STORYMIRROR

Sanchaita Roy Chowdhury

Abstract Classics

4  

Sanchaita Roy Chowdhury

Abstract Classics

বিদ্রুপ

বিদ্রুপ

3 mins
276

     গল্পের নাম:- বিদ্রুপ

     লেখিকা:- সঞ্চয়িতা রায় চৌধুরী


পূজা এবং সায়নের সম্পর্কটা পনেরো বছরের, সেই স্কুল জীবন থেকে তাদের প্রেম। আজ থেকে ঠিক পাঁচ দিন আগে তা পূর্ণতা পেয়েছে । পাড়ার সুমনা কাকিমা অরুণাচল প্রদেশ ঘুরতে যাওয়ার দরুণ সায়নের বিয়েতে আসতে পারেননি বলে আজ এসেছেন, নতুন বউ দেখতে। সুমনা কাকিমা এসে সোফায় বসতেই পূজার শাশুড়ি মা এসে পূজাকে বললেন, "পূজা, এক কাপ চা করে নিয়ে এসো।" পূজা তখন সবে অফিস থেকে ফিরেছে; সে তার শাশুড়ির কথা অনুযায়ী এক কাপ চা করে সুমনা কাকিমার সামনে রেখে তাকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। 

সুমনা কাকিমা বলল, "তা অফিস থেকে এই আসা হলো বুঝি?"

পূজা মাথা নেড়ে বলল , "হ্যাঁ"।

সুমনা কাকিমা চায়ে একটা চুমুক দিয়ে পূজার শাশুড়িকে বলল, "তা শুনলাম নাকি তোমার বৌমা পুলিশের বড় ৱ্যাঙ্কে চাকরি করে?"

পূজার শাশুড়ি মা হাসতে হাসতে বললেন, "হ্যাঁ, এটা নিয়ে আমার খুব গর্ব হয়।"

সুমনা কাকিমা মুখ বেঁকিয়ে বলল, "বাবা এই নিয়ে আবার গর্ব করার কি আছে শুনি? পাড়ার লোকেরা তো বলছে, নিশ্চই মেয়ের টাকা আছে বলেই বিয়ে দিয়েছে, আমি কি আর কান পেতে শুনি না? আর সত্যিই তো, তোমার ছেলে একটা ছোটখাটো প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে, আজ আছে কাল নেই- তোমাদের কোনোরকমে টেনেটুনে সংসার চলতো। তবে আমি তো বাপু বলি সায়নের পেটে পেটে প্রচুর বুদ্ধি। এরকম একটা বিয়ে করে নিজের ভবিষ্যতের পথ উজ্জ্বল করেছে।

সবাই তো দেখে বলছে যে, তোমার ছেলে এই মেয়ের টাকা দেখেই বিয়ে করেছে।

কেন দেখোনি ওই সুতপা দির ছেলের ব্যাপারটা- ওনার বৌমার বাপের বাড়ির তো অনেক টাকা আছে শুনেছি। তাই জন্যই তো ওরকম একটা কানা, খোঁড়া, বাঁকাকে বিয়ে করেছে। ওইটা একটা চেহারা! কী মোটা! বলি একবার গায়ের রংখানা দেখেছো?কী কালো! ছিঃ ! ম্যাগো!

আর আমার ছেলেকে দেখো, আমার ছেলে যেমন রোজগার করে তেমনি ছেলের বউ এনেছে। আমার বৌমার বাপের বাড়ির অত টাকা নেই। কিন্তু হ্যাঁ, বৌমা যেমন হওয়া দরকার ঠিক তেমন। যেমন দেখতে তেমন হাতের কাজ জানে, সাত চড়ে রা করে না।


পূজা অনেকক্ষণ ধরে সুমনা কাকিমার এই বাজে কথাগুলো শুনে যাচ্ছিলো;   শেষমেষ রেগে গিয়ে বলে বসলো, "কাকিমা, আমাদের সমাজের মানুষের একটা দোষ আছে জানেন। আমরা না অন্যের ভালো দেখতে পারি না। আমাদের চোখের সামনে আমরা অন্যের ভালো হতে দেখে ভাবি, আমার নিজের যখন ভালো হয়নি বা আমি যেই জিনিসটা পাইনি অথচ অন্য কেউ পেয়ে গেল মানে সেটার মধ্যে কোনো গন্ডগোল আছে। আমরা তখন নিজেকে সন্তুষ্ট করার জন্য এবং সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য সেটার মধ্যে খামতিগুলো খুঁজতে থাকি। আর যখন কোনোকিছু খুঁজে পাই না, তখন আমরা নিজেদের মনগড়া কথা বলতে থাকি।

আমার সাথে সায়নের সম্পর্ক পনেরো বছরের আর তখন আমি চাকরি করতাম না আমি স্কুলে পড়তাম। আমার বাবার একটা মুদির দোকান ছিল। তাহলে কাকিমা তখন কি করে সায়ন টাকার পেছনে ছুটলো ? আর রইল বাকি সুতপা কাকিমার ছেলের কথা। শুনেছি ছেলেটি মেয়েটিকে ভীষণ ভালোবাসতো । মেয়েটিকে ও ছয় বছর ধরে ভালোবাসতো, তখনও মেয়েটির শারীরিক অবস্থা এরকমই ছিল। ও চাইলেই ওই ছয় বছরে শ্বশুরবাড়ির টাকা নিতে পারতো। আর তাছাড়াও শুনেছি ওর স্ত্রীর চিকিৎসা ও নিজের পয়সায় করায়। তাই এবারো আপনি ভুল। ও ওর স্ত্রীকে ভালোবাসে বলে বিয়ে করেছে, ওর মা-বাবার টাকা আছে বলে নয়, আর কাকিমা গায়ের রং এবং তার চেহারা দেখে মানুষকে বিচার করবেন না। এমনও হয় গায়ের রং ফর্সা থাকলেও মানুষের মন কালো হয়, সুন্দর চেহারার অধিকারী হলেই যে সে সুন্দর মনের অধিকারী হবে এই ধারণাটিও খুব ভুল। তাই গায়ের রং , চেহারা আর যাই হোক এগুলো মানুষের যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে না। এই যে দেখুন না- আপনাকে দেখতে কত সুন্দরী কিন্তু আপনার মনটা ঠিক তেমন সুন্দর নয়।"

সুমনা কাকিমার মুখটা রাগে লাল হয়ে উঠলো। পূজা বলল, "শুনেছি আপনার ছেলে নাকি যখন বিয়ে করেছিল এক লাখ টাকা পণ নিয়েছিল। আমি যতদূর জানি পণ নেওয়া খুব অপরাধ । তাহলে কাকিমা আমার মনে হয় আপনার ছেলে অর্থের পিছনে ছুটেছিল। 

কাকিমা আমাদের খুব বড় দোষ হচ্ছে আমরা নিজের থেকে অন্যের বিষয়ে বেশি নাক গলাই, অন্যের দোষ দেখতে বেশি ব্যস্ত থাকি। আমরা যদি নিজের দিকে একটু বেশি লক্ষ্য করি, একটু নিজেদের দোষগুলো দেখি তাহলে দেখবো আমাদের অনেক ভালো হচ্ছে। আর কাকিমা, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এইসব বিদ্রুপগুলো করা বন্ধ করুন। সবাই টাকার জন্য বিয়ে করে না কাকিমা, সবাই লোভে পড়ে বিয়ে করে না। অনেকে থাকে যারা প্রকৃত ভালোবেসে বিয়ে করে।"



         _____________________


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract