ঋভু চট্টোপাধ্যায়

Abstract Inspirational

3  

ঋভু চট্টোপাধ্যায়

Abstract Inspirational

ছায়া রোদের আলো

ছায়া রোদের আলো

8 mins
316


 

খুব চাপ গেল।সারাটা দিন শুধু পেসেন্ট আর পেসেন্ট।এক একটা দিন যেন সব কিছু কেমন হয়ে যায়।খুব খাটনি বাড়ে।ক্লিনিকের মেয়েগুলোও অদ্ভুত।সবাইকে একদিনে ডেকে দেয়।তারপর সকালে একটা ওটিও ছিল। বেশ কমপ্লিকেটেড।ফিটাসটা ডেড হয়ে মায়ের ইনফেকশন হয়ে গেছিল।অবস্থা ভালো নয়।বাঁচলে হয়।চেয়ারে বসে উল্টোদিকের দরজার উপর মা তারার ছবিটার দিকে একবার চোখ রেখে ঘড়িতে চোখ রাখে ডাক্তার শ্রুতি মুখার্জি।

বাপরে বাপ।সাড়ে সাতটা!টেবিলটা একবার বাজিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে এমন সময় ক্যাবিনেটের দরজাটা খুলে অপর্ণা মাথাটা বের করে বলে উঠল,‘ম্যাড়াম একজন কনস্যাল্ট করতে এসেছেন।’

-এখন?এই ন’টার সময়!খ্যাপা নাকি?কাল আসতে বল।

-বলেছি, কিন্তু নাছোড়বান্দা।বেশি সময় নেবেনা বলেছে।

-তাহলেও, তুই তো নিজে দেখলি, কি রাসটা আজকে ছিল।

-সব জানি ম্যাডাম।কিন্তু সুরভী কনসাল্টেশন ফিস কেটে দিয়েছে।

-উফঃ!তোদের সবকটাকে তাড়িয়ে নতুন করে সব নেব।ডিসগাস্টিং।এমনিতেই এত দেরি করে বাড়ি গেলে মা’ও চেল্লাবে।বিয়ে বিয়ে একেই মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।

আজকে আবার নিজে কি সব পুজো আছে বলে তাড়াতাড়ি চলে গেছে।

কিছুক্ষণ পরেই ক্যাবিনেটের দরজা খুলে একজন মাঝবয়সি মেয়ে ভিতরে ঢুকল।পরণে প্যান্ট আর টপ। ডাক্তার মুখার্জি চোখ দুটো তুলে ভদ্রমহিলাকে এক ঝলক দেখে নিলেন।বেশ সাধারণ, সাজুনি নয়।গলা কান,নাক সব ফাঁকা।

একটু কড়া গলায় বলে উঠলেন,‘আজকেই আপনাকে আসতে হল?’

মেয়েটি হাল্কা হেসে উল্টো দিকের চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে উঠল,‘ঐ ম্যাডাম কি বলব।আজই টাইম পেলাম।’

ডাক্তার ম্যাডাম এবার একটু নরম ভাবে বললেন,‘বলুন কি করতে পারি।তবে একটু তাড়াতাড়ি।’

মেয়েটা খুব স্বাভাবিক গলায় বলল,‘ইনফ্যাক্ট বহুদিন ধরেই ট্রাই করছি, আপনার সাথে কনসাল্ট করবার জন্য, বাট সাম এক্সটেন্ট কুডনট ম্যানেজ দ্যা টাইম।’

-ওকে লেটস হ্যাভ দ্য ডিসকাসন, বাট ইন অ ভেরি প্রিসাইজ ওয়ে।

-আমি মা হতে চাই।

-ভালো তো ওয়াটস দ্যা রং?

-না মানে আমি আনম্যারেড।

-হোয়াট!আপনি কি আমাকে পাগল পেয়েছেন?আই.ভি এফ সেন্টার বলে যা খুশি করতে পারি?

-আপনাকে তো ফুলপেমেনটি করব।

-সবকিছু পেমেন্টে হয়?তার থেকে আপনি বিয়ে করুন।স্বাভাবিক ভাবে মেলামেশা করুন।তখন কিছু সমস্যা হলে দেখা যাবে।

-আই হেট মেন। পুরুষদের আমি ঘৃণা করি।

চমকে উঠলেন ডাক্তার মুখার্জি আরেকবার সামনে বসে থাকা মেয়েটিকে আবার দেখল।না অস্বাভাবিক কিছু নয়।স্বাভাবিক পোশাক,গলায় কানে কোন অলংকার নেই।

হাল্কা করে শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলেন,‘কোথায় থাকেন?’

-সামনে এক নম্বর গেটের কাছে।

-শুধু আপনার এগে একটা বাচ্চা জন্মাবে?

-তা হবে না জানি।তবে আপনার সেন্টারে স্পার্মব্যাঙ্ক আছে।তাইতো?

-সেতো আছেই, কিন্তু তা দিয়ে কি সব সমস্যার সমাধান হবে?

ডাক্তার মুখার্জি টেবিলটা হাল্কা করে একবার বাজিয়ে নিয়ে বললেন,‘এই প্রসেসটা খুব হেকটিক, টাইম কিলিং ও বটে।’

-ছুটি নেব।

ডাক্তার মুখার্জি হাল্কা হেসে জবাব দিলেন,‘আপনি কি এই আই.ভি এফের বিষয়ে কিছু জানেন?

-ম্যাডাম, আমি একটা গভমের্ন্ট ব্যাঙ্কের জোনাল ম্যানেজার।প্রতিদিন ভালো করে কাগজ না পড়লেও মোবাইলে সারা বিশ্বের খবর রাখি।পিরিওডসের সেকেণ্ড বা থার্ডডে থেকে আরম্ভ তো?ফোর স্টেপস।ঠিক বললাম?

-আজ কি অফিস থেকে?

-হ্যাঁ,দেরি হয়ে গেল।শালার কাজই শেষ হয় না।ও সরি অফিস জারগন বেরিয়ে যাচ্ছে।

-একটু কফি খান, আমি তৈরী করতে বলছি।

-নো নো, বাট থ্যাংক্স।আপনি রাজি হলে প্যাকেজ বলুন, আর ছুটি কি নিতে হবে সেটা বলে দেবেন।

-ক্যান আই পুট আ কোয়েসচেন?

-সিওর।

-হোয়াই আর ইউ ডিচিং ম্যারেজ?বিয়ের থেকে সরে যাচ্ছেন কেন?

-টু মাচ পারসোনাল।আই আম নট বাউন্ড টু আনসার, বাট আই উইল।ইউ নো ম্যাডাম, আমার বাবা এদেশের মা ওপার বাংলার।জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখতাম মা যেন পুরো পৃথিবীর নিচে।সারাটা দিন খাটা খাটনি, রাতে বাবার নিচে চাপা পড়ে গোঙানি।কোন প্রতিবাদ, শখ কিছু নেই।অনিয়ন্ত্রনের জন্য মা বারবার প্রেগন্যান্ট হয়ে যেত।কিন্তু জন্মের কিছু দিন বা কিছু মাস পরেই ভাইবোনরা মারা যেত, তারপর আমি কলেজ পড়বার সময় ইউটেরাসে ইনফেকস্যান হয়ে মা মারাও গেল।আমিই ছোট।আমাদের তিনবোন বেঁচে, আমার পর থেকে আর কেউ বেঁচে নেই।বাবা তো শুধু মায়ের শরীর ছাড়া আর কিছুই বুঝত না, জ্বর পেট খারাপ, পিরিয়ডস, প্রতিরাতে মা’কে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিত।আমি দেখতাম, কষ্ট হত।কিন্তু করবার কিছুই থাকত না।বাকি দুই দিদি সুন্দর বিয়ে করে নিল।আমিই মানতে পারলাম না।

-কিন্তু ম্যাডাম, এই সমাজে থাকতে গেলে তো সব ব্যাপারে বিদ্রোহ করলে তো চলবে না?

-কেন চলবে না, বিদ্রোহ তো হচ্ছে।সমাজের সাথে না পারি, নিজের সাথে তো পারব।

-নিজের সাথে মানে?

-হ্যাঁ।আমি করি তো আজ পর্যন্ত কোন শাড়ি পড়িনি, ব্যাঙ্কে ঢোকা থেকে প্যান্ট শার্ট ছাড়া আর কিছু পারিনা।সিগারেট খাই, মাল টানি, প্রেম করি না, তবে পুরুষ বন্ধু অনেক সেক্সও করেছি।সবথেকে বড় কথা হল এই পেইট্রিয়াক্যাল সমাজে বিয়ে না করে সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য ডাক্তারের সাথে কথা বলতে এসেছি।

-এটাই বিদ্রোহ?এতটুকু!

-অতটুকু ফুকু জানিনা।যেটা করি বলে দিলাম।

-মা হবার শখ জাগল কেন?

-আমার এক জুনিয়র স্টাফ বিয়ে করল।একটা ফুটফুটে মেয়ে হল।একদিন অফিসে নিয়ে এল,কোলে নিলাম। বিশ্বস করুন শরীর একটা অদ্ভুত স্রোত বয়ে গেল।এমন একটা অনুভূতি হল বলে বোঝানো যাবে না।মনে হল আমি যেন এর জন্যেই এত দিন ধরে অপেক্ষা করে বসে আছি।সেদিন আর কাজ করতে পারিনি।ফ্ল্যাটে ফিরে শুধু কয়েকটাদিন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলাম, তারপর ঠিক করলাম,‘না, মা হতে হবে ফাস্ট আন্ড ফাইন্যাল।’

ডাক্তার মুখার্জি কিছু সময় চুপ করে থেকে একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলে উঠলেন,‘বিয়ে করতে অসুবিধা কোথায়?’

-জানেন ম্যাম আমার কিন্তু রেলেসেন সিপ ছিল।সেই স্কুল থেকেই বাট আই ডিডিন্ট এনজয়।নট ইভেন লাভ। কিন্তু ঐ ফিজিক্যাল রেলেসেনসিপ আমি করেছি।ভালো মন্দ আই ডোন্ট নো, কিন্তু পরে দেখলাম প্রতিটা সম্পর্কই প্রথমে মুড়মুড়ে পরে ক্লিশে হয়ে যায় মিয়ানো, ঝাপশা।আমি এইভাবে বাঁচতে পারব না।তাই আর বিয়ের চিন্তা করিনি।পরে একটা আটিক্যাল পড়ি, অই.ভিএফ, সারোগেসি এদের সম্পর্কে নেটে সার্চ করতে গিয়ে আপনার নাম পাই।আরো দু’জন ডক্টর কনসাল্ট করেছি।আমার অফিসের একজনের ওয়াইফের আপনার কাছে আই ইউ আই করায়, সাকসেসও হয়।তার থেকেই আপনার ব্যাপারে জানি।নেটে আপনার বায়োডেটা চেক করি, সব থেকে বড় কথা আমরা মোটামুটি সম বয়সের।ডাক্টার হলেও বন্ধু হতে তো বাধা নেই।

-ডাক্টার মুখার্জির সামনে কেউ একটা আয়না নামিয়ে দিল।একি এই তো ডাক্তার নিজে বসে।ঐ তো মা ছোট্ট আবস্থাতেই ঠাকুমার ভয়ে নিজের বাবার বাড়ি চলে যাচ্ছে।ঐ তো স্কুল, বাবা মুখ ছোট করে প্রতি সপ্তাহে মায়ের সাথে দেখা করতে আসছে।রাতের ফিসফাস থেকে গুমড়ে কান্না, আয়নাটা কেমন যেন সব দেখাচ্ছে, বোঝাচ্ছে।দুটো চোখ ভিজে যাচ্ছে জলে।পরক্ষণেই চোখ দুটো লুকিয়ে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে উত্তর দেয়,‘কি নাম আপনার?’

-লীনা মুখার্জি।

-আপনিও মুখার্জি?ভালো।লীনা আফটার ইয়োর তেলিভারি উইল ইউ নট ফেশ এনি প্রবলেম?কোন সমস্যা হবে না তো?

-ওয়াট সটস অফ।ডিফেমেসন, বদনাম?আই ডোন্ট কেয়ার।নেক্সট, আমার শরীর, আমার টাকা, আমার ইচ্ছে আমার কষ্ট, আমার আনন্দ এই সব তো পরের।

-বা বেশ ভালো বললেন তো, প্রতিবাদী এবার মনে হচ্ছে, তবে শরীরে সমস্যা হবে,ইনজেকসেনের জায়গাটা ব্যথা হবার সাথে অবশ হবারও খুব সম্ভাবনা, আর এতে সাকসেস রেটও খুব মিনিমাম।

-সব জানি, এসব আমাকে বলতে হবে না।নাও ক্যান আই আস্ক আ কোয়েসচেন?

-নিশ্চয়।

-আপনার হাত দিয়েও অনেক শিশুর জন্ম হচ্ছে, কিন্তু অপনিও তো নিজে বিয়ে করেন নি, ঠিক বললাম তো?

ডাক্টার মুখার্জির শরীরটা দপ করে জ্বলে উঠল।এই একমিনিটের ঢপের পেসেন্ট তার এত কথা, এত প্রশ্ন, এমনি ভাবে জিজ্ঞেস করে দেয়।কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই পাশে দাঁড়িয়ে ইমতিয়াস কাঁধে হাত রাখে।বছর তিনেকের ছোটো, জয়েন্টের জন্য নাকি গোটা একটা বছর বসে ছিল।মেডিক্যাল কলেজেই আলাপ।তারপরেও কলেজে এসে কি প্রাণবন্ত।শ্রুতি এক্কেবারে মুগ্ধ হয়ে যেত।কিন্তু প্রোপস করাটাও যে একটা কাজ সেটা ভুলেই গেছিল।দেখতে দেখতে শ্রুতির কলেজের শেষের দিকে একদিন ইমতিয়াজ কলেজ ক্যান্টিনের ভিতরেই পকেট থেকে একটা ছবি বের করে শ্রুতিকে দেখিয়ে বলে,‘এই দ্যাখো, শায়েদা, আমার সাথে বিয়ে হবে।’

শ্রুতি কোনকথা বলেনি।শুধু হোস্টেলে শীতের রাতটাকে বড় গুমোট লাগছিল।কিরকম যেন মেঘ হল, অথচ এই গরমের ফাটা বুকে এক ফোঁটা বৃষ্টির দেখা নেই।ঐ শেষ তারপর পড়বার চক্রে আর প্রেম পেল না। এরমাঝেই নিজের অই.ভি.এফ সেন্টার তৈরী করে।বেশ কয়েকজন নিঃসন্তান দম্পতিকে সন্তান সুখ দেওয়ার পর সেন্টারের নাম চড় চড় করে বাড়তে থাকে।বিভিন্ন সেমিনার আটেন্ড করবার সঙ্গে টিভিতে প্রায়ই সাক্ষাত্কার দেওয়ার পাশে বিভিন্ন পেপারে নামও বের হয়।ঠাকুমা বেঁচে না থাকলেও কাকা পিসিরা কারণে অকারণে বাড়িতে আসতে চায়।ফোন করে, কিন্তু মা-বাবাও আর সময় দিতে পারে না।পুরো সেন্টারের দেখাশোনা করে মা।কোন ওষুধ, ইনজেকসন স্টকে নেই থেকে আরম্ভ করে কোথায় কি সমস্যা সব মায়ের জিন্মায়।বাবা দেখে হিসাব।

-কিছু ভাবছেন?

কিছু সময়ের জন্য শ্রুতির মনে ইমতিয়াস চলে এসেছিল, কিন্তু এইসব কথা তো আর পেসেন্টকে বলা যায় না।লীনার কথাতে আবার আগের জায়গায় ফিরে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,‘ভাবছি কোন লিগ্যাল প্রবলেম হবে না তো?’

-হওয়া তো উচিত নয়। হাসবেন্ড মারা গেলে তার স্পার্ম নিয়ে বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে লিগ্যাল ম্যাটার আছে। সম্ভবত মুম্বাইএ এক মহিলাকে কোর্টেও যেতে হয়।কিন্তু পারমিশন পান নি।সেসব জানি,কিন্তু এক্ষেত্রে কোন অসুবিধা?

-আসলে একটা তো হাসবেন্ডের নাম লাগে।

তারপর লীনার মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ বোল্ডলি উত্তর দিল,‘আমি একটু ভেবে দেখি, একটু ল’ইয়ারের সাথে কথা বলি তারপর বলছি।আপনি মাস দুই পরে আসুন।

-নেক্সট সাইকেলে আসব?গত পরশু এই মাসের সাইকেল কমপ্লিট হয়েছে।

-একটার পরে ডে টু বা থ্রিতে।

 শ্রুতির বাড়ি ফিরে রাতে ঘুম এল না।চোখের সামনে একটা মেডিক্যাল জার্নাল হাতে তুললেও পড়তে ইচ্ছে করছে না।পাশের রুমে বাবা মা শুয়ে আছে।মা এখনও বিয়ের কথা ঘ্যান ঘ্যান করে।ক্লিনিকের মেয়েগুলো আবার নতুন ধরেছে।কথায় কথায় বলে,‘ম্যাম প্যান্ডেলে খাবো না?’

 পাশ করে প্রথমে অন্য একটা ক্লিনিকে জয়েন করে।সেখান থেকে ছেড়ে কয়েকবছর পর এই মফঃসল শহরে প্রথম সেন্টারটা তৈরী করবার কথা শুনে সবাই একরকম হেসে উঠেছিল।‘আই ভি এফ সেন্টার!চলবে?’

কেউ আবার বলে উঠেছিল,‘কেন এখন কি আর.........’

অথচ আজ এই বাংলার অন্যতম সেরা।বিদেশ থেকেও পেসেন্ট আসছে।তবে লীনা মুখার্জি অনেক নতুন হিসাবের জন্ম দিল।

গাড়িতে বাড়ি ফেরবার সময় পিছনের দিকে চলে যাওয়া ঘর বাড়ি দেখ মনে একটা অদ্ভুত প্রশ্ন হামলা করল,‘আমরা এগিয়ে নাকি পিছিয়ে যাচ্ছি?’কয়েকদিন আগেই সেন্টারের মিনাক্ষী নামের মেয়েটা বলাবলি করছিল কোথায় নাকি একটা স্কুলে ক্লাস নাইনের মেয়েরা স্কুলের কমনরুমে ড্রিঙ্ক করেছে।ধরা পড়ে সাসপেন্ট।তবে একটি মেয়ে নাকি স্বীকার করে ওরকম প্রায়ই খায়, তার প্রেমিক কিনে এনে দেয়।শ্রুতিও বাংলা মিডিয়ামের মেয়ে।সময় অনেক কিছুই পাল্টে দেয়।না হলে লীনা মুখার্জির,মত কেউ আসতে পারে?


কখন ঘুমিয়ে গেছিল বুঝতে পারেনি।মায়ের গলায় চোখ দুটো খুলেই দেখে বিছানার পাশের জানলায় আছড়ে পড়েছে মিষ্টিরোদ।পুরো ঘরটাও রোদের হাতে।মা দরজা খুলে ভিতরে আসতেই শ্রুতি মাকে ডেকে বিছানাতে বসিয়ে বলে,‘আমি ডাক্তার ঠিক করে দিলে এক বছর সেন্টার চালাতে পারবে?’

-কেন?আবার কি কোর্স করবি?

 শ্রুতি একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে কিছুসময় চুপ করে বসে থাকে।মা বলে,‘কিরে চুপ যে?’

-আমার নিজের আই.ভি এফ করাবো, আমার নিজের সন্তান জন্মাবে।

-মায়ের মুখ দিয়ে কথা বেরোয় না। তারপর চিত্কার করে ওঠে,‘খেপেছিস নাকি?সবাই কি বলবে?তুই সেন্টার চালালেও সব স্বামী স্ত্রী একসাথে আসে।বিয়ে কর এমনি ভাবে হয় না।সমাজ আছে বাড়ি আছে তোর সেন্টার আছে।বিয়ে কর্ সন্তান তো সব মেয়েই চায়।এমনি ভাবে একা একা চলতে পালেনা।আজ আমরা আছি কাল মারা গেলে?’

-ওসব কথা পরে ভাবব, তারথেকে বল তুমি বাবা রাজি কিনা, আমি বাড়ি সমাজ অতো সব জানিনা । তুমি আর বাবা ছাড়া আর কেউ নেইও জানিও না।

একশ্বাসে সব কথাগুলো বলে যায় শ্রুতি সেই সঙ্গে লীনার সব কথাও।মা সব কিছু মন দিয়ে শোনে, কিছু বলে না।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract