ANURADHA BHATTACHARYA

Romance

2  

ANURADHA BHATTACHARYA

Romance

প্রতিশ্রুতি

প্রতিশ্রুতি

6 mins
418


বিয়ের পর পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে , কিন্তু রক্তিমা আর অনির্বানের এখনো কোন সন্তান হয়নি ।রক্তিমা মাঝে মাঝেই এ নিয়ে মন খারাপ করলেও অনির্বানের কোন দুশ্চিন্তা বা মন খারাপ ছিল না ।সে সারাদিন তার অফিস নিয়েই ব্যস্ত থাকত ।রক্তিমাও যে সারাদিন খালি বসে থাকত তা নয় । সে ও স্কুলে পড়াত ।সেখানে বাচ্চাদের সাথে সারাটা দিন তার ভালোই কাটত । সপ্তাহের শেষে ছুটির দিনে দুজনে মিলে হয় সিনেমা নয় কোথাও ঘুরতে যাওয়া এই নিয়ে ভালোই চলছিল । কিন্তু দিন পনের আগে অফিসের একটা প্রজেক্টের কাজে অনির্বানকে বাইরে যেতে হয়েছে। তাই এখন স্কুল থেকে ফেরার পর রক্তিমার যেন আর সময় ই কাটে না ।যদিও অনির্বান কোনদিন ই রাত আটটার আগে ঘরে ফিরত না। তবুও অনির্বান না থাকায় সারাটা সময় ই বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগে।

 সেদিন সন্ধ্যেবেলা রক্তিমার একা একা কিছুই ভালো লাগছিল না , সবে একটা গল্পের বই নিয়ে বসেছে , এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল ।রক্তিমা ভেবেছিল অনির্বান ফোন করেছে ।তাই খুব খুশিতে ভরে উঠেছিল মনটা ।কারণ গত দুইদিন অনির্বানের কোন ফোন আসেনি ।সেও চেষ্টা করে করে লাইন পায়নি ।তাই তড়িঘড়ি ফোনটা তুলে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে স্কুলের এক সিনিয়র শিক্ষিকা , রমলাদির গলা ভেসে এল ।--- " হ্যালো , "---

হঠাৎ রমলাদির আওয়াজে রক্তিমা বেশ অবাক হয়ে গেল । কি ব্যাপার ! রমলা দি ! এই সময় আমাকে কেন ফোন করছে ?

----- হ্যালো , রক্তিমা , শুনতে পাচ্ছ?

রক্তিমার ঘোর ভাঙে ।----- হ্যা রমলাদি , বলুন । কিব্যাপার ?

----- কি করছ ? ব্যস্ত কি ? 

---- না ,না , কিছুনা , এই বসে আছি ।

----- তোমার কি হয়েছে বলোতো?

----- কেন , আমার আবার কি হবে !

----- তুমি ছুটির পর ঘরে চলে গেলে! স্বরস্বতি পূজোর মিটিং ছিল আজ ।তুমি তো জানতে সেটা ।প্রতি বছর তো তুমিই সব দ্বায়িত্ব নিয়ে ছেলে মেয়েদের দিয়ে পূজোর সব কাজ করাও । এবার মিটিং এই থাকলে না ! ?

------ সরি রমলাদি , সরি । মিটিং এর কথা আমার একদম মনে ছিল না। কি করে যে ভুলে গেলাম , নিজেই জানিনা ।আসলে আমার ক্লাশের একটা ছাত্রীর মাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম । তিনি আজ দেখা করতে এসেছিলেন ।ওনার সাথে কথা বলতে বলতে বেড়িয়ে চলে এসেছি ।সরি , মিটিং এর কথাটা মাথা থেকে একদম বেড়িয়েই গিয়েছিল ।ঠিক আছে আমি কাল স্কুলে এসে এব্যাপারে বড়দির সাথে কথা বলে নিচ্ছি।

---- তুমি কবে থেকে এত ভুলো মনের হলে? এনিওয়ে ।সব কিছু ঠিক আছে তো? তোমার শরীর---

------ হ্যাঁ , হ্যাঁ , আমি একদম ঠিক আছি।  

------ তাহলে ঐ কথাই রইল , তুমি কাল স্কুলে এসেই বড়দির সাথে কথা বলে নেবে।রাখছি । বলে রমলাদি ফোন রাখলে ,রক্তিমা ফোন হাতে নিয়েই বসে থাকে । হঠাৎ তার মন চলে যায় অনেক গুলো বছর পিছনে ।

 " স্বরস্বতী পূজো ।"


তখন ক্লাশ টেন এ পড়ে ।স্বরস্বতী পূজোয় নাচের স্কুলে পূজোর কাজ , ফাংশান নিয়ে খুব মেতে ছিল ।আর সেই পূজোতেই অনির্বানের সাথে প্রথম দেখা , প্রথম আলাপ ও প্রথম প্রেমে পড়া । পূজোর সকালে চার পাঁচজন মেয়ে মিলে ওরা যখন পূজোর জোগাড়ে ব্যস্ত তখন অনির্বানরাও ডেকরেশন এর সাথে সাথে গুন গুন করে গান ও সাথে নিজেদের মধ্যে হাসি ঠাট্টা চালিয়ে যাচ্ছিল ।এই প্রথম রক্তিমা অনির্বানকে দেখে ।খুব হাসি খুশি , দুষ্টুমিতে ভরা ছেলেটিকে রক্তিমার ভালো লেগে যায়। কোন না কোন আছিলায় অনির্বানের সাথে আলাপ করার এক প্রবল ইচ্ছা মনে জাগে। পূজোর কাজ করতে করতে , অন্জলী দেওয়া , প্রসাদ বিতরন করা , ভোগ খাওয়ার মাঝে মাঝে যতবার রক্তিমা অনির্বানের দিকে তাকিয়েছে , দেখেছে অনির্বান ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। একটা অস্বস্তি বোধের সাথে সাথে কিছুটা ভালো লাগাও কাজ করেছে। যত বার ই চোখা চোখি হয়েছে একটা ছোট্ট মিষ্টি হাসি অনির্বান তাকে উপহার দিয়েছে ।উত্তরে রক্তিমাও অবশ্য প্রতিবার ই হাসির প্রতি উত্তর দিয়েছে।সকাল টা এইভাবেই দৃষ্টি আর হাসি বিনিময় দিয়েই আলাপের শুভারম্ভ হয়েছে।   

 বিকেলে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।এই প্রথম রক্তিমা জানতে পারল যে অনির্বান গীটারের ছাত্র। অথচ সারা সকাল কাজ আর দুষ্টুমির সাথে সারাক্ষন গুন গুন করে গান করতে দেখে রক্তিমা ভেবেছিল অনির্বান গানের ক্লাশের ছাত্র। তবে অনির্বানের গীটারের  বাজনাতে ও সে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে অনির্বান এক কাঠি ওপরে ।রক্তিমা গানের স্কুলে অনির্বানকে আগে কখনো না দেখলেও , অনির্বান অনেক আগেই রক্তিমাকে ও তার নাচ দেখেছে , এবং অনেক আগে থেকেই ও মনে মনে রক্তিমাকে ভালোবাসে ।শুধু আলাপ ও প্রপোজ করার সুযোগ খুঁজছিল।তাই আজ আর সে সুযোগ হাত ছাড়া হতে দিল না।রক্তিমা যখন স্টেজে নাচ করছিল , তখন থেকেই এক তোড়া গোলাপ হাতে নিয়ে রক্তিমার স্টেজ থেকে নাবার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল।রক্তিমা নাচ শেষে স্টেজ থেকে নাবতেই তার হাতে গোলাপের গুচ্ছটা দিয়ে ------- "খুব ভালো নাচ করেছ ।আমার সারাটা জীবনে এমনি করে নেচে বেড়াবে ?" রক্তিমা কিছু বুঝতে না পেরে --- "মানে !" অনির্বান এক গাল হেসে বলে , ---- "একা একা তো আর সারা জীবন নেচে বেড়াবে না।কারো না কারো জীবনে গিয়ে তো নাচবে ? তাই জিজ্ঞেস করছি , আসবে  আমার জীবনে ? সারাটা জীবন নাচতে এতটাই ?" এমন ভাবেও কেউ প্রপোস করতে পারে এটা রক্তিমার ধারনার বাইরে ছিল ।তাই সে বেশ খানিকটা হতবাক হয়ে কোন উত্তর না দিয়ে অনির্বানের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল ।

----- " কি হ'ল , কিছু বলো । নাকি ' মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ ' বুঝে নেব ? " এতটা অবশ্য রক্তিমা আশা করেনি। তবু এবার রক্তিমা নিজেকে একটু ধাতস্ত করে নিয়ে ---- "তাই যদি হয় , তাহলে কি সারা জীবন এই বিশিষ্ট দিনে এই রকম ই গোলাপের তোড়া পাওয়া যাবে ? " অনির্বান ও ভাবেনি যে এক কথায় রক্তিমা রাজি হয়ে যাবে ।তাই খুব খুশি হয়ে --- " একদম ।প্রতিশ্রুতি দিলাম । "


 

   এরপর আরো বছর কয়েক পড়াশোনা চলা কালিন চুটিয়ে প্রেম ।তারপর অনির্বান চাকরী পেলে বছর পাঁচেক আগে তাদের বিয়ে ।গত বছর পর্যন্ত প্রতি বছর ই অনির্বান ঠিক মনে করে স্বরস্বতি পূজোর দিন এক গুচ্ছ গোলাপ রক্তিমাকে উপহার দিয়েছে।  

       বিয়ের পর পরই অনির্বান নিজের 

অফিসের কাজে ও ট্যুরে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে রক্তিমার ঘরে আর সময় ই কাটতে চায় না। প্রথম প্রথম এই নিয়ে খুব ই মন খারাপ হোত ।মাঝে মাঝে অনির্বানের সাথে অশান্তি ও হোত ।কিন্তু অ্নির্বানের কাছে কোন উপায় ছিল না। ফলে বিয়ের বছর খানেকের মধ্যেই নিজের একাকীত্ব কাটাতে রক্তিমা একটা স্কুলে চাকরী নেয় । এতে অনির্বান ও রক্তিমা দুজনেই মানসিক শান্তি ও আনন্দ খুঁজে পায়।

  এত বছর সব ভালোই চলেছে ।অনির্বান প্রতি বছর স্বরস্বতি পূজোর দিন সকালে ঠিক এক গুচ্ছ গোলাপ রক্তিমাকে উপহার দিয়েছে ।কিন্তু এবার ! এবার তো সে শহরেই নেই ।তার উপর কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত যে দুদিন ফোন ও করেনি । রক্তিমা ও কোন যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি , তাই অনির্বান যে ঠিক কবে ফিরবে সেটাও জানতে পারছেনা। ফলে এটাও নিশ্চিত যে এবারআর গোলাপ পাওয়া হবে না। এইসব ভাবতে ভাবতে মন খারাপ করে একসময় সে ঘুমিয়ে পড়ে ‌।

   পরদিন স্কুলে গিয়ে যথারীতি পূজোর সব দায় দ্বায়িত্ব বুঝে নেয় এবং যথা সময়ে স্বরস্বতি পূজোর দিন হৈ হৈ করে পূজোর সব কাজ , বাচ্চাদের নিয়ে আনন্দ , খাওয়া- দাওয়া সেরে বিকেল প্রায় পাঁচটা নাগাদ ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় , এবং ঘুমিয়ে পড়ে‌। তখন আর তার অনির্বানের প্রতিশ্রুতির কথা মনে ও থাকে না আর তা নিয়ে মন খারাপ ও হয় না ।সন্ধ্যে ছটা নাগাদ ডোর বেল বাজায় ঘুম ভেঙে যায় ।কাঁচা ঘুম ভাঙায় একটু বিরক্ত হয়েই দরজা খুলতে যায় ।দরজা খুলে দেখে কেউ একজন একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে ।তারপর একটু একটু করে মুখের সামনে থেকে গোলাপটা সরালে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গোলাপগুলো সমেত ই অনির্বান কে জড়িয়ে ধরে।গোলাপগুলো অনির্বান আর রক্তিমার বুকের মধ্যেই চটকে যায় । রক্তিমা আপ্লুত হয়ে বলে --- "তুমি ! "

---- " প্রতিশ্রুতি বদ্ধ।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance