STORYMIRROR

Anindya Biswas

Abstract Romance Others

3  

Anindya Biswas

Abstract Romance Others

#### চিঠির খাম ####

#### চিঠির খাম ####

8 mins
2


-- " বাবা, কিছু বলবে?"

বলে অহনা বাবার ঘরের দরজার কাছে দাড়ালো।

-" হ্যাঁ মা, আয় বোস, কিছু কথা আছে।" বলে অবিনাশ বাবু বইটা বন্ধ করে, চশমাটা মুছতে মুছতে খাপে রাখলেন।

অহনা দত্ত। অবিনাশ বাবুর একমাত্র মেয়ে। ছোটবেলা থেকে মা মরা মেয়েটাকে নিজে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন।মা - বাবা দুজনেরই অভাব যতোটুকু পারেন করেছেন। মেয়েও একদম লক্ষী । যেদিন থেকে জেনেছে তার মা নেই, হঠাৎ করে কেমন বড় হয়ে উঠল একরত্তি মেয়েটা । দুরন্ত, ছটফটে, দস্যি পনা থেকে আমূল পরিবর্তন। পড়াশুনা করে ডাক্তারিতে ভর্তি হয়ে ক্রমে ক্রমে শহরের নামকরা সার্জন হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। কালের নিয়মে নিজের পছন্দের ছেলের সঙ্গে বিয়ের আলাপ নিয়ে যখন এলো অবিনাশের কাছে, অবিনাশ বাবুও আর দ্বিমত করেননি। তবুও বাপের মনতো।

ছেলেটার ব্যাপারে একটু খোঁজ খবর নিয়ে নিশ্চিন্ত হয়েই মত দিয়েছিলেন। দুদিন পর অহনারই বিয়ে। তার আগে অবিনাশ বাবু কিছু কথা বলবেন বলেই ডেকেছেন।


--" বলো।"

-" বলছি মা, দুদিন পর তোর তো বিয়ে। আর কোনদিন বাপ বেটি একসঙ্গে বসে চা মুরি চানাচুর খাবো ঠিক নেই, চল আজকে একটু বসি। "

-- " কি যে বলো, আমি কি এই বাড়ি ভুলে যাচ্ছি নাকি? কক্ষনো না। তোমার মুড়ি চানাচুর মাখা না খেলে আমার সন্ধ্যাবেলা চলবে নাকি। আর ওর বাড়ি তো কাছেই । কোনো ব্যাপার না।"

- " মা নিজের যখন একটা পুরো সংসার হবে তখন বুঝবি। সংসারের কত চাপ, কত ব্যস্ততা।এখন শুধু শুনে রাখ l"

-- " আচ্ছা আচ্ছা বলো।"

- " বলছি, সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছিস এইখানে বিয়ে করবি, সেই সিদ্ধান্তের পূর্ণ মর্যাদা দিস। কক্ষনো ভাবিস না সেই বাড়ির লোকজন পর, সেই বাড়ির লোকজন তোর শত্রু। সবাইকে একসাথে একসুতোতে বাঁধার চেষ্টা করবি। স্বামীকে স্বামীর মর্যাদা দিবি, দেখবি তোকেও দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দিচ্ছে। সোজা কথা নিজের সবটুকু দিয়ে করবি, আর বাকিটা ঠাকুরের উপর ছেড়ে দিবি । সংসার করতে গেলে টুকটাক মান অভিমান, রাগ, দুঃখ থাকবেই। সেটা দুজনে মিলে একত্রে ঠান্ডা মাথায় শেষ করবি। মনে মনে পুষে রাখবিনা।

আর হ্যাঁ, হাজার প্রলোভন আসবে, কিন্তু স্বামীর হাত ছেড়ে দিস না।দিনশেষে তার আশ্রয়, তার ভরসার জায়গা হোস। আর ছেলে যা দেখেছি, দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেবে, বললাম।"

--" কিন্তু বাবা, তুমি যা বলছ তার উল্টো যদি হয়? মানে যদি উল্টো অপমান, লাঞ্ছনা জুটে। ওর কথা ছেড়ে দিলাম, বাকিদের কথা বলছি। আজকাল এমনিতেই যা হচ্ছে।"

- " যদি আত্মমর্যাদা তে আঘাত লাগে, বাবার বাড়ির দরজা সবসময় খোলা। এক মিনিট ও ভাববি না এই ব্যাপারে।"

-- " আই লাভ ইউ বাবা। "বলে অহনা জড়িয়ে ধরলো ।


            ।।বিয়ের দিন।।


ঠাকুর মশাই : " বিবাহ সম্পন্ন হলো সুষ্ঠুভাবে। এইবার স্বামী কে ভক্তি দিন।"

অহনা যেইনা প্রণাম করতে যাবে, অমনি রনজয় দুহাত দিয়ে তাকে বাধা দিল।

রণজয় : " নানা পায়ে হাত দিয়োনা। এমনি করজোড়ে প্রণাম করে নি"

ঠাকুর মশাই : " একই বাবা , করতে হয় তো। এই তো রীতি। স্বামীর সম্মান করবে না স্ত্রী"

রণজয় : " আপনি ঠিক ই বলেছেন । কিন্তু ব্যাপার হলো কি, এখন তো অগ্নিসাক্ষী মেনে সবেমাত্র স্বামী স্ত্রী হলাম। কিন্তু এখনও যে আমার অহনার কাছে অহনার মনের মত স্বামী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা বাকি। আগে সেই জায়গাটা নি। তারপর নাহয় হবে ওসব। আর আপনিও জানেন , ভগবান শিব মা কালীর পায়ের তলাতেই থাকেন। মা কালী শক্তি, শিব স্নিগ্ধতার প্রতীক। আমি চাই আমরা দুজনই সেই জায়গায় নিজেদের নিয়ে যাই, তারপর নাহয় দেখা যাবে?"

এইকথা শুনে আসে পাশের লোকজন নির্বাক মুগ্ধতার সাথে নব বিবাহিত দম্পত্তির তাকিয়ে রইলো। আর অহনা নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার সদ্য বিবাহিত স্বামীর প্রতি। এতদিন যাকে প্রেমিক হিসেবে চিনেছিল, তাকে স্বামী হিসেবে যেমন নতুন ভাবে আবিষ্কার করলো। হ্যাঁ, বাবা ঠিকই বলেছিলেন নিজেকে উজাড় করে দিতে। দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেবে।


আর অবিনাশ বাবু ৩০ বছর পুরোনো কাহিনীর পুনরাবৃত্তি দেখলেন আবার। হঠাৎ কি মনে হলো, দ্রুত ঘরে ফিরে দেয়ালে সুমেধার ফটো টা খুলে তার পিছন থেকে ডিভোর্সের কাগজ আর শেষ চিঠিটা বের করে নস্টালজিয়ায় হারিয়ে গেলেন।।


             ||৩০ বছর আগে||


" ওমা, একিরে , বর কে প্রণাম কর।"

সুমেধা যেই না অবিনাশ বাবুকে প্রণাম করতে ঝুঁকলো, সাথে সাথে অবিনাশ বাবুর প্রতিবাদ।

" নানা, আপনি প্রণাম করতে যাবেননা। মাত্র শাস্ত্রমতে স্বামী হয়েছি। মনমতো হওয়া বাকি। সেদিন নাহয় করবেন।"

বাসর রাতের দিন ঘরে ঢুকতেই সুমেধা বললো

" একটু শুনবেন, আমার দুটো কথা আছে "

অবিনাশ : " কি বলবে, আর যাইহোক এই লাইনটাই বলো :- কানে কানে শুধু একবার বলো , তুমি যে আমার।"

" ছাড়ুন ওসব কথা। শুনুন, আমি আপনাকে বিয়েই করতে চাইনি। আমি রজতাভ কে ভালবাসি। কিন্তু ও নিজের পায়ে না দাঁড়ানোয় আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে।"

অবিনাশ ( চমকে উঠে) : " সেকি, তাহলে আমার সঙ্গে রাজী হলেন কেনো? শুধু শুধু আমার জীবনটা নষ্ট করলেন।"

সুমেধা " দেখুন এই ভুলের জন্য আমি মাপ চেয়ে নিচ্ছি। এতটুকু কথা দি যে আমি স্ত্রীর যা যা কর্তব্য তাই করবো, কিন্তু মন থেকে স্বামী মানতে পারবোনা। আবার আপনার কোনো অসম্মান ও হতে দেবোনা সবার সামনে।" 

অবিনাশ বাবু আর কি করেন। সেটাকেই ভবিতব্য মেনে নিলেন।

এমনি করে করে ৩-৪ বছর কেটে গেলো । দুজনের কোল আলো করে একদিন ফুট ফুটে অহনার জন্ম হলো।

হাসপাতালে যখন প্রথম নার্সের কোলে দেখলেন অহনাকে, অবিনাশ বাবু তখনই মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন, এই মেয়েকে কিছুতেই তিনি কাছছাড়া করবেন না। তার জন্য যা দরকার তাই করবেন। যেকোনো বাধা বিপত্তি পেরোতে রাজী হলেন।

এমনি ভাবে সুন্দর ভাবেই সংসার কাটছিল তাদের। অবিনাশ বাবুও মনে মনে স্ত্রী কে গভীর ভাবে ভালোবাসছিলেন। কিন্তু কিছুতেই যেনো সুমেধার মন পাচ্ছিলেন না। এমন নয় সুমেধা কিছু ক্রটি রাখছিল, কিন্তু সবই কিরকম যান্ত্রিক।

একদিন হঠাৎ চাকরি থেকে এসে ঘরে ঢুকতেই সুমেধা গভীর ভাবে অবিনাশ কে জড়িয়ে ধরলো । অবিনাশ অপ্রস্তুত ।

সুমেধা " জানো আমি আজ ভীষণ খুশি! বলো কেনো?"

অবিনাশ ( মনে খুব খুশি নিয়ে) : " কেনো?"

সুমেধা " রাস্তায় আজ হঠাৎ রজতাভর সঙ্গে দেখা। কতক্ষণ গল্পো করলাম। সে ও বলল আমি নাকি দেখতে খুব সুন্দর হয়েছি আরো।"

অবিনাশ ( বিমর্ষ) " হুম ।"

সুমেধা গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে বাথরুমের দিকে চলে গেলো।

এরপর সুমেধা প্রায়ই বেড়িয়ে যেতো কাওকে কিছু না বলে। অবিনাশ আরো দ্বিগুণ ভাবে চেষ্টা করছিলেন স্ত্রীর মন পাওয়ার,  কিন্তু বিচ্ছেদ যেনো শুধু সময়ের অপেক্ষা হয়ে গেছিল।


একদিন অফিস থেকে ফিরতেই অহনা আধো আধো বোলে অবিনাশ এর হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিলো।


অহনা :" বাবা বাবা, মাম্মাম বললো তোমার হাতে এইটা দিতে, আর বললো যাতে তুমি আর ফোন না করো। কেনো বাবা, তুমি কি আবার নটি নটি করেছো? আবার ফাইটিং করেছো?"

অবিনাশ খাম খুলে দেখেন ডিভোর্সের কাগজ আর চিঠি।

চিঠিতে লেখা

" অবিনাশ, এই চিঠি যখন হাতে পাবে, তখন বোধহয় আমাকে আর ঘরে পাবেনা। আমি চললাম অবিনাশ ওর হাত ধরে। পারলাম না জানো নিজেকে আটকাতে। কয়েকদিন তোমার জন্য সত্যিই কষ্ট লেগেছে। কিন্তু এই সুখী থাকার অভিনয় করতে করতে হাঁফিয়ে উঠছিলাম। তাই ভাবলাম তোমাদের মুক্তি দেই। অহনা কে তোমার দরকার বেশি আমার থেকে। তুমি রেখে দাও। আমার কিছু চাইনা তোমার থেকে। খালি কোর্ট পেপার গুলো সই করে পাঠিয়ে দিও আমার বাবার বাড়ির ঠিকানায়। চললাম আমি। ভালো থেকো। আর কোনোদিন যোগাযোগের চেষ্টা কোরোনা।"



অবিনাশ রাগে দুঃখে ঝর ঝর করে কাঁদতে লাগলেন হাপুস নয়নে। হঠাৎ অনুভব করলেন দুটো ছোট কোমল হাত তার ঘাড় জড়িয়ে ধরছে।

" কেঁদো যা বাবা, মাম্মা একটু স্যাড স্যাড আছে। ঠিক এসে পড়বে।"

অবিনাশ মন শক্ত করে কাগজটায় সই করে শ্বশুর বাড়িতে গেলেন।

সুমেধার বাবা " অবিনাশ , আরেকটু ভেবে নাও। এমন হতে পারে রাগ করে বেরিয়েছে, এসে পরবে।"

অবিনাশ ( জ্বলন্ত চোখে) " শুনুন, ও ফেরত আসুক, না আসুক, আজকের পর থেকে সে মৃত আমার কাছে। আপনাদের কাছে এতটুকু অনুরোধ করবো যে দয়া করে আমার আর আমার মেয়ের সংসারে ভুলেও আসবেন না। সম্পর্ক এইখানেই শেষ। চললাম।"

বাড়ি ফিরে অহনাকে ডাকলেন অবিনাশ।

অবিনাশ " মা শোন l"

-- " হ্যাঁ বাবা।"

- " তোর মা আর কোনোদিনও ফেরত আসবেনা রে। তোর মা আমাদের ফেলে স্টার হয়ে গেছে আকাশে। তাই আজকে থেকে আমিই তোর মা, আমিই তোর বাবা। পারবিনা আমার সঙ্গে থাকতে?।"

--" নাআআআআ, তুমি মাম্মাকে নিয়ে আসো। মাম্মা ছাড়া আমি ভাত খাবোনা। মাম্মা আসো আসো।" বলে চিল চিৎকার জুড়ে দিল ।

অবিনাশ অনেক্ষন ধরে চিৎকার সামলাতে না পেরে কষিয়ে একটা চর বসিয়ে দিলেন।

অহনা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। সারা রাত বাপ বেটি ঘুমালো না।


      ।। আজকের দিনে।।

"একই তুই এখানে বসে। ওদিকে কনে বিদায় এর জন্য সবাই তোর অপেক্ষা করছে।"

ভাইয়ের ডাকে ঘোর ফিরল অবিনাশ এর।

কনে বিদায়ের সময় মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললেন " যা বলেছিলাম মনে রাখিস মা। "

অহনা (চোখে জল নিয়ে) " মার কথা খুব মনে পড়ছে বাবা। মা আজ থাকলে খুব খুশি হতো।"

অবিনাশ ( মনে হাজার কষ্ট চেপে) " তোর মার আশীর্বাদ সবসময় আছে তোর সঙ্গে। আর আজকে কথা দে মা, যা শিখিয়েছি , ভুলে যাবিনা, মনে রাখবি ।"

রনজয়ের দিকে তাকিয়ে :" আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো বাবা। খুব নরম মনের মা আমার"।

রনজয় " কথা দিলাম বাবা।"

 


               ।। বিয়ের ৭ দিন পর।।

অহনার বিয়ের ছবি দেখছিলেন অবিনাশ। কি সুন্দর মানিয়েছে দুজনকে।

হঠাৎ কি মনে হলো একটা বিয়ের ছবি সেই সুমেধার ফেলে যাওয়া খাম টায় ভরে বেড়িয়ে গেলেন ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে, এক জানা অচেনা নতুন শহরের উদ্দেশ্যে।


নতুন শহরে এসে একটা হোটেলে উঠলেন। রিসেপশন এ খবর নিলেন " এখানে শিল্পপতি রজতাভ রায় কোথায় থাকেন?।"

ঠিকানা নিয়ে বেরিয়ে গেল। সুমেধা যাওয়ার পর অবিনাশ সহজে তাকে ভুলতে পারেনি। মনে মনে জেদ চেপে ছিল যে কোনোদিন অহনাকে তার মার অভাব বুঝতে দেবেনা। দেওনি। কিন্তু মাঝে মাঝেই মনে পড়তো পুরোনো কথা।


খুঁজতে খুঁজতে ঠিকই অবিনাশ রজতাভর বাড়ির সামনে এসে পড়ল। দারোয়ান কে বলতে বললো ভেতরে যে তার অনেক পুরোনো আত্মীয় এসেছে।

- " দিদিমনি, আপনার সাথে দেখা করতে এসেছে।"

সুমেধা : " আমার সঙ্গে? একইইইইই অবিনাশ? তুমি এখানে কি করে? "

 হতচকিত হয়ে দাড়িয়ে রইলো।

অবিনাশ : " কেমন আছো?"

সুমেধা : " এসো ভেতরে এসো। চা দিচ্ছি।"

দুজনে চা খেতে খেতে কথা বলছে।

অবিনাশ : " কেমন আছে রজতাভ"

সুমেধা ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে) : " ভালই। সময়ই তো নেই আমার জন্য। ছেলেকে নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি পুরোটা সময়। রজতাভ তো সারাদিন কাজ আর কাজ। ভাল লাগেনা জানত। প্রতি সপ্তাহে পার্টি। বাইরেই থাকে। আর ---" বলতে গিয়ে থেমে গেলো। চোখের কোনা দিয়ে একফোঁটা জল যেনো বেড়িয়ে এলো।

" ছাড়ো, তোমার খবর বলো"

অবিনাশ " ভালই আছি। " বলে প্যাকেট থেকে খামটা বের করে বললো " খুলে দেখো।"

" একই অহনা নাকি? এত বড় হয়েছে আমাদের মেয়ে? বিয়ে দিয়েছ? বাহ বাহ। কি করে?"

অবিনাশ ( মুখ কঠিন করে) " ও সার্জন। বিয়ে নিজেই বেছে করেছে। ছেলেটাও ভালো । আর একটা কথা। আমাদের মেয়ে বলবেনা। খারাপ পেয়োনা, তুমি খালি জন্মই দিয়েছ। অহনা একমাত্র আমার মেয়ে। তবে হ্যাঁ, তোমার স্মৃতি এখনো আছে তার মনে। মার জন্য কোনরূপ বিদ্বেষ নেই তার।কারণ জানে, তার মা নেই।"

সুমেধা ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে) : " জানি।বাবার কাছে সবই শুনেছি। অহনার কাছে আমি মৃত। আর সামনেও যেতে চাইনা তার । তোমার সাথে ঠিক করিনি আমি। আসলে কোনোদিনও তোমার স্ত্রী হিসেবে নিজেকে কল্পনা করিনি আমি সেইসময়। এখন মনে হয় মাঝে মাঝে সেইসব কথা। "

চুপ করলো কিছুক্ষণ ।

" আমার এখনো মনে আছে আমাদের মণ্ডপে প্রণাম করার সময় তুমি কি বলেছিলে। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল সেদিন ,বিশ্বাস কর।"

অবিনাশ : " ছাড়ো পুরোনো কথা। এই খামটা দিয়ে গেলাম। সাথে অহনার ছবি। শত হোক তুমি তার জন্মদাত্রী মা। আশীর্বাদ করো ওকে যাতে সুখে শান্তিতে থাকে। খুব ভালো মেয়েটা আমার।"

সুমেধা ( হাতজোড় করে) : " প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করব। আর অবিনাশ, অন্য কোনো জন্মে আমার সাথে যেনো বেঁধ ঘর। অপেক্ষায় থাকব। সেই মণ্ডপে নাহয় তোমার মর্যাদা কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে দেবো"

অবিনাশ একটা হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেলো। এই জন্মের ভবিতব্য যেনো আর খাম বন্দী হয়ে রইলনা। সব শেষ।


রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে আবৃত্তি করছে অবিনাশ 


"

দেখা হলো বছর কুড়ি পর, তুই এখন অন্য কারো ঘড়…

তুই এখন বড্ডো ভীষণ পর…

এখন অনেক বুঝতে পারিস বুঝি??

আমার প্রিয় হাসিটা আর হাসিস??

আচ্ছা ওমন ঝক্কি পোহায় কে তোর!! "

হেঁটে যাচ্ছে অবিনাশ। একটা খাম থেকে মুক্তি নিয়ে আরেকটা নীরব খামে আবদ্ধ হতে। 



























Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract