ভাইরাসের কড়চা #১
ভাইরাসের কড়চা #১


এলাম, দেখলাম, বন্দি করলাম...
২৫শে মার্চ, ২০২০
ডিয়ার ডায়েরি,
অবশেষে! চীনের মহাপ্রাচীর অনায়াসে টপকে দেশবিদেশ ঘুরে ৩০শে জানুয়ারি ভারতবর্ষে ঢুকে পড়ে নিজেকে জাহির করেছি। কিন্তু তারপর ঠিক যেন জাঁকিয়ে বসতে পারছিলাম না! এদেশে এরা সবাই এত বেশি ভেজাল খায় - এদের পাকস্থলীতে জায়গা করতে রীতিমত কসরতের প্রয়োজন...এখানে এত দূষণ; জল, হাওয়া সব এত বিষাক্ত যে ফুসফুসগুলো প্রায় মিশকালো, দেখে বুঝতেই পারছি না কোথায় আলভিওলি...বাকি শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গও সবরকম অত্যাচার সইবার জন্য আগে থেকেই তৈরি।
সারা পৃথিবীর মানুষজনকে - তা সে বড়োলোক আর গরীব যাই হোক না কেন; আমি আগেভাগেই বলে দিয়েছি - যাই তুমি করো না কেন, আমার নামও করোনা...আমি তোমায় ঠিক ভোগাবই ভোগাব! পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী হিসেবে তোমার গর্ব আমি চূর্ণ করবোই। তুমি নিজের স্বার্থে প্রতিমুহূর্তে সমস্ত জীবজগতকে লাঞ্ছনা করছ, অত্যাচার করছ হাজার হাজার বছর ধরে। কত প্রজাতির গাছ, পশু, পাখিকে মুছে দিয়েছ পৃথিবী থেকে, স্রেফ তোমার লোভ চরিতার্থ করতে...এ সবের এবার ইতি হবে। এবার আমি তোমায় খাব!
কেরালা থেকে মহারাষ্ট্র হয়ে এই দুমাসে আমি ছড়িয়ে পড়েছি প্রায় সারা দেশটায়। নানা দেশে ঘুরে ঘুরে আমি দেখলাম শুধুমাত্র একটা রূপ ধরে সবাইকে কাবু করা যাবে না। তাই নিত্যনতুন মিউটেশন করে নিজেকে এই সময়ের মধ্যে আলাদা আলাদা চেহারা দিয়েছি। যখন যেখানে যেমনটা দরকার সেটাই ব্যবহার করব।
এই তো, ২২ তারিখ রবিবারে যখন এদেশে জনতা কারফিউ ঘোষণা করা হল, আমি হাসছিলাম এদের কাণ্ডকারখানা দেখে...একদিনের জন্যে সবাইকে ঘরে আটকালে কি আমার খিদে আটকাতে পারবে এরা? তাছাড়া সেদিনও তো দেখলাম মোড়ে মোড়ে ক্রিকেট, ফুটবল, তাস, আড্ডা দেদার চলছে। বাঙালিগুলো কাজ তো বেশি করেই না, এইসব অকাজ করতেই বেশি ভালোবাসে! ওহ, এটা বলতে ভুলেই গেছি যে আমি ঘুরতে ঘুরতে কলকাতায় চলে এসেছি। কারণ, আমার বস হুকুম করেছেন যে আমায় ডায়রি লিখতে হবে, লিখতে হবে মানুষ কি করে ছটফট করে আতঙ্কে। এদিকের লোকেরা একটু বেশি আঁতেল - ডায়রি, গল্প বেশি লেখে; তাই এখানে বসেই লিখব ভাবছি।
এদেশের প্রধানমন্ত্রী কাল থেকে সারা দেশকে ঘরে থাকতে বলেছে, স্বেচ্ছাবন্দি হয়ে। এদেশে জানতাম কোনো পলিটিকাল পার্টির মধ্যেই সদ্ভাব নেই, নিশ্চই প্রচুর প্রতিবাদ হবে বিরোধী দলগুলো থেকে। কিন্তু তা তো হলোই না...বহু, বহু বছর বাদে দেখলাম সব্বাই এককাট্টা! আমার আগমন ঘটেছে এটা জানাজানি হয়ে গেছে। মরার ভয়ে সকলে আধমরা। এই কড়াকড়ি তাই সকলে মেনে নিয়েছে। কষ্ট হবে জেনেও বিরোধিতার ঝড় ওঠেনি।
এটা কিন্তু একটা চাপ হল আমার - আজ সাারাদিন ধরে তাই ফন্দি আঁটছি কি করা যায়...
কৃতজ্ঞতা স্বীকার - শ্রী অমরনাথ মুখোপাধ্যায়