আরিয়ানা ইচ্ছা

Classics Others

4  

আরিয়ানা ইচ্ছা

Classics Others

চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)

চুক্তিভিত্তিক বন্ধন (বিয়ে)

5 mins
438



(চুক্তিভিত্তিক বন্ধন/বিয়ে)





পর্ব,,,১৯,,

******নওশীর আজকে ষষ্ঠ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো।,,, প্রথম দুই বছর নওশীর জন্য বয়সের তুলনায় পড়াশোনার চাপটা বেশী হয়ে গেলেও ক্লাস ফোর থেকে মায়ানের বিশেষ যত্ন নিয়ে ওকে পড়ানোর পর থেকে এখন ও সব সময় ক্লাসে প্রথম পাঁচজনের মধ্যে থাকে। তবে,, আসফাক হায়দার আর মায়ানের অবদানে নওশীর ইংরেজীতে দক্ষতা অনেক ভালো,, ক্লাসে ইংরেজিতে সব সময় ও ৯০ এর বেশী নম্বর পায়।,,, নওশী আর মায়া দুজনেরই পরিক্ষা শেষ হওয়ায় স্কুল যাওয়ার ঝামেলা না থাকার কারনে ওরা সারাদিন এখন প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়ায়,,। তবে ওদের বাড়িতে এখনও একটা নিয়ম চালু আছে যে সবাই রাতের খাবার খেয়ে আনতারা বিবির ঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটায়,,এতে সবার মন খুব ভালো থাকে,,।



*****আজকেও অন্যান্য দিনের মতো সবাই আনতারা বিবির ঘরে বসে আছে।,,,, নওশী আর মায়া বালিশে হেলান দিয়ে আর মায়ান খাটে পা ঝুলিয়ে আর মহুয়া বেগম খাটের পাশির সঙ্গে হেলান দিয়ে বসে আছে,,,।

,,,, আর আসফাক হায়দার একটা চেয়ারে ঠেস দিয়ে চশমা পরিস্কার করছেন রুমাল দিয়ে।,,, আজকেও মায়া বকবকি ওর ক্লাসের একটা মজাদার গল্প করছে,, মহুয়া বেগম খেয়াল করলেন মায়ানের এসবে মন নেই,, ও কি নিয়ে যেনো গভীর ভাবে ভাবছে!!!! আর মুখটাও কেমন বিষন্ন হয়ে আছে!!!






,,,মায়ান কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে বলে,,

"আমার রেজাল্টের পরে আমি ৫টা বাইরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলাম।,, স্কলারশিপের জন্য তার মধ্যে মালেশিয়ার মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে আমাকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে।"

***মায়ান ল্যাপটপ নিয়ে এসে মালেশিয়ার কুয়ালালামপুরে অবস্থিত সরকারি মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি দেখালো ৯২২ একর জমির উপর অবস্থিত মালেশিয়ার এই প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়টি চারপাশে রঙবেরঙের ফুলের বাগানে সুসজ্জিত,,। 

,,,এতোকিছুর মাঝেও আসফাক হায়দার আর মহুয়া বেগম করলেন মায়ানের এতোদিনের স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে তাও ওর মুখে একটু ও হাসির রেশটুকু নেই।

,,,,আসফাক হায়দার ভাবলেন,, মায়ান হয়তো ওর দাদীর জন্য মন খারাপ করছে,, কিন্তু মহুয়া বেগম একটু হলেও ছেলের মনের অবস্থা বুঝলো। 

****তারা আরো অনেকক্ষন কথা বলার পরে দেখলো তীব্র ঘুমকাতুরে মায়া আজ আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।,, মহুয়া বেগম ওকে কোলে নিতে গেলে মায়ান বললো "থাক আম্মা তুমি যাও আমি ওকে শুইয়ে দিচ্ছি।"


,,,,,,, মায়ার ঘুম খুব গারো ওকে ঘুমের ঘোরে একপ্লেট ভাতও খাইয়ে দেওয়া যাও ও বুঝতেও পারেনা। মায়ান নওশীকে বললো মায়ার বালিশটা ঠিক করে দিতে,, বালিশ ঠিক করা হলে মায়াকে শুইয়ে দেয়,,তারপরে একটা চাদর গায়ে দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে মশারী টাঙ্গিয়ে ঘর থেকে বের হতে গেলে নওশী ওকে পেছন থেকে জাপটে ধরে কান্না করতে থাকে।

____________________,,,নিজের পিঠে ভেজা ভেজা অনুভব হতেই মায়ান নওশীর হাত ধরে ঘরের লাইট নিভিয়ে ছাদে চলে আসে।,,, ছাদের রেলিং এর পাশ ঘেঁষে ও শক্ত করে নওশীকে জড়িয়ে ধরে ওর নিজের বুকের ভিতরে বয়ে চলা আশান্তিকে দূর করার চেষ্টা করে। ,, প্রায় অনেকক্ষন পর দুটো অবুঝ হৃদয় যখন একটু শান্ত হয় তখন মায়ান নওশীকে নিয়ে ছাদে পাতা মাদুরের উপর বসে,, নওশী তখনও কান্নার দমকে হালকা কেঁপে কেঁপে উঠছে।

____মায়ান নওশীর হাত দুটো ধরে বলে,, "কি হয়েছে নুশু কাঁদছো কেনো? আমি তো এখনি চলে যাচ্ছিনা,, সব কাগজপত্র তৈরি হতে আরো তিন মাস লাগবে। প্লিজ এভাবে কেঁদোনা,, আমারযে ভীষণ কষ্ট হয়!! " ___নওশী আবার ওকে জড়িয়ে ধরে বলে "না আমি তোমায় কোথাও যেতে দেবোনা,, বাবা একবার আমায় ছেড়ে চলে গেছে,, এখনও ফিরেনি,, দাদীও চলে গেছে আবার এখন তুমি,,ও আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবছো!! তুমি জানো আমার বাবাকে জড়িয়ে না ধরলে ঘুমাতে কষ্ট হতো,, তখন তুমি আমায় সেই কষ্ট ভুলিয়ে তোমাকে জড়িয়ে ঘুমাতে শেখালে এখন তুমিও আর আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুম পাড়াও না। আমার ঘুমাতে খুব কষ্ট হয়।

" আমারও তো কষ্ট হয়" মায়ান মনে মনে বলে নওশী তা বোঝেনি,, মায়ান নওশীকে বলে আজ থেকে সে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবে কিন্তু রাতে বেশ কিছু কাজ আছে সেসব করেই তাকে ঘুম পাড়াবে,,কারন নওশী আগেই ঘুমিয়ে পড়ে,, তাই তাকে আধা ঘণ্টা বেশী জেগে থাকতে বললো,,

,,অনেক কথা বলে মায়ান আবার নওশীকে নিয়ে চলে এলো নিচে,, মায়ার পাশে নওশীকে শুইয়ে সেও ওর পাশে শুয়ে পড়লো,, নওশী এতো দিনের জমানো কথা সব তাকে বলতে লাগলো,, মায়ান সব শুনলো,,নওশী এক সময় ঘুমিয়ে যেতেই মায়ানের আটকে রাখা পানি চোখ দিতে গড়িয়ে পড়ে বালিশ ভিজাতে শুরু করলো।

,,,মায়ান বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে পিচ্চিটাকে ছেড়ে থাকা খুব কষ্টকর হয়ে যাবে তার জন্য।

****এরপর থেকে মায়ান তার পরিবারকে আরও বেশী সময় দিতে লাগলো,, আর তার পাশাপাশি বিদেশ যাওয়ার কাগজপত্র রেডি করতে থাকলো,,নওশী আবার আগের রুটিনে ফিরে এলো,, সকালে ঘুম ভাঙ্গে মায়ানের কুরআন তেয়াওয়াত শুনে উঠে ওযু করে নামাজ পড়ে আবার পাশে বসে শিখে,, উঠে দুই ঘন্টা মায়ানের কাছে, অংক, ইংরেজী আর সাধারণ জ্ঞান পড়ে। 

,,,আবার বিকেলে ওরা যেদিনি সময় পাই,, মায়া আর নওশীকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়,,মহুয়া বেগমকেও সাথে নেই মাঝে মাঝে। 

,,রাতে আবার সবাই আনতারা বিবির ঘরে বসে সময় কাটায়।,, এখন আবার ঘুমন্ত মায়াকে রেখে নওশী ছাদে গিয়ে মায়ানের সঙ্গে চাঁদের আলো গায়ে মেখে গল্পে ব্যস্ত। তারপর নওশী মায়ানের ঘরে গিয়ে নিজের জন্য রাখা বাবার বুকের পরে সেই সুরক্ষিত স্থান সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে,, এভাবেই দেখতে দেখতে তিন মাস কেটে যায়। 

,,আজ বিকেলেই মায়ান ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে,, বহুদূরে পাড়ি জমাবে।,, মহুয়া বেগমের বুকটা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে,, তার আদরের ধনকে ছেড়ে কিভাবে থাকবে!!! প্রতিদিন যাকে চোখের সামনে দেখে তৃপ্তি পায় তাকে কিভাবে অতদূরে পাঠিয়ে থাকতে পারবে ভাবতেই মহুয়া বেগমের অন্তর আত্মাও কেঁপে উঠে,,। 

,,,,বাড়ির সবার কান্না হচ্ছে মুখ আর উদাস চাহনী দেখে মায়ানের খুব কষ্ট হচ্ছে,, মনে হচ্ছে যাবেনা কিন্তু তাকে যে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।,, যাওয়ার আগে মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কষ্টে শান্ত করল,, মায়ান। ছোট্ট মায়াকেও অনেক বুঝিয়ে কান্না থামালো,, তবে,, গেটের কাছে যাবে তার আগেই নওশী কোথা থেকে দৌড়ে এসে বুকে ঝাপিয়ে পড়ে এলোমেলো সুরে কাঁদতে লাগলো।

,,,মায়ানের বুক ভারী হয়ে আসছে ও অসহায় চোখে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কান্নারত মায়ের দিকে তাকায়।,, ছোট্ট মায়া ও নওশীকে এভাবে কাঁদতে দেখে আবার কান্না শুরু করে,, নওশী শুধু বলছে,, "বাবার মতো তুমিও আমাকে ছেড়ে যেওনা।",, মায়ান ওকে বুক থেকে তুলে ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,, " তুমি একটু বড় হও,, তখন আমরা একসাথে থাকবো,"



***--নওশী শান্ত হচ্ছেনা আর আসফাক হায়দারও গাড়ি নিয়ে এসে মায়ান কে ডাকছে,, দেখে মহুয়া বেগম নওশীকে জোর করে নিজের বুকে জড়িয়ে নেয়,, আর মায়ান তাড়াতাড়ি এর লাগেজ আর ব্যাগপ্যাক টা নিয়ে বেরিয়ে যায়,,,। ট্যাক্সির পেছনে বসে মায়ান নিজের পরিহিত নীল শার্ট এর দিকে তাকায়,, যার বুকের কাছটা তার মা,বোন আর ভালোবাসার মানুষটার চোখের লোনা পানিতে ভিজে আরোও গাঢ়্নীল রঙ ধারন করেছে।,, মায়ান জানে ওর পাশে বসা মানুষটার বুকেও অনেক কষ্টের পাহাড় জমে আছে,, যা অপ্রকাশ্য...... 

তাই মায়ান ওর বাবার কাঁধে মাথা এলিয়ে দেয়,,যেনো দুজনের কষ্ট একটু হলেও লাঘব হয়,, আসফাক সাহেব মায়ানের বাহুটা শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে এতোক্ষণের আটকে রাখা চোখের নহর ছেড়ে দেয়। একজন জানালার বাইরে তাকিয়ে কান্না লুকানোর চেষ্টায় ব্যস্ত অপরজন পরম নির্ভরতার জায়গায় মাথা রেখে কষ্ট লুকাতে ব্যর্থ চেষ্টা চালাতে থাকলো,,,...........












Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics