বিসর্জন
বিসর্জন


ছোটুর মন খুব ভারাক্রান্ত। দিনটা দশমী। মা দুর্গার আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিসর্জন হবে। অন্যদিকে ছোটুর বোনের শরীরটা খুব খারাপ। প্রচন্ড জ্বর। তার জন্যে সুমনের চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার দশা। তারা পরিবারে তিনজন। সুমন, তার মা এবং সুমনের ছোট বোন মনিকা। তার বাবা বেশ কয়েক বছর হলো তাদের ছেড়ে পরলোকগমন করেছেন। আর্থিক অবস্থাও তাদের ভালো না। মা এবাড়ি-ওবাড়ি কিছু কাজ করে তিনজনের পেট চালান। কষ্ট করে সে ও তার বোন পড়াশোনা করে। কারুর কাছ থেকে বই চেয়ে, খাতা চেয়ে, স্কুলে ভর্তির খরচ এক ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়ে এসে পড়াশোনা চালায়। এইভাবে তাদের সংসার চলে যায়। হঠাৎ তার ছোটো বোনের প্রচন্ড জ্বর হয়। এর কাছ থেকে, ওর কাছ থেকে কিছু টাকা চেয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। এক সপ্তাহ হয়েছে মনিকা বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু ডাক্তাররা ঠিক করে ধরতে পারেননি মনিকার কি হয়েছে। প্রতিবার তাদের দুর্গাপুজো কাটে পোশাক পরিহিত মানুষদের দেখে। প্রতিবার দুই ভাইবোন রাস্তার ধারে এসে কিছু ছোলা বিক্রি করে আর মানুষদেরকে দেখে। এই পুজোয় সেই আনন্দটুকুও তাদের নেই। সুমনের বোনের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। সুমন বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,"বোন তুই তাড়াতাড়ি সেরে ওঠ। তাহলে আমরা দুজন পাশের মাঠে গিয়ে ছোলা বিক্রি করব আর মানুষ দেখবো।" শুনে মনিকা বলে ওঠে,"সত্যি দাদা আমাদের খুব আনন্দ হবে!" বলেই মনিকার চোখে এক অজানা আতঙ্ক ও বিষাদের ছায়া। সে বলে ওঠে,"আচ্ছা দাদা, আমি যদি সুস্থ না হতে পারি। আমি যদি মারা যাই! তাহলে....." শুনেই সুমনের বুকটা ধড়াস করে ওঠে,"বলে না বোন, এসব কথা বলিস না। আমি আছি , তোকে সুস্থ করে তুলবই।" কিন্তু দশমীর দিন সন্ধ্যা সাতটায় মনিকার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেল। মনিকা জড়ানো স্বরে বলে ওঠে,"দাদা আমাকে বাঁচা। আমি বাঁচতে চাই।" কথাটি বলতে বলতেই সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। আর অন্যদিকে মা দুর্গা প্রতিমার নিরঞ্জন হলো। যেন একই সাথে দুই দুর্গার বিসর্জন হয়ে গেল।