STORYMIRROR

Paula Bhowmik

Comedy Fantasy Inspirational

3  

Paula Bhowmik

Comedy Fantasy Inspirational

ছাগনন্দন

ছাগনন্দন

2 mins
204

সত্যেন লাইনে দাঁড়িয়েছে টিকিট কাটতে। লোহার বেঞ্চে বসে স্টেশন চত্ত্বরটা খুঁটিয়ে দেখছে জগন্নাথ।

কিছু কাক, শালিক আর পায়রার খাবার খুঁটে খাওয়ার ধরণ দেখে মনে হলো এখানেই ওদের আশ্রয় জুটে গেছে কোথাও। 


কয়েকটি গৃহহীন মানুষেরও দেখা পাওয়া গেল স্টেশনে। তার মধ্যে সকলেই যে স্বাভাবিক তা জোর দিয়ে বলা যায় না। এদের প্রত্যেকেরই হয়তো একদিন নিজেদের সংসার ছিলো। আজ কোনো ভাবে কেউ সম্পত্তি, কেউ আপনজন আর কেউ হয়তো বা নিজের স্মৃতি হারিয়ে এই স্টেশনে এসে জুটেছে। ভিক্ষা স্বরূপ কেউ কিছু খেতে দিলে তাই খেয়ে করছে জীবন ধারণ।


খুব কম ট্রেন চলে এই লাইন দিয়ে। বারসই জংশন থেকে এটি একটি কর্ড লাইন যা রাধিকাপুর নামে এক জায়গা পর্যন্ত যায়। আগে পার্বতীপুর জংশন পর্যন্ত চলাচল করতো ট্রেন। কিন্তু স্বাধীনতার সময় দেশভাগের ফলে ঐ রাধিকাপুর এখন এক প্রান্তিক স্টেশনে পরিণত হয়েছে। একটা সময় এই পথে বহু মানুষ নিজেদের সম্ভ্রম বাঁচাতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে এই ভারতে এসেছে। হয়তো কিছু বছর এই যাতায়াত বজায় ছিল। তারপর কোনো এক সময়ে বর্ডারটি সিল করে দেওয়া হয়।


সত্যেন টিকিট কেটে পাশে এসে বসেছে। হঠাৎ বলে ওঠে,

________শিগ্গির নাক বন্ধ কর । ঐ যে এসে গেছে !


জগন্নাথ একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জিজ্ঞেস করে ,


________কি ?


কথাটা বলার সাথে সাথেই নাকে তীব্র বিচ্ছিরি একটা গন্ধ এসে লাগায় বাঁ হাতের বৃদ্ধা ও তর্জনী সহযোগে নিজের নাক বন্ধ করতে বাধ্য হয়। চারদিকে তাকিয়ে দেখতে গিয়ে পূর্ব পাশে এক হৃষ্টপুষ্ট ছাগনন্দনের দিকে নজর যায়। দিব্যি হেলেদুলে উনি চারপায়ে হেঁটে আসছেন। কুচকুচে কালো রঙ। ইয়া বড় বড় দুটো শিং। কাউকে গুঁতিয়ে ভুড়ি ফাঁসিয়ে দেবার জন্যে যথেষ্ট। ওনার নিজস্ব গন্ধ ই বোধহয় মানুষের কাছ থেকে এতো সম্ভ্রম আদায় করার ব্যাপারে অনেকটা ভুমিকা গ্রহন করেছে। রেলের পুলিশ তো দূর অস্ত, সাধারণ মানুষও যথেষ্ট দুরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করে‌। এতো মানুষ যে দম বন্ধ করে ওনার অতিক্রান্ত হবার অপেক্ষায় রয়েছে, সেদিকে ওনার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।


বাসে যাওয়া আসার পথে জগন্নাথ কুলিক নদীর আর ওর পাশে পাখিতে পাখিতে ছয়লাপ ফরেস্ট দেখেছে বটে। মনে মনে ভেবে রেখেছে, এরপরের বার এলে ভালো করে ঘুরে দেখতে হবে। কিন্তু আজ স্টেশনে এসে যে অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা লাভ হলো তা বোধহয় সারা জীবনেও ভোলা যাবে না। 


স্মৃতির বালুকাবেলায় কিছু ছবি অমলীন হয়ে থেকে যায়। দিনের পর দিন হাজার ঢেউ এসেও তার মুছে 

দিতে পারেনা একেবারে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy