.....বন্ধু....
.....বন্ধু....
ফুর ফুর করে একটা মিষ্টি বাতাস সকাল থেকে বয়ে যাচ্ছে আর তার সাথে একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে ।পাখিদের কাকলি,পুকুরে মাছ আর হাঁসের খেলার সাথে সাথে গোলাপি রঙের পদ্ম ফুলের সমারোহ।
আরে ওই যে দূরে পুকুরের ধারে কদম গাছ টায় ওটা কী দেখা যাচ্ছে? ওমা ওকে চিনতে পারছো না বুঝি? ও তো আমাদের সেই কদম গাছের ছোট্ট কাঠবেড়ালি। কিন্তু ও কী করছে? ও তো কদম গাছের ঝুড়িতে বসে দোল দোল দুলুনি খেলছে আর গাছের সাথে গল্প করছে।
রোজ সকাল সকাল ওই ছোট্ট কাঠবেড়ালি টা তোমাদের সবার আগে উঠে ওই গাছের সাথে গল্প করে আর নিজের মনে আস্তে আস্তে দোল খায়। অমন মিষ্টি একটা দৃশ্য না দেখে থাকা যায় বুঝি?
তবে সেই ছোট্ট কাঠবেড়ালিটার আরো বেশ কিছু বন্ধু ছিল অবশ্য তারাও সেই পুকুরের ধারে কাছেই থাকে। তারা কে জানতে চাও তো? তারা আর কেউ না তোমাদের মতই ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটা বাচ্চা, টিপাই, ময়না আর সোনাই আর তাদের দলে যোগদান করেছে আরো একটা পুষি, একটা ছোট্ট ইঁদুর আর একটা মিষ্টি সাদা খরগোশ। সকলে মিলে রোজ সেই পুকুরের ধারে এসে খেলা করে, গল্প করে আর দোল খায়।
বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। এমনই একটা মিষ্টি সকাল। কিছু লোক সেখানে এসে নিজেদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছিলো। কিছুক্ষন পরে তাদের দলের সেই ছোট্ট ইঁদুর টা এসে তাদের বললো যে ওই লোক গুলো কদম গাছ টাকে কেটে দিতে চাইছে আর তারা সেই নিয়েই কথা বলছে।
তারপরেও বেশ কিছু দিন কেটে যায়। একদিন কিছু সেই ইঁদুর এসে সবাইকে খবর দিলো যে সেই লোক গুলো পরের দিনই গাছ কাটতে আসবে। তখন তাদের ভারী কষ্ট হলো তারা ভাবতে লাগলো যে তারা কি করবে? শেষ পর্যন্ত কাঠবেড়ালির মাথায় একটা বুদ্ধি এসে গেলো এবং সে সেটা তার বন্ধুদের কেও বললো।
ঠিক তার পরের দিন যথারীতি সবাই আসলো গাছ কাটতে আর ঠিক তখনই কাঠবেড়ালির কথা অনুযায়ী সবাই সেই কদম গাছ টাকে জড়িয়ে ধরলো এবং তাদের কাছে অনুরোধ করলো যাতে তারা সেই গাছ টাকে না কাটে। তারপর সেই লোক গুলো স্থানীয় পুলিশ অফিসার দের খবর দিলো l কিন্তু তবুও তারা সেই গাছ টাকে ছাড়তে রাজি হলো না তারা সবাইকে গাছেদের উপকারীতার কথা বললো এবং সব শুনে শেষ পর্যন্ত সেই লোক গুলো চলে গেলো এবং তারা বুঝতে পারলো যে গাছ কাটা কত বড় অন্যায়।
সব দেখে আমাদের কাঠবেড়ালি, ইঁদুর, পুষি, খরগোশ আর টিপাই, ময়না, সোনাই তো দারুণ খুশি সাথে তাদের খুব পছন্দের সেই কদম গাছ।
আস্তে আস্তে সময় পেরিয়ে গেলো, বর্ষাকাল এসে হাজির হয়েছে। এমনই একদিন সব বন্ধুরা মিলে খেলা করছিলো আর তারা খেয়াল করলো যে সেই কদম গাছে ছোট্ট ছোট্ট ফুল ধরেছে আর ঠিক তখনই ঝমঝমিয়ে রিমঝিম করে বৃষ্টি শুরু হল সবাই যে যার ঘরে দৌড়ে চলে গেলো আর. আমাদের কাঠবেড়ালিও কদম গাছের কোটোরে ঢুকে গেলো আরো বেশ কিছুদিন পর সেই গাছে বেশ বড় বড় ফুল ফুটলো আর হঠাৎ করে টুপটুপ করে কয়েকটা ফুল ঝড়ে পড়লো গাছের নিচে সবাই তো দারুণ খুশি। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারলো না যে গাছ থেকে একা একা ফুল পড়ছে কেনো? তখন গাছ বলে উঠলো - 'মনে আছে তোমরাও একদিন কী ভাবে আমার জীবন বাঁচিয়েছিলে? এটা যে তোমাদের উপহার।' উপহার পেয়ে সবাই খুব খুশি হলো এবং গাছকে আদর করে চলে গেলো।
তারপর বহু বছর কেটে গেছে। এখন গাছ টার বয়স বেড়েছে। আর গাছের সেই ছোট্ট বন্ধুরাও বেশ বড়ো হয়ে গেছে। একদিন সবাই মিলে সেই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে খেলা করছিলো আর খুব হাসাহাসি করছিলো কিন্তু গাছকে আজ এত বিষণ্ণ লাগছে কেনো? কাঠবেড়ালি গিয়ে সেই কথা গাছ কে জিজ্ঞাসা করলো আর গাছ বললো - 'আমার তো বয়স হয়েছে আর কতদিনই বা বাঁচবো।' সেই শুনে কাঠবেড়ালিটার খুব কষ্ট হলো সে কিছু না বলে চলে গেলো। পরের দিন সবাই এসে দেখলো সত্যি গাছ টা আর বেঁচে নেই শুধু হঠাৎ করে কে যেনো কানের কাছে কে যেনো বলে গেলো - 'বিদায়... বন্ধু....... বিদায়......' । সবাই মনের দুঃখে কেঁদেই ফেললো। আর কাঠবেড়ালি তো সেই গাছের ওপরে উঠে ঠিক আগের মতোন আদর করে ডেকে উঠলো - 'আবার এসো বন্ধু....................'।
বহু বছর পর সেই জায়গায় আরো অনেক অনেক গাছ জন্ম নিলো তখন হয়তো সেই কাঠবেড়ালি বুড়ো হয়ে গেছে কিন্তু তার সব কথা মনে পড়ে গেলো এবং সে সেই সমস্ত গাছের মাঝে একটা কদম গাছ দেখতে পেয়ে সেখানে গিয়ে বললো - 'বন্ধু, তুমি আমার কথা রেখেছো..... ধন্যবাদ বন্ধু..........'।