Gopa Ghosh

Comedy Fantasy Others

4.0  

Gopa Ghosh

Comedy Fantasy Others

বিবি নম্বর জিরো

বিবি নম্বর জিরো

4 mins
201


দোষ টা কার ঠিক বুঝতে পারছি না, আমার না আমার বউয়ের। আসলে আমার বউ যদিও কোনদিন রান্না করতে ভুলে যায় তাও আমার দোষ,আমি কেনো মনে করাতে ভুলেছি। এইরকমই চলছিল,আমিও মাঝেসাজে ধৈর্য রাখতে না পেরে ওর দোষ ধরে দিই, তবে সেদিন আমার অন্নপ্রাশনের পর থেকে, আমার মা যে ভুলগুলো ধরতে পারেননি সেটাও আমার সামনে গড় গড় করে বলে যায়। যেটা আমি নয় আমার পাড়া-প্রতিবেশি ও জানতে পেরে যায়। আর কি করবো বিয়ে যখন করেছি বউয়ের এই জ্বালাতন, এই ভুল ত্রুটি মেনে নিতেই হবে। 


সেদিন আমার পাঁচ বছরের ছেলে একটা ফুলের টব ভেঙে ফেলল। আমি সেটা আগের দিন ছাদে না রেখে বারান্দায় রেখেছিলাম, ব্যাস দোষটা আমার ওপরে পরলো। আমি বোঝাতে গেলাম ঐ টব টা কাল আমি কিনে রেখেছিলাম, মাটি ভরবো বলে কিন্তু কে শোনে কার কথা ? ছেলে তো বাবা-মায়ের ঝগড়া দেখে হেসেই খুন, একটু আদর আদর গলায় বলে উঠলো "মা ওই টব আমি ভাঙ্গিনি তোমার পা লেগে ভেঙ্গে গেছে" ব্যাস ঠাস করে একটা চর পরলো ছেলের গালে "একদম মিথ্যে কথা বলবি না" ছেলের হাসি বদলে গেলো কান্নায়। আমি ছেলের কান্না থামাতে গেলেও দোষ। আমি নাকি শাসনের বদলে লাই দিয়ে মাথায় তুলছি। মোটামুটি দুপুরের খাওয়া পর্যন্ত এই এক বিষয় নিয়ে বক্তৃতা চলবে। এই জ্বালায় মাঝে মাঝে মনে হয় সন্ন্যাস গ্রহণ করি কিন্তু আমার অর্ধাঙ্গিনী সে গুড়েও বালি দিয়েছে এই বলে যে "তুমি সন্ন্যাস নেবে একটি সন্ন্যাসিনী জোগাড় করার জন্য, আমি সব বুঝি, পেটে পেটে শয়তানি তোমার"। একথা শুনে সে আশাও ত্যাগ করতে হয়েছে, এখন শুধু ধরিত্রী ফাঁক হলে সেখানে গিয়েই একমাত্র প্রাণ জুড়তে পারবো। 

সেদিন অফিস থেকে ফিরেই খুব অবাক হয়ে গেলাম। বউ আমার জন্য খাবার সাজিয়ে অপেক্ষা করছে। গরুরা যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলেই আসন্ন ঝড়ের আশঙ্কা করে, আমিও তাই। তবু মুখে সামান্য শুকনো হাসি এনে বললাম "আজ কিছু অনুষ্ঠান আছে নাকি? তুমি এই সময়ে টিভির সামনে না বসে আমার অপেক্ষায় আছো"। ভেবেছিলাম এই একটি অ্যাটম বোমাই বিস্ফোরণের জন্য যথেষ্ট কিন্তু আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে বউ বলে উঠলো " আহা রে আমার স্বামীকে কি আমার কিছু স্পেশাল রান্না করে খাওয়াতে ইচ্ছে করে না"। আমি শুধু হু বলে ঘরে ঢুকে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে খাবার টেবিলে এসে দেখি আমার শাশুড়ি আর শালা দুটি চিয়ারে বসে।আমাকে দেখেই এক গাল হেসে বলে উঠলো "কেমন আছো বাবা? তুলির বায়নাতে এত কাজ ফেলে রেখে আসতে হলো, তুমি কোনো খবর না দিয়েই টিকিট করে বসে আছো, আবার নন্টিরও"। এই তুলি হলো আমার বউ আর নন্টি আমার একমাত্র শালা বাবু। 

কথা শুনে আমার গা যেনো জ্বলে উঠলো। মনে মনে বললাম এত কাজ রেখে কে মাথার দিব্যি দিয়েছিল আসার জন্য। মুখে বললাম "ও আচ্ছা তুলি আমাকে কিছু জানায় নি, তা কোথায় যাওয়ার কথা বলছিলেন?" মায়ের উত্তর দেওয়ার আগেই তুলি বলে উঠলো "সত্যি বাবা, তোমার যদি কিছু মনে থাকে, আগেরবার পুরী গিয়ে নন্টির জন্য মানসিক করে এসে ছিলাম না, যদি মাধ্যমিক পাশ করে তো ওকে এনে পুজো দেবো"। এই সময় এক কেলো করে ফেললাম। বললাম " নন্তি তো সেবার পাশ করে নি, পরেরবারও নয়, তিনবারে অবশ্য পাশটা করেছে" তুলি আমাকে ভস্ম করার মতো দৃষ্টি বুলিয়ে রান্নাঘরে গেলো খাবার গরম করতে। রাতে ঘরে যেতেই দেখি অন্যদিনের মত মিলিটারি মেজাজ নয়, বেশ নরম সুরেই আমাকে বললো "শোনো আমি টিকিট কেটে নিয়েছি অনলাইনে, তুমি শুধু কাল হোটেল বুক করে নিও, আর কিছু টাকা তুলে রেখো, সাথে বাচ্চা থাকবে, কোথায় কি লাগবে তার ঠিক নেই"। আমি সুযোগ পেয়ে প্রশ্নটা করেই ফেললাম "হঠাৎ আমাকে না বলে টিকিট কাটলে কেনো, আমাকে অন্তত বলতে তো পারতে"। কাজল কালো চোখটা যেনো মুহূর্তে গোল গোল করে বলে উঠলো "তাহলে কি আমার মা আর ভাইয়ের টিকিট হতো, তোমার মত কৃপণ কে নিয়ে অনেকদিন ঘর করছি, তাই যা করেছি বেশ করেছি"। আর টাকা কোথা থেকে পেয়েছ এটা জিজ্ঞেস করার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও তা দমন করলাম। 

পুরী থেকে ফিরে প্রায় এক সপ্তাহ হলো অফিস জয়েন করেছি। একটা ফোনে আমার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হলো। বছরের মেডিক্লেমর টাকাটা নাকি এখনও জমা পরে নি। কিন্তু আমি প্রতিবার তুলিকে পাঠাই ওটা জমা দিতে, তবে এবারে পরে আর রশিদ দেখার সময় পাই নি। ছুটির পর বাড়ি এসে জিজ্ঞেস করলাম "এবারে মেডিক্লেম র রশিদ দিলে না তো" ব্যাস আমার কথায় যেনো আগুনে ঘী পড়লো। সুর চরতে লাগলো তুলির "আমি কি বাইরের লোক, যে রশিদ দেখাতে হবে, আর আমি পারবো না যেতে, তুমি নিজেই যাবে এবার থেকে"। আমি বুঝিয়ে বললাম "না তা নয়, টাকাটা ওই ফান্ডে পড়ে নি বলছে, তাই রশিদ দরকার"। এবার আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে বউ বললো "টাকা তো জমাই পরে নি, তবে কিসের রশিদ"। আমার হাঁ করা মুখের দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠলো "ওটা অনেক পূণ্য কাজে লেগেছে, আমি পুরীর টিকিট করেছি, সত্যি করে বলোতো, ভগবান আগে, না তোমার ঐ কটা টাকা?" আমি আর কিছুক্ষণ দাঁড়ালে হয়তো একটি মহা বিষ্ফোরণ ঘটে যেত, তাই ছাদে গিয়ে খোলা হওয়ায় প্রাণভরে নিশ্বাস নিলাম। সেই সিনেমাটার কথা মনে পড়লো বিবি নম্বর ওয়ান, আমারটা তাহলে বিবি নম্বর কত, মনে হয় বিবি নম্বর জিরো।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy