই নিজের মেয়েকে আর তার কাছ ছাড়া করতে চাইনি পরে অনেক ভাবনার পর তার মনে হয় তিনি তো আজীবন বেঁচে থাকবেনা। তার কিছু একটা হয়ে গেলে তার মেয়েকে আগলে রাখার জন্য মায়ান আর ওর পরিবারের চেয়ে ভালো আর কাউকে পাবেন না তিনি।,,,, নওশেদ আলী একা একাই বলে,, " সীমা আজ আমি বড় নিশ্চিন্ত"। ___"আজ আমার মেয়েকে আমি তার যোগ্য মানুষের হাতে তুলে দিয়েছি।"
_____,,,,রাতে আজকেও সবাই আনতারা বিবিকে স্মরণ করে ওর ঘরে সময় কাটায়। ,,, মায়াতো বরাবরের মতোই ঘুমিয়ে গেছে তাই নওশী ওকে মশারী টানিয়ে দেয়।,,,, আসফাক হায়দার আর মায়ান চলে গেলেও নওশী লজ্জায় কি করবে বুঝতে পারছেনা।,,, মহুয়া বেগম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,, "ছেলেটা তোকে বড্ড ভালোবাসে" সারাজীবন আগলে রাখিস ওকে,,
বলেই মহুয়া বেগম নিজের ঘরে চলে যায়,,।
****নওশী এই ঘরের দরজা চাপিয়ে লাইট বন্ধ করে মায়ানের ঘরের দিকে গেলো,, দরজার সামনে গিয়ে অনেক সাহস সঞ্চয় করে ভেতরে প্রবেশ করলো।,,, ঘরে গিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে আলমারী থেকে একটা জিনিস নিয়ে বেলকনি তে গেলো।,,,, মায়ান বেলকনির গ্রিল ধরে একমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল,,, নওশী ওর চোখের সামনে দুটো রুপার নুপুর ধরতেই মায়ান খুশি হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো,,। "তুমি আমায় মনে রেখেছো নুশু?",,,, আমি জানো আর কিচ্ছু চাইনি",, আমি সব সময় চেয়েছি "তুমি যেনো আমায় না ভুলো!!!!",,,
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
"আই লাভ ইউ নুশু",,,, " আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমার সাথে কাটাতে চাই,,"। নওশীর দম বন্ধ লাগছিলো এতো জোরে চেপে ধরায়,, তাও কিছু বলেনি,, কতদিন পর আবারও এই বুকটায় জায়গা পেলো,, ওর শান্তির স্থানে।
***অনেকক্ষন জড়িয়ে থাকার পর মায়ান নিজের চোখের পানি মুছে,,নওশীর ও গাল দুটো মুছিয়ে দিলো।,, নওশীর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো আগের মতই তার নাক লাল হয়ে গেছে। মায়ান নওশীকে খাটে বসিয়ে ওর দেওয়া নুপুর জোড়া পড়িয়ে দিলো।,,, যা আজো সেরকমই হয়ে আছে আর এখন নওশীর পায়ে সুন্দর হচ্ছে।
***মায়ান নওশীর এতোদিনের জমে থাকা বকবকানি শুনছে আর মশারী টানাচ্ছে। মেয়েটা এখনও আগের মতোই আছে। মায়ান নওশীকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো,, বললো,, "জানো আমার কতদিন ভালো ঘুম হয়নি,, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও,, আমি একদিন ভালো করে ঘুমাতে চাই",,, মায়ান ঘুমে ঘুমে বিড়বিড় করলো,, " তোমায় বুকে জড়িয়ে ঘুমানোটা একটা নেশা হয়ে গেছে,, যা আমি কোনো কিছুতেই কাটাতে পারিনা।" প্রতুত্তরে নওশী ওর দু গালে দুটো চুমো দিলো ছোটবেলার মতো আর মায়ানের মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো।
💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐
``দেখতে দেখতে দুই বছর সাত মাস কেটে গেলো,,
মায়ান বিয়ের পঁচিশ দিনের দিন ফিরে গিয়েছিলো মালেশিয়া,, ওখানে ওর চাকরী হয়ে গেছে আর পি.এইচ.ডি. আবেদন ও করেছে,, মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ,,,, আজকে মায়ান মালেশিয়া কুয়লালাম পুরের এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে নওশীর জন্য। নওশীও মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্কলারশিপের সুযোগ পেয়েছে।,,, মায়ান আগে তিনজনের সাথে শেয়ারে ফ্লাটে থেকেছে,, এখন একটা এপার্টমেন্ট কিনেছে।
,,,,মায়ান বাড়ি বিক্রি করে এদেশে সবাইকে চলে আসতে বলেছে। কিন্তু,ওরা সিদ্ধান্ত নেই যে আরও তিন বছর পর আসবে তারা। মায়া এবার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে,, তাই মহুয়া বেগম আর আসফাক হায়দার ওর এস.এস.সি পরিক্ষার পরেই আসবেন বলে জানান,, নওশী তো কোনো মতেই ওর বাবাকে একাই রেখে আসতে চাইনি। তবে নওশেদ আলী জোর করে ওকে পাঠায়। কারণ তিনি দেখেছেন মায়ানের জন্য তার মেয়েকে রোজ কষ্ট পেতে।
,,,,তবে,, নওশেদ আলী আরেকটা মেয়ে পেয়েছে। যে বকবক করে আবার মায়ের মতো শাসন করে খেয়াল ও রাখে।,,, নওশেদ আলী ও এখন মায়ার বকবক না শুনে থাকতে পারেনা।
,,তাই তিনিও একেবারে মায়াকে সাথে নিয়েই ওই দেশে সেটেল হবেন ঠিক করেছেন।,, নওশী প্লেন থেকে নেমে মায়ানকে দেখে কান্না করে দেয়।,, রোজ ফোনে কথা হলেও সামনে দেখার অনুভূতি আলাদা।
,,,মায়ান আর নওশী এপার্টমেন্টে আসার পরে সর্বপ্রথম একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রাখে,, দুই বছরের না দেখার তৃষ্ণা মেটানোর মতো,, খুব শক্ত করে।,,,
🎀🎀🎀🎀🎀🎀🎀
***রাতে খাওয়া দাওয়ার পরে নওশী আবদার চকলেট কেক খাওয়ার,, মায়ান কেক নিয়ে আধঘন্টা পরে কলিংবেল বাজালেও দরজা খুলেনা তখন নিজের এক্সট্রা চাবী দিয়ে দরজা খুলে কেকের প্যাকেট টেবিলে রেখে "নুশু, নুশু" বলে শোবার ঘরে যায়,,,,
******""""সেখানে গেলে দেখে নওশী ওর নওশী তার পছন্দের রঙের কালো শাড়ী পড়ে সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে। মায়ানের সব সময় নওশীকে পিচ্চি লাগলেও আজকে শাড়ি পড়া অবস্থায় ওর নুশু পিচ্চির সৌন্দর্য যেনো আরও বেড়ে গেছে ,, আর পূর্ণরুপ ধারন করেছে,, নারী হিসেবে।
,,মায়ান সব সময় ভাবে এই মেয়েটার সৌন্দর্য্যের জন্য ওর সাথে নিজেকে মানায়না আর আজতো ওর বুকে ব্যাথা করছে খুব।,, মায়ান নওশী ছোট বলে যে কাজটা সব সময় হাজার ইচ্ছে হলেও করতোনা আজকে ও গিয়ে প্রথমে শক্ত করে জড়িয়ে রাখে কিছুক্ষণ,,
,,,,গোলগোল সুন্দর দুই গালে দুটো চুমু দিয়ে তাও তৃপ্তি না মিটলে ও আবার কপালে,নাকে, থুতনিতে চুমু এঁকে দিলো।,, মায়ান যখন নিজের সমস্ত হুশ জ্ঞান সব হারিয়ে ওকে আরও চুমু দিতে থাকে নওশী বলে ফেলে,, যা শুনে মায়ান স্তব্ধ হয়ে যায়,পুরো,,।
নওশী যা বলে তা হল,, “আই লাভ ইউ”,, তুমি আমার জন্য বাবার দেওয়া সবচেয়ে সেরা উপহার। আমার জীবনে তোমার জায়গা কেউ কখনও নিতে পারবেনা।
“𝙸 𝙻𝚘𝚟𝚎 𝚈𝚘𝚞 𝙼𝚘𝚛𝚎 𝚃𝚑𝚊𝚗 𝙼𝚢 𝙻𝚒𝚏𝚎”
,,,মায়ান খুশিতে আত্মহারা হয়ে কেঁদে ফেললো,, নওশীকে জড়িয়ে ধরে।
,,,,মায়ান নওশীকে আরেকটু শক্ত করে ধরে,, আনতারা বিবিকে উদ্দেশ্য করে বললো,, "ধন্যবাদ দাদী,, তুমি একদম ঠিক বলেছিলে সেদিন।"
(শেষ হয়ে যায়,কাহিনী,, চলতে থাকে আর
শুরু হয় তাদের দাম্পত্য জীবন। চলতে থাকুক আর অটুট থাকুক ভালোবাসা অবিরাম।) ধন্যবাদ পাঠক সকল। 🎀
সমাপ্ত