অপত্য
অপত্য
"Order, order " ------
অশান্ত কোর্ট রুম কে শান্ত করতে জজ্ সাহেব বার তিনেক হাতুড়ি টা টেবিলে ঠুকে Adv.মি. স্বরূপ কে--"you proceed "-----
"Thank you my lord." বলে স্বরূপ স্বাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো চন্দনের কাছে এগিয়ে গিয়ে তার চোখের উপর চোখ রেখে একটু ক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর উল্টোদিকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাকে দেখিয়ে প্রশ্ন করে, --- "ওই মহিলাকে আপনি চেনেন?"
স্বরূপের প্রশ্নের উত্তরে চন্দন মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় যে সে মহিলাকে চেনে।
Adv.স্বরূপ প্রশ্ন করেন, ---- কিভাবে চেনেন?
------"উনি আমার বাড়িতে থাকেন।"
----"থাকেন বলতে? ভাড়ায় থাকেন? না আপনার আত্মীয়? I mean কোন পারিবারিক সম্পর্ক সূত্রে উনি আপনার বাড়িতে থাকেন?"
---- "না , কোন পারিবারিক সম্পর্ক নেই "
------। ভালো করে ভেবে বলুন। উনি কিন্তু আপনাকে ওনার একমাত্র সন্তান বলে দাবি করেছেন।
চন্দনের এডভোকেট মি.দত্ত লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে জজ্ সাহেব নিজেই চন্দন কে প্রশ্ন করেন, --- " বলুন মি.চন্দন, ইনি কি সত্যিই আপনার 'মা' নন?"
চন্দন নন্দা দেবীর দিকে না তাকিয়ে , মাথাটা নিচু করে, ---" না, উনি আমার'মা' নন।"
অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা নন্দা দেবী এতক্ষন শান্ত দৃষ্টিতে উল্টো দিকে র কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা চন্দন কে দেখছিল। এতক্ষনের কোর্টের বাক্যালাপ কিছুই তার কানে পৌঁছায়নি, কিন্তু চন্দনের --"না, উনি আমার মা নন" -- কথাটা শুধু কানে নয় একেবারে মর্মে গিয়ে বিঁধল। নিজের অজান্তেই এক অস্ফুট আর্তনাদ করে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারায়।
দীর্ঘ বারো বছর বিচারকের আসনে বসে জজ্ সাহেব জমি বা সম্পত্তি সংক্রান্ত বহু কেস দেখেছেন এবং তার সমাধান ও করেছেন। কিন্তু আজকের এই কেস তাঁকে বিভ্রান্ত করে তুলল। এমন ঘটনার সম্মুখীন এর আগে কখনও তিনি হননি। বিভ্রান্তি জমি বা সম্পত্তি র মালিকানা নিয়ে নয়, এই কেস এখন মোড় নিয়েছে অন্য এক নাটকীয় পর্যায়। আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা এক নিঃস্বহায় , অবলম্বনহীন বিধবা মহিলা দাবী করছেন - স্বাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা, তাঁর বিরুদ্ধে কেস ফাইল করা যুবকটি তাঁরই একমাত্র সন্তান। অন্যদিকে যুবকটির অভিযোগ, কোন এক সময় দয়াবশঃত সে ওই মহিলাকে তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিল, আজ সেই আশ্রিতা মহিলা এই বাড়িটা নিজের বলে দাবি করে, জবরদস্তি বসে আছে।
বিচারক নিজেই যখন বিভ্রান্ত, তখনই মহিলা আসামীর কাঠগড়ায় জ্ঞান হারায়। এরপর জজ্ সাহেব, মহিলার চিকিৎসার ব্যবস্থা র আদেশ দিয়ে , যতদিন না মহিলা সুস্থ হচ্ছেন ততদিনের জন্য কেস মুলতবি রাখলেন।
********************************************************************
চলুন, এই ফাঁকে আমরা একটু অতীতে ঘুরে আসি। বছর ত্রিশ আগের কথা, যখন নন্দা দেবীর বয়স সাতাশ, সদ্য বিবাহিতা। স্বামী, স্ত্রী ও রুগ্না শাশুড়ি নিয়ে ছোট্ট সংসারে প্রাচুর্য না থাকলেও আনন্দ ছিল। বিয়ের বছর ঘোরার আগেই শাশুড়ি গত হন।এরপর তাদের সংসার আলো করে আসে তাদের সন্তান। ছোট্ট শিশুকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মনে অনেক আশা, অনেক বড় বড় স্বপ্ন! কিন্তু এই সুখ সম্পূর্ণ ভাবে উপভোগ করার আগেই নন্দা দেবীর সুখের সংসার তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। এক সন্ধ্যায় অফিস থেকে ঘরে ফেরার পথে এক এক্সিডেন্ট এ নন্দা দেবীর স্বামী বিমলবাবু (spot dead) মারা যান। যখন তাঁদের ছেলের বয়স মাত্র দু বছর। নন্দা দেবীর পাশে দাঁড়াবার জন্য তার বাপের বা শ্বশুর বাড়ির তরফে কেউই ছিল না। তাই ছোট্ট শিশুর ভবিষ্যতে র কথা ভেবে, নন্দা দেবী নিজেকে শক্ত করে উঠে দাঁড়ায়, আর শুরু হয় তার সঙ্গী বিহীন একা নাবিক, জীবনের নাও বেয়ে চলা।
ছোট বেলা থেকেই সেলাইয়ের শখ ছিল। বিয়ের পর তাদের জীবনে যখন খোকা আসে তখন সেই শখেই ছুঁচ- সুতোয় খোকার জন্য জামা বানাতে দেখে বিমলবাবু নন্দা দেবীকে একটা হাত মেশিন কিনে দেন। আজ সেই মেশিনটাই তার জীবনের পাথেয় হয়ে উঠল।
নন্দা দেবীর হাতের কাজ খুব ভালো, তাই পসার জমতে সময় নিলনা। এর ই সাথে সাথে নন্দা দেবী তার ছোট্ট একফালি জমিতে আগে থেকেই নারকেল, পেয়ারা গাছ লাগিয়েছিল, এখন আরো দু চারটে সব্জির গাছ ও লাগায় এবং এই ফল আর সব্জি প্রতিবেশীরা তার থেকে কিনে নিয়ে যায়। এই দিয়েই মা- ছেলের সংসার কোনমতে চলে যায়।
এরপর ছোট্ট খোকা একটু একটু করে বড় হতে থাকে। শুরু হয় স্কুল যাওয়া। এখন সংসারের কাজের সাথে জুড়েছে খোকার পড়াশোনা, ফলে সময় কোথা দিয়ে কেটে যায় নন্দা দেবী টেরও পায় না। কিন্তু মুশকিল হ'ল সপ্তম শ্রেণী তে এসে অংক নিয়ে। উঁচু ক্লাসের অংক নন্দা দেবীর আয়ত্তের বাইরে। তাই এবার সে চিন্তায় পড়ে যায় । টিউশন এ দিতে হবে, কিন্তু তার ফিস্ কোথা থেকে আসবে!
কথায় বলে "যার কেউ নেই তার ভগবান আছে।" কিন্তু অলক্ষ্যে থাকা ভগবানকে কে দেখেছে! তাই, বিপদে যে পাশে এসে দাঁড়ায় সেই 'ভগবান' । নন্দার ও তেমন এক ভগবান জুটে গেল।
ক্লাস ফাইভে যখন খোকা, হাইস্কুলে যায় তখন তার একটা ভালো বন্ধু হয়, 'স্বরূপ'। ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্ব দৃঢ় হয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ও। স্বরূপের ও বাবা নেই, তবে জ্যেঠামশাই আছেন। আর আছেন জ্যেঠতুতো দিদি ও স্বরূপের মা। স্বরূপের বাড়িতে সবাই খোকাকে খুব ভালোবাসেন। স্বরূপের জ্যেঠামশাই স্বরূপের সাথে খোকার পড়াশোনা দেখানোর দায়িত্ব টা নিয়ে নিলেন।
খোকা আর স্বরূপ দুই হরিহর আত্মা। পড়া, খেলা, কোথাও যাওয়া, সবই একসাথে। দেখতে দেখতে হায়ার সেকেন্ডারি ফাইনাল পরীক্ষা ও হয়ে গেল। খোকা ফার্স্ট ডিভিশন এ তিনটে সাবজেক্টে লেটার নিয়ে স্কুলের নাম উজ্জ্বল করে । নন্দা দেবীও আনন্দে চোখের জল ধরে রাখতে পারে না। স্বরূপ ও ফার্স্ট ডিভিশন নিয়েই পাশ করে। তবে এরপর দুই বন্ধুর রাস্তা দুই দিকে চলে যায়।
স্বরূপ তার জ্যেঠামশাই এর পথ অনুসরণ করে 'ল' পড়তে যায়। আর খোকা সাইন্স এ এডমিশন নেয়।
ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন হতে থাকে । দুই বন্ধুর আগের মত প্রতিদিন দেখা হয়না। যে যার নিজের জগতে ব্যস্ত। তবে দুই মা'র বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়ে ওঠে। যে যার মনের কথা, সুখ-দুঃখ একে অপরের সাথে ভাগ করে মন হাল্কা করে।
এমনই একদিন, নন্দা দেবী, সীমা , অর্থাৎ স্বরূপের মাকে বলে যে তার খোকা নাকি ধীরে ধীরে বদলে । আগের মতো ' মা, মা ' করে তার কাছে আসে না। ঘরের থেকে বাইরেই বেশিরভাগ সময় কাটায়। শুনে সীমা হেসে বলে, ছেলে বড় হয়েছে সেটা ভুলে যাচ্ছ কেন। এই বয়সের ছেলেমেয়েরা ঘরে বা মায়ের আঁচলের তলে থাকে নাকি। এটাতো স্বাভাবিক। কিন্তু নন্দা দেবীর মন মানেনা।
ঐদিকে সত্যি সত্যিই খোকা তার মায়ের কাছ থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছিল। কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় থেকে তারই এক ক্লাস -মেটের সাথে প্রেমে আবদ্ধ হয়। প্রথম দিকে খোকা রিনিকে পছন্দ করলেও খুব একটা পাত্তা দিতে চাইত না। কারন স্ট্যাটাস। রিনি খুব ধনী ঘরের একমাত্র সন্তান। কিন্তু রিনি সব কিছু উপেক্ষা করে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই স্ট্যাটাস এর কারনেই খোকা মা'র কাছে রিনির কথাটা বার বার বলতে চেয়েও বলতে পারেনি।
গ্ৰাজুয়েশন শেষ হওয়ার সাথে সাথেই রিনির বাবা খোকাকে নিজের কোম্পানিতে নিয়ে নেন এবং নিজে হাতে একটু একটু করে সমস্ত কাজ শেখাতে থাকেন। সব কিছুই ভালোই চলছিল, শুধু মাকে রিনির কথাটা কিছুতেই খোকা বলে উঠতে পারছিল না। স্বরূপ দু একবার -- "কাকিমাকে তুই যদি নাই বলতে পারিস তাহলে আমি বলবো কি?" কিন্তু তাতেও খোকার আপত্তি। বলে --" "না, না, আমি না বলে তোর কাছ থেকে শুনলে মা আরো দুঃখ পাবে ।আমি নিজেই মাকে বলবো। আসলে রিনি এত বড় ঘরের মেয়ে, মা ওকে কিভাবে নেবে! আমার কেন জানিনা ভয় হচ্ছে , মা যদি মেনে না নেয়!" স্বরূপ বলে, "সারাটা জীবন যে মানুষ টা শুধু তোর খুশি আর তোর ভালো চিন্তা করে কাটিয়ে এল সে মানুষ টা তোর ভালোবাসা কে মেনে নেবেনা এটা ভাবলি কি করে? দেখবি কাকিমা ঠিক মেনে নেবে।" এরপরও খোকা মা'কে রিনির কথাটা বলে উঠতে পারনা।
কিন্তু সময় তো কারো জন্য বসে থাকে না। হঠাৎই একদিন অফিস পৌঁছে খোকা দেখে রিনির বাবা অফিসেই এডভোকেট ডেকে তার আর রিনির রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। প্রশ্ন করতে রিনির বাবা জানাল আগামীকাল তিনি রিনির মাকে নিয়ে ইন্ডিয়া র বাইরে যাচ্ছেন। হঠাৎই একটা ইম্পরটেন্ট কাজ এসে যাওয়ায় যেতে হচ্ছে। ফিরতে দেরি হবে। তাই যাওয়ার আগে তিনি খোকার হাতে তাঁর কোম্পানিটা দিয়ে যেতে চান। এবং তার কোম্পানি হস্তান্তর করার আগে এই রেজিস্ট্রেশনটাও জরুরী।
ওইদিন সন্ধায় রিনি খোকার সাথে তার শ্বশুরের ভিটেয় আসে। আচমকা এই ধাক্কায় নন্দা দেবী আহত হলেও ছেলে ও নতুন বৌ কে সেটা বুঝতে না দেবার চেষ্টা করেছেন। নতুন বৌ এর বেশ ভূষা, আচার- আচরন কোনটাই তার মোটেই পছন্দ ছিল না, কিন্তু সেটা কখনোই তিনি প্রকাশ করেন নি। তবুও অত বড় ঘরের মেয়ে কুঁড়ে ঘরে নিজেকে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারল না। স্বামী কে সাথে নিয়ে নিজের বাপের প্রাসাদে ফিরে যায়।দুঃখ পেলেও নন্দা দেবী মেনে নেন। স্বরূপের মা সীমা নতুন বৌএর এই চলে যাওয়া নিয়ে সমালোচনা করলে নন্দা বলেন, --- " অত বড় ঘরের মেয়ে আমার এই ঘরে ওর কষ্ট তো হবেই ।আর বিয়ের পর স্বামী ছাড়া থাকবেই বা কেন? ওরা সুখে থাক, আনন্দে থাক।খোকা তো আসে মাঝে মাঝে, এতেই আমি খুশি।"
কিন্তু এই খুশি ও বেশিদিন টিকল না , যখন একদিন নন্দা দেবীর হাতে কোর্টের চিঠি এল। নন্দা দেবী কিছুই বুঝতে না পেরে ডেকে পাঠায় স্বরূপ কে। স্বরূপ চিঠি পড়ে জিজ্ঞেস করে ---"চিঠিতে তোমাকে এই বাড়ি খালি করতে লিখেছে। তুমি কি কোন প্রোমোটার কে বাড়িটা দেবার কথা বলেছ? কোন কাগজে সই করে দিয়েছ?" নন্দা অবাক হয়ে যায়। তারপর বলে কিছুদিন আগে চন্দন এসেছিল। বলল, --- " এই বাড়িটা অনেক পুরনো হয়ে গেছে , ভেঙে পড়ছে। তুমি এত কষ্ট করে এখানে থাকার চেয়ে, এটা প্রোমোটার কে দিয়ে দিই, তাহলে তুমি ও একটা ফ্ল্যাট পাবে । ফ্ল্যাট বাড়ি হয়ে গেলে সেখানে তোমাকে একা থাকতে হবেনা, সেখানে অনেক লোক থাকবে। তাতে তোমার ও ভালো লাগবে। এরকম একা, একা, পড়ে থাকতে হবে না।" কথাগুলো সীমা আর স্বরূপ কে জানাতেই তারা চমকে উঠল। জিজ্ঞাসা করল তুমি রাজি হয়েছ!? নন্দা বলল, না রে, আমি বলেছি, আমি আর কতদিন বাঁচব? আমি চলে গেলে তখন প্রোমোটার কে দিস। আমি যে কদিন আছি আমার স্বামীর স্মৃতি নিয়ে আমায় থাকতে দে।" স্বরূপ বলল, কিন্তু এই বাড়ি খালি করার জন্য কোর্ট থেকে তোমায় চিঠি দিয়েছে। ঠিক আছে তুমি কিছু ভেব না। আমি চিঠিটা নিয়ে যাচ্ছি।আমি এর উত্তর দিয়ে দেব।
******************************************************************************************
অসুস্থ নন্দা দেবীর জ্ঞান ফিরলেও সপ্তাহ পেরিয়েও সে সুস্হ হয়ে ওঠেনি। হাসপাতালে থাকতে রাজি না হওয়ায়, স্বরূপ তাকে তার ঘরেই এনে রেখেছে।সীমা দেবী বার বার স্বরূপকে অনুরোধ করে খোকাকে একটা খবর দেবার জন্য।কারন নন্দা দেবীর শরীর ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই সময় খোকার আসা খুব প্রয়োজন। স্বরূপ রাজি হয়না। বলে কোন দরকার নেই।এমন সময় হঠাৎ ই একদিন ঝড়ের বেগে খোকার প্রত্যাবর্তন। দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে দুই বন্ধুর খুব কথা কাটাকাটি হয়। স্বরূপ প্রথমে চন্দন ওরফে খোকাকে ঘরে ঢুকতেই দেয়না ।বলে ---"যা কথা বলার আছে সব কোর্টে হবে।" চন্দন বলে ----"কিছু কথা নয়, আমি শুধু একবার মা'র সাথে দেখা করব।আমায় ক্ষমা চাইতে একটা সুযোগ দে।"-----' মা '! কে মা? তুই তো তাকে কোর্টে অস্বীকার করেছিস ।এখন ক্ষমা চাইতে এসেছিস? আর এতদিন ই বা কোথায় ছিলিস?" -----" বলবো, সব কথা পরে বলব, আগে আমায় মা'র কাছে একবার যেতে দে।" এর ই মধ্যে সীমা হন্তদন্ত হয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে স্বরূপ কে ডাকতে, দেখে চন্দন অর্থাৎ খোকা এসেছে।---" তুই এসেছিস , শিগগিরই আয়। নন্দা কেমন করছে।"
সবাই দৌড়ে ভেতরে আসে। চন্দন মায়ের পায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে, আর কাঁদতে থাকে।" আমায় ক্ষমা করে দাও। মা আমায় ক্ষমা করে দাও।" নন্দা খোকাকে তার কাছে ডাকে।সীমা খোকাকে নন্দা র পায়ের কাছ থেকে তুলে তার মায়ের কাছে নিয়ে যায়। নন্দা বালিসের তলা থেকে একটা কোর্টের কাগজ বার করে খোকার হাতে দেয়।খোকা জিজ্ঞেস করে "এটা কি?" স্বরূপ বলে , --" তুই কোর্টে কাকিমা কে তোর মা' বলে অস্বীকার করেছিস। তাই কাকিমা মারা গেলে এই সম্পত্তি তুই পাবিনা। সেই জন্য কাকিমা এই জমি জায়গা সব উইল করে তোর নামে করে দিয়েছে।" চন্দন কেঁদে ওঠে, বলে এসব কিছুই চাই না মা, আমি শুধু তোমাকে চাই। তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো। "
নন্দা দেবীর হাতটা চন্দনের মাথা ছুঁয়ে ধপ্ করে নীচে পড়ে গেল। কেউ কিছু বোঝার আগেই সীমা চিৎকার করে উঠল " ন --ন--দা" খোকা মুখ তুলে তাকাতেই সীমা বললো, "নন্দা নেই, নন্দা চলে গেছে।" চন্দন "মা" বলে নন্দার বুকে আছড়ে পড়ল ।