ভাতকাপড়
ভাতকাপড়
"জানিস কিছুই ভালো লাগছে না। ভালো থাকা মানে, দামি রেস্টুরেন্ট খেয়ে সেলফি দেওয়া, দামী গাড়িতে ঘোরাঘুরি, দামী আসবাব পত্র পোশাক আশাক ব্যবহার নয়। ভালো থাকা মানে আমার কাছে, প্রিয় মানুষটার সাথে সময় কাটানো। যে মানুষটার রুচি, সখ, ভালোলাগায়, আমি সব ভালোলাগা খুঁজে পাই, সেই মানুষটিকে সারাজীবন পাশে রাখতে চাই।
কিন্তু আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে মেয়েদের নিজেদের ভালোলাগা কোনো গুরুত্ব নেই। একটা সিদ্ধান্ত নিতে পরিবার পরিজন অনুমতি, সম্মতি জরুরি। অনেক টা বয়স পেরিয়ে অর্থ উপার্জন করতে শিখলাম, তবে এখন অর্জন করতে হবে যোগ্যতা, যাতে আমার ভালো লাগা টা হেরে না যায়,হারিয়ে না যায় পরিস্থিতির চাপে। কিন্তু সময়টা অনেক অল্প।"
তিন বছর আগে বুবাই দা চিঠি টা লিখেছিলো, কিন্তু একটা শব্দও ছুটকি ভোলেনি। ছুটকির চোখের জল একটা ফোটা পরে গেলো অয়নের চায়ের কাপে। বুবাইদা সামাজিক ভাবে সফল হয়ে গিয়েছিল যদি টাকা ইনকাম টাই শেষ কথা হয়। তবে নিজের কাছে বিফল ছিলো তাই ছুটকির বিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দিয়ে হানিমুনে পাঠিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করলো। বুবাইদের স্নেহের পাত্রছিল অয়ন। কিছুটা ওর লেখার ফ্যান বলতে পারেন । তাই ছুটকি বিয়ে করে নিয়েছে অয়ন এক বাক্যে। নয়তো পাড়ায় তো অনেক কানাঘুষা চলছিলো, ওদের নিয়ে। কিন্তু সত্যি ই ছুটকিকে বুবাই দা ভালোবাসলেও কখনো, কোন পদক্ষেপ নেয়নি, যাতে তার পবিত্রতা বা সন্মান নষ্ট হয়ে যায়। তবে তাদের সম্পর্কে ছুটুকির মায়ের আপত্তি থাকায় বুবাই নিজের দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে দিলো ওর।ছুটুকি সব মেনে নিয়েছে, তবে বুবাই সে কোনদিন ক্ষমা করবে না তার বুবাইদাকে , কাপুরুষের মতো আত্মহত্যা করলো। মৃত্যু কারণটাও জানতে দিলোনা কাউকে। লোকে তো ভাবছে এতো দেরিতে পুরস্কার পেলেন উনি, সেই দুঃখেই আত্মহত্যা।
যাইহোক, সবকিছু ভুলে মুখে একটা চওড়া হাসি নিয়ে, বসার ঘরে ঢুকলো, ছুটকি। শাশুড়ি একটু রাশভারি গলায় বললো " ওটাতে একটা সাইন করে দাও।"
ছুটকি প্রশ্ন করে না কিন্তু আজ একবার জিজ্ঞেস করল " এটার দরকার কি জন্য হঠাৎ, আমি তো এখন বাড়ি থেকেই অফিসের কাজকর্ম করি।"
শাশুড়ি মা বললো " কাল নারী স্বনির্ভরতা নিয়ে টিভিতে সাক্ষাৎকার দেখেতে তোমার তোমার চোখটা জ্বলজ্বল করে উঠছিলো। আমি সারাজীবন ছাত্রী পড়ালাম। তাই আমার চোখে এসব আগে পরে। দেখো তুমি হয়তো উচ্চাকাঙ্খী কিন্তু আমার ছেলে তোমার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিয়েছে যখন, তখন সে সব দায়িত্ব নিতে পারবে। তুমি বলবে আপনি তো চাকুরী করছেন। দেখো ওজনেই, আমাদের বংশের সব ছেলেমেয়ে বিদেশে সেটেল আর বাবুকে ভারতেই হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। আমি চাই আমাদের নাতি নাতনী দের এরকম অবস্থা হোক। তাছাড়া তোমাকে তো ছেলেমেয়ে নিতে হবে এবার। তোমাদের দেখে আমাদের আত্মীয় স্বজনরা বলছিলেন তোমাদের নাকি রাম সীতা র মতো দেখতে লাগে। তাই আমি একটা কথা বলি, রামচন্দ্র ভগবান, সে চাইলেই সীতা কে আটকাতে পারতো। কিন্তু আটকায়নি, কারণ লবকুশ কে পাওয়া রামের সব পাওয়া ছিলো।"
শাশুড়ি মা দীর্ঘ বক্তব্য শুনে, রিজাইন ল্যেটারে সই করে দিলো ছুটকি। মনে মনে বললো "ভালো থাকা কাকে বলে তুমি শিখিয়ে ছিলে তুমি বুবাই দা আমাকে। কিন্তু জিজ্ঞেস করোনি তোমাকে ছাড়া আমি ভালো থাকবো কিনা। তাই হয়তো ভালো ঘর পেলাম আমি, কিন্তু ভালো বাসা পাওয়া হলো না আমাদের। ভালো থেকো তুমি ও যেখানে আছো তুমি।

