# চিন্ময়ী মার্ডার কেস
# চিন্ময়ী মার্ডার কেস


আজ যে ঘটনা বলতে যাচ্ছি কেউ বিশ্বাস করবে না কোন দিন।
আমার জীবনের প্রথম কেস “চিন্ময়ী মার্ডার কেস। যেটা সবার চোখে ছিল
একটি এক্সিডেন্ট কিন্তু তার পেছনে ছিল কঠিণ ষড়যন্ত্র। দুই বছর হল ওকালতি পাশ করেছি। হাতে তখন সে ভাবে কোনো কাজ নেই। জীবনে একটাই
প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কোন দিন ও টাকার জন্য নিজেকে বিক্রি করব না।
দু বছর এক জন বড় উকিল এর ফার্ম এ চাকরি করেছি। কিন্তু যেখানে টাকা দিয়ে অন্যায়কে চাপা দেওয়া হয় সেখানে আমি থাকব কেন? চাকরি টা ছেড়ে দিয়ে নিজের চেম্বার খুলে বসেছি দু মাস হল। ব্যাঙ্ক থেকে লোন ও নিয়ছি অনেক টাকা।
এক দিন হঠাৎ দুপুরে চেম্বার বন্ধ করছি। হঠাৎ দু জন ভদ্র মহিলা এসে দাঁড়ালেন
আমার চেম্বার এর সামনে। ইন্দ্রনীল বাবু?
হ্যাঁ আমি । বলুন।
আপনার সাথে কথা বলা যাবে?
হ্যাঁ কিন্তু আমি এখন চেম্বার বন্ধ করছি।
ভদ্র মহিলা র বয়স প্রায় ষাট। অন্য জনের
চল্লিশ। বয়স্ক মহিলা আমাকে হাত জোর করে বল্লেন।
আমারা অনেক দুর থেকে এসেছি। আমার মেয়েকে ওরা খুন করেছে।
এখন বলছে এক্সিডেন্ট।বলেই কান্না য় মাটিতে লুটিয়ে পরলেন।
অন্য ভদ্র মহিলা হঠাৎ আমার হাত ধরে বল্লেন আমরা এক মাস ধরে ঘুরছি
কেউ এই কেস টা নিতে চাইছে না।
আমরা আমাদের সব কিছু বিক্রি করে কেস লরব আপনি ফেরাবেন না।
আমি ওনাদের ভেতরে নিয়ে এসে বসালাম।
হ্যাঁ। এবার বলুন কি হয়েছে আপনার বোনের?
আমার নাম মৃণময়ী। চীন্ময়ী আমার মেজ বোন।
গত 27 এপ্রিল ওর খুন হয়েছে।
আমি বল্লাম কি ভাবে?
ওর বর ওকে মটরসাইকেল থেকে ফেলে মেরে ফেলেছে।এর আগে ও চেষ্টা করেছিল পারেনি।
আমি বল্লাম গাড়ি তে কে কে ছিলেন?
বয়স্ক মহিলা বল্লেন – চিনু ওর বর আর দশ বছরের মেয়ে।
আমি বল্লাম কোথায় ঘটেছে ঘটনা টা।
উনি বল্লেন – শিমুল এ। চিনুর শ্বশুরবাড়ির কাছে।
কিভাবে হলো?
উনি বল্লেন – চিনু আমার মেজ মেয়ে। বারো বছর আগে ওর বিয়ে হয়
নিমাই ভচার্য এর সাথে।
আমি বল্লাম -কি করতেন আপনার জামাই?
উনি বল্লেন ধানের ব্যবসা। আরত ও আছে। বাবা শিমুল গ্রামের হেড মাস্টার
ছিলেন। সব কিছু ঠিকই চলছিল। চিনু খুবই ভাল মেয়ে ছিল। হঠাৎই
জামাই কোল্ড স্টোর কিনবে বলে ব্যঙ্ক থেকে লোন নেয় এক কোটি টাকা।
কিন্তু সেই ভাবে শুরু করতে পারল না ব্যবসা।
এই দিকে ব্যঙ্ক থেকে চাপ আসতে থাকে টাকা দেওয়ার জন্য। জামাই বিপদে পরে
আমাদের কাছে টাকা চায়। দশ লাখ টাকা। আমরা ওত টাকা পাব কোথায়?
আমরা বল্লাম দুই লাখ টাকা দিতে পারি। সেই কথা শুনে জামাই এর সে কি রাগ।
বাইক নিয়ে বেরিয়ে চলে গেল। তার পর থেকেই শুরু হয় অশান্তি। চিনুকে নানান
কথা বলত শশুর বাড়ির লোকেরা। এর পরে শুরু হয় আরেক অশান্তি।
চিনুর মেয়ে টা পরাশুনাতে খুব ভাল ছিল । চিনু চেয়েছিল ওকে দুর্গাপুরে শহরের
ইস্কুলে ভর্তি করতে। নিমাই এক দম রাজি ছিলনা। কিন্তু চিনুও জেদ ধরে বসে
ওকে শহরের ইস্কুলেই ভর্তি করবে। নিমাই শেষ পযন্ত রাজি হয় বাধ্য হয়ে।
কিন্তু শশুর বাড়িতে ঝড় ওঠে ব্যাপার টা নিয়ে। ব্যাঙ্ক এর এত গুলো টাকা
লোন বারবার তাগাদা শুরু হয়।
চিনু কে শশুর বাড়িতে আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে বারন করত।
এর পরে আমার বড় ছেলে পূজা তে জামাকাপড় দিতে গেলে ওরা অপমান
করে ওকে তাড়িয়ে দেয়। শশুর নিমাই কে বলেন আবার বিয়ে করতে।
আসানসোল এর কটি পোতির মেয়েকে। ওরা কুড়ি লাখ টাকা দেবে বলেছে।
সব সমস্যার সমাধান। তা না হলে জেল খাটতে হবে।
নিমাই রাজি হয়। কিন্তু এক মাত্র পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে চিনু।
আমি খুব মন দিয়ে কথা গুলো শুনেছিলাম। আমি বল্লাম -কিন্তু আপনি তো বল্লেন যে আপনার নাতনি ও ছিল গাড়িতে সে দিন?
উনি বল্লেন হ্যাঁ ওর নাম পায়েল। ক্লাস ফাইভ এ পড়ে ।
আমি বল্লাম সে এখন কোথায় আছে?
উনি বল্লেন -ও এখন বাবার কাছে আছে।
আমি বল্লাম -পায়েল কি বলছে মার মৃত্যু নিয়ে?
আমাদের সাথে ওকে দেখা করতে দিচ্ছে না।
আমি বল্লাম পোস্টমাটাম হয়েছিল?
উনি বল্লেন না। ওরা অনেক টাকা খরচা করে ডাক্তার দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে এক্সিডেন্ট কেস।
আমি কিছুক্ষণ টেবিলে রাখা এস্টেটা ঘোরাতে লাগলাম।
আমি বল্লাম – দেখুন পাঁচ বছরের পরাশুনা আর দুবছর প্যাকটিস এর এক্সপ্রিয়েন্স থেকে বলছি এই কেসে কিছু নেই আমার করার মত। আমি
এই কেস নিতে পারব না। আমি দুক্ষিত।
ওনারা আমার হাত চেপে ধরলেন।
বাবা আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবেনা।
আমি বল্লাম – দেখুন আমি যদি কিছু করতে পারতাম
খুব খুশী হতাম কিন্তু এখানে কিছু করার নেই।
আর আমি মনে করি এতে পায়েলের অনেক ক্ষতি হতে পারে।
আর আপনারা কি করে বলছেন যে এটা খুন?
সত্যি হয়ত এক্সিডেন্ট?
কি প্রমাণ আছে আমাদের কাছে?
মৃণময়ী বল্ল- আপনি তো তখন থেকে একই কথা বলছেন।
একটা কথা কেন বুঝতে পারছেন না?আমার বোন
যদি সত্যি এক্সিডেন্ট এ মারা যেতে আমারা আপনাকে বিরক্ত
করতে আসতাম না।চল মা এই সব কাপুরুষ।
ওনার মা বল্লেন বাবা আমারা আর তোমাকে বিরক্ত
করব না কিন্তু একটা কথা মনে রেখ মাথার উপর একজন
আছেন। অন্যায় যতই শক্তিশালী হোক অবশেষে জয় সত্যের হবে।
সেই দিন সন্ধ্যায় চেম্বার খুলতে দেড়ি হল।
চেম্মার এর আলো জ্বালাতেই চোখে পরল চিয়ারের উপর
রাখা একটা সবুজ রং এর প্লাস্টিক।
প্লাস্টিক এর উপরে লেখা আছে সুভম বস্ত্রালয়।
কোটা চাঁদনি পুর আদর্শ নগর,পানাগর, দূর্গাপুর, বর্ধমান।
ওনারা ফেলে গেলেন নাকি?
পিছন থেকে হঠাৎ কাশির শব্দ পেলাম।
স্টেম্প পেপার আছে?
আমি বল্লাম – তোমার কত স্টেম্প পেপার লাগে পূজা?
পূজা এই বার এইচ এস দিল। আসাধারণ সুন্দরী ও। আমার প্রেমে তখন ও পাগল।
কোটি পতির মেয়ে। আমার থেকে বেশ ছোট বয়সে।এক বার তো আমার
কাছ থেকে কোট পেপার নিয়ে গিয়ে ওটার উপর লাভ লেটার লিখে দিয়েছিল আমাকেই
কিন্তু আমার রস্তা সম্পুর্ন আলাদা। তাই উত্তর দি নি।
আমি কোট পেপার দিয়ে বল্লাম -আবার কি লিখবে কবিতা?
ও বল্ল -সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যপার। আপনার মত হার্ট লেস মানুষ বুঝবে না।
একটা উত্তর দিলে আপনার ওকালতি ছাড়তে হত না।
আমি বল্লাম – দশ টাকা দেও। কোর্ট পেপারের জন্য।
পূজা টাকা টা ছুড়ে দিয়ে চলে গেল। কোটপেপার টা বাইরে গিয়ে ছিড়ে ফেলে দিল ড্রেনে।
হঠাৎ পাড়ার এক দল ছেলে এসে জুটলো।
বল্ল- দাদা আমারা এই মাঠে টুনামেন্ট করছি আগামী 26 মে।
কিছু চাঁদা দিতে হবে।
আমি খুব বিরক্ত হলাম। এই দুপুরে র ব্যপার টা, আবার এদের অত্যাচার। আর পারিনা।
আমি বল্লাম – কত দিতে হবে?
হাজার টাকা দিন। আর কি বলব।
আমি বল্লাম পাগল নাকি? ক্রিকেট টুনামেন্ট এর জন্য হাজার টাকা চাঁদা?
এক জন মাতব্বর বল্ল- আরে দাদা আমারা কি শুধু খেলার জন্য চাইছি? এত দিন পরে মাঠে খেলা একটু দারু টারু খাব না?
আমি বল্লাম সে তোমারা যা ইচ্ছে খাও গে। আমি ওত টাকা দিতে পারব না।
একশ টাকা দিতে পারি।
একজন চিৎকার করে বল্ল- এখানে বসে লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছেন।
পারার কঁচি কঁচি মেয়েদের ঝাঁড়ি মারছেন, আমরা কি কিছু বুঝতে পারিনা?
আমি চিৎকার করে উঠলাম – ঐ এক্ষুনি সব কেটে পর এখান থেকে। ভাবিস না আমি হাতে চুঁড়ি পরে আছি। এক পয়সা দেব না। আমি আচ্ছা আচ্ছা ক্রিমিনাল কে টাইট দিয়েছি তোদের মত। সবাই ভয়ে চেম্মার থেকে বেরিয়ে গেল। এক বল্ল- কাজটা ভালো
করলেন না। আপনাকে আর বেশি দিন এখানে বসতে হবে না।
রাতের বেলা তাড়াতাড়ি চলে এলাম বাড়িতে। আজকে আকাশে প্রচন্ড কালো মেঘ।
ঝড় আসছে খুব জোরে। বাড়িতে আমি একাই থাকি। কাজের মাসি রান্না করে
দিয়ে যায়। সে দিন রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরলাম।
এগারো টার মধ্যে। হঠাৎ রাত 2:30 নাগাদ ঘুম ভেঙ্গে গেল।
বিকট আওয়াজ। বাজ পরল খুব জোরে। আমি দেখলাম বাইরে প্রচন্ড ঝড়, আর ছিটে
ফোটা বৃষ্টি। জানালা টা বন্ধ করতে গিয়ে দেখি আমার গেটের কাছে কে জেন দাঁড়িয়ে আছে। ভয় আমার নেই। ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম।
কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না। হঠাৎ জোরে বৃষ্টি নামল। আর লোডশেডিং হয়েগেল।
মুর্তি টা নরল না।
আমি চিৎকার করলাম কে ওখানে?
কোন উত্তর নেই।
কোন পাগলী না তো?
মনে হচ্ছে তাই হবে। কিন্তু কাছে যাবার সাহস হল না।
আমি জালালা বন্ধ করে টেবিল লেম্পটা জ্বালালাম।
বাইরে গিয়ে দেখি মুর্তিটা আর নেই।
তারপর আমি ঘরে এসে একটা সিগারেট ধরালাম।
ভাবছি আজ এক টা দিনে কত কিছু হয়েগেল।
কিছুই বুঝতে পারছি না। ব্যঙ্ককের লোন টা যে কিভাবে মেটাবো?
হাতে কোন কেস নেই। পূজার কথা মনে পরতেই মন টা খারাপ হয়েগেল।
খুব ভালোবাসে ও আমাকে। খুব কষ্ট পেয়েছে আজকে।
আর ওই ছেলে গুলো। ওরা নিশ্চয়ই কোনো ক্ষতিকরবে আমার।
ঘড়িতে ঢংঢং করে তিনটে বজল। তার পর কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম যানিনা।
পরের দিন সকলে ঘুম থেকে উঠেই গেলাম বারান্দায় খবরের কাগজ দিয়ে গেছে অনেক ক্ষণ। হঠাৎ পিছন ফিরতে ই আমার সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেল। আমার বারান্দায় দেওয়ালে লেখা বড়ো করে “মান+হুস= মানুষ “। রাতে বারান্দার দরজা বন্ধ ছিল।
কে লিখেছে এটা? মানে কি?
হঠাৎ আমার ফোন টা বেজে উঠলো।
আমি বল্লাম -হ্যাঁ বিকাশ বল ভাই?
বিকাশ বল্ল -আরে তাড়াতাড়ি আয় ভাই।
সুমন গলায় দঁড়ি দিয়েছে।
আমি বল্লাম -কেন?
বিকাশ ফোন টা কেটে দিল।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।
সুমন আমার ছোট বেলার বন্ধু। কিন্তু ও যে চিট ফান্ডে কাজ করে
আমার তিন লাখ টাকা আছে।টাকা টা যদি মারা যায় আমাকে ও
গলায় দঁড়ি দিতে হবে আজকে।
আমি তাড়াতাড়ি বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
সুমন দের বাড়িতে গিয়ে দেখলাম অনেক লোক।
আমি ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছিলাম।
এক জন বল্ল – শুয়োরের বাচ্চা গরিবের টাকা মেরে মরলি
তোর নড়কে যায়গা হবে না।
আমি ভেতরে গিয়ে দেখলাম সুমনের ডেড বডি টা নামিয়ে
বারান্দায় রেখেছে সবাই। সুমন চিট ফান্ডের কম্পানির এজেন্ট ছিলো।
খুব ভালো স্বভাব চরিত্র। এত সুন্দর কথা বলত। পাড়ার অনেকেই
টাকা রেখেছিল ওর কাছে। আমার চেম্বারে গিয়ে ঘন্টার পর
ঘন্টা আড্ডা মারত। প্রায় সাত বছরের ও বেশি কাজ করছিল ও
চিটফান্ড এ। আমি ওর বডির কাছে গেলাম গলায় ফাঁসের
দাগটা স্পস্ট দেখা যাচ্ছে। মুখটা বেঁকে গেছে।
খুব কষ্ট পেয়েছে বেচারা মরার সময়। বেলা বারার সাথে সাথে পাওনা
দার দের ভিড় আঁছড়ে পড়েছে বাড়ির উঠানে থেকে রাস্তায়।
আমি দেখলাম বিকাস বাইরে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে।
আমি ডাকলাম -বিকাশ?
আমি ওর কাছে গিয়ে বল্লাম -কিরে হঠাৎ করে সুইসাইড করল?
বিকাশ বল্ল- আরে ওর কম্পানি টা রাতারাতি উঠে গেছে।
শালা চোর যত সব। আরে আমাই তো তিড়িশ হাজার টাকা ছিল।
আমার পায়ের তলায় মাটি সরে গেল আমি আর ওকে কি বলতাম।
পকেট থেকে সিগারেটের পেকেট টা বারকরে সিগারেট ধরালাম।
বিকাসের আর কোন কথাই আমার কানে গেল না।আমি জোরে জোরে
সিগারেটে টান দিতে থাকলাম। চোখের সামনে সব আবঝা হয়ে আসছে।
যখন বাড়িতে এলাম প্রায় 11.00 টা বাজে। না আজ আর চেম্বারে
গিয়ে লাভ নেই। ঘরে ঢোকার সময় ঐ লেখা টা আবার চোখে পড়ল।
আশ্চর্য ব্যপার কে যে লিখল এটা। আমার তো মনে হয় ঐ বকাটে
ছেলে গুলোরই কাজ। কাল কে যারা টাকা চাইতে এসেছিল।
চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আমার জীবন টা কেমন বদলে গেল।
এখন কি হবে। ব্যাঙ্কের লোন শোধ করব কি করে?
আবার একটা সিগারেট ধরালাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম পাড়ার
কোনো ছেলে যদি আসত ওরা এটা লিখবে কেন?
গালাগালি লিখত বা হুমকি দিত। সিগারেট টা জোরে টান দিলাম।
তাহলে কি অন্য কেউ? সে কি আমাকে কিছু বলতে চাইছে?
আর কালকে রাতের ঐ ছায়া মূর্তিটাই বা কে? সেই আবার,,,,,,,,,,,,,,
বুকের ভেতর কেঁপে উঠল আমার। মনে মনে বল্লাম আমার আর
হাড়ানোর মত কিছু নেই। কষ্টের অত গুলো টাকা জলে গেল।
অনেক টাকার দরকার এখন কিছু একটা করতে হবে।
হঠাৎ কালকের একটা কথা কানে বেঁজে উঠল
“আপনি যত টাকা চান আমারা তাই দেব”। সিগারেটের লাস্ট টানটা
দিয়ে ঘরে ঢুকলাম। একটা খাতা পেনসিল নিয়ে ছবি আঁকতে বসলাম । আজ
23মে,2013 ‘চিন্ময়ী মার্ডার কেস’ একটা বাইক দুর্ঘটনা।
27এপিল শুক্রবার দুপুর 3,30 মিনিট। দূর্গাপূর থেকে শিমুলের গ্রাম।
মৃতার নাম চিন্ময়ী ভট্টাচার্য। বয়স ত্রিরিশ। সহজ সরল। মেয়েকে খুব ভালবাসেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির অত্যচার সয্য করবেন না। গাড়ি চালাচ্ছিল তার
স্বামী নিমাই ভট্টাচার্য। ধানের ব্যবসা করেন। ঋণের দায়ে জেল খাটার জোগার। আবার বিয়ে করবেন। সমস্ত সমস্যার সমাধান। হাতে আসবে কুড়ি লাখ টাকা নগদ।মাঝখানে বসেছিল তাদের মেয়ে পায়েল।
বয়স দশ বছর। হাঠাৎ গ্রামে ঢোকার মুখে চিন্ময়ী পরে যায় গাড়ি থেকে
কিন্তু নিমাই ভট্টাচার্য বা তাদের মেয়ে বুঝতেই পারেন নি কখন সে
পড়েছে গাড়ি থেকে।
আশ্চর্য । গ্রামের কিছু লোক যারা মাঠে কাজ করছিল তারা চিৎকার
করতে থাকে পড়ে গেল পড়ে গেল বলে। কিন্তু নিমাই ভট্টাচার্য্য শুনতে
পেলেন না।এমন কি তাদের মেয়েও না।
নিমাই ভট্টাচার্য বাড়িতে পৌঁছনোর পর বুঝতে পারলেন তার বউ
গাড়িতে নেই। তিনি তখন বাড়িতে যান। হাতে থাকা ফলের প্লাস্টিক
বাড়িতে রাখতে। তার পড়ে বাইকে করে যান ঘটনার স্থলে। সেইখানে
চিন্ময়ী তখন প্রায় মৃত। সেইখান থেকে গ্রাম এর হাতুরে ডাক্তার কে
ফোন করেন। তিনি এসে দেখেন যে তখনও সে বেঁচে আছে কি না? ডাক্তার দেখে বল্ল
হ্যাঁ বেঁচে আছে।
তখন পাসের র গ্রাম থেকে ফোন করে এম্মুলেন্স ডাকা হয় সেইখান থেকে
তাকে নিয়ে যাওয়া হয় দূর্গাপুর জেনারেল হসপিটাল তখন সন্ধে 7,00টা বাজে।
সেখান থেকে রেফার করা হয় বর্ধমান এর কে,এম,ডি নারসিং হোম এ।
দুদিন আই,সি,ইউ তে রেখে 2ndএপিল তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। কে,এম,ডি তে এর আগে কোনো পেসেন্ট মারা যায়নি। মোটামুটি এই হল ঘটনা। এখানে মৃতা স্পট ডেড নন যেটা আমি প্রথমে ভাবছিলাম। কেসে অনেক গুলো যায়গা আছে।
প্রথম :নিমাই কেন বুঝতে পারল না যে চিন্ময়ী পড়ে গেছে? গাড়ি টা কি অনেক জোরে
চলছিল। গ্রামে ঢোকার মুখে ত গাড়ি আস্তে চলার কথা।
দ্বিতীয় : পায়েল ও কি বুঝতে পারেনি।নাকি ভয় দেখিয়ে ওকে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,??
ওফঃ আর পারি না। আরেক টা সিগারেট ধরালাম।
মাথাটা কেমন ছিঁড়ে যাচ্ছে।
তৃতীয় : বউ পড়ে গেছে জেনেও বাড়িতে ঢুকল কেন? কাউকে কিছু বলতে গেছিল কি?
নিজেদের ফোর হুইলার থাকতে এম্মুলেন্স এর জন্যে অপেক্ষা,,,,,,,,,,,,,????????
দূর্গাপুর হসপিটাল যেতে চার ঘন্টা তো দেড়ি হবার কথা না।
আচ্ছা আমি কি পাগল হয়েগেছি। কেন ভাবছি বার বার ঐ কেস টা নিয়ে।
সিগারেট টাতে জোরে টান দিলাম। ঢংঢং করে বারটা বাজল।
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি কেসটা নেবো। যদি জেতার সম্ভবনা নেই। কেসটা
কোর্টে গেলে ওরাও অনেক বড় উকিলের কাছে যাবে।
সেখানে আমি,,,,,,,,,,,,,,,,,,। সিগারেট টা শেষ করলাম।
হঠাৎ মনে পড়ল আরে কিন্তু আমি ত ওনাদের ঠিকানাই জানিনা।
ওফঃ। কি সর্বনাশ। কি হবে এখন?
কোথায় খুজব ওনাদের?
আসলে কেসটা নেব না বলেই আর অতকিছু,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।
আরেক টা সিগারেট ধরালাম। ভাবতে লাগলাম হায় রে কপাল।
নিজের পায়ে নিজেই কুরুল মারলাম। কি হত একটু ভেবে জবাব দিলে।
ওনারা হয়ত এর মধ্যে অন্য কোনো উকিল ঠিক করেছেন।
আর কি লাভ?
সন্ধ্যায় চেম্মার খুলতে আবার দেড়ি হল। দেখলাম পূজা চেম্বারের সামনে
ঘোরাঘুরি করছে।
না। আজকে আর ওকে অপমান করব না। পূজা খুব চেয়েছিল আমি
নিজের পায়ে দাঁড়াই।কিন্ত ভাগ্যের কি পরিহাস।
আমি বল্লাম -কি হলো আবার স্টেম্প পেপার লাগবে?
ও বল্ল -আপনার সাথে কিছু কথা আছে।
আমি চেম্মার খুলে বল্লাম- ভেতরে আসো।
পূজা বল্ল- সুমন দা সুইসাইড করেছে।
আমি বল্লাম- হু যানি।
ও বল্ল- আপনার কত টাকা ছিল ওর কাছে?
আমি বল্লাম -তিন লাখের মতন।
আমার দিকে তাকিয়ে পূজার দুই চোখ দিয়ে স্রোতের মত জল বেড়িয়ে এল।
ও বল্ল- কি হবে এখন? আমি আপনাকে বার বার বারণ করেছিলাম।
আমি বল্লাম -আমার কপালে ছিল।
ও বল্ল- আপনি এত সহজ সরল হলে বাঁচতে পারবেন না।
বলে ও চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল।
বাইরে থেকে কত গুলো ছেলে চিৎকার করল- ওয়ে। হোয়ে কি উকিল
বাবু বুইনি তো ভালোই হলো দেখছি?
আমি বাইরে যেতেই সব ছুটে পালালো।
চেম্মারে ঢুকতেই দেখতে পেলাম সেই সবুজ প্লাস্টিক টা।
আমার একদম মনেছিল না।
প্লাস্টিক এ লেখা সুভম বস্ত্রালয়, কোটা চাঁদনিপুর আদর্শ নগর,পানাগর,দূর্গাপুর বর্ধমান।
আমার আর কিছু বুঝতে বাকী থাকল না।কাল কে ভোরের বাসেই বেরোতে হবে
পরের দিন যখন পানাগর এ পৌছালাম ঘড়ির কটায় তখন বাজে সকাল 10:30।
একটা টোটোয়ালা কে দেখতে পেয়ে বল্লাম -দাদা কোটা চাঁদি পুর যাবেন নাকি?
সে বল্ল- না বাবু রাস্তা খারাপ আছে।
আমি বল্লাম- হেঁটে যাওয়া যাবে?
লোকটা আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন কোন অন্যয় করে ফেলেছি।
কিছুক্ষন আমাকে দেখে নিয়ে বল্ল – দেখে ত ভদ্র লোক মনে হচ্ছে? কোথা থাকা হয় কোথা?
আমি বল্লাম -বর্ধমান। আপনি যাবেন কি?
সে আবার আমার দিকে তাকিয়ে থাকল।
আমি পড়লাম মহাবিপদে। কপালে যে কি আছে কে যানে।
সে বল্ল- কোটায় কাদের বাড়ি যাবেন তাইত শুধুইচি?
আমি রেগে গিয়ে বল্লাম – আপনি যাবেন কি?আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
সে আবার আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।
ওফঃ মহাবিপদ। এক জন ভদ্র লোক বাইকে করে এসে দাঁড়াল।
কি হে কোথা যাবে কোথা?
আমি বল্লাম -কোটা চাঁদি পুর।
সে বল্ল – বসুন। আমি গাড়িতে চেপে বসলাম।
ভদ্র লোক জিজ্ঞাসা করলেন -কোটা কাদের বাড়ি যাবেন?
আমি বল্লাম -ওখানে না গেলে বুঝতে পারছি না। আচ্ছা শুভম বস্ত্রালয় চেনেন।
ভদ্র লোক হঠাৎ গাড়ি থামালেন। বল্লেন কি দরকার বলুন তো। আপনাকে তো চেনা
মনে হয় না। শুভম আমার নাম। আর কাপড়ের দোকান টাও আমারি বটে।
আমি বল্লাম -দাদা সে অনেক কথা।আপনি দয়া করে বলতে পারেন চিন্ময়ী দের বাড়ি
কোথায়।
সে বল্ল -না তো।তা বলতে পারব নাকো। ঠিকানা কিছু নাইক?
আমি বল্লাম-দাদা চিন্ময়ী ভট্টাচার্য। আগের মাসে বাইক এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে?
লোকটা বল্ল-ওহো কে আমাদের চিনু তো?
আমি বল্লাম হ্যাঁ। একদম। একটু ওনাদের বাড়ি যাব চলুন না দাদা?
ভদ্র লোক আমাকে চিন্ময়ী দের বাড়িতে নামালেন।
আমি ওনার সাথে ভেতড়ে ঢুকলাম।
ভেতড়ে ঢুকেই দেখতে পেলাম শুভম চিৎকার করল -কইগ জ্যেঠি মা?
এই দেখো কে এয়েচেন! দুজন পুরুষ বেড়িয়ে এলেন?
চিন্ময়ীর মা ঘাটে ছিলেন তিনি ও এলেন।
আমাকে দেখে তার চোখ আনন্দে ছল ছল করে উঠল।
হাতের বাসন নামিয়ে রেখে তিনি আমাকে বল্লেন – তুমি এসেছো বাবা আমি যানতাম
তুমি আসবে।
শুভম বল্ল -উনি আমাকে শুধুইচেন চিন্ময়ী দের বাড়ি যাব। তা আমি বল্লাম চিনু দের বাড়ি?
উনি বল্লেন হ্যাঁ।
তা কে বটে কে ইনি।
উনি বল্লেন- উকিল বাবুরে। চিনুর কেসটা লড়বেন যে।
শুভম আমাকে হাত জোর করে বল্ল-উকিল বাবু আমার বোন কে যারা ঐ ভাবে মারলে
আপনি তদের এমন শাস্তি দিন যেন আর কুনো দিন কোন মা কে তার বেটির মরা মুখ না দেখতে হয়। সে কত বড় জানুয়ার বটে সে আজ বর সেজে আবার বিয়া করতে যেচে।
আমার বুন মরেচে এক মাস হয় নাই। কেঁদে ফেলে বল্ল -আমি আপনাকে কাঁধে করে গোটা
গ্রাম ঘুড়াবো। আপনি ওকে ফাঁসিতে ঝোলান।
শুভম কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
চিন্ময়ীর মা আমাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসালেন।
বল্লেন -বাবা তুমি ঠিকানা পেলে কোথায়?
আমি বল্লাম সে সব কথা পড়ে বলব। আচ্ছা আমার চিন্ময়ীর ব্যপারে অনেক কিছু জানার
আছে। আচ্ছা আপনাদের কেন মনে হচ্ছে এটা মার্ডার?
উনি বল্লেন তাহলে শোন- নিমাই যে টাকা ব্যাঙ্ক থেকে নিয়েছিল সময় মত সেই টাকা ও
শোধ দিতে না পাড়ায় ব্যাঙ্ক থেকে ওকে নোটিস দেয় ।স্টোরের কয়েকশ বস্ত্রা আলু পচে
যাওযায় জামাই এর গলায় দঁড়ি দেওয়ার আবস্থা। আমাদের কাছে দশ লাখ টাকা চায়
কিন্তু বাবা তুমি বল ওত কি দেওয়া সম্ভব কোন দিন ওএক সাথে।
হঠাৎ এক দিন চিনুর ফোন আসে-
হ্যালো মা?
হ্যাঁ চিনু বল?
চিনু: মা তোমরা আমাকে নিয়ে যাও মা।তোমার জামাই আমাকে মেরে ফেলবে।
একি বলছিস তুই? কি হয়েছে খুলে বল?
মা।ওর বাবা আবার ওর জন্যে মেয়ে দেখছে।কুড়ি লাখ টাকা নেবে ওখান থেকে।
কালকে রাত্রে আমার গলা টিপে ধরেছিল। আমাকে খুব মেরেছে।
বলেছে কাউকে বল্লে খুন করে মাটিতে পুঁতে দেবে।
আমি বল্লাম: চিনু মা আমার শোন সংসার করতে গেলে টুক টাক এসব হয়। কাল আশোক যাবে
নিমাই কে বুঝিয়ে বলবে। আর মেয়েটার কথা ও তো ভাবতে হবে বল?
চিনু: শ্বশুর বাড়ির সবাই পেছনে লেগেছে। আমি ফোনে কথা বল্লেই সব লুকিয়ে লুকিয়ে শোনে।
গয়ণা গুলো দিনি বলে শ্বাশুরি অলক্ষী বলে ডাকে। উঠতে বসতে তোমাদের নামে যাতা বলে
আর কত সয্য করা যায়?
হঠাৎ চিনু চিৎকার করে উঠল।বুঝলাম কেউ ওকে মারছে। সে কি চিৎকার।
কি মার মারল আমার মেয়েটাকে। ওর চিৎকার এখনও আমার কানে বাজে।
বলে তিনি ও চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন।
উঠলেন। আমি বাইরে এসে সিগারেট ধরালাম।সিগারেট খেতে খেতে আমি একটু বাইরে বেড়িয়ে এলাম।
নিজেকে একটু ঝালিয়ে নেওয়া দরকার। 498-A IPC ,Dowry Dp Act, 377IPC,
125CRP কত আইন আছে আমাদের দেশে। মহিলাদের সুরক্ষার জন্যে।
যদি কোন মহিলা কে শ্বশুরবাড়ির লোকজন অত্যাচার করে শারীরিক ও
মানসিক ভাবে তা হলে সে গিয়ে পুলিশ এ অভিযোগ করতে পারে।
সেখানে পুলিশ সেটা ভালো করে যাচাই করে দেখবে তার পড়ে যদি
তার অভিযোগ সত্যি হয় তাহলে পুলিশ 498-A Ipc ধারাতে মামলা
করতে পারে। স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন দের বিরুদ্ধে।
কিন্তু পুলিশ যদি সেটা না করে তাহলে সেই মহিলা হাইকোর্টে গিয়ে
সরাসরি কেস ফাইল করতে পারেন section-12Ipc ডোমেসটিক ভাইয়োলেন্স
&/3 Dowry protaction act. আজ কাল মহিলারা অনেকেই এই গুলো র মিস ইউস
করছেন প্রায় 93%কেসই পড়ে ফলস প্রমাণিত হয় পরে।
ধংস হয়ে যায় ছেলেদের জীবন। কিন্তু সত্যি চিনুর মতো কত মেয়েদের সাথে
আত্যাচার হচ্ছে প্রতিদিন। কেস টা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
অনেক ক্রিমিনাল দের নিয়ে পড়াশুনা করেছি। কিন্তু এই রকম কেস ভাবাই যায় না।
কি সাংঘাতিক পাকা মাথার ক্রিমিনাল ওই নিমাই ভট্টাচার্য্য।
আসুবিধা অনেক তিনি দিনের মধ্যে কেস টা কোর্টে তুলতে হবে। এই ধরনের
কেসে জর্জ ষাট দিনের মধ্যে ফল ঘোষণা করবেন।
চিনুকে যে ওরা মাড়ত সেটা ফোন কল রেকর্ড থেকে আমি সহজেই
প্রমাণ করতে পারব। কারণ চিনুর চিৎকার কলে রেকর্ড হয়েছে।
ওই ফোন কল টাই এই কেসে সব থেকে বড় অস্ত্র। পকেটের থেকে
সিগারেট বারকরে ধরালাম।
আমি সিগারেটের শেষ টান দিয়ে আবার ফিরে গেলাম চিনু দের বাড়িতে।
খুব আদর যন্ত করে চিনুর মা খাওয়ালেন আমাকে।
আমি বললাম -চিনু কবে আপনাকে শেষ বার ফোন করেছিল?
ওই তো বাবা এক্সিডেন্ট এর দু দিন আগে।
আমি বল্লাম -বৃহস্পতি বার? 25 এপিল?
হ্যাঁ বাবা তাই হবে।
আমি বল্লাম -কটার সময়?
বেলা 12:30 টা কি এক টা হবে।
আমি বল্লাম -কোন নাম্বার এ?
উনি ভেতর থেকে ফোন টা নিয়ে এলেন।
আমি আমার ফোনে ডায়েল করে নাম্বার টা সেভ করলাম।
আশোক বাবু কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন।
আমি বল্লাম -আমি এই কেসটা নিলাম। কিন্তু আমার কিছু টাকার খুব দরকার।
কারণ কেস টা তিন দিনের মধ্যে কোর্টে ফাইল করতে হবে।
আশোক বাবু ঘড় থেকে একটা ব্যগ ভড়তি টাকা নিয়ে এলেন।
এতে পুড়ো দু লাখ আছে।
আমি বল্লাম -না। কাজ না করে পুড়ো টাকা আমি নি না।
আপাতত পঞ্চাশ হাজার নেব।বাকিটা পড়ে।
আমি চিনুর মা এর হাত ধরে বল্লাম -যদি আমি হেড়েঁ যাই?আমাকে
ক্ষমা করবেন ত?
চিনুর মা কেঁদে বল্লেন -তুমি হাড়বে না বাবা। যারা সত্যের পথে চলে
তাদের কেউ হাড়াতে পারে না। মহাভারতের যুদ্ধে কৌরব রা অনেক শক্তিশালী
ছিল কিন্তু জয় হয়েছিল ধর্মের পথে যারা ছিল তাদেরই পান্ডব দের।
ওরা তোমাকে অনেক আটকানোর চেষ্টা করবে। তোমার অনেক ক্ষতি করতে
চাইবে কিন্তু তুমি ধর্মের পথে চলবে জয় তোমার হবে।
তুমিই অজূণ তুমি শ্রীকৃষ্ণ।
আমি ওনাকে প্রনাম করে টাকাটা নিয়ে বেড়িয়ে এলাম।
বাইরে এসে আবার সিগারেট ধরালম। আমি কেস নিয়েছি শুনলে পূজা খুব খুব
আনন্দ পাবে। হঠাৎ একটি বাউল আমার তাকিয়ে গান করতে করতে এদিকে
আসছে কি মিষ্টি গলা তার :
চিন্ময়ী মার্ডর কেস#
PART -2
ইন্দ্রনীল মুখার্জী
সেই দিন রাতে যখন পাড়াতে ঢুকলাম তখন সন্ধে সাড়ে সাত টা। ঠিক করলাম আগে
চেম্বারে যাব। গিয়ে হয়ত দেখব পূজা চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আজকে
সকালবেলায় চেম্বার খুলি নি। আবার এখনো চেম্বার বন্ধ!ও হয়ত আকাশ কুসুম
ভাবতে বসেছে। আমার কেমন মায়া জন্মেছে ওর উপর। হয়ত এটাই প্রেম
যেখানে পরস্পরকে চোখের আড়াল করা যায় না। খুব নরম মন ওর কথায় কথায়
চোখে জল আসে ।বাবা মার এক মাত্র মেয়ে খুব জেদি।আমি অনেক চেয়েছি
ওকে দুরে সরিয়ে রাখতে কিন্তু পারলাম না। আমার রাস্তায় প্রতি পদক্ষেপ এ বিপদ
মৃত্যু ও হতে পারে। কি হবে তখন ওর ?হ্যাঁ এটাই প্রেম তা না হলে এখন বাড়িতে না
গিয়ে চেম্মারে যাচ্ছি কেন? যাই হোক চেম্বারে গিয়ে ওকে দেখতে পেলাম না।
দেখতে পেলাম সেই বকাটে ছেলে গুলো কে?
ওরা বল্ল-কি উকিল বাবু দেখলেন তো ধর্মের কল বাতাসে নড়ে
হাজার টাকা দিতে গিয়ে আপনার ফাটছিল? ওদিকে কত গুলো টাকা ি*ছন মারা
গেল?
আমি এগিয়ে যেতেই সব উঠে চলে গেল।
ওফঃ কি যন্ত্রণা।যত সব কাপুষের দল।
চেম্বারে ঢুকে টেবিল ফ্যেন টা চালিয়ে দিলাম। পূজা অনেক দিন ধরে বলছে একটা
এ সি লাগাতে। সব কিছু কেমন ওলোট পালট হয়ে গেল। হঠাৎই মহারানি এসে হাজির।
আমাকে দেখই বল্ল- কি ব্যাপার কি আপনার? সকাল থেকে তিন বার এসেছি চেম্বার বন্ধ।
বাড়িতে ও তালা মারা। আমিত ভাবলাম,,,,,,,.
আমি বল্লাম-কি ভাবলে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছি?
ও বল্ল-দিতেও পারেন। আপনাকে বিশ্বাস নেই।
একটু থেমে বল্ল-আচ্ছা ওত গুলো টাকা যে জলে গেল আপনার কষ্ট হচ্ছে না?
আমি হলে ত হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতাম।
আমি বল্লাম-আজকে একটা কেস পেয়ছি পূজা।
পূজা বল্ল -সত্যি? কি কেস শুনি?
পূজাকে পুরো ঘটনা বল্লাম। দেখলাম ওর দুই চোখ দিয়ে স্রোতের মত জল পড়েছে।
ও বল্ল- আর পায়েল?ও কোথায় আছে?
আপাতত বাবার কাছে।
ও বল্ল- অপরাধিরা শাস্তি পাবে তো?
আমি বল্লাম -আমি কে বল? সবই মায়ের ইচ্ছা।
যখন বাড়িতে এলাম প্রায় রাত 10,00 টা বাজে। সবে স্নান করে বেড়িয়েছি।
ফোন টা বেজে উঠল – হ্যাঁলো। ইন্দ্রনীল বাবু। (একে বারে অচেনা কর্কশ ভাড়ি গলা।ভাঙ্গা হিন্দি তে)
আমি বল্লাম-হ্যাঁ।বলছি।
লোকটি বল্ল- আপনি আজ পানাগড় গিয়েছিলেন? চিন্ময়ী ভর্চাজ এর কেসটা নিতে?
আমি বল্লাম -হ্যাঁ। গেছিলাম।
লোকটা বল্ল- কিউ মত কো গলে লাগাবেন এত অল্প বয়সে সাহেব।এই সব বড়া বড়া আদমী লোকের কাম আছে উকিল বাবু।
হামারা আপকা ক্যা কাম আছে? হাম লোক তো ছোটা ইনসান আছি বাবু।
আপনার কোন ক্ষতি করতে কি হামার ভালো লাগবে উকিল বাবু? আপনি কেস টা
ছেড়ে দিন। ওরা আপনাকে দু লাখ দিবে বলেছে। হাম লোগ আপকো পাঁচ লাখ দেঙ্গে।
আপনার যে গার্লফ্রেন্ড আছে একে বারে বাচ্চা মেয়ে ঐ পূজা ম্যাডাম।উনার কোনো ক্ষতি
হলে………………
.আমি চিৎকার করে উঠলাম -ঐ শুয়োরের বচ্চা। উসকা নাম মত লেনা। কাটদুঙ্গা।
লোকটা চিৎকার করে হেঁসে উঠল বল্ল- আবে মা**রচো**। কই আকল নেই কা বে?
ইস কেস সে হাট জা লে**রা। বরনা নাঙ্গা লাস দেখেগা উস লন্ডি কি।বলে কেটে দিল ফোন টা। আমি পকেটের থেকে সিগারেট বার করে ধরালাম।
কি সাংঘাতিক এরা। এই টুকু সময় এর মধ্যে এত কিছু কি করে যেনে গেল ওরা।
পূজার ব্যপারেও,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।
মাথটা কেমন ছিঁড়ে যাচ্ছে।
পরের দিন সকালে কাজের মাসি ডেকে তুলল।
ঘড়িতে তখন 8,30.
মাসি বল্ল -কালকে কোথায় গিয়েছিলে কোথা?
আমি বল্লাম পানাগড়।
মাসি বল্ল -আজ সকালে বারান্দায় ঝাঁড় দিতে গিয়ে এইটা পেলাম।
বলে আমার হাতে একটা নূপুর দিলেন। হাতে নিয়ে দেখলাম বেশ ভারি রুপোর নূপুর।
আমি ত অবাক। মাসিকে বল্লাম এটা কার?
মাসি বল্ল -আমি কি করে বলি বলত বাবা?
আমার তো রক্ত হিম হবার যোগার। বাড়িতে তো আমি ছাড়া কেউ,,,,,,,???,?,?,,
আমি বল্লাম কোথায় পেলেগো মাসি?
ঐ ত বারান্দায় ঘড়ে মেঝেতে। আমি ছুটে গেলাম । বল্লাম কোথায় ছিল?
মাসি বল্ল এই ত এই খানে। আমি নূপুর টা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম। বেশ সুন্দর কাজ করা। সাধারণত কোন বড় বাড়িতে মহিলারা পড়ে থাকেন।
ওফঃ কি সাংঘাতিক ব্যপার। যা সব হচ্ছে।
হঠাৎ দিয়ালে চোখ পড়তে আমার গা ঠাণ্ডা হয়ে গেল।
বড় বড় করে লেখা কে, এম, ডি। আমাদের প্রফেশনে হাতের লেখা একটা খুব বড় ব্যাপার। অনেক বড় বড় ক্রিমিনালরা শুধু হাতের লেখার জন্য ধরা পড়েছে। বিশ্বের বড় বড় গোয়েন্দা গল্প যারা পড়েছেন আমার সাথে এক মত হবেন?
আমি ঠিকই বুঝতে পারলাম আরে এটা তো একই হাতের লেখা। যেটা দিয়ালে
লেখা দেখেছিলাম আগের দিন। বাইরে বারান্দায় গিয়ে দেখলাম লেখা নেই।
ওফঃ কি যন্ত্রণা।
আবার সিগারেট ধরালাম। মাথাটা কিছু তেই কাজ করছে না।
কে ইনি? কি বলতে চাইছে?
আগের দিনের লেখাটা কোথায় গেল?
কে.এম.ডি মানে কি?
কোথায় শুনেছি মনে হচ্ছে?
তা হলে কি এই কলির মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ তিনি? যে এটা লিখেছেন?
সিগারেট খেতে খেতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম।মেইলি হাতের লেখা।
ওফঃ। কিন্তু কে? কে এই শ্রীকৃষ্ণ? কি বলতে চাইছে?
হঠাৎ ফোন বেজে উঠল- হ্যাঁ অর্পন বল ভাই?
অর্পণ বল্ল -হ্যাঁ নাম্বার টার লোকেসন পাওয়া গেছে। জামুরিয়া,আসানসোল এ পোস্ট অফিস। এস টি ডি বুথ থেকে করেছিল।
আমি সিগারেটের একটা লম্বা ধুঁয়া ছাড়লাম।
আসানসোলে বসে সে কি করে সব জানতে পারল ?
অর্পন আমার মাসির ছেলে কলকাতা পুলিশে আছে। গতকাল রাতের
লোকটার নাম্বার ওকে দিয়েছিলাম। পড়ে কাজে লাগবে।
কিন্তু???????
হঠাৎ মাথায় মধ্যে বিদ্যুত খেলে গেল। নারসিংহোম। কে, এম,ডি নারসিংহোম
তাড়াতাড়ি জামা প্যান্ট পড়ে ছুটলাম কে,এম,ডি তে। বাইকে করে পচিঁশ মিনিট
লাগল পৌছাতে। রিসেপসনে গিয়ে বল্লাম-আমি ইন্দ্রনীল মুখার্জী।
একটি মেয়ে খুব অস্বস্তির সাথে বল্ল -পেসেন্ট কোথায়?
আমি বল্লাম -না আমি একটা মার্ডার কেসের ইনভেস্টিগেশন করতে এসেছি।
মেয়েটি বল্ল-হ্যাঁ বলুন?
আমি বল্লাম – চিন্ময়ী ভট্টাচার্য্য এপ্রিল এর 30 তাড়িখ মারা গেছেন আপনাদের এখানে?
সে বল্ল- অত ইনফরমেশন দিতে পারব না।
হঠাৎ মনে হল পিছনে দাঁড়িয়ে কে যেন সব শুনছে।
অনেক চেষ্টা করেও ম্যাডামের কাছ থেকে কিছুই জানা গেল না।
বাইরে একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছি। হঠাৎ দেখতে পেলাম
একটা মেয়ে আমার দিকে আসছে।
আমাকে বল্ল-আপনি চিন্ময়ীর কে হন?
আমি বল্লাম -আমি ওনার কেসটা ইনভেস্টিগেশন করছি।
আমি আপনাকে ওনার ব্যপারে কিছু বলতে চাই।
আমি বল্লাম -হ্যাঁ বলুন।
মেয়েটি বল্ল- পায়েল এখন কেমন আছে?
আমি বল্লাম -ভালো আছে।ওর বাবার কাছে আছে।
মেয়েটি বল্ল- ওই জানোয়ার টার কাছে?
আমি বল্লাম -হ্যাঁ। কেন বলুন তো?
মেয়েটি বল্ল- যখন চিন্ময়ী কে এখানে আনা হয় তার আগেই সে মারাগেছিল।
লোকটা ডাক্তার বাবুকে কি সব বলে বডি টাকে দু দিন ধরে আই সি ইউ তে আটকে
রাখে ব্যাপার সবার কছে স্বাভাবিক মনেহয়। চিন্ময়ী র সারা শরীরে আঘাতের
চিহ্ন ছিল আমি দেখেছিলাম। পায়েল আই সি ইউ এর বাইরে বসেছিল দু দিন।
আমাকে জিজ্ঞাসা করত -দিদি মার জ্ঞান এসেছে। মা কেমন আছে?
দাদা আমি আপনাকে চিনি না। এই জানোয়ার টার যেন শাস্তি হয়।
চিন্ময়ী মার্ডর কেস#
part -3
ইন্দ্রনীল মুখার্জী
মেয়েটির নাম ছিল কূহেলি।
আমি কূহেলি কে বল্লাম -বোন এই জানোয়ার টাকে শাস্তি দিতে গেলে আমার
কিন্তু তোমার হেল্প লাগবে।
কূহেলি বল্ল – আমি তোমার পাশে আছি দাদা। আমি দরকার পরে কোর্টে সাক্ষী
দেব। আর এটা আমি করব পায়েলের জন্যে। যানত দাদা পায়েল ওই
দুটো দিন আমার চোখে চোখেই ছিল। ও ভাবছিল মা হয়ত ভালো হয়ে যাবে।
এখই হয়ত ডাক্তার বাবু এসে বলবে তোমার মার জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু ও কোন
দিন যানতে পারবে না যে ওর মাকে ঐ জানোয়ার টা আগেই পৃথিবীর থেকে
সড়িয়ে দিয়েছে। ওর মা আর কোনো দিন উঠবে না। আমিও ভয়ে কাউকে কিছু
বলেনি। কিন্তু একটা কেমন যেন নিজেকে অপরাধী বলে মনে হয়। রাতে ভাল করে ঘুমাতে
পারিনা। কূহেলির চোখ দিয়ে জল ঝরতে লাগল। কাঁদ কাঁদ গলায় বল্ল কিন্তু দাদা
যত দিন আপনার মত মানুষ আছে তত দিন ????
বলে ও আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করতে
গেল। আমি বল্লাম – থাক থাক বোন। তোমাকে কথা দিলাম ওই জানোয়ার টাকে
আর পুরো ফেমেলী কে যদি জেলের ঘাঁনি না টানিয়েছি ওকালতি ছেড়ে দেব।
আর একটা কথা। চিন্ময়ী যে গাড়ি থেকে পড়েগেছিল পায়েল সেটা বুঝতে
পেরেছিল। ওবলেছিল -বাবা মা পড়েগেছে! মা পড়ে গেছে গাড়ি থামাও বাবা।
কিন্তু জানোয়ার টা গাড়ি থামায় নি। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে শুনেছিলাম।
ওর বাবা ওকে বলছে – তুমি কিন্তু সবাই কে বলবে যে তুমি ও বুঝতে
পারনি তোমার মা কখন পড়ে গেছিলেন। তা না হলে কিন্তু তোমাকে ঐ আন্টি টার
কাছে রেখেদিয়ে আসব। পায়েল ঔ আন্টির কথা শুনে কেমন ভয় পেয়ে বল্ল।
না বাবা আমি কাউকে কিছু বলব না। আমাকে ঔ আন্টির কাছে পাঠিও না।
তুমি যা বলবে আমি তাই করব।
কূহেলি কেঁদে বল্ল – দাদা ঔ জানোয়ার টার হাত থেকে পায়েল কে বাঁচান।
কূহেলিকে আমার ফোনের নাম্বার দিলাম। ঠিকানাও দিলাম ওর নাম্বার নিলাম ঠিকানা নিলাম।
কূহেলি বল্ল-দাদা ঐ জানোয়ারটার যাতে শাস্তি হয় আমি ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করব। আর
তোমার জন্যে ও। কূহেলি চলে গেলে আমি আর একটা সিগারেট ধরালাম।
ভাবছিলাম -কেস টা কালকে পর্যন্ত কোন কিছুই ছিল না। এখন আস্তে আস্তে শক্তিশালী হচ্ছে
সিগারেট টা শেষ করে আমার বাইকের দিকে এগোচ্ছি হঠাৎ দেখি একটা বড় লড়ি
আমার দিকে তেড়ে আসছে। আমি স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম ।
লড়িটা আরেকটু হলেই আমাকে পিসে দিয়েছিল কে যেন হঠাৎ আমাকে ধাক্কা মারল আমি গিয়ে নর্দমার মধ্যে পড়লাম।
মুহূর্তের মধ্যে আমার বাইক টা লড়ির ধাক্কায় টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
লড়িটা তাড়পর এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে ছুঁটে পালিয়ে গেল। লোক জন ছুটে এসে আমাকে টেনে
তুল্ল।আমার হাত পা কেটে গেছে। রক্ত পড়ছে সারা শরীর থেকে।
সে দিন সন্ধ্যায় আর চেম্বারে যাওয়া হল না। খবর পেয়ে পূজা সন্ধ্যায় বাড়িতে এল।
আমাকে দেখে ওর চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে এল।
পাশে বসে শান্ত স্বভাবে বল্ল -কষ্ট হচ্ছে খুব?
আমি বালিশে র নিচের থেকে সিগারেটের প্যাকেট টা বার করে সিগারেট ধরালাম।
পূজা বল্ল-কি দরকার এই সবের? প্রাণটাই যদি না থাকে কিসের লড়াই?
আপনি একা পারবেন না ওদের সাথে। ওরা খুব সাংঘাতিক।
আমি সিগারেট এ টান দিয়ে। আমি একা নই পূজা একা নই। আরেক জন আছে।
ওরা আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। কেসটা অনেক দূরে এগিয়েছে।
আর পেছনে যাবার কোন রাস্তা নেই।
পূজা বল্ল- কিন্তু আমার যে খুব ভয় করছে। তোমার যদি কিছু হয়ে যায়???
পূজা কথাটা বলে লজ্জা পেল। এই প্রথম বার ও আমাকে তুমি বলে ডাকল।
আমি ওকে দুহাতে নিজের বুকে টেনে নিলাম।
কি অসাধারণ রুপ ওর। আমি আস্তে করে ওর ঠোঁটে চুম্বন করলাম।
হঠাৎ আমার ফোন টা বেঁজে উঠলো।
হ্যাঁ দাদা একটা আমি কূহেলি।
আমি বল্লাম -হ্যাঁ বল কূহেলি।
দাদা খুব বড় সর্বনাশ হয়েগেছে। ওরা সব জানতে পেরেছে।
একটা হিন্দুস্থানী লোক ফোন করেছিল। নুংড়া নুংড়া কথা বলছিল।
বলেছে তোমার সাথে দেখা করলে বা ফোন করলে ওরা আমাকে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,। কেঁদে উঠল কূহেলি।
আমি বল্লাম- ঠিক আছে বোন আমি তোর কোনো ক্ষতি হতে দেব না।
পড়ে কথা হবে। ফোন টা রখলাম।
কি সাংঘাতিক! কি সাংঘাতিক!
ওরা সব সময় আমার উপর নজর রাখছে।
অনেকেই জড়িয়ে আছে কেসটাতে।
আমি আবার একটা সিগারেট ধরালাম।
ভাবাই যায়না। কি সাংঘাতিক ওরা।
কূহেলির ফোন নাম্বার পযর্ন্ত যানে।
আমার হঠাৎ মনে পড়ল আজকে কে যেন আমাকে ধাক্কা মেরে ছিল???????
কিন্তু আমার কাছাকাছি তো কেউ ছিল না??????????
সে দিন রাতের বেলা শুয়ে আছি হঠাৎ ছম ছম আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
কি সের আওয়াজ? কে বলে চিৎকার করলাম।
হঠাৎ লোডশেডিং হয়েগেল। একটি মেয়েলি গলায় গান কানে আসল আমার
তো রক্ত হিম হয়ে গেল। কে গান করছে ঘড়িতে তখন রাত 2.30।
তুই আমার হাত বাঁধিবি, পা বাঁন্ধিবি
মন বাঁন্ধিবি কেমনে????
আমার চোখ বাঁন্ধবি ,মুখ বাঁন্ধিবি
পরাণ বাঁধবি কেমনে????
আমি নামিলাম জমুনার ঘাটে না তুলিলাম জল
না হেড়িলাম তারে সখী,না হইলাম চঞ্ছল।
আমার ইচ্ছা বাঁন্ধিবি, সোহাগ বাঁন্ধিবি
অনুরাগ বাঁন্ধিবি কেমনে?????
তুই আমার হাত বাঁধিবি, পা বাঁন্ধিবি
মন বাঁন্ধিবি কেমনে????
আমি নামলাম তুলিতে কালি,কলঙ্কের এই জ্বালা
না হয় সে হইল মড়ি অঙ্গেরই মালা।।।
আমার ঘড় বাঁন্ধিবি পথ বাঁন্ধিবি
কপাল বাঁধবি কেমনে???????
তুই আমার হাত বাঁধিবি, পা বাঁন্ধিবি
মন বাঁন্ধিবি কেমনে????
আমার চোখ বাঁন্ধবি ,মুখ বাঁন্ধিবি
পরাণ বাঁধবি কেমনে????
আমি আরেক টা সিগারেট ধরালাম। ভয় আমার নেই।
কিন্তু???????????
কে গান করছে????
আস্তে আস্তে নূপুরের ছমছম আওয়াজ টা মিলিয়ে গেল।
হঠাৎ করে সিলিং ফ্যান টা চলতে আরম্ভ করল।
সত্যি বলছি আর একটু হলে আমার হার্টএটাক হয়ে যেত।
চিন্ময়ী মার্ডর কেস#
PART_4
ইন্দ্রনীল মুখার্জী
পরের দিন যখন ঘুম থেকে উঠলাম তখন সারে নটা বাজে।
হঠাৎ আমার ফোন টা বেজে উঠল। নাম্বার টা দেখে আমি ত অবাক।
সমরেশ অধিকারি?????????????
হ্যাঁ সমরেশ অধিকারী এখন বর্ধমানের নাম করা উকিল।
আমি দুই বছর ওনার ফার্মেই কাজ করেছিলাম। সে কথা গল্পের শুরুতেই বলেছি।
কিন্তু যে কারণে চাকরি টা ছাড়লাম। 2011 তে বর্ধমানের একটা জুট মিলে একটা মার্ডার হয়। মালিকের ছেলে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ম্যানেজারের সাথে ঝগড়ায় জরিয়ে পরে। এবং নেশার ঘোরে ম্যানেজার কে মার্ডার করে ফেলে। এবং একটা সাতাশ বছরের শ্রমিক কে
খুনের দায়ে ফাঁসিয়ে দেয়। তার স্ত্রী সমরেশ বাবুর কাছে আসেন।
স্যার আমাকে পুরো কেসের দায়িত্ব দেন। আমি রাত দিন পরিশ্রম করি ছেলে টিকে বাঁচতে।
যখন কেস একদম আমাদের হাতে তখন হঠাৎ সমরেশ বাবু পাঁচ লাখ টাকা চেয়ে বসেন
ওদের কাছে।
ছেলে টার স্ত্রী বল্ল -বাবু আমরা গরিব মানুষ অত টাকা কোথায় পাব?আমরা ঘর বাড়ি
বিক্রি করে এক লাখ টাকা দিতে পারব।
সমরেশ বাবু বল্লেন -এটা কোন মুদিখানার দোকান না। পাঁচ লাখের এক টাকা কম তিনি
নেবেন না। টাকা জোগাড় করতে না পাড়লে তারা যেন কোনো সস্তার উকিল দেখে।
মহিলা সমরেশ বাবুর পা জরিয়ে ধরে কেঁদে বল্লেন-বাবু আমাদের এই দুটো ছোট্ট ছোট্ট
বাচ্চা। আমি যে করে হোক আপনার পুরো টাকা শোধ করে দেব। আপনি আমার
স্বামী কে বাঁচান।
সমরেশ বাবুর চোখ লাল হয়ে এল – তিনি লাথি মেরে তাকে সরিয়ে দিয়ে
বল্লেন- তোদের মত খান*** মাগী দের আমার ভাল করে চেনা আছে।
যা লাইনে গিয়ে দাঁড়াগে। অনেক কাষ্টমার পাবি।
ওরা চলে যাবার পড়ে আমি স্যার এর ঘরে ঢুকলাম।
স্যার ভেতরে আসব।
উনি বল্লেন -আরে ইন্দ্রনীল! আস আস। ইন্দ্রনীল I AM PROUD OF YOU MY BOY.
আমি আমার ক্যারিয়ারে তোমার মত সেন্সিয়ার ছেলে আজ পযর্ন্ত
দেখি নি। তুমি খুব খুব বড় এক জন উকিল হবে।
YOUR MOM AND DAD WILL PROUD OF YOU MY BOY.
আমি বল্লাম – THANKU SIR. স্যার আমি একটা অন্য কথা বলব বলে এসেছি।
স্যার এই কেস টা তে আমি অনেক দুর এগিয়ে ছি। আমার মক্বেল সম্পুর্ন
নির্দোষ। আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। আমারা এই কেস জিতবই।
স্যার বল্লেন – ইন্দ্রনীল তোমার আর ঐ কেসটা নিয়ে ভাবতে হবে না। আমরা
ওটা ছেড়ে দিয়েছি। তোমার সাথে অন্য একটা কেসের ব্যপারে অনেক কথা বলার আছে।
আমি বল্লাম – কিন্তু স্যার আমি এই কেসটা জিতবই। এতটা এসে শুধু টাকার জন্যে???????
স্যার চিৎকার করে বল্লেন – ইন্দ্রনীল আমি কোথায় তোমার জন্য কত কিছু ভেবে রেখেছি। আর তুমি সেই একটা বাে*র কেস নিয়ে পরে আছ।
আমি বল্লাম -স্যার তাই বলে একটা নির্দোষ ছেলে শাস্তি পাবে?
স্যার বল্লেন -আরে ওই সব বা** ছা*** দের সাথে ওরকমি হয়।
আমি বল্লাম স্যার -আমি আপনাকে হাত জোর করে অনুরোধ করছি। আমাকে এই কেস
টা লড়তে দিন। ওরা এক লাখ টাকা ত দেবে। আপনি আমার স্যালারি থেকে টাকা
কেটে নেবেন।
স্যার চিৎকার করে বল্লেন -আমাদের ফার্ম এর একটা রেপুটেশ আছে। আমি তোমার
কথা রাখতে পারলাম না।
আমি কিছু ক্ষণ বসে রইলাম দিয়ে বল্লাম- আপনি যদি কেস টা না লড়েন আমি একা
লড়ব।
স্যার চিৎকার করলেন: ইন্দ্রনীল ডোন্ট টল্ক রাবিষ। বেরিয়ে যাও আমার চেম্বারের থেকে
। তুমি যাননা কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছ।
আমি আমার কোর্ট টা খুলে টেবিলে ছুড়ে ফেল্লাম।
বল্লাম – আমি রেজিগনেশন দিচ্ছি।
স্যার চিৎকার করে বল্লেন – সমরেশ অধিকারি কাউকেই তেল মারে না। ইট উইল বি দ্য বিগ মিশটেক আফ ইয়োর লাইফ। যাও গিয়ে দেখো কে তোমাকে মাসে 30,000 সেলারি দেবে এই মারকেটে।
চাকরি টা ছেড়ে দিলাম। ছেলে টার চোদ্দ বছরের জেল হল। আর তার স্ত্রীকে গিয়ে দাঁড়াতে হল নুংড়া গলিতে তার বাচ্চাদের জন্যে।
দু বছর পড়ে আজকে হঠাৎ আবার আজকে।
আমি ফোন টা ধরলাম- হ্যালো কে বলছেন?
উনি বল্ল- মিষ্টার ইন্দ্রনীল মুখার্জী?
আমি গম্ভীর গলায় বল্লাম – হ্যাঁ বলছি।
উনি বল্লেন -শুনলাম নাকি চিন্ময়ী র কেস টা তুমি নিয়েছ?
আমি বল্লাম – ঠিকই শুনেছেন।
উনি বল্লেন – তো একটা সামান্য এক্সিডেন্ট কে তুমি মার্ডার প্রমাণ করবে?
আমি বল্লাম- সেটা তো কোর্ট বলবে মার্ডার না এক্সিডেন্ট।
উনিবল্লেন – তোমার জন্যে একটা খারাপ খবর আছে। নিমাই ভর্চাজ এর কেস টা আমি
নিয়েছি।
আমি বল্লাম – নিমাই ভর্চাজ এর মত ক্রিমিনাল এর কেস আপনার মতন মানুষ ছাড়া কে নেবে বলুন।
উনি বল্লেন- বান**দ তুই জানিস না কার সাথে কথা বলছিস। ভাল চাস তো পালা বেঁচে
যেতে পাড়িস। না হলে কোর্টে তোর এমন পেন্ট খুলব মাদা**চো** মনে রাখবি।
আমি চিৎকার করেই বল্লাম – শোন খা***কির ছেলে তোর জন্যে আজকে একটা নির্দোষ
ছেলে জেল খাটছে। ওর বউকে গিয়ে নুংড়া পাড়ার গলিতে দাঁড়াতে হয়েছে। আমি কোথাও
পালাবো না। কেস টা জিৎব আর তোকে সবার সামনে জুতা পেটা করব তবেই আমার
নাম ইন্দ্রনীল মুখার্জী। ফোন টা কেটে দিলাম।
ঘরের বাইরে এসে দেখি আরেক কান্ড কাজের মাসি ছাদে গেছিল হঠাৎ ছুটে এসে
বল্ল বাবু তারাতাড়ি ছাদে যাও আমি গিয়ে দেখতে পেলাম সারা সিঁড়ি তে লাল ফুল
পড়ে আছে হাতে নিয়ে দেখলাম ভাল করে। ফুল কোথা থেকে এল???????
মাসি হাতে নিয়ে বল্ল -এত শিমুল ফুল গো। আমি চিলে কোটাতে গিয়ে দেখি
লেখা আছে E C N A L U B M A.
আমার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। এর আবার কি মানে?????