STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Comedy Others

3  

Manab Mondal

Abstract Comedy Others

ভুত ধরা

ভুত ধরা

4 mins
213

কাঁচা বয়সের কাঁচা বুদ্ধি বলে হেঁটা করলেও , আমরা তখন ব্যপারটা নিয়ে খুব গুরুত্ব দিয়ে ভাবছিলাম। রোজ বাপির একটি করে পায়রা কমে যাওয়া। আমাদের হাঁসের ডিম না দেওয়া। আমাদের যাওয়ার আগেই রাঙা জেঠিমার আচার চুরি হয়ে যাওয়া সব গুলো বেশ সন্দেহ জনক ব্যপার স্যাপার।

এ সব ভুতুড়ে কান্ড গুলো কে ঘটাচ্ছে জানতেই হবে। ‌ আমাদের বাড়িতে একটা ভুত আছেন, সবাই বলে তিনি দুষ্টু নয়। তিনি আমার দিদা। তবে পড়া না করলে শাস্তি দেবে বলেছে। কিন্তু আমাকে এখনো শাস্তি দেয়নি মানে দুই একদিন ছাড় দিয়েছে আরকি। তবে আমি ভয়ে ভয়ে সব পড়া করে রাখি। কারণ মেজো মামার কানটা দেখে ভয় করে। কান টেনে লম্বা কড়ার বদলে কুলোর মতো করে দিয়েছে , একদিন পড়া করেনি বলে। তবে দিদাভুতটা ভালো আমার পড়া হয়ে গেলে , রোজ একটা করে কতবেল পেড়ে ছুড়ে দেয় আমার পায়ের কাছে। সারারাত জেগে পাহারা দেয় দিদি ভুত বাড়িটাকে। তাই আজ অবধি আমাদের মামা বাড়ি কোন দিন চুরি হয়নি। দিনের বেলায় দিদা ঘুমায় তাই কোথাও থেকে একটা চোর ভুত এসে এসব কান্ড ঘটাচ্ছে।

বাপি মাথায় এলো , এগুলো চোর ভুত নয়। কারণ এগুলো সব ডাকাত ভুত। ভুতেদের বাজার খারাপ তাই মুরগি চুরি করছে। কারণ দিদা যা জাঁদরেল তাতে চোর ভুত এদিকে ঘেঁসবে না। কিন্তু ডাকাত ভুত রা আসতেই পারে। তাছাড়া সবাই জানে দিঘির ওপারে ডাকাতদের ডেরা, জমিদারদের লেঠেলরা ছিলো ডাকাত। তবে ডাকাত গুলো ভালো ই ছিলো সাহেবদের ঘরে ডাকাতি করে গরীবদের বিলিয়ে দিতো। পর ইংরেজরা বিশাল বাহিনী নিয়ে এসে ওদের মেরে ফেলে একদিন। সেই থেকেই ওদিক আর কেউ যায় না।

আপু প্রস্তাব দিলো আমরা যাবো ওদের কে ভয় দেখিয়ে আসবো। কারণ ভুতের তো সব মরা, ওদের কি অসুবিধা আছে মারার। তাছাড়া কেউ এখন ভুতের ভয় পায় না, তাই ভুতেরাই ভিতূ হয়ে গিয়ে লুকিয়ে থাকে এখানে ওখানে। ওদের যদি ক্ষমতাই থাকতো, শহরের থেকে সব ভুতুড়ে বাড়ি গুলো আসতে আসতে উবে যেতো একটু শাসিয়ে দিলেই ওরা পালাবে। তাছাড়া রূপকথার গল্পে পড়িস নি, রাজপুত্র রা একাই দৈত্য দানবদের মেরে ফেলে আর আমরাতো তিন জন। একতাই বল, সামান্য ভুত তারাতে পারবো না , হয় নাকি।

আমার একটু সন্দেহ ছিলো আমরাতো রাজকুমার না তাহলে পাড়বো তো। তারপর মনে পরলো, দেশেতো এখন রাজা নেই , বরং আমরাই ভোট দিয়ে রাজাকে নির্বাচন করি তাহলে রাজার চেয়ে আমরা কম কি?শেষ আমরা তিন জন দুঃসাহসিক অভিযান করতে রাজি হয়ে গেলাম।

কলাগাছ কেটে। নৌকা বানিয়ে, বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তীর ধনুক বানিয়ে, কালি পূজা র সময় বেঁচে যাওয়া চকলেট বোমা, কালি পটকা নিয়ে, চললাম ভুত তারানোর অভিযানে। নৌকা বেয়ে যখন দিঘির মাঝামাঝি এলাম। তখন আমাদের নৌকা দুই চারটে পাকা আম ছুঁড়ে মারলো। আমি খুবই ভয় পেয়ে গেছিলাম। কিন্তু হ্যালা বাপি কোন কিছু চিন্তা ভাবনা না করে । আমটায় যেই কাঁমড় বসিয়েছে সেই একটা কান্ড ঘটে গেলো। কোথা থেকে একটা রোগা পটকা বামুন ঠাকুর আমাদের নৌকাতে হাজির হলো।

এটা নিশ্চিত সেই ব্রম্ভদত্যি যার ভয়ে এই আম বাগানের ধারে কাছে কেউ আসি না। কিন্তু ব্রম্ভদত্যি এমন চেহারা খেতে না পেয়ে এরকম হাল হয়েছে বুঝি। ঠিক যেমন বাঙালিদের ব্যবসা বাণিজ্য এর, মনাসা পুজা, চন্ডিপূজা, ব্রতকথায় শুনবে, চাঁদ সদাগর সাতটা জাহাজ ডুবে গেছে, ধনপতি সদাগর বানিজ্য করে গিয়ে শ্রীলঙ্কার রাজার কাছে বন্দি হয়েছে, মানে রিতিমত ভালোই ব্যবসা বাণিজ্য করতো বাঙালি এক সময়।এখন চাএর দোকান চপের দোকানেই আটকে ।

যাইহোক মুলোর মতন দুখান অর্ধেক ভাঙা দাঁত বেড় করে বলো। " বাহ্ তোদের তো বেশ সাহস আছে ভুত তারাতে এসেছি তাহলে। শোন ওদের মারতে হলে। ওখানে এটা কলসি আছে সেটাকে ভাঙাতে হবে। আর  ভাঙবি পুরো ভারত পাকিস্তানের মতো। নিজেদের আসল সমস্যা গুলো বুঝবে না, হিন্দু মুসলিম বলে লড়াই করবে চিরকাল। ওদের উপর খুব রাগ আমার, খালি ভুতদের বাপের শ্রাদ্ধ করে, পূজা করাই কিন্তু একটু প্রনামী দেয়না উল্টে কিল চড় মারে। " বলেই ব্রম্ভদত্যি এক পসলা কেঁদে দিলো।

তারপর বললো " আচ্ছা তোরা কি দেখছিস ওদের তোদের পায়রা চুরি করতে, কিংবা মুরগি চুরি করতে, হতেও তো পারে শিয়ালে কিংবা বনবিড়ালে খাচ্ছে। আমার ওরা শত্রুর ঠিকই, তবে প্রতিবেশী তো ঝগড়া ঝাটি যাই থাকুক ওদের বিপদে পাশে থাকা আমারো উচিত, তাই বলছি। আরকি বেচারা ভুত গুলো কে তোরা মারতে এলি কেন? আমেরিকা রাশিয়া র মতো তোরাও দেখছি যুদ্ধো বাজ দুর্বল দের প্রতি জোর জুলুম করবি। পটলা তোদের বাড়িটা যখন প্রোমটারি হলো তোর কেমন লেগেছে, তোদের তো তবু ফ্ল্যাট দিয়েছে , তবু তুই মামা বাড়িতে থাকিস, কারণ ওখানে তোর ভালো লাগে না। আর এই ভুতেদের তোরা তাড়িয়ে দিলে ওরা কোথায় যাবে বলল। একটু ভাব তোরা" বলে বিদায় নিলো ব্রম্ভদত্যি।

কিন্তু আমরা মানুষ নিজেদের স্বার্থ এ জঙ্গল কেটে শহর বানিয়েছি, আবার পরমানু বোমা মেরে সেই শহরকেই গুড়িয়ে দিয়েছি। আমাদের অতো ভাবনা চিন্তা করে কাজ নেই। ভুঁত তারাতে এসেছি তারাবোই।

পৌঁছে দেখি আবক কান্ড শুধু মাত্র লেঠেল ভুত নয়, দিঘির পাড়ে জরো হয়েছে, ল্যাড়া, কানা, বাচ্চা বুড়ো , বৌ মেয়ে সব ভুতেরা । ঝ্যাটা বোটি, হাতা খুন্তি যে যা পরেছে, অস্ত্র নিয়ে হাজির। চিৎকার করে বলছে মানুষেরা আমাদের বাঁচাতে দাও, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আমরা আমাদের জমি, ঘর বাড়ি রক্ষা করবো।

এরপর সবাই শান্ত ভুতেদের সরদার বেড়িয়ে এলো ভিড় থেকে, বেশ তাগরাই স্বাস্থ্য, দেখে ভয় করে। এর জন্য বলে helth is wealth. বেশ রাশ ভারি গলায় বললো" ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার। তোদের প্যাদিয়ে ভুঁত দেখাবো এবার"

শুনেই আমি তো জ্ঞান হারালাম, আপু বাপি কথা জানি না, চোখ খুলে দেখি। তিন জনে বট গাছের তলায় শুয়ে আছি।একে অপরের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম ওরা আমাদের এখানে ছেড়ে দিয়ে গেছে, তবে একটু আলোচনা পর ঠিক করলাম, ভুতো ছেড়ে দাও, নিজেরা নিজেদের কথা দিলাম পাখি হোক কিংবা পিঁপড়া সবাইরে যেহুতু এ পৃথিবীতে বাঁচা র , অধিকার আছে তাই কোরো বাসা কোন দিন ভাঙবো না আমরা।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract