Protima Mondol

Horror Classics

5.0  

Protima Mondol

Horror Classics

ভুতুড়ে ঝাড়ুদার

ভুতুড়ে ঝাড়ুদার

5 mins
936



 আজ থেকে অনেক দিন আগের কথা , তখন আমার বয়স ছিল পনেরো বছর । গল্পের শুরুর আগে আমার পরিচয়টা দেয়া দরকার, আমার নাম বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ডাকনাম ছোট্টু ।

যেই সময়ের গল্পের কথা বলছি ,আমি তখন আমার মামার বাড়ি থেকে পড়াশোনা কোরিয়ায় কোলকাতা থেকে । আর আমাদের বাড়ি ছিল গ্রামের দিকে , তাই আমি মামার বাড়ি থেকে পরাশুনা করতাম । আর আমাদের বাড়িতে থাকতো বাবা, মা, ঠাকুমা আর আমার ছোট বোন অদিতি। আমারা আদোর করে বোন কে ডাকি তিথি বলে। আমার বোনটি খুবই দুষ্টু মিষ্টি স্বভাবের আর একটু দুরন্ত প্রকৃতির। স্কুলে গরমের ছুটির সময় আমি বাড়িতে ছুটি কাটাতে আসি আর বোনের সঙ্গে খেলাধুলা আনন্দে কাটিয়ে দিয়। আর মাঝে মাঝে আমাদেরই স্কুলের মাঠে পারার বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা আনন্দে সময় কাটাতে যায়। আমাদের বাড়ির কাছেই ছিল একটা প্রাইমারি স্কুল।স্কুলের নাম ছিল ফুলবাড়ী প্রায়মারী স্কুল। ছোট খাটো সুন্দর ফুল গাছে সাজানো স্কুল। স্কুলের প্রাচীরের গায়ে সুন্দর সুন্দর এরা আর অনেক মহান মনীষী দের ছবির সহ তাদের জীবনীর নানা তথ্য দেওয়া আছে। স্কুলের সিরিতে নামতা লেখা আছে। স্কুলটা অর্ধেক মানুষ সমান প্রাচীরে ঘেরা।


এই রকম এক রবিবার ছুটির দিনে বাড়িতে তারাতারি দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে , সবার অলখ্যে একদিন প্রাইমারি স্কুলে যায় বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে । প্রাইমারি স্কুলটা ছিল আমাদের বাড়ি থেকে কুড়ি মিনিটের দূরত্বে , সেই স্কুলের পিছন দিকে ছিল বাচ্চাদের কেজি স্কুল ।সেদিন ছিল রবিবার প্রায় দুপুর দুটো বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করার জন্য বেরিয়ে পড়ি গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে প্রাইমারি স্কুলের পাশ দিয়ে স্কুল মাঠের দিকে যেতে থাকি। স্কুল ছিল একতলা প্রাইমারি স্কুল । আর হাফ পাঁচিলের বাইরে স্কুলের সামনেই ছিল বড় একটা খেলার মাঠ ।খেলার মাঠে এক কোণে ছিল একটা বিশাল বড় বটগাছ । বট গাছের পাশেই ছিল একটা দোকান, সেই দোকানে চা আর পড়াশোনার খাতাপত্র সমস্ত জিনিস এখানে পাওয়া যেত ।আর বটগাছ তলায় ছিল বাশ দিয়ে বানানো একটা বাঁশের মাচা। সেখানে বসে বড়রা তাস খেলা দাবা খেলা করত। আর গ্রামের সব ছেলেরা মাঠে খেলাধুলা করতো ।আমি সেদিন একা একাই মাঠের দিকে আসছিলাম। প্রাইমারি স্কুলের পাশের গলি টা দিয়ে স্কুলের ধার দিয়ে মাঠে আসা রাস্তা উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ।আস্তে আস্তে আমি আসছি লাম । আসতে আসতে স্কুলের মধ্যে থেকে শুনতে পায় ঝাড়ু দেওয়ার আওয়াজ ।রবিবার ছুটির দিন তাই ছুটির দিনে দুপুরবেলায় কে ছাঁট দিচ্ছে দেখার জন্য আমি স্কুলের গেটের ভাঙ্গা জায়গা দিয়ে চোখ রাখি কিন্তু কাউকেই দেখতে পাই না। আমি স্কুলের নিচু পাঁচিলের উপরে উঠে পড়ি ভালো করে দেখার জন্য স্কুলের ভেতরে কেউ আছে কিনা কিন্তু তবুও কিছু দেখতে পাই না । কিন্তু অবিরাম ঝাড়ু দেওয়ার শব্দ কানে আসতে থাকে। তার সঙ্গে কিছু ধোয়া ধোয়া কুন্ডুলী উঠতে থাকে ।কিন্তু ধোয়া কোথা থেকে আসছে সেটা বুঝতে পারছিলাম না আর আওয়াজ উচ্চতর হয়ে ভেসে আসছে কিন্তু কোন লোকজনের দেখা নেই রবিবার স্কুল এর কাছে দোকান বন্ধ ।



আশেপাশে রাস্তাঘাটে কোনো লোক নেই । স্কুলের কাছ থেকে হঠাৎ হঠাৎ পাখির ডাক ভেসে আসছে। আমি সেই আওয়াজ শুনে চমকে চমকে উঠছি আর মাঝে মাঝে আমার খুব ভয় করছে। ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে, গলা শুকিয়ে আসছে। আমি শুনেছিলাম স্কুলের ওই দিকটা ভালো না। হঠাৎ দেখি কেউ একজন লাল শাড়ি পড়ে হাওয়ায় উড়ে উড়ে চলছে , যেমন টা কেনো সমুদ্রের ধারে যদি কারোর ওড়না উড়ে চলে যায় সেরকম ভাবেই মনে হচ্ছে যেন কোন একটা কাপড় এদিক থেকে ওদিকে হাওয়ায় উড়ে বেড়াচ্ছে । কিন্তু সেই কাপড়ের মধ্যে মানুষের মুখ দেখা যাচ্ছে না । আমি তা দেখে খুব ভয় পেয়ে যায় । ভয় পেয়ে প্রাচীর থেকে পড়ে যায় । তখন দেখি রাস্তা দিয়ে এগিয়ে আসছে আমাদের বাড়ির কাছেই এক ঠাকুমা। ঠাকুমার নাম মেনোকা ঠাকুরমা । আমাকে একা এখানে আসার জন্য প্রথমে একটু বকাবকি করল। তারপর আমার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সব ধুলো ছেড়ে ফেলে দিলো। সেখানে বট গাছ তলায় নিয়ে গিয়ে বসালো তারপর সে আমাকে একটা গল্প বললো । বললো যে এই স্কুলে একটা খুব মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে গেছে তাই আজ থেকে কুড়ি বছর আগের ঘটনা। ইস্কুলে বছর বাইস বয়সের একটি মেয়ে কাজ করতো। তার নাম ছিল মালতি। সে পাশের গ্রাম সীমান্তপুরে বাস করত । আর তার স্বামী ছিল দেবেন । তার মাঠে কিছু জমি জায়গা ছিল। সে সেই জমিতে কখনো ধান আবার কখনো সব্জির চাষ আবাদ করত আর মাঝে মাঝে সেই স্কুলে জঙ্গল পরিষ্কার করে দিত। মাঝে মাঝে স্কুলে রান্নার কাজে সাহায্য করত । এরকমই একদিন দুজন মহিলা রান্নার কাজ করতে আসেনি, সেদিন মালতি একাই ছিল। সে একা একাই রান্না করছিল আর তার স্বামী তাকে সাহায্য করে দিচ্ছিল। এরকম রান্না করতে করতে হঠাৎ তার গায়ে আগুন ধরে যায় সে আগুন থেকে বাঁচার জন্য অনেক চেষ্টা করে কিন্তু সঠিক সময়ে কেউ তাকে সাহায্য করতে পারেনি। তার স্বামীও তার থেকে কিছুটা দূরে বসে কাজ করছিল সে ছুটে আসে এবং এসে মালতিকে জড়িয়ে ধরে কিন্তু তাতেও আগুন নেভানো সম্ভব হয় না । দুজনেই অনেকটা পুরে যায় । তারপর দুজনকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয় , সেখানেই মালতি মারা যায় কিন্তু তার স্বামীটি বেঁচে যায়। কিন্তু তার শরীরের অনেকটা অংশ বিভৎসভাবে পুড়ে যায়। তারপর থেকে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে , মাঝে মাঝে এসে বাড়িতে থাকে আবার কখনো এদিক-সেদিক চলে যায়। উধাও হয়ে যায় মাঝে মাঝে। কখনো কখনো স্কুলে এসে বসে থাকে, উদাস ভাবে চারিপাশে তাকিয়ে থাকে মালতীকে খুঁজে বেড়ায়। সে মেনেই নিতে পারে না যে তার বৌ মালতী আর বেঁচে নেই। এই ঘটনার পর থেকেই মাঝে মাঝে দুপুরবেলা আর রাত্রেবেলা আশেপাশে যারা স্কুলের পাশ দিয়ে যাওয়া আসা করে় , তারা ঝাড়ু দেওয়ার আওয়াজ , কখনো কখনো বা কুন্ডলী পাকিয়ে ওঠা ধোঁয়া দেখতে পায়। কিন্তু কোন মানুষ দেখতে পাই না। অনেকেই এইসব দেখে ভয় পেয়ে যায় ।তাই এখানে ভরদুপুরবেলায় একা একা কেও আসে না । বড়রা আসতে ভয় পায়, আর ছোট রাতো একা আসেই না ।তুমি তোমার মামার বাড়িতে থাকো, তাই এত কথা তুমি জানো না । তুমি আর কখনো এখানে একা একা এসো না

। এই স্কুলের অনেকেই এই মালতিকে মাঝে মাঝে দেখতে পাই , জ্বলন্ত অবস্থায় চিৎকার করছে এদিক থেকে ওদিকে ছুটে চলে যাচ্ছে ।যারা যারা দেখেছে স্কুল চলাকালীন সময়ে বিশেষ কিছু হয়না ।কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকবে এই নির্জনতায় খুব অদ্ভুত অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে অনেকেই মালতির জ্বলন্ত চেহারা, পুড়ে যাওয়া চামড়া ,সেই বীভৎস চেহারা দেখতে পায়। আর পোড়া পোড়া গন্ধ ভেসে বেড়ায় বাতাসে। যারা এই সব দেখে তারা চিৎকার করে আর্তনাদ করে অজ্ঞান হয়ে যায়, জ্বর চলে আসে। সেই জ্বর আর সহজে ছাড়তে চায় না। অনেক দিন ধরে জ্বরে ভুগে শরীর অর্ধেক হয়ে যায়, মনে হয় যেনো তার জীবনের অর্ধেক শক্তি শেষ হয়ে যায়।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror