Sayandipa সায়নদীপা

Tragedy

0.2  

Sayandipa সায়নদীপা

Tragedy

বিষাক্ত বৃষ্টি

বিষাক্ত বৃষ্টি

3 mins
10.5K


বৃষ্টি নেমেছে অভিজাত পাড়ায়, বর্ষার প্রথম বৃষ্টি। ঝুল বারান্দা জলে থইথই, টবে লাগানো বাহারি গাছগুলো বৃষ্টির দাপটে দিশাহীন, ইলেক্ট্রিকের তারে বসে রোজ তারস্বরে চিৎকার করে চলা কাকটাও আজ বিপদ আশঙ্কা করে সময়ের আগেই বাসায় ফিরেছে। অসময়ের অন্ধকারটা এসে মনটা করে দিয়েছে মিসেস বসুর। বৃষ্টি দেখতে এমনিতে ভালোই লাগে তাঁর, কি সুন্দর রোম্যান্টিক হয়ে ওঠে চারিদিক, মনে হয় প্রকৃতিও যেন সবাইকে ভাসাতে চায় প্রেমের সাগরে। কিন্তু আজ ব্যাপারটা অন্য, বিকেলে তাঁর একটা টি পার্টিতে যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এই বৃষ্টিটা সব ভণ্ডুল করে দিল। বিরক্ত মুখে সোফায় বসে একটা ফ্যাশন ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাচ্ছিলেন তিনি, হঠাৎ দেখলেন তাঁদের আদরের একমাত্র কন্যা বিনি ছাতা আর রেনকোট সঙ্গে নিয়ে কোথাও বেরোতে উদ্যত। অবাক হয়ে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় বেরোচ্ছিস“

"কাজ আছে।” অষ্টাদশী কন্যার গলায় অস্বাভাবিক রুক্ষতা।

“কি কাজ জানতে পারি কি?”

“না।”

“হোয়াট! এই তুমুল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বেরোচ্ছ সেটা বলতে এত আপত্তি কিসের“

"মম ইটস নান অফ ইওর বিজনেস।”

“বিনি! বলো বলছি কোথায় যাচ্ছ, যদি না বলো তো গেট থেকে এক পাও বেরোতে পারবে না তুমি।”

“ওহো আজ টি পার্টি হয়নি বলে আমার ওপর রোয়াব দেখাতে আসছো! ভেরি গুড মম। বাই দ্য ওয়ে আটকাতে পারলে আটকে দেখাও।”

মেয়ের আচরণে স্তম্ভিত মিসেস বসু, পারলেন না বিনিকে আটকাতে; আর কিছু বলার আগেই সে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল;

“ম্যাডাম বিনি দিদি ফুচকা খেতে যাচ্ছে।” কাজের মেয়ে লিপির কথাটা কানে যেতেই অবাক হয়ে তার দিকে তাকালেন মিসেস বসু, “কি!”

“বিনি দিদি তো রোজই বিকেলে কাজলের দোকানে ফুচকা খেতে যায়।”

“তা বলে এরকম বৃষ্টিতে! বাজও তো পড়ছে সমানে...” ভ্রু কুঁচকে গেল তাঁর, “কোথায় ওই কাজলের দোকান?"

“ওই তো পাড়ার মোড়ে ঠেলা নিয়ে বসে, দেখেননি?"

লিপির কথা শুনে কয়েক মুহূর্ত ভাবলেন মিসেস বসু, ফুচকা গাড়িটা তিনিও যাতায়াতের পথে লক্ষ্য করেছেন কিন্তু বিনি যে রোজ ওখানে যায় সেটা তো তাঁর জানা ছিল না! বিকেলে তিনি অবশ্য প্রায়শই বাড়ি থাকেননা, থাকলেও মেয়ে বড় হয়েছে তার প্রাইভেসিতে হস্তক্ষেপ করা উচিৎ নয় এই ভেবে বিনি কোথায় যাচ্ছে না যাচ্ছে সে নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাননি কোনোদিনও কিন্তু আজকের ঘটনায় হতবাক তিনি। একটা ছাতা তুলে দ্রুত পদে বাইরে বেরিয়ে এলেন মিসেস বসু, বৃষ্টির প্রাবল্য চারিদিক সাদা হয়ে আছে তবুও কিছুটা দূরে আবছা হয়ে আসা বিনির গোলাপি রেনকোট পরা শরীরটাকে চিনতে অসুবিধা হলো না তাঁর। রাস্তাঘাট আজ ব্যস্ত পদধ্বনি থেকে মুক্ত, শুধু একটানা বাজছে ঝমঝম শব্দ। পাড়ার মোড়টা শূন্য, কাজল আসেনি। ধপ করে কাদা মাটিতে বসে পড়ল বিনি; উন্মাদের মত চিৎকার করে কেঁদে উঠলো সে। ধেয়ে আসা বৃষ্টির ফোঁটাগুলো তার গায়ে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়তে লাগলো নিমেষে নিমেষে। বিস্মিত, বাকরুদ্ধ মিসেস বসুর পা দুটো আটকে গেল মাটিতে, এ কোন বিনিকে দেখছেন তিনি! এসবের মানে কি! বিনি রোজ ফুচকা খেতে আসে এখানে কিন্তু একদিন ফুচকা না পেয়ে কি মানুষ এমন উন্মাদ হতে পারে! নিশ্চয় না, তারমানে এর গভীরে আছে অন্য ব্যাপার। তাহলে কি বিনি আর কাজলের মধ্যে কিছু…? উফফ… এ হতে পারেনা, একটা মামুলি ফুচকাও বিদ্যুৎ চমকের সঙ্গে ইলেকট্রিক তারে জমে থাকা জলের ফোঁটাগুলোতে আলোর মালা তৈরি করছে নিরন্তর। কারেন্ট নেই, হ্যারিকেনের তৈরি করা আলো আঁধারীতে একবাটি মুড়ি নিয়ে বসে কাজল, তার মনের মধ্যে হয়ে উঠতে থাকা ঝড়ের ছাপ স্পষ্ট তার চোখে মুখে। হঠাৎ দড়াম করে খুলে গেল ঘরে ঢোকার নড়বড়ে দরজাটা; আগন্তুকের অকস্মাৎ আগমনে সাময়িক চমকে উঠলেও অবাক হলোনা কাজল। ও জানতো সে আসবে। যে এসেছে তার মুখটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছেনা কিন্তু কাজল জানে পুলিশের খাতায় লোকটার নাম আছে, শুধু প্রমাণের অভাবে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ায় বাইরে। লোকটা এগিয়ে এসে সজোরে একটা থাপ্পড় কষাল ওর গালে, মুড়ির বাটি সুদ্ধ উল্টে পড়লো কাজল। দাঁতে দাঁত চিপে লোকটা বললো, “ফুচকা নিয়ে বেরোসনি কেন?"

“এতো ঝড়-বৃষ্টি…” কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়িয়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করল কাজল;

“তো? আজকের মালগুলোর টাকা কি তাইলে তোর বাপ দেবে সালা? বড়লোকের বাচ্চাগুলো মাল না পেয়ে কেমন খেপেছে জানিস?” কাজলের পেটে এবার সজোরে একটা লাঠি কষিয়ে দিল লোকটা; টাল সামলাতে না পেরে সে হুড়মুড়িয়ে পড়ল ফুচকার সরঞ্জামের ওপর, সেখান থেকে ঘিয়া রঙের একটা বিশেষ কৌটো গড়িয়ে গিয়ে ধাক্কা খেল লোকটার পায়ে, লোকটা ছোঁ মেরে সেটা তুলে নিয়ে পৈশাচিক দৃষ্টিতে তাকালো কাজলের দিকে। কাজলের মনে হলো কৌটোর মধ্যে থাকা বহুমূল্যবান গুলি গুলো যেন ওকে ব্যঙ্গ করে হেসে উঠলো সজোরে…


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy