AYAN DEY

Fantasy

1  

AYAN DEY

Fantasy

বলো যাবে না চলে

বলো যাবে না চলে

6 mins
500


মেয়েকে স্কুলে আনতে কমই যান নীলেশ । গিন্নী মৌপিয়াই এই ভার বহন করে । ওই গার্ডিয়ান মিটিং এ কখনও সখনও দেখা মেলে তাঁর । মেয়ে প্রণিতার বন্ধুদের সাথেও তাই তাঁর কোনো আলাপ নেই ।

আজ কি মনে হলো অফিস থেকে দুপুরে মেয়ের সাথে দেখা করবেন । মায়ের আড়ালে মেয়ের কিছু বায়না পূরণ করবেন । একঘন্টা টিফিন টাইম যথেষ্ট । তিনি অফিসে একঘন্টা হাতে নিয়ে মিনিট পনেরোর মধ্যে মেয়ের স্কুলে পৌঁছালেন । স্কুলের গেটে ঢোকার মুখে থমকে যেতে হলো । বীথি ! নীলেশ বিশ্বাস করতে পারলেন না চোখকে ।

স্কুল টিফিনের আর দশ মিনিট বাকি । ভেবেছিলেন বীথিকে পাশ কাটিয়েই চলে যাবেন । ফোনটা কানে দিয়ে মিছে কলের ভান করেই এগিয়ে যাবেন । 

" অভিন​য়টা ভালো পারো না তুমি , কেন করতে যাও ? " বীথি বলে উঠলেন । 

নীলেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মোবাইলটা কোর্ট পকেটে চালান করতে বাধ্য হলেন । এবার কোনো চালাকি না করে শটান বলে বসলেন , " তুমি এখানে ? "

" অফিসে তুমি খুব বিজি বলো ? "

" তা বটে কিন্তু এটা কি আমার প্রশ্নের উত্তর হলো ? "

" তাই তো বলছি মেয়ের স্কুলের কিচ্ছু বিষয়ে খোঁজ রাখো না । পেরেন্টস মিটিং এও ঝড়ের মতো আসো আর বেরিয়ে যাও । আমি কিন্তু তোমায় দেখেছি প্রত্যেক মিটিংয়ের দিন । আমি সোমের মা । সোম আর প্রণিতা দুজনেই ফাইভ এ সেকশনে । তা আজ তুমি এই সময়ে ? "

" মেয়ের আবদার মেটাতে । ওকে বলেছি টিফিন টাইমে আসবো । তুমি কি রোজ আসো ? "

" না , টিফিন দিতে ভুলে গেছি বলে বানিয়ে আনলাম নইলে ছুটির সময়েই আসি । "

বলতে বলতে টিফিনের বেল বাজলো । খানিকক্ষণের মধ্যে প্রণিতা গেটের সামনে এলো । দারোয়ানকে বলে নীলেশ ভেতরে এসে পিজার প্যাকেটটা আর আইসক্রীমের কোণটা মেয়ের হাতে দিয়ে বেরিয়ে এলেন । এদিকে বীথি নিজের ছেলেকে টিফিন বক্স ধরিয়ে বেরিয়ে এলেন ।

নীলেশ একটা সৌজন্যসূচক হেসে হাত নেড়ে গাড়িতে উঠে প​ড়লেন । নীলেশ গাড়িতে উঠে ভাবতে লাগলেন সব পুরোনো কথাগুলো ।

নীলেশ বরাবরই মুখচোরা । স্বভাবটা কাটে কলেজে গিয়ে । কারণ অবিশ্যি তার প্রতিভাগুলো প্রদর্শন করার সুযোগ পেয়েছিলো । বীথি ছিলো সিভিলে আর নীলেশ ছিলো ইলেকট্রিক্যালে । একে অপরের ক্লাসরুমে বহু বন্ধু ছিলো ।

সিভিলে নীলেশের একটা বন্ধু প্রতীকের সাথে প্রায়শয়ই দেখা করতে যেত । একদিন বীথিকে দেখতে পায় সামনাসামনি । বীথিকে চিনতো না নীলেশ । আরেক বন্ধু যে ইলেকট্রনিক্সে প​ড়তো , সৌমেন , তার বন্ধু ছিলো বীথি । প্রথম দেখাতেই ভালোলাগাটুকুই হ​য় , এটা নীলেশকে তার বেস্ট ফ্রেন্ড সুজিত বোঝাতে ব্যর্থ । বীথিকে দেখার পর হতেই প্রথম বর্ষ হতেই প্রায় সবসম​য়ই সিভিল ডিপার্টমেন্টে ঢুঁ মারতে লাগলো ।

সৌমেনের মিউচুয়াল লিস্ট থেকে পেয়ে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালো । বীথিকে ভালো লাগলেও কলেজ ফেস্টের আগে অবধি বলে উঠতে পারেনি ।

সেবার বেণী দ​য়াল স্টেজ কাঁপাচ্ছে ফেস্টে । বীথিকে দূর থেকে দেখে সামনে এসে হুঠ করে নীলেশ হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছিলো । বীথি তো কি করবে ভেবে পায় না । অত্যন্ত হকচকিয়ে গেলো সে । লজ্জায় সিঁধিয়ে যায় । ফেস্ট থেকে ছুটে পালায় ।

পরদিন কলেজে বীথিকে দেখে নীলেশ বলে , " ক্ষমা করবে , আমি বেশীই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম । কিন্তু এটা ঠিক , তোমায় আমার ভালো লাগে , মনে মনে তোমায় নিয়ে স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছি । "

বীথি মুখ নীচু করে বললো , " আসলে অত লোকের মাঝে ... মেয়ে তো ... লজ্জা বলে ব্যাপারটা ... । "

নীলেশ বলে , " জানি জানি । তাই তো ক্ষমা চাইতে এলাম । "

বীথি বললো , " ক্ষমা তোমায় করে দিয়েছি । " মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো বীথি ।

ব্যাস ওই শুরু । ক্যান্টিনে , লাইব্রেরিতে , মাঠে , কমন রুমে সব জায়গায় সেরা জুটি হয়ে উঠলো বীথি আর নীলেশ । দেখতে দেখতে অন্তিম বর্ষ চলে এলো ।

নীলেশ বাড়িতে বলেই রেখেছিলো । কলেজ শেষ হয়ে বীথির বাড়ি ফোন করে নীলেশের বাবা মা যাবে যাবে ভাবছে , এমন সম​য় ফেসবুকে একটা পোস্ট আর নীলেশের সব স্বপ্ন চুরমার । বীথি সৌমেনের সাথে ছবি দিয়ে লিখেছে , " মাই উড বি । "

প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়ে বীথিকে ফোন করলো । ও কোনো কথা বলার আগেই নীলেশ যা তা ভাবে বীথিকে অপমান করে ফোন রেখে দিলো ।

ওই শেষ তার পর আর কথা হ​য়নি । কঠোর হয়ে মৌপিয়াকে বাবা মায়ের পরামর্শে বিয়ে করলো । মৌপিয়ার সম্পর্ক তৈরী হতে সম​য় নিলেও একবার তৈরী হতে তার চেয়ে মধুর কিছু ছিলো না ।

বীথিকে মৌপিয়া চেনে কিনা জানতে চাইলে বলেন , " হুম চিনি তো সোমের মা তো ? "

 নীলেশবাবু বললেন , " ও তুমি তাহলে চেনো । ও কি তোমায় সব কথা বলে দিয়েছে ? "

মৌপিয়া বললেন , " হ্যাঁ । "

নীলেশবাবু অফিসের শার্টটা ছাড়তে ছাড়তে বললেন , " সবটা শুনে কী মনে হলো ? আমি দোষী তাই তো ? "

মৌপিয়া বললেন , " তোমার শুধু একটা দোষ ধরা পড়লো ওর কথায় । "

নীলেশ একটু ভ্রু কুঁচকে বললেন , " কী কথায় ? "

মৌপিয়া বললেন , " প্রতিদিনই ওর সাথে কিছু না কিছু কথা হ​য় । ও যবে থেকে চিনেছে তুমি আমার স্বামী তবে থেকে একটু দূরত্ব বজায় রাখছিলো । একদিন আমি ওকে টেনে চায়ের দোকানে এনে জিজ্ঞাসা করি কারণ । ও বলে সবকথা । "

নীলেশ বললেন , " সব শুনেও মনে হ​য় দোষী আমি । আমি তবে তোমায় ঠকিয়েছি , তাই তো ? "

মৌপিয়া বললেন , " না কক্ষণো এমন বলিনি । ও কেন সৌমেনকে বিয়ে করতে চাইলো হঠাৎ কোনো আগ্রহ হ​য়নি জানতে চাওয়ার ? "

নীলেশ বললেন , " ওর বেলেল্লাপনা নিয়ে আমায় আর বলতে এসো না । "

মৌপিয়া বললেন , " জানতে যখন চাইলে তখন পুরোটা শোনো ও কী কী বলেছে আমায় । বীথিও তোমার মতোই বাড়িতে সম্পর্কের কথা জানিয়েছিলো । কলেজ শেষ হতে তুমি যেমন ওর বাড়ি পরিবার নিয়ে যাবে যাবে করছিলে তেমন ও চেয়েছিলো নিজের তরফে তোমাদের ডাক পাঠায় । বাবাকে সব কথা বলার পর ত​ৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যাত হ​য় । বীথি জানতে পারে সৌমেনের বাবার থেকে বীথির বাবা বিরাট উপকার পেয়েছিলেন উকিলি ব্যাপারে । তাই ওনারা দুজনে বহুবছর আগেই ঠিক করেছিলেন দুজনের চারহাত এক করবেন । তার অন্যথা তিনি চান না । সৌমেনও জানতো না কোনো বিষ​য় । ও নাকি কথাগুলো শোনার পর বাড়িতে তুলকালাম করেছিলো । ইতিমধ্যে ঘটে যায় বীথির বাবার হার্ট অ্যাটাক । বাবার মুখ চেয়ে বীথি বাধ্য হ​য় বিয়েতে রাজি হতে । "

নীলেশ বললেন , " যত সব গল্পকথা । ও আমায় বলতে পারলো না একবারও ? বিয়ে ন​য় করতো আমার আর ওর বন্ধুত্ব তো ভাঙতো না । "

মৌপিয়া বললেন , " তাইজন্যই তো ফেসবুকে ছবি দিয়েছিলো , নিজে মুখে কে এই কথা বলতে পারে ? "

ইতিমধ্যে মৌপিয়ার ফোন বেজে উঠলো ।

" হ্যালো বীথি ! আরে তোর কথাই হচ্ছিলো কর্তার সাথে । নে তো মানভঞ্জন করে ফেল । সৌমেন দা আছে তো পাশে ? " বলে হাতে ফোন ধরিয়ে দিলো নীলেশের ।

ধীরকন্ঠে বললো , " হ্যালো বীথি । "

" ক্ষমা চেয়েছিলে তুমি কলেজের সেই প্রথম দেখার পরে , আজ আমার চাওয়ার পালা । প্লিজ আমার উপর অভিমান করে থেকো না । "

" আর অভিমান । কে তোয়াক্কা করে আমার অভিমানের ? "

এমন সম​য় সৌমেন ধরলো ফোন , বললো , " সরি ফোনটা আমায় নিতেই হলো । তুই একবারও ভাবলি না যে , যে বন্ধু তোকে বীথির সাথে আলাপ করায় তার সাথে বিয়ে কোন কোন পরিস্থিতিতে হতে পারে ? তুই সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিলি ! ব্লক করে দিলি আমাদের নম্বর । রাস্তায় দেখা হলেও মুখ ফিরিয়ে নিতিস । সুযোগ আমি করানোরও চেষ্টা করেছিলাম । বিশ্বাস না হলে ম্যারেজ রেজিস্টার অফিসের ঠিকানা দিচ্ছি । ওখানে গিয়ে জান পাঁচ বছর আগে আমি গিয়ে তোর আর বীথির নাম লিখিয়ে এসেছিলাম কিনা ? তুই বিয়েটা করেই সব ভেস্তে দিলি । যাক বৌদি পাশে আছেন । আজ তুই আর আমি দুজনেই সুখী , অত​এব পুরোনো কথা ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করি না ? "

" হুমম " বললেন নীলেশ । চোখের জল মুছছেন এমন সম​য় প্রণিতা দৌড়ে এসে বলে , " বাপি , বীথি আন্টির ফোন । দাও না আমি সোমের সাথে কথা বলবো । "

নীলেশ বললেন , " দাঁড়াও মা একমিনিট । "

দিতে যাবেন এমন সম​য় একটা কথা বললেন সৌমেন , " সোম আর প্রণিতা একে অপরের খুব ভালো বন্ধু । আজকাল ছেলেমেয়েদের তো জানিস , ও ইতিমধ্যেই প্রণিতাকে নিজের খুব আপন ভাবে । কে জানে বড় হলে এইটা ভালোবাসায় রূপ নেবে কিনা ? "

ফোনটা কেড়ে নিয়ে পালালো প্রণিতা ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy