Indranil Mukherjee

Abstract Crime

2  

Indranil Mukherjee

Abstract Crime

চিন্ময়ী মার্ডার কেস (Part 1)

চিন্ময়ী মার্ডার কেস (Part 1)

3 mins
274


আজ যে ঘটনা বলতে যাচ্ছি কেউ বিশ্বাস করবে না কোন দিন।

আমার জীবনের প্রথম কেস “চিন্ময়ী মার্ডার কেস। যেটা সবার চোখে ছিল  

একটি এক্সিডেন্ট কিন্তু তার পেছনে ছিল কঠিণ ষড়যন্ত্র। দুই বছর হল ওকালতি পাশ করেছি। হাতে তখন সে ভাবে কোনো কাজ নেই। জীবনে একটাই 

প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কোন দিন ও টাকার জন্য নিজেকে বিক্রি করব না।

দু বছর এক জন বড় উকিল এর ফার্ম এ চাকরি করেছি। কিন্তু যেখানে টাকা দিয়ে অন‍্যায়কে চাপা দেওয়া হয় সেখানে আমি থাকব কেন? চাকরি টা ছেড়ে দিয়ে নিজের চেম্বার খুলে বসেছি দু মাস হল। ব‍্যাঙ্ক থেকে লোন ও নিয়ছি অনেক টাকা।

এক দিন হঠাৎ দুপুরে চেম্বার বন্ধ করছি। হঠাৎ দু জন ভদ্র মহিলা এসে দাঁড়ালেন

আমার চেম্বার এর সামনে। ইন্দ্রনীল বাবু?

হ্যাঁ আমি । বলুন।

আপনার সাথে কথা বলা যাবে?

হ্যাঁ কিন্তু আমি এখন চেম্বার বন্ধ করছি।  

ভদ্র মহিলা র বয়স প্রায় ষাট। অন‍্য জনের 

চল্লিশ। বয়স্ক মহিলা আমাকে হাত জোর করে বল্লেন। 

আমারা অনেক দুর থেকে এসেছি। আমার মেয়েকে ওরা খুন করেছে।

এখন বলছে এক্সিডেন্ট।বলেই কান্না য় মাটিতে লুটিয়ে পরলেন।

অন্য ভদ্র মহিলা হঠাৎ আমার হাত ধরে বল্লেন আমরা এক মাস ধরে ঘুরছি

কেউ এই কেস টা নিতে চাইছে না।

 আমরা আমাদের সব কিছু বিক্রি করে কেস লরব আপনি ফেরাবেন না।

আমি ওনাদের ভেতরে নিয়ে এসে বসালাম।

হ‍্যাঁ। এবার বলুন কি হয়েছে আপনার বোনের?

আমার নাম মৃণময়ী। চীন্ময়ী আমার মেজ বোন।

গত 27 এপ্রিল ওর খুন হয়েছে।

আমি বল্লাম কি ভাবে? 

ওর বর ওকে মটরসাইকেল থেকে ফেলে মেরে ফেলেছে।এর আগে ও চেষ্টা করেছিল পারেনি।

আমি বল্লাম গাড়ি তে কে কে ছিলেন?

বয়স্ক মহিলা বল্লেন – চিনু ওর বর আর দশ বছরের মেয়ে।

আমি বল্লাম কোথায় ঘটেছে ঘটনা টা।

উনি বল্লেন – শিমুল এ। চিনুর শ্বশুরবাড়ির কাছে।

কিভাবে হলো?

উনি বল্লেন – চিনু আমার মেজ মেয়ে। বারো বছর আগে ওর বিয়ে হয় 

নিমাই ভচার্য এর সাথে।

আমি বল্লাম -কি করতেন আপনার জামাই?

উনি বল্লেন ধানের ব‍্যবসা। আরত ও আছে। বাবা শিমুল গ্রামের হেড মাস্টার 

ছিলেন। সব কিছু ঠিকই চলছিল। চিনু খুবই ভাল মেয়ে ছিল। হঠাৎই 

জামাই কোল্ড স্টোর কিনবে বলে ব‍্যঙ্ক থেকে লোন নেয় এক কোটি টাকা।

কিন্তু সেই ভাবে শুরু করতে পারল না ব‍্যবস‍া।

এই দিকে ব‍্যঙ্ক থেকে চাপ আসতে থাকে টাকা দেওয়ার জন্য। জামাই বিপদে পরে

আমাদের কাছে টাকা চায়। দশ লাখ টাকা। আমরা ওত টাকা পাব কোথায়?

আমরা বল্লাম দুই লাখ টাকা দিতে পারি। সেই কথা শুনে জামাই এর সে কি রাগ।

বাইক নিয়ে বেরিয়ে চলে গেল। তার পর থেকেই শুরু হয় অশান্তি। চিনুকে নানান  

কথা বলত শশুর বাড়ির লোকেরা। এর পরে শুরু হয় আরেক অশান্তি।

চিনুর মেয়ে টা পরাশুনাতে খুব ভাল ছিল । চিনু চেয়েছিল ওকে দুর্গাপুরে শহরের 

ইস্কুলে ভর্তি করতে। নিমাই এক দম রাজি ছিলনা। কিন্তু চিনুও জেদ ধরে বসে 

ওকে শহরের ইস্কুলেই ভর্তি করবে। নিমাই শেষ পযন্ত রাজি হয় বাধ্য হয়ে।

কিন্তু শশুর বাড়িতে ঝড় ওঠে ব‍্যাপার টা নিয়ে। ব‍্যাঙ্ক এর এত গুলো টাকা  

লোন বারবার তাগাদা শুরু হয়। 

চিনু কে শশুর বাড়িতে আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে বারন করত। 

এর পরে আমার বড় ছেলে পূজা তে জামাকাপড় দিতে গেলে ওরা অপমান 

করে ওকে তাড়িয়ে দেয়। শশুর নিমাই কে বলেন আবার বিয়ে করতে।

আসানসোল এর কটি পোতির মেয়েকে। ওরা কুড়ি লাখ টাকা দেবে বলেছে।

সব সমস্যার সমাধান। তা না হলে জেল খাটতে হবে।

নিমাই রাজি হয়। কিন্তু এক মাত্র পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে চিনু।

আমি খুব মন দিয়ে কথা গুলো শুনেছিলাম। আমি বল্লাম -কিন্তু আপনি তো বল্লেন যে আপনার নাতনি ও ছিল গাড়িতে সে দিন?

উনি বল্লেন হ্যাঁ ওর নাম পায়েল। ক্লাস ফাইভ এ পড়ে ।

আমি বল্লাম সে এখন কোথায় আছে? 

উনি বল্লেন -ও এখন বাবার কাছে আছে।

আমি বল্লাম -পায়েল কি বলছে মার মৃত্যু নিয়ে?

আমাদের সাথে ওকে দেখা করতে দিচ্ছে না।

আমি বল্লাম পোস্টমাটাম হয়েছিল? 

উনি বল্লেন না। ওরা অনেক টাকা খরচা করে ডাক্তার দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে এক্সিডেন্ট কেস।

আমি কিছুক্ষণ টেবিলে রাখা এস্টেটা ঘোরাতে লাগলাম।

আমি বল্লাম – দেখুন পাঁচ বছরের পরাশুনা আর দুবছর প‍্যাকটিস এর এক্সপ্রিয়েন্স থেকে বলছি এই কেসে কিছু নেই আমার করার মত। আমি 

এই কেস নিতে পারব না। আমি দুক্ষিত।

ওনারা আমার হাত চেপে ধরলেন।

বাবা আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবেনা।

আমি বল্লাম – দেখুন আমি যদি কিছু করতে পারতাম 

খুব খুশী হতাম কিন্তু এখানে কিছু করার নেই।

আর আমি মনে করি এতে পায়েলের অনেক ক্ষতি হতে পারে।

আর আপনারা কি করে বলছেন যে এটা খুন?

সত্যি হয়ত এক্সিডেন্ট?

কি প্রমাণ আছে আমাদের কাছে? 

মৃণময়ী বল্ল- আপনি তো তখন থেকে একই কথা বলছেন।

একটা কথা কেন বুঝতে পারছেন না?আমার বোন 

যদি সত্যি এক্সিডেন্ট এ মারা যেতে আমারা আপনাকে বিরক্ত

করতে আসতাম না।চল মা এই সব কাপুরুষ।

ওনার মা বল্লেন বাবা আমারা আর তোমাকে বিরক্ত 

করব না কিন্তু একটা কথা মনে রেখ মাথার উপর একজন 

আছেন। অন‍্যায় যতই শক্তিশালী হোক অবশেষে জয় সত‍্যের হবে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract