বোধন
বোধন


-"বোদু ও বোদু "
তনু ডাকছে বোদং কে।বোদং আর তনু দুই বন্ধু ।তনু গ্রামের স্কুলমাস্টারের মেয়ে আর বোদংরা ভিটেমাটিহীন ,একজায়গা থেকে আর এক জায়গায় ঘুরে বসতি বানায়।আজ প্রায় চার পাঁচমাস হল বোদংরা এ গ্রামে এসেছে।দুজনেরই বয়স আনুমানিক পাঁচ ছয়বছর হবে।
একদিন বোদং পাখি মারার জন্য গুলতি ছুঁড়ছিল,তনু তখন ওই পথ ধরে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল।এমনিতে ব্যাধের ছেলে হলেও তাক ঠিক নেই বলে বাকী ব্যাধের ছেলেরা ওকে পাখি শিকার করতে নিয়ে যায় না।সেদিন একজায়গায় অনেকগুলি টিয়াপাখি থাকায় ভাগ্যক্রমে একটা টিয়াপাখি গুলতির ঘায়ে আহত হয়ে পড়ে যায়।বোদং টিয়াপাখিটা নিয়ে আসে ।তনু টিয়াপাখি দেখে লাফাতে লাফাতে ছুটে আসে,বলে
-আমাকে টিয়াপাখিটা দেবে?
বোদং তাড়়াতাড়ি কথা বলতে পারে না ,কথার মধ্যে একটা জড়তা ভাব আছে মানে একটু তোতলায়
বোদং উত্তর দেওয়ার আগেই তনু টিয়াপাখিটা বোদং এর হাত থেকে ছিনিয়েই নেয় প্রায়।তারপর বলে
-তোমার নাম কী?
বোদং তোতলাতে তোতলাতে বলে
-বো-বোদ-ং বোদং
-বোদং?
নাম শুনে হাসতে থাকে তনু ।হাসতে হাসতে পেট ফেটে যায় এমন অবস্থা।বোদং অপ্রতিভ হয় । বোদং পালিয়ে যেতে চায় কিন্ত তনু ওর হাতটা টেনে একটা চকলেট গুঁজে দেয়।বলে
-আচ্ছা আমি তোমাকে বোদু বলে ডাকবো ঠিক আছে?
বোদং ও মাথা নেড়ে সন্মতি জানায়
এভাবেই ওদের বন্ধুত্ব শুরু হয়।এখন প্রতিদিন বিকেলবেলা তনু , বোদুর কাছে গিয়ে গুলতি চালানো শেখে।একদিন তো গুলতি চালাতে গিয়ে বুড়ো আঙুলে প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছিল ,ফুলেও উঠেছিল অনেকটা।বাড়িতে অবশ্য় পাথর দিয়ে ব্যথা পেয়েছে বলে ধামাচাপা দিয়েছিল তনু।
বোদং এর থেকে অনেক ভালো গুলতি ছোঁড়া শিখেছে তনু,টিপ ও দারুন।সেদিন তনু দিঘির পাড়ে বোদং এর পাশে বসে গুলতি ছুঁড়ছিল খেজুর গাছটার দিকে। হঠাৎ ভাবল বোদুর মত যদি ওরও যদি একটা গুলতি থাকত!! তবে চিন্তা নেই বোদুকে বললে সে নিশ্চয়ই এনে দেবে,তারপর তনু সেই গুলতি দিয়ে পাশের বাড়ির পেয়ারা চুরি করে খাবে ,পেঁপে চুরি করে খাবে......
হয়ত না করতে পারবে না বোদং কারন তনু ও তো বোদং এর জন্য চুপিচুপি বাড়ি থেকে কাগজে করে পোলাও,পায়েস ইত্যাদি চুরি করে এনে খাওয়ায়।
-ব
োদু আমাকে একটা গুলতি এনে দিবি?
- কে -কে -কেন?
- আমিও তোর মত গুলতি ছুঁড়ব,আম পাড়ব
- না, ব-ব বকা দে-বে
-তাহলে কিন্ত আর পায়েস,পোলাও আনবো না
রাগ করে তনু
-আচ-ছা আ-আনব
তনু এবার খুব খুশি হয়।
তাই বোদুকে ডাকছে তনু ,বোদু কি বাড়ি নেই এদিক ওদিক চিৎকার করেও কোনো খোঁজ না পেয়ে রাগ হয় তনু ।আজ তনুর জন্য গুলতি আনার কথা ছিল বোদং এর। রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছে তনু , পাশের জমিতে কাশফুলের বাগান হয়েছে যেন।নীল আকাশের নীচে সাদা মেঘের মত দুলছে কাশফুল।কাশফুল দেখে খুব খুশি হল তনু,কাশফুল ছিঁড়তে লাগল কিন্ত ছোটো হাত দিয়ে একটা ছোটো কাশফুল থাড়া আর একটাও ছিঁড়তে পারল না তনু।
হঠাৎ কাশফুলের জঙ্গল থেকে একটা কালোমতো লোক বের হয় আর দু চারটে বড় বড় কাশফুল ছিঁড়ে দেয।
-আরো ফুল লাগবে ? তনুকে জিজ্ঞেস করে লোকটা ,তনু মাথা নাড়ায় লোকটা বলে
-এদিকে এসো এদিকে অনেক বড় বড় ফুল আছে
লোকটা ঘন কাশফুলের বাগানের ভিতরে ঢুকে যায় আর তার পিছুপিছু তনুও হাঁটতে থাকে।হঠাৎ লোকটা তনুকে চেপে ধরে হাত বেঁধে দেয় আর নিজে উলঙ্গ হতে শুরু করে।
তনু ভয় পেয়ে যায় চিৎকার করে ওঠে
-বাঁচাও ,বাঁচাও
লোকটা এবার রুমাল গুঁজে দেয় তনুর মুখে । লোকটা প্যান্ট খুলে এগিয়ে যাচ্ছে ,তনু চিৎকারও করতে পারছে না ,কাঁদতে লাগল তনু।লোকটা তনুর শরীরে হাত দেবে এমন সময়.......
একটা দুলতির পাথর এসে সজোরে আঘাত করল লোকটার কপালে ,কপাল ফেটে রক্ত বেরুতে লাগল।লোকটা কপালে হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ নেই।তারপর তনুর দিকে তাকিয়ে দেখে তনুও নেই!! তারপর চারপাশ থেকে পাথর বৃষ্টি শুরু হয় লোকটাকে লক্ষ্য করে।লোকটার চোখমুখ আঘাতে কেটে যায়,দেখে তার জামাকাপড়ও নেই!!।বাইরেও বেরুতে পারছে না ।
বোদং আর তনু লুকিয়ে গুলতি ছুঁড়ছে লোকটার দিকে।বোদু ঠিক সময়েই গুলতিটা এনে দিয়েছে। আঘাতের চোটে লোকটা অজ্ঞান হয়ে গেল।বাতাসে আগমনীর সুর বইছে
"ইয়া দেবী সর্বভুতেষু ...."
https://kagjkalom.blogspot.com/2019/04/blog-post_30.html