ANURADHA BHATTACHARYA

Abstract Drama Inspirational

3  

ANURADHA BHATTACHARYA

Abstract Drama Inspirational

বৃদ্ধাশ্রম

বৃদ্ধাশ্রম

9 mins
165


রোজ এরকম ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কাঁদিস কেন বলতো? তুই কি কোন বনে জঙ্গলে, একা একা পরে আছিস? এখানে আমরা একসাথে সবাই কত গল্প করি , ক্যারাম খেলি, গান করি , বাগানে ঘুরে বেড়াই , ঘরের কোন কাজ কর্ম করতে হয় না,সময় মতো খাবার দাবার খেতে পাই। দিব্যি আনন্দেই তো আছি ।তোর যে কিসের এত কষ্ট , তাই বুঝি না।

রমলার কথায় সায় দিয়ে গৌরী বলে, সত্যি রে , তোর রোজকার এই নাকে কান্না আর ভালো লাগে না। এখানে কি এমন খারাপ টা আছিস শুনি? 

নীলিমা কান্না ভেজা চোখে রমলা আর গৌরী কে দেখে। তারপর খুব ধীরে বলে , তোদের সত্যিই কষ্ট হয় না, ছেলে, মেয়ে পরিবারের সকলকে ছেড়ে এভাবে বৃদ্ধাশ্রমে পরে থাকতে?

ঘর থেকে বেরিয়ে বাগানে আসতে আসতে নীলিমার কথাগুলো রচনার কানে যায়।রচনা নীলিমার পাশে এসে বসে। বলে, তুমি কষ্ট পেতে চাইছ , তাই তোমার কষ্ট হচ্ছে। কষ্ট পাওয়া আর না পাওয়া দুটোই তোমার চিন্তা ভাবনার ওপর নির্ভর করে। আচ্ছা বলতো, বিয়ের পর বাবা, মা ,ভাই, বোন পরিচিত জায়গা, নিজের মানে তখন যেটাকে নিজের বলে ভাবতে বা জানতে , সেই ঘর দোর ছেড়ে অন্য জায়গায়, অচেনা, অজানা মানুষ জনের সাথে গিয়ে থাকতে তোমার খুব খারাপ লেগেছিল কি?

বিশাখা ফুলের গাছে জল দিতে দিতে বলল, এখন যেভাবে তোমার ছেলে, ছেলের বৌকে খারাপ বলছ আর দোষারোপ করছ, তখন ও তোমার বাবা, মা কে এইভাবেই দোষারোপ করেছিলে তো , তোমায় তোমার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল বলে?

দুটো কি এক কথা হোল ? রেগে যায় নীলিমা।

বিশাখা খুব হাসে। বলে , অনেক টাই। সময়ের সাথে নিজের চিন্তা ভাবনাকে না পাল্টালে শুধু কাঁদবে, আর কষ্ট পাবে। এক সময় যৌথ পরিবার ছিল। তারপর আমাদের সময় এল নিউক্লিয়ার পরিবার।তার ও আগে বৃদ্ধাবস্হায়

বাণপ্রস্হে যেতে হোত।এখন সেটা হয়েছে বৃদ্ধাশ্রম। বাণপ্রস্হ থেকে তো অনেক ভালো।অতএব মেনে নাও। মেনে নিতে পারলেই তুমি ভালো থাকবে।


এদের কথোপকথন চলতে থাকুক , ততক্ষনে চলুন আমরা এদের পরিচয় গুলো জেনে নিই।এরা প্রত্যেকেই " শান্তিনিকেতন " নামের বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা। 


এই বৃদ্ধাশ্রমেরই বাসিন্দা দেবীকার বাসগৃহ টাই বৃদ্ধাশ্রমে পরিনত হয় আজ থেকে দশ বছর আগে ।

স্বামী, সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল দেবীকার। একমাত্র ছেলে, পড়াশোনা শেষে চাকরি সূত্রে বিদেশে চলে যায়, এবং পরবর্তীতে অর্থাৎ বিয়ের পর স্ত্রী, মেয়ে নিয়ে সেখানে ই সংসার ধর্ম পালন করছে। দশ বছর আগে দেবীকার স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলে এবং বৌমা দুজনেই চেয়েছিল মাকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে । কিন্তু---

---- না বাবা, আমি বিদেশে গিয়ে থাকতে পারবোনা।

--- কিন্তু মা, তুমি এখানে একা একা কি করে থাকবে?

--- আপনাকে এখানে এভাবে একা ছেড়ে গেলে আমরাও তো শান্তিতে থাকতে পারবো না, সব সময় আপনার জন্য দুশ্চিন্তায় থাকবো।

--- তোমার শরীর খারাপ হলে আমরা অত দূর থেকে হুট করে আসতেও পারবো না।

--- আমাকে নিয়ে অত চিন্তা করিস না। শরীর খারাপ হলে , ডাক্তার বোস তো আছেন। 

--- এটা কোন কথা হোল ? এতদিন বাবা আর আপনি দুজনে ছিলেন। এখন তো আপনি একদম একা---

কথা কেটে দিয়ে দেবীকা বলে, তোমাদের সাথে গেলে ওখানে ও তো আমাকে সারাদিন একাই থাকতে হবে। তোমরা দুজনে সকালে অফিসে চলে যাবে আর দাদুভাই তার স্কুল, খেলা, আঁকার ক্লাশ নিয়ে সারাদিন ই বাড়ির বাইরে থাকবে ।আমাকে তো ওখানেও অজানা অচেনা জায়গায় সারাদিন একাই ঘরের মধ্যে থাকতে হবে। তারচেয়ে তোমরা যদি মত দাও তাহলে আমার একটা প্রস্তাব আছে। 

--- কি প্রস্তাব ? দুজনে প্রায় একসাথেই প্রশ্ন করে ওঠে ।

--- আমার দুই বান্ধবী আছে, যারা একদম একা একা থাকে। বিশাখার একটাই মেয়ে , বিদেশে থাকে। বিশাখা তার মেয়ের কাছে গিয়ে থাকবেনা।  আর গৌরীর এক ছেলে ব্যাঙ্গালোরে , আর এক ছেলে দিল্লিতে। তারা কেউই আর এখানে থাকতে আসবেনা।আর গৌরী , মানে আমার সেই বান্ধবী ও ভাগের মা হয়ে তাদের সাথে থাকতে যাবে না। তাই , তোমরা রাজি থাকলে তাদের কে আমি এখানে এনে রাখতে পারি। তাহলে আমায় আর একা থাকতে হবেনা।

--- কিন্তু ওনারা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে এখানে এসে থাকতে রাজি হবেন কেন ?

--- গৌরী তো নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে কোন একটা বৃদ্ধাশ্রমে যাবার কথাই ভাবছে। সাথে বিশাখাকেও সেই বুদ্ধি ই দিচ্ছে। এখন ওদের যদি বলি আমার বাড়িটা কেই বৃদ্ধাশ্রম মনে করে এখানে থাকতে , তাহলে ওরা দুজনে ই খুশি খুশি রাজি হয়ে যাবে।

--- মা----!

-- কেন, আমি কি খুব অবাস্তব কিছু বললাম ?

--- না, মা। তাই যদি হয়, তাহলে মন্দ হবে না। আপনারা তিন বন্ধু একসাথে ভালো ই থাকবেন। 

--- হ্যাঁ, ভাবছি এই বাড়িটাকে যদি বৃদ্ধাশ্রম বানাই , ক্ষতি কি ? আমিও ভালো থাকবো , আমার সাথে আরো কিছু বয়স্কা মানুষ, যাদের ছেলে, মেয়েরা দূরে থাকে, তারাও সমবয়সী কিছু মানুষের মধ্যে থেকে একাকীত্বের বাইরে  আনন্দের সাথে ভালোই থাকবে।

--- কিন্তু মা, বৃদ্ধাশ্রম করলেই তো হোল না। সকলের দেখাশোনা, খাবার দাবারের ব্যাবস্হা, অসুখ বিসুখ হলে , তার---

---অত ভাববার কিছু নেই। ডাক্তার বোস তো কাছেই থাকেন। অসুখ বিসুখ হোলে উনি তো আছেনই।আর রতন যেমন গাড়ি পরিষ্কার, বাগানের দেখাশোনা করছে ,করবে। তারসাথে বাজার টাও করে দেবে। ওর বৌ তো ঘরের কাজ করেই দেয় । শুধু ওদের মাইনেটা একটু বাড়িয়ে দিতে হবে।আর রান্নার জন্য একটা লোকের ব্যাবস্হা করে নিলেই হবে। সেও আমি পেয়ে যাবো।

---- মা , তুমি তো সব ঠিক করেই রেখেছ !

--- তোমরা রাগ কোরোনা। আমি নিজের জায়গা ছেড়ে, বিদেশে গিয়ে মোটেও ভালো থাকবো না। সে তোমরা আমার যতোই যত্ন করোনা কেন। তারচেয়ে এখানে যেভাবে ভালো থাকা যায়, সেটাই ভেবেছি। আর এটাকে বৃদ্ধাশ্রম করলে, এত বড় বাড়িটাও খাঁ খাঁ করবে না।


এরপর আর ছেলে , ছেলের বৌ মায়ের ইচ্ছাতে বাধা দিতে পারে না। তারা খুশি মনেই বাড়িটাকে বৃদ্ধাশ্রমে পরিনত করতে রাজি হয়ে যায়।


প্রথমে তিন বান্ধবী, দেবীকা , গৌরী আর বিশাখাকে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের সূচনা। পরে ধীরে ধীরে আরো দু চার জন আসে।


নীলিমা, প্রায় মাস খানেক হয়েছে এসেছে। কিন্তু এখনো মানিয়ে নিতে পারছেনা। তার মতে , ---একা হাতে ছেলেকে এত কষ্ট করে মানুষ করলাম, আর আজ সেই ছেলে আমায় এখানে , বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেল ?

--- আমি বুঝিনা, এতে এত কষ্ট পাওয়ার কি আছে? এখানে তোমার অভাবটা কিসের? বলে রমলা।

--- ছেলে বৌ এর মুখ ঝামটা শুনতে পাচ্ছে না। তাদের জন্য রান্না করে দিতে পারছেনা। তাই কষ্ট হচ্ছে, তাইনা নীলিমা দি? আমাদের কে দুদিন রান্না করে খাওয়াও না। ফুট কাটে রচনা।

বিশাখা বলে, তুমি যেমন শ্বশুড় ,শাশুড়ি ছাড়া ঝাড়া হাত পায়ে নিজের খুশি মতো তোমার ছেলেকে মানুষ করেছ, এখন তোমার ছেলের বৌ ও যদি সেই রকম ভাবেই তার ছেলেকে মানুষ করতে চায় ,তাতে তার দোষ ধরছো কেন? 

রমলা বলে , আমি তো নিজের ইচ্ছাতেই এখানে এসেছি। নিজের ঘরে ভালোই ছিলাম, কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সংসারে  নিজেকে ঠিক মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। ফলে নিজের মনের শান্তি নষ্ট হচ্ছিল।

---- যেমন ? প্রশ্ন করে গৌরী।

---- দেখো, আজকালকার বেশ ভূষা আমার পছন্দ হয় না। বৌমা ঘরে যে ধরনের জামা কাপড় পরে থাকে সেগুলো আমার ভালো লাগে না। কিন্তু সেটা তার আরামদায়ক পোশাক, এখানে আমার বলার কিছু ই থাকতে পারে না। এছাড়া, দিনরাত ওরা দুজনে যে কোন বিষয় নিয়েই স্বামী স্ত্রী তে ঝগড়া শুরু করে দেয় , যেটা আমি মেনে নিতে পারিনা। কিজানি, ওটাই বোধহয় ওদের প্রেম।বয়সের পার্থক্য টা তো আমাদের মতো দশ, বারো বছরের নয়, যে ভয় বা ভক্তি শ্রদ্ধা করবে। ওদের সম্পর্ক টা তো বন্ধুত্বের। আবার বৌমা চাকরি করে, সারাদিন কাজের মধ্যে থাকে।তাই তার ধৈর্য্য ও কম।নাতি জেদ করলে বা বেশি বায়না করলে সে চট করে রেগে যায়, চিৎকার করে, কখনো কখনো মেরেও দেয় । এগুলো আমার ভালো লাগে না। কিন্তু ছেলে তো তার। সে তার নিজের মতো করেই মানুষ করবে। এখানে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না। আবার এটা আমি সহ্য ও করতে পারিনা।  কখন সহ্য শক্তি হারিয়ে কিছু বলে ফেলব, আর তারপর সংসারে অশান্তি শুরু হবে ,  তাই এখানে চলে আসা। ওরা আপত্তি করেছিল, কিন্তু আমি তো এখানে ভালো আছি। এখন মাঝে মাঝে ওরা আসে আমার কাছে। আমিও মাঝে মধ্যে , বিশেষ করে নাতির জন্ম দিনে যাই। এই যথেষ্ট। 

--- তোমার নাতির জন্য কষ্ট হয় না?

---- প্রতিদিন ই তো ভিডিও কল করে। দেখা হয়, কথা হয়। কষ্ট পাবো কেন?

--- নন্দা বলে, তুমি জোর করে কষ্ট পেতে চাও নীলিমা দি। আমার ছেলে , মেয়ে দুজনেই বলেছিল, আমার যার কাছে খুশি আমি তার কাছেই থাকতে পারি। কিন্তু যাই বল বাবা, সংসারে থাকলে কিছু দায়িত্ব এসেই যায়।আর আমার এখন ঐ সব দায়িত্ব , সংসারের কাজ কর্ম একদম পোষায় না। তাই নির্ঝন্ঝাটে থাকবো বলে এখানে চলে আসা।

--- রচনা, তোর ও তো দুই ছেলে , তাহলে তুই এখানে কেন?

--- আমার দুই ছেলেই বিদেশে থাকে।আমি গিয়েছিলাম, কিন্তু থাকতে পারলাম না। আমার ভালো লাগেনি।আর এখানে, ছেলেরা আমাকে খালি বাড়িতে একা রাখতে সাহস পেল না। তাই এখানে আসা ।বাড়িটা আপাতত ভাড়া দিয়ে রেখেছে।

 ্যে্য্যে্য

---নন্দা, তোমার ছেলে তো এখানে ই থাকে, আর তোমার বৌমার ব্যবহার ও তো বেশ সুন্দর। তাহলে তুমি ঘর ছেড়ে এখানে কেন?

--- দেখো, আগেকার দিনে যৌথ পরিবারে কাজ যেমন বেশি ছিল , তেমনি গল্প করে সময় কাটাবার জন্য সম বয়সী মানুষ ও থাকতো প্রতিটি পরিবারে। কিন্তু এখন আমাদের একার সংসারে কথা বলার মতো মানুষ ই তো নেই। ছেলে , বৌমা নিজেদের কাজে ব্যস্ত, নাতি, নাতনি পড়াশোনা র ফাঁকে নিজেদের বন্ধু নিয়ে ব্যস্ত। তাছাড়া, আমার সাথে ওদের প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া কিই বা গল্প করার আছে? তাই ঘরে সবাই থাকলেও আমি তো যে কে সেই একা। এখানে বরন্ঞ্চ তোমাদের সবার সাথে গল্প করে, কথা বলে সময় কোথা দিয়ে কেটে যায়, টের ই পাই না।

--- নীলিমা অবাক হয়ে বলে, তোমাদের নাতি নাতনিদের জন্য কষ্ট হয় না? ওদের কাছে পেতে ইচ্ছে করে না ?

---- নন্দা বলে, সব কিছু একসাথে পাওয়া যায় না। শান্তিতে থাকবো বলে ঐ সুখটুকু ছেড়ে এই "শান্তিনিকেতন"এ আসা।

---- কি ব্যাপার ! আজ তোমরা ক্যারাম খেলছ না, গান গাইছো না, বলি কিসের এত গল্প চলছে? বলতে বলতে রাধা এসে যোগ দেয়।

--- আর বলো কেন , নীলিমা দির চোখের জলে আমরা ভেসে যাচ্ছি।

--- সে কি ! তুমি এখনো কাঁদছো? একমাস হয়ে গেল , এখনো এখানে মন বসাতে পারলে না?

--- তোমার আর কি? তুমি তো এখানকার অতিথি। সকালে আস, সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে যাও।

--- তা যা বলেছ বাপু। আমি সারাদিন তোমাদের সাথে সুন্দর সময় কাটাই, আবার রাতটা ছেলের বৌ আর নাতি নিয়ে ভালো ই আছি। এটা আমার সৌভাগ্য বলতে পার।কি জানি, গত জন্মে বোধহয় কিছু ভালো কাজ করেছিলাম।

--- আচ্ছা রাধা, যদি কিছু মনে না করো তাহলে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ? গৌরী বলে।

--- হ্যাঁ, বলো না কি জানতে চাও।

---- তুমি প্রতিদিন সকালে এখানে আস, আর সন্ধ্যায় ঘরে চলে যাও। এটার রহস্যটা কি ! বলবে?

রাধা বেশ একটু হেসে নিয়ে, ---রহস্য ই বটে। তারপর একটু থেমে, -- কি বলবো বল, আমার ছেলেটা তো অকালে চলে গেল । বউমা ছেলের চাকরি টা পেল। এখন ওকে অফিস যেতে হয়, নাতির স্কুলটা ও বাড়ি থেকে বেশ একটু দূরে। তাই বউমা নাতিকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার ঝামেলা টা আমায় দিতে চায়না। ওর স্কুলে র পাশেই একটা ক্রেচ আছে। স্কুল ছুটি হলে দারোয়ান ওকে ক্রেচে দিয়ে আসে। ওখানে আঁকা শেখে ।তারপর ওরাই ওখানে কখনো ফুটবল , কখনো ক্রিকেট, কখনো অন্য কোন খেলায় বাচ্চাদের ব্যস্ত রাখে। বউমা বলে, সারাদিন ঘরে একা একা থাকলে , ধীরে ধীরে আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বো। তাই আমায় এখানে রেখে যায় , তোমাদের সবার সাথে আমি সারাটাদিন যাতে আনন্দে থাকি। আর অফিস ফেরত নাতির সাথে আমাকেও ঘরে নিয়ে যায়।

---আমার এই "শান্তিনিকেতন" তাহলে সত্যিই সকলকে শান্তি দিচ্ছে, বলো ? বলে হাসতে হাসতে দেবীকা এসে দলে যোগ দেয়। 

--- হ্যাঁ, একমাত্র নীলিমা দি ছাড়া আমরা সবাই শান্তিতেই আছি।বলে রচনা।

--- আরে নীলিমা, সংসার আর একা হাতে ছেলে মানুষ করতে গিয়ে তো তুমি গান গাওয়া ভুলেই গিয়েছ। এখন তো তোমার অফুরন্ত সময়। গানটা আবার শুরু করছ না কেন? ওতে তোমার মনটাও ভালো থাকবে। দেবীকা বলে।

--- ওসব কবেকার কথা। এখন আর গলা দিয়ে গান বেরুবে না।

--- খুব বেরুবে। রচনা তোমার দায়িত্ব, নীলিমা কে পুরানো ফর্মে ফিরিয়ে আনার।

দেবীকা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল, তখনি ফোনটা বেজে ওঠে। দেবীকা ফোনটা অন করে দেখে, ছেলের ফোন ।--- এক মিনিট , প্লিজ। বলে ফোনটা রিসিভ করে, ---হ্যাঁ বাবাই বল ।

--- কেমন আছো মা ? 

--- আমি তো ভালোই আছি। এখানে আরো দুজন মেম্বার বেড়েছে।

--- মা, আমরা সামনের মাসে দিন দশেকের ছুটিতে আসছি। তোমার "শান্তিনিকেতন"এ আমাদের একটু জায়গা হবে তো?

---এ কেমন কথা ? জায়গা হবে না কেন ? তোমাদের ঘর তো তোমাদেরই আছে। ঘর যা বাড়িয়েছি , সব নীচে। ওপর তলায় তোমাদের ঘর , যেমন ছিল তেমনি আছে।

---- আমি মজা করলাম । তোমার বৌমা তো তোমার শান্তিনিকেতন দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তোমরা ভালো থেকো। সামনের মাসে দেখা হচ্ছে।

---- ঠিক আছে। তোরা সাবধানে থাকিস। 

ফোন রাখতেই রমলা জিজ্ঞেস করে , ---- কিরে , ছেলে আসছে ? একা না সবাই ?

--- সবাই আসছে । দিন দশেকের ছুটিতে।

গৌরী বলে, তাহলে তো ঐ কটাদিন তুই খুব ব্যস্ত থাকবি ।

--- ব্যস্ত থাকার কি আছে ? আমরা সবাই ছেলে, বৌ আর নাতি নিয়ে আনন্দ করবো। 

রচনা বলে , ওরা যেদিন আসবে , আমরা ফুল দিয়ে পুরো বাড়িটা কে সাজাবো। সামনেটায় আল্পনা দেব। ওদের সুন্দর করে অভর্থনা জানাতে হবে তো ।্

রমলা বলে , হ্যাঁ যা বলেছিস , ওদের সম্মতি না থাকলে আমরা এত আনন্দে থাকতেই পেতাম না। এটাতো ওদের প্রাপ্য।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract