Debdutta Banerjee

Tragedy

0.4  

Debdutta Banerjee

Tragedy

চিত্রাঙ্গনা

চিত্রাঙ্গনা

3 mins
1.1K


আদি গঙ্গার ব্রিজের উপর নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায় চুমকি। গায়ের পাতলা শিফনটা বেশ পুরানো হয়েছে। প্রসাধন করে নিজেকে আকর্ষনীয়া করে তুলতে গিয়ে একটু বেশি রঙ মেখে ফেলেছে বোধহয়। বয়সের ছাপ আজকাল ফুটে ওঠে চোখেমুখে। মাথার ফুলটা বাকিতে নিয়েছে, আজ কালুর থেকে। কাল শোধ না দিলে ওকে আবার খুশি করতে হবে। প্রায় একসপ্তাহ ভুগে ওঠার পর আজ রাস্তায় দাঁড়ালো চুমকি। গগন ডাক্তার কতগুলো রক্তর পরীক্ষা করতে দিয়েছে। কিন্তু এখন টাকা নেই। সোনার কানের দুলটা শেষ সম্বল। 

দিনকাল খুব খারাপ, আজকাল ওদের ব‍্যবসা বড্ড মন্দা যাচ্ছে। ব্রিজের উপর গায়ে গায়ে দাঁড়ানো রঙচঙে শাড়ি পরা মেয়েগুলোকে দেখলেই বোঝা যায়। 

এ লাইনে যারা নতুন তাদের চাল চলন ঠাটবাট সাজ পোশাক সব বদলে গেছে। সারা শহরে ছড়িয়ে পরেছে রঙচঙে প্রজাপতির মতো মেয়েগুলো। ওদের সবার খদ্দের ধরার আলাদা ট্রেনিং আছে। একটু পড়াশোনা যারা জানে তাদের তো কথাই নেই!!

এখানে খদ্দের হয়না বলে একবার চুমকি, করিশমার সাথে ঐ গড়ের মাঠের ট্রাম লাইনের ধারে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ওখানকার খানকিগুলো ওদের দাঁড়াতে দেয়নি। বড্ড ঝামেলা করেছিল। হাতাহাতি হয় আর কি। রুপোর চেনটা হারিয়ে গেছিল সে ঝামেলায়। তারপর থেকে চুমকি এই এলাকার বাইরে যায় না। 

চুমকির সামনে একটা মাঝ বয়সী টাক মাথা লোক এসে দাঁড়িয়ে ওকে তারিয়ে তারিয়ে দেখতে থাকে। পানের পিক ফেলে হলুদ হয়ে যাওয়া দাঁত বার করে একটা নোংরা হাসি হেসে ইঙ্গিত পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। 

এক সপ্তাহ জ্বরে ভোগা শরীরটা কেমন মোচর দিয়ে ওঠে। মনকে শক্ত করে চুমকি, টাকার খুব দরকার। এখন এত বাছবিচার করলে চলবে না। আজকাল অনেক ভালো ঘরের মেয়ে বৌরাও এসব পথে নেমে পড়েছে কটা বাড়তি টাকার জন‍্য। প্রত‍্যেকের নিজস্ব এলাকা নির্দিষ্ট করে নিয়েছে সকলেই। কলকাতা বড় হচ্ছে দিনে দিনে। এই আদিম পেশাও আধুনিকতার মোড়কে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে। ভদ্দরলোক আজ আর কালীঘাটের এই গলিতে আসে না। ঠান্ডা ঘরে বসে পয়সা খরচ করলেই সব রকম পছন্দের জিনিস পেয়ে যায়। চুমকিরাই এখনো কালীঘাটের এই এঁদো গলি ছেড়ে বার হতে পারেনি।

লোকটা একটা অটো দাঁড় করিয়ে চুমকিকে তুলে নেয়। ওর শূন‍্যস্থান পূরণ করে সবিতা এসে দাঁড়ায়।


চার ঘন্টা পর চুমকি নিজেকে ঠিকঠাক করে নিয়ে যখন ঘরটা থেকে বের হয় হাতে অনেক গুলো কুঁচকে যাওয়া টাকার নোট। শরীরে কোনো অভিব‍্যাক্তি নেই। এই চার ঘন্টার জন‍্য যে এতগুলো টাকা পাবে ও ভাবেইনি। ঐ দালাল টার কমিশন এরাই দিয়েছে। এতো অল্প বয়সের পাঁচটা ছেলেকে দেখে প্রথমে ঘাবরে গেছিল চুমকি। একসাথে পাঁচ জনকে এর আগে কখনো নেয়নি। কিন্তু আজ টাকাটা বড্ড দরকার ছিল। 


কিন্তু ছয় নম্বর মাঝ বয়সী লোকটা ঘরে ঢুকে ওকে যখন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিল চুমকি একটু ঘাবরে গেছিল। কম কাষ্টমার তো দেখেনি ও। তারপর ওকে যা বলা হল এমন কথা ও মিনতিদের কাছে শুনেছিল আগেই, কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতা ছিল না। এরপর ওরা যা যা বলল সেভাবেই চুমকি করেছিল সব। 

এই প্রথম টাকাটা নিতে ওর হাত কাঁপছিল। ফেরার সময় চিত্রকর কুমুদ বিহারী সেন চুমকিকে বলে দিল সপ্তাহে তিনদিন আপাতত ওকে আসতে হবে। চাইলে ও কিছু এডভান্স নিতে পারে। চুমকির মনে হয় এতদিনে বোধহয় ভগবান মুখ তুলে চেয়েছে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy