STORYMIRROR

Sucharita Das

Abstract Inspirational

4  

Sucharita Das

Abstract Inspirational

ভালো থেকো

ভালো থেকো

4 mins
260


কয়েক দিন ধরেই সম্বিত লক্ষ্য করছে তুলিকা ওকে কেমন যেন এড়িয়ে চলছে। সংসারের দায়-দায়িত্ব খুব ভালো ভাবেই পালন করছে ও, ছেলের প্রতিও কোনো অবহেলা নেই। কিন্তু সম্বিতের সঙ্গে একান্তে সে কিছুতেই থাকছে না। যদিও তুলিকা ভাবছে, সম্বিত হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না। কিন্তু প্রথম প্রথম সম্বিত ব্যাপারটাকে সেভাবে গুরুত্ব না দিলেও, ধীরে ধীরে সে বুঝতে পেরেছে যে, তাদের দুজনের দাম্পত্যে কোথাও যেন একটা ছন্দপতন ঘটেছে। আর সেটা তুলিকার কারণেই ঘটেছে। সম্বিতের দিক থেকে তো কোথাও কোনো সমস্যাই নেই। সম্বিত দু একবার এ ব্যাপারে তুলিকার সঙ্গে কথা বলতেও চেষ্টা করেছে, কিন্তু তুলিকা এড়িয়ে গেছে ওকে। ধীরে ধীরে এই কয়েক দিনের মধ্যে ওদের দুজনের মধুর দাম্পত্যে , কেমন‌ যেন একটা ফাটল দেখা দিচ্ছিলো। অথচ এই তুলিকা ই আগে শোবার ঘরে সম্বিতের জন্য অপেক্ষা করে থাকতো। ওদের বিবাহিত জীবনের এতগুলো বছর পেরিয়ে যাবার পরও একইরকম আকর্ষণ ছিলো ওদের দুজনের একে অপরের প্রতি। সম্বিত কলেজের কাজকর্ম কিছু যদি করতো রাত্রিবেলা তুলিকা বারবার ওকে তাড়া লাগাতো। আর তারপর সম্বিতের খোলা রোমশ বুকে শুয়ে আদুরে গলায় তুলিকা বলতো, "জানোতো আমার পরম নির্ভরতার জায়গা এটা।" তারপর কতো গল্প দুজনের হতো। সারাদিনের অনেক না বলা কথা দুজনে ভাগ করে নিত ,একে অপরের সঙ্গে। অথচ আজ কত দিন হয়ে গেল, তুলিকা সম্বিতের বুকে শোওয়া তো দূরের কথা, সে জেগে থাকে যখন ,তখন তাদের শোবার ঘরেই ঢোকে না। একা ঘরে শুয়ে সম্বিত ফিরে যায় ওদের অতীতে-----


সম্বিতের সে বছর লাস্ট ইয়ার ছিল ইউনিভার্সিটির। আর তুলিকার ফার্স্ট ইয়ার। প্রাণোচ্ছ্বল তুলিকা নাচে গানে পারদর্শী ছিল। সম্বিতদের লাস্ট ইয়ারের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তুলিকার অসাধারণ নাচ আর গানে মুগ্ধ সম্বিত, অনুষ্ঠান শেষে নিজেই এগিয়ে গিয়ে পরিচয় করেছিল তুলিকার সঙ্গে। তারপর তো সেদিনের সেই পরিচয় ধীরে ধীরে দু'জনকে দুজনের কাছে নিয়ে এসেছিল। দীর্ঘ পাঁচ বছরের সম্পর্কের মধুর পরিসমাপ্তি ঘটেছিলো দুজনের পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার মধ্যে দিয়ে।সম্বিতের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরই দু'পক্ষের বাড়ির লোকজনের সম্মতিতেই বিয়েটা হয়েছিল। তারপর তো একসাথে দুজনের সংসার পথে চলার কতো স্মৃতি। কখনও সে স্মৃতি সুখের আবেশে ভেসে যাওয়া, তো কখনও সুখ দুঃখের ঘটনায় ভরা। তারপর বছর দুয়েক পর ওদের মাঝে এসেছে ওদের ভালোবাসার ফসল রিতম। দিনগুলো কি সুন্দর রঙীন ডানায় ভর করে এগিয়ে যাচ্ছিলো। কোথাও কোনো ছন্দপতন ছিল না। কিন্তু তার ই মাঝে তুলিকার এই ব্যবহারে সম্বিতের মনের ভেতরটা খন্ড বিখন্ড হয়ে যাচ্ছিল।




 এদিকে তুলিকা ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে আনমনে বাইরে তাকিয়ে আছে , আর অপেক্ষা করছে সম্বিতের ঘুমিয়ে পড়ার। তারপর তো ও যাবে বিছানায়। আনমনা তুলিকা ফিরে গিয়েছিল কয়েক দিন আগের ঘটনায়---

একটু বেশী সময় নিয়ে স্নান করা তুলিকার বরাবরের অভ্যাস। স্নান করাটা তার কাছে একটা বিলাসিতা। শরীরের প্রতিটি অঙ্গের নিখুঁত যত্ন নেয় সে এইসময়। বডি ওয়াশে নিজের শরীরকে ফেনায়িত করতে করতে হঠাৎই তুলিকার হাত আটকে গিয়েছিল বাঁ দিকের ব্রেস্ট এ। স্তনের ভেতর কেমন যেন একটা মাংসপিন্ডের দলা অনুভূত হলো ওর, অনেকটাই বাহুমূলের দিকে। প্রথমটা এড়িয়ে গেলেও

স্নান করতে করতে ওর হাত সেদিন বারবার ওই একটা জায়গায় আটকে যাচ্ছিলো। হালকা ব্যথার অনুভূতি ও আছে। আনমনে স্নান সেরে বেরিয়ে এলো তুলিকা। কিন্তু তারপর থেকে প্রতিদিন ই ওই একটাই চিন্তা ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। ও নিজেও কিছুটা জানতো এ ব্যাপারে। তাহলে কি খারাপ কিছু? একটা অজানা আশংকায় তুলিকার মেরুদন্ড বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে এলো। ভয়েতে ভীষণভাবে ঘামছিল ও। যদি ওর কিছু হয়ে যায় তাহলে রিতমের কি হবে? সম্বিত ই বা একা কি করে থাকবে সারাজীবন। তুলিকা মনস্থির করে নিলো সে এখন সম্বিতকে কিছুই বলবে না। হতে পারে স্বাভাবিক কিছু, সবসময় খারাপ চিন্তা মনের মধ্যে আনা ঠিক না। নিজের মনকে বোঝাতে চেষ্টা করলো ও। কদিন যাক নিজেই ঠিক হয়ে যাবে। তুলিকা নিজের মতো করে কিছু ঘরোয়া বিধির প্রয়োগ করলো।গরম জলের সেঁক, একটু গরম তেলের ম্যাসাজ। কিন্তু কোনোভাবেই জিনিসটা কমছে না। আর সম্বিতের থেকে সে দূরে থাকছে ঠিক এই কারণেই।অকারণে সম্বিতকে চিন্তায় ফেলতে চাইছিল না ও।




সেদিন রিতমকে স্কুলে পাঠিয়ে দেবার পর তুলিকা কিচেনে কাজ করছিল। হঠাৎই সম্বিত ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। তুলিকা ওর মুখের দিকে না তাকিয়েই ওকে সরে যেতে বলে। সম্বিত তুলিকার মুখটা নিজের দুহাতে ধরে জিজ্ঞেস করলো,"কি হয়েছে তোমার ?কেন এরকম এড়িয়ে যাচ্ছ আমাকে?"প্রথমটা তুলিকা কিছু বলতে না চাইলেও, শেষ পর্যন্ত সম্বিতের জেদের কাছে হার স্বীকার করতে বাধ্য হয় তুলিকা। সমস্ত ঘটনা জানায় সম্বিতকে। সব শোনার পর সম্বিত এক মূহুর্তও সময় নষ্ট না করে তুলিকাকে নিয়ে যায় ওর পরিচিত এক গাইনোকলজিস্ট এর কাছে। সমস্ত ব্যাপারটাই যে ক্রিটিক্যাল , এটা বুঝতে পেরে তুলিকাকে বেশ কিছু ব্রেস্ট সংক্রান্ত টেস্ট দিয়েছিলেন গাইনোকলজিস্ট। রিপোর্টে তুলিকার ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ে। তুলিকা এবং সম্বিত সব জেনে ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছিল মনের দিক থেকে। তুলিকা তো ভেবেই নিয়েছিল সে আর বাঁচবে না। কিন্তু যেহেতু ব্যাপারটা প্রথম স্টেজেই ধরা পড়েছিল, তাই তুলিকার বাঁ দিকের ব্রেস্ট অপারেশন করে সম্পূর্ণ রূপে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যাতে জিনিসটা না ছড়িয়ে পড়ে। তারপর কেমোথেরাপি এবং অন্যান্য চিকিৎসা র সাহায্যে তুলিকাকে সুস্থ করার সমস্ত চেষ্টা করা হয়েছে এবং তা সম্পূর্ণ রূপে সফল ও হয়েছে। বর্তমানে তুলিকা নিজের সুস্থ সুন্দর জীবনে আছে, অবশ্যই ডাক্তারের নির্দেশানুযায়ী। একটা জীবন রক্ষা পেয়েছিল শুধুমাত্র সঠিক সময়ে জিনিসটি ধরা পড়েছিল বলেই।আজ তুলিকা আর পাঁচ জনের মতোই সুন্দর ভাবে নিজের জীবন উপভোগ করছে।


******প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ এটি একটি সত্য ঘটনা। আমার খুব নিকট আত্মীয়ার জীবনের কাহিনী। ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে তা একশো ভাগ সারিয়ে তোলা সম্ভব। লজ্জায় অনেক মেয়েই কিছু হলেও নিজের এই একান্ত ব্যক্তিগত জায়গা নিয়ে মুখ খুলতে চায় না। কিন্তু সেটা নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলার মতোই। তুলিকাও নিজেও ঘটনাটা প্রকাশ করতে চায়নি প্রথমে। সম্বিত এগিয়ে না এলে ,তুলিকার জীবন ও ঝুঁকির সম্মুখীন হতো নিঃসন্দেহে। আমার এই লেখা আপনাদের সতর্ক করে দেবার উদ্দেশ্যে। সবাই ভালো থাকুন।


            



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract