STORYMIRROR

শিপ্রা চক্রবর্তী

Comedy Romance

4  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Comedy Romance

বসন্তের ছোঁয়া

বসন্তের ছোঁয়া

7 mins
231

কাঁধে ব‍্যাগটা ঝুলিয়ে কোনরকমে ছুটতে ছুটতে স্টেশনের প্ল‍্যাটর্ফমে ঢুকল ওলি। কপালের ভাজে তখন বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। কিন্তু না... শেষ রক্ষা হলোনা...!!!! ট্রেনটা হুইশেল দিতে দিতে বেড়িয়ে গেল। আর ওলির চোখ তখন ট্রেনের চলে যাওয়ার দিকেই নিবদ্ধ। হাতটা উল্টে ঘড়িটা দেখে নিল, না.... অনেকটা লেট হয়ে গেছে, ওর জন‍্য তো.... আর ট্রেনটা দাঁড়িয়ে থাকবে না। ওলি একরাশ বিরক্তি নিয়ে এগিয়ে চলল সামনের দিকে, পরের ট্রেনটা আসতে এখনও পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট দেরী আছে। ওলি এগিয়ে গিয়ে মালতিদির চায়ের দোকানের পাতা বেঞ্চে বসল। এবং ব‍্যাগ থেকে রুমালটা বার করে কপালের ঘামটা মুছে নিল।

----------মালতি তার দোকানে থাকা ছোট্ট টেবিল ফ‍্যানটা ওলির দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে বলে উঠল, ট্রেনতো চলে গেল... তোর তো... দেরী হয়না আজ কি... হল তাহলে????

-------ওলি একবার টেবিল ফ‍্যানটার দিকে চেয়ে দেখল, আওয়াজ বেশি হাওয়া কম, তবুও কিছুতো গায়ে হাওয়া লাগছে, তাতেই শরীরটা কিছুটা হলেও ঠান্ডা হচ্ছে। ওলি বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল, আর বলোনা কার মুখ দেখে যে... আজকে বেড়িয়ে ছিলাম কে.. জানে???? সারাদিন মনে হয় এই ভাবেই চলবে!!!

--------মালতি হাসতে হাসতে বলে উঠল কেন রে.... কি হল আবার সকাল সকাল, তা... চা খাবি নাকি????

---------ওলি বলে উঠল, না.... চা এখন আর খাবোনা, খাবারগুলো গলার কাছে গজগজ করছে মনে হচ্ছে, আর বলোনা একজন অদ্ভুত পাগল গোছের আজব পাবলিকের পাল্লায় পড়েছিলাম, তাই দেরী হয়ে গেল। এ.... একেবারে বজরঙ্গী ভাইজান সিনেমার বজরঙ্গী ভাইজান যেন!!

---------মালতি হাসতে হাসতে বলে উঠল, তা... সে কি... করল বজরঙ্গী ভাইজানের মত????

---------ওলি কিছু বলতে যাবে তার আগেই একজন বলে উঠল, দিদি একটা ডিমটোষ্ট আর চা... দিন তো....

----------মালতি বলে উঠল, হ‍্যাঁ..... দাদাবাবু বসুন দিচ্ছি। মালতি ঝটফট কাজ করতে শুরু করে দিল।

--------ওলি বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, আপনি.... এখানেও এসেগেছেন!!!! আমার পিছু পিছু, আরে মশাই আমি বললাম তো.... আমাকে টাকা ফেরত দিতে হবেনা., আপনি রাখুন, না..... হলে পুরোটাই দিয়ে দিন, কিন্তু আপনিতো কোনটাতেই রাজি নন....., অথচ পিছন ছাড়ছেন না। আপনার জন‍্য আমার ট্রেনটা আজ মিস হয়ে গেল। ওলির কথা বলার মাঝেই অ‍্যানাউন্সমেন্ট হল ট্রেন আসছে। ওলি আর এক মুহুর্ত ওখানে না দাঁড়িয়ে মালতিদিকে বলে উঠল, আমি আসি মালতিদি... ফেরার পথে দেখা করব। ওলি এগিয়ে গেল। আর ছেলেটি ভ‍্যাবলার মত ওলির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। আসলে ও ওলিকে দেখেনি এখানে বসে থাকতে ও এসেছিল চা... ডিমটোস্ট খেতে, কিন্তু ওলি ঝড়ের বেগে কথাগুলো বলে চলেগেল তাই কিছুই বলতে পারলোনা বেচারা।

******************************

ট্রেন প্লাটফর্মে ঢোকার সাথে সাথে ওলি উঠে পড়ল লেডিস কম্পার্টমেন্টে। অফিস টাইম ট্রেনে পা... ফেলার জায়গা নেই, এতটাই ভীড়। অবশ‍্য রোজ এইভাবে যেতে যেতে ওলির অভ‍্যাস হয়ে গেছে, কোন রকমের ভীড় ঠেলে ওলি একটা গলির ভিতরে ঢুকে দাঁড়াল। একবার উঠে পড়েছে যখন আর চিন্তা নেই, কারন ওর গন্তব‍্য একেবারে শেষ। ওলির ওপরদিকে একবার তাকিয়ে দেখল ফ‍্যানটা চলছে কিন্তু এত ভীড় যে.... তার হাওয়া গায়ে লাগছেনা, তারপর যা.... গরম এবং রোদের তেজ। ওলি কানে হেডফোন গুজে দাঁড়িয়ে রইল চোখ বন্ধ করে। র্নিদিষ্ট সময় ট্রেন এসে তার গন্তব্যে দাঁড়াল। ওলি আর কোনদিকে না.... তাকিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল সামনের দিকে। এমনিতেই প্রাই আধঘন্টার কাছাকাছি লেট হয়ে গেছে। ও গিয়ে .... ডিউটি জয়েন করবে তবে শিখা যেতে পারবে। ওলি তাড়াতাড়ি করে নার্সিংহোমে ঢুকে পোশাক চেঞ্জ করে নার্সের পোশাক পড়ে নিল, এবং শিখাকে ছেড়ে দিল। ওলি ঘুরে ঘুরে সব পেশেন্টদের দেখে নিল, যাদের ওষুধ দেওয়ার দরকার তাদের ওষুধ দিতে লাগল। তারপর সবশেষে আসল মিনাক্ষি দেবীর কাছে। মিনাক্ষি দেবি ছদিন হল এখানে আছেন। বড় একটা অপরেশন হয়েছে হার্টের, তবে আজ ওনার ছুটি বাড়ি ফিরে যাবেন। ওলি ওনার কাছে যেতেই মিনাক্ষি দেবী বলে উঠলেন..........

-----------কিরে তোর আজ এত দেরী হল????

----------ওলি মিনাক্ষী দেবীর বেডের পাশে টুলটা টেনে বসে বলে উঠল, আর বলো..না...!!! আজ একজন আজব পাগল মানুষের পাল্লায় পড়ে ছিলাম, তাই ট্রেন মিস হয়ে গেল।

---------মিনাক্ষী দেবী বলে উঠলেন, তা কি করেছে সেই আজব পাগল মানুষ???

---------ওলি বলে উঠল, আর বলোনা আমার কাছে খুচরো ছিলনা তাই কুড়ি টাকা দিয়েছিলাম অটো ভাড়া? আর ওদিকে ঐ লোকটাও পঞ্চাশটাকা দিচ্ছিল ভাড়া। আর অটো কাকুর কাছেও খুচরো ছিলনা আর প‍্যাসেঞ্জার মোটে আমরা দুজন তাই অটোকাকু বলল ওনাকে আমাকে দশটাকা ফেরত দিয়ে দিতে। আর ভাঙ্গানির অভাবে সেটাও হয়ে উঠছিলনা, আর উনি টাকা ভাঙ্গাবেন, এই করতে গিয়ে দেরী হয়ে গেল, শেষ আমি বললাম আপনি রেখেদিন পরে যদি আবার কোনদিন দেখা হয় তখন দিয়ে দেবেন উনি তাতেও রাজি নন। আর বলোনা এই চক্করে আমার ট্রেন মিস হয়ে গেল। সে.... যাই হোক তোমার তো... আজকে ছুটি!!!!

--------মিনাক্ষী দেবী হাসি হাসি মুখে বলে উঠলেন হ‍্যাঁ.... ছুটি, কিন্তু তোকে খুব মিস করব, তুই এই কদিন যেভাবে আমাকে সেবা যত্ন করে সারিয়ে তুললি।

--------ওলি হাসি মুখে বলে উঠল, ও... এমনকি ব‍্যাপার, এটাইতো আমার কাজ, তবে তুমি খুব ভালো তাই সবার ভালোটা দেখতে পাও। কে.... নিতে আসবে তোমায়...???

--------মিনাক্ষী দেবী বলে উঠলেন, ছেলে ছাড়াতো আমার কেউ নেই!!! ছেলেই আসবে, তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেব আজ, তুই তো এক সপ্তাহ ধরে রাতে ছিলিস আমার সাথে, তাই ছেলের সাথে তোর দেখা হয়নি!!! ও... তো সকালে আসে।

ওলি টুল ছেড়ে ওঠে মানাক্ষী দেবীর ওষুধ গুলো ভালো করে গুছিয়ে দিচ্ছিল, সাথে বুঝিয়ে দিচ্ছিল কখন কোনটা খেতে হবে। হঠাৎ কেবিনের দিকে এগিয়ে আসতে থাকা মানুষটাকে দেখে অবাক হয়ে যায় ওলি। সাথে মাথাটাও গরম হয়ে যায় ততক্ষনে মানুষটা কেবিনের ভীতরে ঢুকে পড়েছে, ওলি বেশ জোড় গলায় বলে উঠে..........

----------আপনি এখানেও চলে এসেছেন আমার পিছু পিছু, আর আপনাকে ভিতরে ঢুকতে দিলই বা.... কে???? আপনি মশাই মানুষটাতো খুব একটা সুবিধার বলে মনে হচ্ছেনা, আপনার উদ্দেশ‍্যটা কি..... বলুনতো??? এইভাবে সকাল থেকে আমাকে ফলো করে চলেছেন, এইভাবে চলতে থাকলে আমি কিন্তু পুলিশের কাছে কমপ্লেন করব আপনার নামে। ওলি ঝড়ের বেগে কথা বলেই চলেছে... বলেই চলেছে, বাকিদের বলার সুযোগ পর্যন্ত দিচ্ছেনা, আর ছেলেটি হঠাৎ করে দমকা ঝড়ের মুখে পরে বুঝতে পারছেনা কি.... করবে??? কি বলবে??? কথাগুলো সব হারিয়ে গেছে, তাই ভ‍্যাবলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

---------পিছন থেকে মিনাক্ষী দেবী হাসতে হাসতে বলে উঠলেন, এই তাহলে তোর.... সেই আজব পাগল মানুষ, সকাল থেকে তুই.... যার পাল্লায় পড়েছিস...!!!

-------ওলি মিনাক্ষী দেবীর দিকে ঘুরে বলে উঠল, দেখো কি.... রকম মানুষ আমাকে ফলো করতে করতে নার্সিংহোমে তোমার কেবিন অবধি চলে এসেছে!!!

----------মিনাক্ষী দেবী হাসতে হাসতে বলে উঠল, হ‍্যাঁ.... একেবারেই পাগল, আর ঐ....পাগলের নাম মৈনাক। আর ও.... হল আমার ছেলে।

ওলি এবার একসাথে চারশো চল্লিশ ভোল্টের ঝটকা খেল এবং হঠাৎ করেই ওলির কথার ঝড় থেমে গেল, এবং ওলি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল মিনাক্ষী দেবীর দিকে।

------ঝড় থেমে যাওয়ার আভাস পেয়ে মৈনাক বলে উঠল, মা.... আমি সমস্ত কাজ মিটিয়ে নিচ্ছি একটু পরেই তোমাকে নিয়ে বেড়োব।

---------মৈনাক চলে যেতে গেলে মিনাক্ষী দেবী বলে ওঠেন, আরে মৈনাক দাঁড়া তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিই ওলির। আমি তোকে রোজ বলতাম একটা মিষ্টি মেয়ে আছে, যে.... আমাকে খুব যত্ন আত্তি করে, ভালোবেসে, ঐ....হল সেই মেয়ে ওলি, আর ওলি ও.... হল আমার ছেলে মৈনাক।

--------মৈনাক হাতজোড় করে বলে উঠল নমস্কার। আর অসংখ্য ধন্যবাদ আমার মাকে নার্সিংহোমেও একটা সুন্দর পরিবেশ এবং ভালোবাসা দেওয়ার জন‍্য, মায়ের মুখে আপনার নাম অনেক শুনেছি। পরিচয় হয়ে খুব ভালো লাগল।

---------ওলি মৈনাকের দিকে ঘুরে বলে উঠল, স‍্যরি... এইভাবে বলে লজ্জা দেবেন না প্লিজ.....,আসলে আমি ভেবেছিলাম সকালের ঐ..... ঘটনার জন্য আপনি আমাকে ফলো করছেন। স‍্যরি কিছু মনে করবেননা।

----------মিনাক্ষী দেবী আর মৈনাক একসাথে হেসে উঠল।

---------আর ওলি মনে মনে নিজেকে বলে উঠল, সত‍্যি ওলি তুই... কি থেকে.... কি...... ভেবেনিস!!!!! আর যার ছেলে তুই... তার কাছেই এতক্ষন ধরে তার ছেলের নামেই হাজারটা কথা বলে চলে ছিলিস। এমনকি পাগল পর্যন্ত বললি, উফ্.... তুই যে.... কি করিস, তুই.....নিজেও জানিসনা!!!!

******************************

ঘন্টাখানেকের মধ‍্যে মিনাক্ষী দেবী সবাইকে বিদায় জানিয়ে বাড়ি ফেরার জন‍্য গাড়িতে উঠে বসলেন। আর মৈনাক মাকে ভালো করে গাড়িতে বসিয়ে ওলির সামনে এসে দশটাকার একটা নোট সাথে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে ওলির চোখে চোখ রেখে আসছি বলে চলেগেল।ওলি চিরকুটটা খুলে দেখল গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে.........

পাগল টাকে মনে পড়লে এই নম্বরে ফোন করবেন। আর টাকাটা ফেরত দেওয়া ইচ্ছে ছিলনা, কারন এই টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্দেশ্যে যদি আরও একবার দেখা হতো আপনার সাথে তাহলে ভালো হত!!! কিন্তু তবুও ফেরত দিলাম। আশা রাখি আবার নিশ্চয়ই দেখা হবে আমাদের। মনে পড়লে অবশ‍্যই এই দশটা নম্বর ডায়েল করে ফোন করবেন, আমি অপেক্ষায় থাকব।

ওলি লেখাটা পরে হেসে উঠল। তারপর নম্বরটা নিজের মোবাইলে ডায়েল করে কান ধরল। এক.... একটা রিং.... ওলির হৃদস্পন্দন কে হাজার গুন বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ‍্যে ভেসে আসল একটা কন্ঠস্বর হ‍্যালো.............

-----------ওলি হেসে বলে উঠল, সেভ করে রাখবেন আমার নম্বর, আর পরের ফোনটা যেন.... ওদিক থেকেই আসে।

----------ফোনের ওপার থেকে কথা ভেসে আসল, অবশ‍্যই...., জো.....হকুম।

---------ওলি হাসতে হাসতে বলল বাই আজব পাবলিক। ফোনটা কেটে হাতে ধরে ওলি আবার হেসে উঠল, আর পাশ থেকে কারোর মোবাইলে খুব হাল্কা সুরে বেজে উঠল..........


"তুমি হাসলে.... আমার... ঠোঁটে হাসি,

তুমি আসলে.... জোনাকি... রাশি রাশি

রাখি আগলে... তোমায়...অনুরাগে

বলো কিভাবে.. বোঝাই... ভালোবাসি?

সব চিঠি সব.... কল্পনা জুড়ে..,

রং.. মিশে.... যায় রুক্ষ দুপুরে,

সেই রং....দিয়ে তোমাকেই..আঁকি.

আর কিভাবে... বোঝাই ভালোবাসি...।

হ্যাঁ... প্রাণ দিতে চাই...,

মন দিতে চাই....

সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন.. দিতে চাই

তোমাকে..., ও.. তোমাকে।

স্বপ্ন সাজাই..., নিজেকে...হারাই

আর দুটি নয়নে... রোজ...

নিয়ে..শুতে যাই

তোমাকে...., ও.. তোমাকে"।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy